সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা, তোমরা এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করতে পার

অল্পবয়সিরা, তোমরা এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করতে পার

“তুমি আমাকে জীবনের পথ জ্ঞাত করিবে।”—গীত. ১৬:১১.

গান সংখ্যা: ৪১, ১২০

১, ২. কীভাবে টোনির অভিজ্ঞতা দেখায় যে, জীবনে পরিবর্তন করা সম্ভব?

টোনি নামে একটি ছেলে পিতৃহীন অবস্থায় বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। তিনি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তেন কিন্তু পড়াশোনায় তার খুব-একটা আগ্রহ ছিল না। সত্যি বলতে কী, তিনি পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যালয় ছাড়ার কথা চিন্তা করছিলেন। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে টোনি সিনেমা দেখতে যেতেন অথবা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তিনি হিংস্র স্বভাবের অথবা মাদকাসক্ত ছিলেন না ঠিকই, তবে তার জীবনে কোনো উদ্দেশ্যও ছিল না। তিনি এমনকী সন্দেহ করতেন যে, ঈশ্বর সত্যিই আছেন কি না। একদিন, টোনির সঙ্গে দু-জন যিহোবার সাক্ষির দেখা হয় এবং তিনি ঈশ্বর সম্বন্ধে নিজের সন্দেহের বিষয়ে তাদের কাছে বলেন। সেই সাক্ষিরা তাকে দুটো ব্রোশার পড়তে দেন—জীবনকে কি সৃষ্টি করা হয়েছিল? (ইংরেজি) ও জীবনের উৎপত্তি—জিজ্ঞেস করা যথার্থ এমন পাঁচটি প্রশ্ন (ইংরেজি)।

সাক্ষিরা যখন পরের বার টোনির সঙ্গে দেখা করেন, তখন তারা দেখেন, তার চিন্তাভাবনা পুরোপুরি পালটে গিয়েছে। তিনি সেই ব্রোশারগুলো এত বার পড়েছিলেন যে, পৃষ্ঠাগুলো ভাঁজ করা ও কোঁচকানো ছিল। টোনি সেই সাক্ষিদের বলেন: “একজন ঈশ্বর নিশ্চয়ই রয়েছেন।” তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে, জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে যায়। অধ্যয়ন শুরু করার আগে টোনি ভালো ছাত্র ছিলেন না কিন্তু তিনি তার স্কুলের সবচেয়ে ভালো ছাত্রদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন! এমনকী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও অবাক হয়ে যান। তিনি টোনিকে বলেন: “তুমি তোমার মনোভাব ও পরীক্ষার নম্বরের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছ। এটা কি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তোমার মেলামেশার কারণে হয়েছে?” টোনি তাকে বলেন যে, সাক্ষিদের সঙ্গে তার মেলামেশার কারণেই এমনটা হয়েছে এবং তিনি যা শিখছেন, সেগুলো তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানান। তিনি উচ্চবিদ্যালয় থেকে পাশ করেন এবং বর্তমানে, তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী ও পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করেন। টোনি খুবই আনন্দিত যে, এখন তার কাছে একজন প্রেমময় পিতা অর্থাৎ যিহোবা রয়েছেন!—গীত. ৬৮:৫.

যিহোবার বাধ্য হলে তুমি সফল হবে

৩. যিহোবা অল্পবয়সিদের কোন পরামর্শ দেন?

টোনির অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবা সত্যিই অল্পবয়সিদের জন্য চিন্তা করেন। তিনি চান যেন তুমি এক প্রকৃতই সফল ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করো আর তাই, তিনি তোমাকে তোমার “যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে” স্মরণ করার পরামর্শ দেন। (উপ. ১২:১) এটা করা সবসময় সহজ নয়, তবে এটা অসম্ভবও নয়। ঈশ্বরের সাহায্যে তুমি অল্প বয়সে ও পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত বয়সে, উভয় সময়ই সফল জীবন লাভ করতে পার। এটা আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা আলোচনা করব যে, কী ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছিল এবং কী দায়ূদকে দৈত্যাকৃতির গলিয়াৎকে পরাজিত করার শক্তি জুগিয়েছিল।

৪, ৫. ইস্রায়েলীয়রা যেভাবে কনানকে পরাজিত করেছিল এবং দায়ূদ যেভাবে গলিয়াৎকে পরাজিত করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কোন মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখো।)

