সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারতেন

তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারতেন

আমরা যিহোবার সেবা করে থাকি আর আমরা তাঁর অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ লাভ করতে চাই। কিন্তু, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করতে পারি? বাইবেলের সময়ে, কোনো কোনো ব্যক্তি গুরুতর পাপ করার পর পুনরায় ঈশ্বরের অনুগ্রহ বা অনুমোদন লাভ করেছিল। অন্যদের আবার ভালো গুণ ছিল ঠিকই কিন্তু শেষে, তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। তাই, আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, “যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে কীসের অনুসন্ধান করছেন?” যিহূদার রাজা রহবিয়ামের উদাহরণ আমাদের উত্তরটা পাওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।

শুরুতেই ভুল

রহবিয়ামের বাবা, শলোমন ৪০ বছর ধরে ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করেছিলেন। (১ রাজা. ১১:৪২) তার বাবার মৃত্যুর পর, রহবিয়াম রাজা হওয়ার জন্য যিরূশালেম থেকে শিখিমে গিয়েছিলেন। (২ বংশা. ১০:১) তিনি কি পরবর্তী রাজা হওয়ার বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন ছিলেন? শলোমন তার অসাধারণ প্রজ্ঞার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। শীঘ্রই, রহবিয়ামকে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে, তিনি একটা জটিল সমস্যার সমাধান করার জন্য যথেষ্ট বিজ্ঞ কি না।

যেহেতু ইস্রায়েলীয়দের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল, তাই তারা তাদের কয়েক জন প্রতিনিধি পাঠিয়ে রহবিয়ামের কাছে তাদের অনুরোধের বিষয়ে জানিয়েছিল: “আপনার পিতা আমাদের উপর দুঃসহ যোঁয়ালি দিয়াছেন; অতএব আপনার পিতা আমাদের উপরে যে কঠিন দাস্যকর্ম্ম ও ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, আপনি তাহা লঘু করুন, করিলে আমরা আপনার দাসত্ব করিব।”—২ বংশা. ১০:৩, ৪.

রহবিয়াম একটা কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি যদি লোকেদের অনুরোধ মেনে নেন, তা হলে তাকে ও তার পরিবারকে আর সেইসঙ্গে রাজপ্রাসাদের অন্যান্য ব্যক্তিদের হয়তো তাদের কিছুটা আরামআয়েশ ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু অন্যদিকে, তিনি যদি লোকেদের অনুরোধ না মানেন, তা হলে তারা হয়তো তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। তাই, তিনি কী করেছিলেন? তিনি প্রথমে সেই বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যারা তার বাবাকে সাহায্য করতেন। তারা রহবিয়ামকে লোকেদের অনুরোধ মেনে নিতে বলেছিলেন। কিন্তু এরপর, রহবিয়াম তার সমবয়সি ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আর লোকেদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমার পিতা তোমাদের যোঁয়ালি ভারী করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তাহা আরও ভারী করিব; আমার পিতা তোমাদিগকে কশা দ্বারা শাস্তি দিতেন, কিন্তু আমি বৃশ্চিক দ্বারা দিব।”—২ বংশা. ১০:৬-১৪.

আপনি কি বুঝতে পারছেন, এই বিবরণে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা রয়েছে? বর্তমানে, আমাদের মধ্যে এমন অনেক বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করেছেন আর তাই, তারা আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারেন। আসুন, আমরা যেন বিজ্ঞ হই ও তাদের কথা মেনে চলি।—ইয়োব ১২:১২.

‘তাহারা সদাপ্রভুর বাক্য মানিল’

রহবিয়াম তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর লোকেরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তাই, রহবিয়াম সেই বিদ্রোহী বংশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার সেনাবাহিনীকে একত্রিত করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা তাঁর ভাববাদী শময়িয়কে পাঠিয়ে তাদের বলেছিলেন: “তোমরা যাত্রা করিও না, তোমাদের ভ্রাতৃগণের সহিত, ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করিও না; প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহে ফিরিয়া যাও, কেননা এই ঘটনা আমা হইতে হইল।”—১ রাজা. ১২:২১-২৪. *

