সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“পরমদেশে দেখা হবে!”

“পরমদেশে দেখা হবে!”

“তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪৩.

গান সংখ্যা: ১৯, ৫৫

১, ২. পরমদেশের বিষয়ে লোকেদের মনে ভিন্ন ভিন্ন কোন ধারণা রয়েছে?

বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক ভাই-বোন একটা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য কোরিয়ার সিওল শহরে এসেছিল। তারা স্টেডিয়াম থেকে চলে যাওয়ার সময়ে স্থানীয় সাক্ষিরা তাদের চারপাশে একত্রিত হয়েছিল। এই দৃশ্যটা খুবই হৃদয়স্পর্শী ছিল কারণ তাদের মধ্যে অনেকে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাচ্ছিল এবং একে অপরকে বলছিল: “পরমদেশে দেখা হবে!” কী মনে হয়, তারা কোন পরমদেশের বিষয়ে বলছিল?

বর্তমানে, পরমদেশের বিষয়ে লোকেদের মনে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ বলে, পরমদেশ কেবল এক কল্পনা মাত্র। অন্যেরা বলে, পরমদেশ হল এমন যেকোনো জায়গা, যেখানে তারা আনন্দ অনুভব করে। একজন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাবারে পরিপূর্ণ একটা বড়ো টেবিলের সামনে বসে হয়তো ভাবতে পারেন যে, তিনি পরমদেশে রয়েছেন। কেউ একটা সুন্দর জায়গা যেমন, বুনো ফুলে পরিপূর্ণ এক অপূর্ব উপত্যকা দেখে বলতে পারে, “বাহ্‌, কী এক পরমদেশ!” আপনার কী মনে হয়, পরমদেশ কী? আপনি কি আশা করেন যে, এটা আসবে?

৩. পরমদেশ সম্বন্ধে বাইবেলে কোথায় প্রথম উল্লেখ রয়েছে?

বাইবেল বলে, অতীতে এক পরমদেশ ছিল এবং ভবিষ্যতেও এক পরমদেশ আসবে। পরমদেশ সম্বন্ধে প্রথম উল্লেখ আমরা বাইবেলের একেবারে প্রথম বইয়েই পাই। আদিপুস্তক ২:৮ পদ বলে: “আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্ব্বদিকে, এদনে, এক উদ্যান [“আনন্দদায়ক পরমদেশ,” ক্যাথলিক ডুয়ে ভারশন] প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই স্থানে আপনার নির্ম্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন।” “এদন” শব্দের অর্থ হল “আনন্দ” আর সেই উদ্যান সত্যিই এক মনোরম ও অপূর্ব জায়গা ছিল। সেখানে প্রচুর খাবার ছিল এবং মানুষ ও পশুপাখির মধ্যে শান্তি ছিল।—আদি. ১:২৯-৩১.

৪. কেন আমরা এদন উদ্যানকে পরমদেশ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি?

“উদ্যান” শব্দের ইব্রীয় শব্দটাকে গ্রিক ভাষায় প্যার্‌যাদিসস্‌ অর্থাৎ পরমদেশ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। ম্যাক্লিন্টক ও স্ট্রং-এর সাইক্লোপিডিয়া বলে যে, একজন গ্রিক ব্যক্তি যখন প্যার্‌যাদিসস্‌ শব্দটা শুনতেন, তখন তিনি এক অপূর্ব বিশাল পার্কের বিষয়ে কল্পনা করতেন, যেটা যেকোনো বিপদ থেকে সুরক্ষিত রয়েছে, যেটার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফলের বড়ো বড়ো গাছ রয়েছে এবং স্বচ্ছ জলে পরিপূর্ণ ছোটো ছোটো নদী রয়েছে আর সেগুলোর কিনারায় প্রচুর ঘাস রয়েছে, যাতে হরিণ ও মেষের পাল ঘাস খেতে পারে। এই বর্ণনা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, এদন উদ্যান সত্যিই এক পরমদেশ ছিল।—তুলনা করুন, আদিপুস্তক ২:১৫, ১৬.

৫, ৬. কেন আদম ও হবা পরমদেশে বাস করার বিশেষ সুযোগ হারিয়েছিলেন এবং কেউ কেউ কী নিয়ে চিন্তা করতে পারে?