ইস্রায়েলীয়রা যখন প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল, তখন যিহোবা তাদের কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন? তিনি কি তাদের আরও ভালো সৈনিক হতে অথবা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে বলেছিলেন? না! (দ্বিতীয়. ২৮:১, ২) তিনি তাদের তাঁর বাধ্য হতে এবং তাঁর উপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন। (যিহো. ১:৭-৯) এই পরামর্শ হয়তো মানুষের কাছে যুক্তিসংগত বলে মনে হয়নি কিন্তু আসলে, এটা ইস্রায়েলীয়দের জন্য সর্বোত্তম পরামর্শ ছিল। যিহোবা বার বার তাঁর লোকেদের কনানীয়দের পরাজিত করতে সাহায্য করেছিলেন। (যিহো. ২৪:১১-১৩) এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় কিন্তু সেই বিশ্বাস সবসময় সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। এটা অতীতেও সত্য হয়েছিল এবং বর্তমানেও সত্য।

গলিয়াৎ ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তিনি প্রায় সাড়ে নয় ফুট (২.৯ মিটার) লম্বা ছিলেন এবং তিনি মারাত্মক অস্ত্র বহন করতেন। (১ শমূ. ১৭:৪-৭) অন্যদিকে, দায়ূদের কাছে কেবল একটা ফিঙে এবং ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস ছিল। যে-ব্যক্তির বিশ্বাস নেই, তিনি ভাবতে পারতেন যে, দায়ূদ গলিয়াতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়ে বোকামি করছিলেন! কিন্তু আসলে, গলিয়াৎই বোকামি করেছিলেন।—১ শমূ. ১৭:৪৮-৫১.

৬. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

আগের প্রবন্ধে আমরা এমন চারটে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, যেগুলো আমাদের জীবনকে আরও বেশি সুখী ও সফল করে তুলতে পারে। আমরা শিখেছিলাম যে, আমাদের নিজেদের আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নিতে হবে, ঈশ্বরকে ভালোবাসে এমন ভালো বন্ধু বাছাই করতে হবে, অর্থপূর্ণ লক্ষ্য স্থাপন করতে হবে এবং ঈশ্বরের দেওয়া স্বাধীনতাকে মূল্যবান হিসেবে দেখতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা আরও আলোচনা করব যে, এই ভালো বিষয়গুলো করার মাধ্যমে আমরা আর কোন কোন উপায়ে উপকৃত হতে পারি। এমনটা করার জন্য এসো, আমরা গীতসংহিতা ১৬ গীতে পাওয়া কয়েকটা নীতি বিবেচনা করি।

তোমার আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নাও

৭. (ক) কীভাবে তুমি একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তির বর্ণনা করবে? (খ) দায়ূদের “দায়াংশ” কী ছিল এবং কীভাবে সেটা তাকে প্রভাবিত করেছিল?

একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তির ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন বিষয়কে ঈশ্বরের মতো করে দেখার চেষ্টা করেন। তিনি যিহোবাকে তার জীবনে নির্দেশনা দিতে দেন এবং তিনি তাঁর বাধ্য হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (১ করি. ২:১২, ১৩) আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দায়ূদ হলেন একজন উত্তম উদাহরণ। তিনি গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভু আমার দায়াংশ।” (গীত. ১৬:৫) দায়ূদ তার “দায়াংশ” অর্থাৎ ঈশ্বরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন এবং তিনি তাঁর কাছে শরণ বা আশ্রয় নিয়েছিলেন। (গীত. ১৬:১) ফল স্বরূপ, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমার চিত্ত আনন্দিত।” যিহোবার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের চেয়ে আর কোনো কিছুই দায়ূদকে আরও বেশি সুখী করেনি!—পড়ুন, গীতসংহিতা ১৬:৯, ১১.

৮. কয়েকটা বিষয় কী, যেগুলো তোমার জীবনকে প্রকৃতই পরিতৃপ্তিদায়ক করে তুলতে পারে?