যিহোবার কথা মেনে নেওয়া কি রহবিয়ামের পক্ষে সহজ ছিল? লোকেরা তাদের নতুন রাজা সম্বন্ধে কী চিন্তা করবে? তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাদের “বৃশ্চিক দ্বারা” শাস্তি দেবেন কিন্তু এখন তিনি সেই চরম বিদ্রোহের বিষয়ে কিছুই করতে যাচ্ছিলেন না! (তুলনা করুন, ২ বংশাবলি ১৩:৭.) কিন্তু, লোকেরা তার বিষয়ে যা-ই চিন্তা করুক না কেন, রহবিয়াম ও তার সেনাবাহিনী “সদাপ্রভুর বাক্য মানিয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ফিরিয়া গেল।”

এই বিবরণে আমাদের জন্য কোন শিক্ষা রয়েছে? ঈশ্বরের কথা মেনে চলা সবসময়ই বিজ্ঞতার কাজ, এমনকী তখনও, যখন তা করার ফলে লোকেরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে। আমরা যদি ঈশ্বরের কথা মেনে চলি, তা হলে তিনি সবসময় আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—দ্বিতীয়. ২৮:২.

রহবিয়াম ঈশ্বরের কথা মেনেছিলেন বলে তাকে কি আশীর্বাদ করা হয়েছিল? রহবিয়াম তখনও যিহূদা ও বিন্যামীন বংশের উপর শাসন করতেন আর তিনি সেই দুই বংশের এলাকাগুলোতে নতুন নতুন নগর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি বেশ কয়েকটা নগরকে “অতিশয়” দৃঢ় করেছিলেন। (২ বংশা. ১১:৫-১২) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, কিছু সময়ের জন্য তিনি যিহোবার আইন মেনে চলেছিলেন। যেহেতু দশ বংশের রাজ্যে প্রতিমাপূজা শুরু হয়েছিল, তাই অনেকে রহবিয়ামকে ও সেইসঙ্গে সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার জন্য সেখান থেকে যিরূশালেমে এসেছিল। (২ বংশা. ১১:১৬, ১৭) রহবিয়াম যিহোবার কথা মেনে চলেছিলেন বলে তার রাজ্য আরও শক্তিশালী হয়েছিল।

রহবিয়াম পাপ করেন এবং অনুতপ্ত হন

রহবিয়ামের রাজ্য যখন শক্তিশালী হয়েছিল, তখন তিনি একটা অদ্ভুত কাজ করেছিলেন। তিনি যিহোবার আইন মেনে চলা বন্ধ করে দিয়ে মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন! কিন্তু কেন? তার মা, যিনি একজন অম্মোনীয়া ছিলেন, তিনি কি রহবিয়ামকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রভাবিত করেছিলেন? (১ রাজা. ১৪:২১) আমরা তা জানি না। কিন্তু আমরা এটা জানি যে, পুরো জাতি তার খারাপ উদাহরণ অনুসরণ করেছিল। তাই, যিহোবা মিশরের রাজা শীশককে যিহূদা রাজ্যের অনেক নগর জয় করার অনুমতি দিয়েছিলেন। রহবিয়াম সেই নগরগুলোকে খুব দৃঢ় করার পরও এমনটা ঘটেছিল!—১ রাজা. ১৪:২২-২৪; ২ বংশা. ১২:১-৪.

পরিস্থিতি সেইসময় আরও খারাপের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল, যখন শীশক ও তার সেনাবাহিনী যিরূশালেমকে আক্রমণ করতে এসেছিল, যেখান থেকে রহবিয়াম শাসন করতেন। এই সময়, ভাববাদী শময়িয় ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই বার্তাটা রহবিয়ামকে ও তার অধ্যক্ষদের জানিয়েছিলেন: “তোমরা আমাকে ছাড়িয়াছ, এই জন্য আমিও তোমাদিগকে শীশকের হস্তে ছাড়িয়া দিলাম।” রহবিয়াম ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই শাসনের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি খুবই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন! বাইবেল বলে: “ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ ও রাজা আপনাদিগকে অবনত করিলেন, কহিলেন, সদাপ্রভু ধর্ম্মময়।” তাই, যিহোবা রহবিয়ামকে ও সেইসঙ্গে যিরূশালেমকে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।—২ বংশা. ১২:৫-৭, ১২.