যে-লোকেরা টাকাপয়সা অথবা সুখভোগের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে, তারা কখনোই দায়ূদের মতো অতটা আনন্দ লাভ করতে পারবে না। (১ তীম. ৬:৯, ১০) কানাডার একজন ভাই বলেন: “আমরা জীবন থেকে কত কী লাভ করতে পারি, সেটার দ্বারা নয় বরং আমরা সমস্ত উত্তম দানের দাতা যিহোবা ঈশ্বরকে কী দিই, সেটার দ্বারা প্রকৃত পরিতৃপ্তি আসে।” (যাকোব ১:১৭) তুমি যদি যিহোবার উপর বিশ্বাস গড়ে তোলো এবং তাঁর সেবা করো, তা হল তুমি এক প্রকৃতই উদ্দেশ্যপূর্ণ ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করবে। তাই, তুমি তোমার বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কী করতে পার? তোমাকে এই বিষয়গুলো করার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে সময় কাটাতে হবে: তোমাকে তাঁর বাক্য পড়তে হবে, তাঁর সৃষ্ট সুন্দর সুন্দর বিষয়গুলো লক্ষ করতে হবে এবং তাঁর গুণাবলি নিয়ে চিন্তা করতে হবে, যার অন্তর্ভুক্ত হল তোমার প্রতি তাঁর প্রেম।—রোমীয় ১:২০; ৫:৮.

৯. কীভাবে তুমি ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার দ্বারা নিজেকে গঠিত হতে দিতে পার?

কখনো কখনো যিহোবা ঠিক একজন প্রেমময় বাবার মতো প্রয়োজনে আমাদের সংশোধন করার মাধ্যমে আমাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখিয়ে থাকেন। দায়ূদ এই সংশোধনকে মূল্যবান হিসেবে দেখেছিলেন এবং বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব, তিনিই আমাকে মন্ত্রণা দিয়াছেন, রাত্রিতেও আমার চিত্ত আমাকে প্রবোধ দেয়” বা সংশোধন করে। (গীত. ১৬:৭) দায়ূদ ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করেছিলেন এবং সেগুলোকে নিজের চিন্তাভাবনার অংশ করে তুলেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার দ্বারা নিজেকে গঠিত হতে দিয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি সেগুলোর দ্বারা নিজেকে পরিবর্তিত হতে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি আরও ভালো ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেন। তুমিও যখন একই বিষয় করবে, তখন ঈশ্বরের প্রতি তোমার প্রেম এবং তাঁকে খুশি করার বিষয়ে তোমার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাবে এবং তুমি একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠবে। ক্রিস্টান নামে একজন বোন বলেন যে, তিনি যখন গবেষণা করেন এবং তিনি যা পড়েন, তা নিয়ে ধ্যান করেন, তখন তিনি অনুভব করেন যেন যিহোবা সেই বিষয়গুলো তার জন্যই লিখে রেখেছেন!

১০. যিশাইয় ২৬:৩ পদ থেকে পাওয়া শিক্ষা অনুযায়ী কীভাবে আধ্যাত্মিকমনা হওয়া তোমাকে সাহায্য করবে?

১০ তুমি যখন আধ্যাত্মিকমনা হবে, তখন তুমি এই জগৎ ও এর ভবিষ্যৎকে ঈশ্বরের মতো করে দেখবে। যিহোবা তোমাকে এই অসাধারণ জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টি দেন। কেন? তিনি চান যেন তুমি জীবনে সঠিক অগ্রাধিকার স্থাপন করো, ভালো সিদ্ধান্ত নাও এবং কোনোরকম ভয় ছাড়াই ভবিষ্যতের দিকে তাকাও! (পড়ুন, যিশাইয় ২৬:৩.) জশুয়া নামে যুক্তরাষ্ট্রের একজন ভাই বলেন যে, তুমি যদি যিহোবার নিকটে থাকো, তা হলে তুমি স্পষ্টভাবে দেখতে পারবে, কোন বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ আর কোন বিষয়টা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

প্রকৃত বন্ধুদের বাছাই করো

১১. কীভাবে দায়ূদ তার বন্ধুদের বাছাই করেছিলেন?

১১ গীতসংহিতা ১৬:৩ পদ পড়ুন। দায়ূদ জানতেন, কীভাবে ভালো বন্ধু খুঁজে পেতে হয়। তিনি সেই ব্যক্তিদের বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে আর এটা তাকে প্রচুর ‘প্রীতি’ বা আনন্দ এনে দিয়েছিল। তিনি তার বন্ধুদের “পবিত্র ব্যক্তিগণ” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন কারণ তারা যিহোবার শুদ্ধ নৈতিক মান অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল। আরেকজন গীতরচক বন্ধু বাছাই করা সম্বন্ধে একই বিষয় অনুভব করেছিলেন এবং লিখেছিলেন: “আমি সেই সকলের সখা, যাহারা তোমাকে ভয় করে, এবং যাহারা তোমার নিদেশ সকল পালন করে।” (গীত. ১১৯:৬৩) আমরা যেমন আগের প্রবন্ধে আলোচনা করেছি, তুমিও সেই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক ভালো বন্ধু খুঁজে পেতে পার, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে ও তাঁর বাধ্য হয়। আর সত্যি বলতে কী, তোমার বন্ধুদেরও যে তোমার বয়সেরই হতে হবে, এমন নয়।

১২. কেন দায়ূদ ও যোনাথন ভালো বন্ধু ছিলেন?

১২ দায়ূদ কেবল তার সমবয়সি ব্যক্তিদেরই তার বন্ধু হওয়ার জন্য বাছাই করেননি। তুমি কি দায়ূদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে একজনের নাম বলতে পার? তুমি হয়তো যোনাথনের কথা চিন্তা করতে পার। দায়ূদ ও যোনাথনের বন্ধুত্ব হল বাইবেলে পাওয়া সবচেয়ে চমৎকার বন্ধুত্বের বিবরণগুলোর মধ্যে একটা। কিন্তু, তুমি কি জানতে যে, যোনাথন দায়ূদের চেয়ে প্রায় ৩০ বছরের বড়ো ছিলেন? তা হলে, কেন তারা এত ভালো বন্ধু ছিলেন? তাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি ছিল ঈশ্বরের উপর তাদের বিশ্বাস। এ ছাড়া, তারা একে অন্যকে সম্মান করতেন এবং একে অন্যের ভালো গুণগুলোকে মূল্যবান হিসেবে দেখতেন, যে-গুণগুলোর মধ্যে একটা ছিল সাহস, যা তারা দু-জনেই ঈশ্বরের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়ে দেখিয়েছিলেন।—১ শমূ. ১৩:৩; ১৪:১৩; ১৭:৪৮-৫০; ১৮:১.

১৩. কীভাবে তুমি আরও বেশি ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পার? একটা উদাহরণ দাও।

১৩ দায়ূদ ও যোনাথনের মতোই আমরা যখন সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে আর যাদের তাঁর উপর বিশ্বাস রয়েছে, তখন আমরা প্রচুর ‘প্রীতি’ বা আনন্দ লাভ করতে পারি। কিরা নামে একজন বোন, যিনি অনেক বছর ধরে ঈশ্বরের সেবা করেছেন, বলেন, “আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন পটভূমির ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি।” তুমিও যখন একই বিষয় করবে, তখন তুমি নিজেই দেখবে যে, কীভাবে বাইবেল ও পবিত্র আত্মা আমাদের উপাসকদের এক বিশ্বব্যাপী পরিবার হিসেবে একতাবদ্ধ করে তোলে।

অর্থপূর্ণ লক্ষ্য স্থাপন করো

১৪. (ক) কীভাবে তুমি জীবনে অর্থপূর্ণ লক্ষ্য স্থাপন করতে পার? (খ) কোনো কোনো অল্পবয়সি তাদের লক্ষ্য সম্বন্ধে কী বলে?

১৪ গীতসংহিতা ১৬:৮ পদ পড়ুন। দায়ূদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ঈশ্বরের সেবা করা। তুমি যদি লক্ষ্য স্থাপন করার সময়ে দায়ূদকে অনুকরণ করো এবং সবসময় এটা নিয়ে চিন্তা করো যে, যিহোবা তোমার কাছ থেকে কী চান, তা হলে তোমার জীবন পরিতৃপ্তিদায়ক হবে। স্টিভান নামে একজন ভাই বলেন: “আমি যখন কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করি, সেটাতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সফল হই এবং আমার করা উন্নতির দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমি পরিতৃপ্তি লাভ করি।” জার্মানির একজন অল্পবয়সি ভাই, যিনি এখন অন্য এক দেশে সেবা করেন, বলেন: “আমি যখন বৃদ্ধ হয়ে যাব, তখন আমি আমার জীবনের দিকে ফিরে তাকিয়ে এটা দেখতে চাই না যে, আমি কেবল নিজের জন্যই সব কিছু করেছিলাম।” তুমিও কি একইরকম অনুভব করো? যদি করো, তা হলে তোমার দক্ষতা ও প্রতিভাগুলোকে ঈশ্বরের সম্মান করার ও অন্য লোকেদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করো। (গালা. ৬:১০) যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করো এবং সেই লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চাও। তুমি নিশ্চিত থাকতে পার, তিনি তোমার প্রার্থনার উত্তর দেবেন!—১ যোহন ৩:২২; ৫:১৪, ১৫.