এই ঘটনার পর, রহবিয়াম যিহূদা রাজ্যের উপর তার শাসন চালিয়ে গিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার আগে তিনি তার ছেলেদের অনেক উপহার দিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে, তারা যেন তাদের ভাই অবিয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে, যিনি তার পরে রাজা হতে চলেছিলেন। (২ বংশা. ১১:২১-২৩) এমনটা করার মাধ্যমে রহবিয়াম তার অতীতের তুলনায় আরও বেশি বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

রহবিয়াম ভালো ব্যক্তি ছিলেন, না কি খারাপ ব্যক্তি ছিলেন?

যদিও রহবিয়াম কিছু ভালো কাজ করেছিলেন, তা সত্ত্বেও বাইবেল তার শাসন সম্বন্ধে বলে: “রহবিয়াম . . . যাহা মন্দ তাহাই করিতেন।” কেন? কারণ “রহবিয়াম সদাপ্রভুর অন্বেষণ করণার্থে আপন অন্তঃকরণ সুস্থির করেন নাই।” এই কারণেই যিহোবা তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না।—২ বংশা. ১২:১৪.

রহবিয়ামের দায়ূদের মতো যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না

রহবিয়ামের জীবন থেকে আমরা কী শিখতে পারি? তিনি কখনো কখনো ঈশ্বরের কথা মেনে চলেছিলেন। আর তিনি যিহোবার লোকেদের জন্য কিছু ভালো কাজ করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবার সঙ্গে তার এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না আর তার মনে যিহোবাকে খুশি করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল না। এইজন্য তিনি সঠিক কাজ করা বন্ধ করে দিয়ে মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন। আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন: ‘রহবিয়াম যখন যিহোবার কাছে থেকে আসা সংশোধন মেনে নিয়েছিলেন, তখন সেটার কারণ কি আসলে এই ছিল যে, তিনি তার ভুলগুলোর জন্য মন থেকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং তিনি ঈশ্বরকে খুশি করতে চেয়েছিলেন? না কি তিনি কেবল অন্যদের কথা শুনে এমনটা করেছিলেন?’ (২ বংশা. ১১:৩, ৪; ১২:৬) পরবর্তী জীবনে, তিনি আবারও খারাপ কাজ করেছিলেন। তিনি তার ঠাকুরদাদা রাজা দায়ূদের চেয়ে খুবই ভিন্ন ছিলেন! এটা ঠিক যে, দায়ূদ ভুল করেছিলেন। কিন্তু, তিনি তার গুরুতর পাপগুলোর বিষয়ে মন থেকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন। আর তিনি সারা জীবন ধরে যিহোবাকে ও সত্য উপাসনাকে ভালোবেসে গিয়েছিলেন।—১ রাজা. ১৪:৮; গীত. ৫১:১, ১৭; ৬৩:১.

আমরা বাইবেলের এই বিবরণ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। লোকেরা যখন তাদের পরিবারের জন্য ভরণ-পোষণ জোগায় এবং অন্যদের জন্য ভালো কাজ করে, তখন সেটা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু, যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই এমন উপায়ে তাঁর উপাসনা করতে হবে, যেটা তাঁকে খুশি করে আর সেইসঙ্গে আমাদের অবশ্যই তাঁর সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যিহোবার প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেমন আমরা আগুনে আরও বেশি কাঠ দেওয়ার মাধ্যমে সেটাকে জ্বালিয়ে রাখি, তেমনই আমরা নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার, সেটি নিয়ে ধ্যান করার ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে বজায় রাখি। (গীত. ১:২; রোমীয় ১২:১২) আর এই ভালোবাসা আমাদের সমস্ত কাজে যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। এ ছাড়া, আমরা যখন কোনো ভুল করি, তখন এটা আমাদের অনুতপ্ত হতে এবং যিহোবার কাছে ক্ষমা চাইতে অনুপ্রাণিত করবে। এভাবে, রহবিয়ামের বিপরীতে আমরা সত্য উপাসনার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখব।—যিহূদা ২০, ২১.

^ অনু. 9 যেহেতু শলোমন অবিশ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তাই ঈশ্বর ইতিমধ্যেই বলেছিলেন যে, সেই রাজ্য দু-ভাগে ভাগ হয়ে যাবে।—১ রাজা. ১১:৩১.