১৫. তুমি তোমার জীবনে কোন কোন লক্ষ্য স্থাপন করতে পার? (“ কয়েকটা লক্ষ্য, যেগুলো নিয়ে তুমি চিন্তা করতে পার” শিরোনামের বাক্সটা দেখো।)

১৫ কয়েকটা লক্ষ্য কী, যেগুলো তুমি স্থাপন করতে পার? সভাতে নিজের ভাষায় মন্তব্য করার চেষ্টা করা সম্বন্ধে কী বলা যায়? অথবা অগ্রগামী সেবা কিংবা বেথেলে সেবা করার লক্ষ্য সম্বন্ধে কী বলা যায়? এ ছাড়া, তুমি একটা নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করতে পার, যাতে তুমি সেই ভাষা ব্যবহার করে আরও বেশি লোকের কাছে সুসমাচার জানাতে পার। বারাক নামে একজন অল্পবয়সি ভাই, যিনি পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করেন, বলেন: “আমি প্রতিদিন সকালে উঠে এটা উপলব্ধি করি যে, আমি আমার সমস্ত শক্তি যিহোবাকে দিচ্ছি আর এটা এমন এক অনুভূতি, যেটা অন্য কোনো কাজ করার মাধ্যমে লাভ করা যায় না।”

ঈশ্বর তোমাকে যে-স্বাধীনতা দেন, সেটাকে মূল্যবান হিসেবে দেখো

১৬. দায়ূদ যিহোবার আইন ও নীতিগুলো সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেছিলেন এবং কেন?

১৬ গীতসংহিতা ১৬:২,  পদ পড়ুন। আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন শিখেছি, আমরা যখন ঈশ্বরের আইন ও নীতিগুলো অনুসরণ করে জীবনযাপন করি, তখন আমরা প্রকৃতই স্বাধীন হই। আমরা উত্তমকে ভালোবাসতে ও মন্দকে ঘৃণা করতে শিখি। (আমোষ ৫:১৫) দায়ূদ বলেছিলেন, যিহোবা “ব্যতীত” তার “মঙ্গল নাই।” যিহোবা তাঁর সমস্ত কাজে মঙ্গলভাব দেখান এবং আমাদের কাছে থাকা যেকোনো মঙ্গলজনক বা ভালো বিষয় তাঁর কাছ থেকে আসে। দায়ূদ ঈশ্বরকে অনুকরণ করার ও যিহোবা যে-বিষয়গুলোকে ভালোবাসেন, সেগুলোকে ভালোবাসার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া, দায়ূদ সেই বিষয়গুলোকে ঘৃণা করতেও শিখেছিলেন, যেগুলো ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মন্দ। এর মধ্যে একটা বিষয় হল প্রতিমাপূজা, যেটার অর্থ হল যিহোবাকে ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি অথবা বস্তুর উপাসনা করা। প্রতিমাপূজা মানুষকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায় আর এটা যিহোবার প্রাপ্য প্রতাপ বা গৌরবকে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তি অথবা বস্তুকে দেয়।—যিশা. ২:৮, ৯; প্রকা. ৪:১১.

১৭, ১৮. (ক) মিথ্যা উপাসনার মন্দ পরিণতি সম্বন্ধে দায়ূদ কী বলেছিলেন? (খ) কীসের জন্য বর্তমানে লোকেদের ‘যাতনা বৃদ্ধি পায়’?

১৭ বাইবেলের সময়ে, প্রায়ই মিথ্যা উপাসনার একটা অংশ ছিল যৌন অনৈতিকতা। (হোশেয় ৪:১৩, ১৪) অনেকে মিথ্যা উপাসনাকে পছন্দ করত কারণ তারা অনৈতিক জীবনযাপন করাকে উপভোগ করত। কিন্তু, এই ধরনের উপাসনা কি তাদের সুখী করত? একেবারেই না! দায়ূদ বলেছিলেন যে, যারা মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করে, “তাহাদের যাতনা বৃদ্ধি পাইবে।” সেই লোকেরা এমনকী মিথ্যা দেবতাদের কাছে তাদের সন্তানদের বলি দিয়েছিল! (যিশা. ৫৭:৫) যিহোবা তাদের নিষ্ঠুরতাকে ঘৃণা করতেন। (যির. ৭:৩১) তুমি যদি সেই সময়ে বেঁচে থাকতে, তা হলে তুমি খুবই কৃতজ্ঞ হতে যে, তোমার বাবা-মা যিহোবার উপাসনা করেন!

১৮ বর্তমানে, অনেক মিথ্যা ধর্ম ‘ব্যভিচারকে [‘যৌন অনৈতিকতাকে,’ NW]’ গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখে থাকে, যার মধ্যে সমকামিতাও রয়েছে। এক অনৈতিক জীবনধারা হয়তো লোকেদের এমনটা মনে করাতে পারে যে, তারা স্বাধীন কিন্তু আসলে ‘তাহাদের যাতনা বৃদ্ধি পায়।’ (১ করি. ৬:১৮, ১৯) তুমি কি এটা লক্ষ করেছ? তাই অল্পবয়সিরা, তোমাদের স্বর্গীয় পিতার কথা শোনো। নিজের কাছে প্রমাণ করো যে, ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া তোমার জন্য ভালো। অনৈতিকতার মন্দ পরিণতি নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করো। তুমি দেখবে যে, অনৈতিকতার ফলে যে-ক্ষতি হয়, সেটা যেকোনো ক্ষণস্থায়ী আনন্দের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর। (গালা. ৬:৮) আগে উল্লেখিত ভাই জশুয়া বলেন: “এটা ঠিক যে, আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারি, তবে এটার অপব্যবহার করা মোটেও পরিতৃপ্তিদায়ক নয়।”

১৯, ২০. যে-অল্পবয়সিরা যিহোবার উপর বিশ্বাস রাখে এবং তাঁর বাধ্য হয়, তারা কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করবে?

১৯ যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।” (যোহন ৮:৩১, ৩২) আমরা কৃতজ্ঞ যে, যিহোবার সাহায্যে আমরা মিথ্যা ধর্ম, অজ্ঞানতা ও কুসংস্কার থেকে স্বাধীন। আমরা ভবিষ্যতে “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” লাভ করার জন্য অপেক্ষা করছি। (রোমীয় ৮:২১) তুমি এমনকী এখনই খ্রিস্টের শিক্ষা অনুসরণ করার সময়ে সেই স্বাধীনতার কিছুটা অংশ উপভোগ করতে পার। এভাবে, তুমি কেবল সত্য শেখার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করার মাধ্যমেও “সেই সত্য জানিবে”!

২০ অল্পবয়সিরা, ঈশ্বর তোমাদের যে-স্বাধীনতা দেন, সেটাকে মূল্যবান হিসেবে দেখো। সেটাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করো। এটা তোমাকে এখনই এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করবে, যেগুলো তোমাকে সর্বোত্তম ভবিষ্যৎ প্রদান করবে। একজন অল্পবয়সি ভাই বলেন: “অল্পবয়সি হিসেবে তোমার স্বাধীনতাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করা পরবর্তী সময়ে সত্যিই সাহায্য করে, যখন তোমাকে আরও বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হয় যেমন, কোন চাকরিটা তোমার জন্য উপযুক্ত হবে অথবা তুমি বিয়ে করবে, না কি কিছু সময়ের জন্য অবিবাহিত থাকবে।”

২১. কীভাবে তুমি “প্রকৃতরূপে জীবন” লাভ করতে পার?

২১ এই পুরোনো বিধিব্যবস্থায়, এমনকী লোকেরা যেটাকে উত্তম জীবন বলে মনে করে, সেটাও খুবই সংক্ষিপ্ত। কোনো মানুষই জানে না, কাল কী হবে। (যাকোব ৪:১৩, ১৪) তাই, তুমি সর্বোত্তম যে-কাজটা করতে পার, তা হল এমন বাছাইগুলো করা, যেগুলো তোমাকে “প্রকৃতরূপে জীবন” অর্থাৎ ঈশ্বরের চমৎকার নতুন জগতে অনন্তজীবন পেতে সাহায্য করবে। (১ তীম. ৬:১৯) যিহোবা কাউকে তাঁর সেবা করার জন্য জোর করেন না। আমাদের প্রত্যেককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কী করব। তাই, যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে যিহোবাকে তোমার “দায়াংশ” করো এবং তিনি তোমাকে যে-সমস্ত ‘উত্তম দ্রব্য’ দেন, সেগুলোকে মূল্যবান হিসেবে দেখো। (গীত. ১০৩:৫) নিশ্চিত থাকো, যিহোবা তোমাকে চিরকাল ধরে প্রচুর আনন্দ ও সুখ দিতে পারেন!—গীত. ১৬:১১.