যিহোবা আদম ও হবাকে সেই ধরনের এক উদ্যানে অর্থাৎ এক পরমদেশে রেখেছিলেন। কিন্তু, যেহেতু তারা যিহোবার অবাধ্য হয়েছিলেন, তাই তারা ও তাদের সন্তানরা পরমদেশে বাস করার বিশেষ সুযোগ হারিয়েছিলেন। (আদি. ৩:২৩, ২৪) যদিও সেই পরমদেশে আর কোনো মানুষ বাস করেনি কিন্তু এমনটা মনে হয় যে, নোহের দিনের জলপ্লাবনের আগে পর্যন্ত সেটা অস্তিত্বে ছিল।

কেউ কেউ চিন্তা করতে পারে, ‘পৃথিবীতে কি আবারও কখনো পরমদেশ আসবে?’ বিভিন্ন তথ্য কী দেখায়? আপনি যদি আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে পরমদেশে বাস করার আশা রাখেন, তা হলে আপনার কি এই আশা রাখার উত্তম কারণ রয়েছে? আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, ভবিষ্যতে পরমদেশ আসবেই?

ভবিষ্যতের এক পরমদেশের প্রমাণ

৭, ৮. (ক) ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা হয়তো অব্রাহামকে কী নিয়ে ভাবতে অনুপ্রাণিত করেছিল?

পরমদেশ সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সর্বোত্তম জায়গা হল বাইবেল কারণ এই বইটি যিহোবার কাছ থেকে এসেছে, যিনি প্রথম পরমদেশটা তৈরি করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর বন্ধু অব্রাহামকে কী বলেছিলেন, সেটা বিবেচনা করুন। ঈশ্বর বলেছিলেন, তিনি অব্রাহামের বংশকে “সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায়” প্রচুররূপে বৃদ্ধি করবেন। এরপর, যিহোবা অব্রাহামের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।” (আদি. ২২:১৭, ১৮) পরবর্তী সময়ে, ঈশ্বর এই একই প্রতিজ্ঞা অব্রাহামের ছেলে ও নাতির কাছে করেছিলেন।—পড়ুন, আদিপুস্তক ২৬:৪; ২৮:১৪.

বাইবেলে কোথাও এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, অব্রাহাম ভেবেছিলেন, মানুষ এক স্বর্গীয় পরমদেশে চূড়ান্ত পুরস্কার লাভ করবে। তাই, ঈশ্বর যখন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “পৃথিবীর সকল জাতি” আশীর্বাদ লাভ করবে, তখন অব্রাহাম যুক্তিসংগতভাবেই ভেবেছিলেন যে, এই আশীর্বাদগুলো পৃথিবীতে আসবে। কিন্তু, এটাই কি বাইবেলে পাওয়া একমাত্র প্রমাণ, যেটা দেখায় যে, পৃথিবীতে পরমদেশ আসবে?

৯, ১০. পরবর্তী সময়ে করা কোন প্রতিজ্ঞাগুলো আমাদের এমনটা আশা করার কারণ জোগায় যে, ভবিষ্যতে পরমদেশ আসবে?

ঈশ্বর অব্রাহামের একজন বংশধর দায়ূদকে ভবিষ্যতের এমন এক সময়ের বিষয়ে বলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যখন দেখা যাবে যে, “দুষ্ট লোক আর নাই।” (গীত. ৩৭:১, ২, ১০) এর পরিবর্তে, “মৃদুশীলেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” দায়ূদ এও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “ধার্ম্মিকেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীত. ৩৭:১১, ২৯; ২ শমূ. ২৩:২) কী মনে হয়, এই প্রতিজ্ঞাগুলো সেই লোকেদের কীভাবে প্রভাবিত করেছিল, যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চেয়েছিল? তাদের কাছে এই আশা রাখার কারণ ছিল যে, একসময় কেবল ধার্মিক লোকেরা পৃথিবীতে বাস করবে এবং পৃথিবী আবারও এদন উদ্যানের মতো পরমদেশ হয়ে উঠবে।

১০ সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, যে-ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার সেবা করার দাবি করত, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তাঁকে ও সেইসঙ্গে সত্য উপাসনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই, ঈশ্বর বাবিলীয়দের তাঁর লোকেদের পরাজিত করতে, তাদের দেশ ধ্বংস করতে এবং তাদের মধ্যে অনেককে বন্দি করে নিয়ে যেতে দিয়েছিলেন। (২ বংশা. ৩৬:১৫-২১; যির. ৪:২২-২৭) কিন্তু, ঈশ্বরের ভাববাদীরা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল যে, ৭০ বছর পর তাঁর লোকেরা আবারও নিজেদের দেশে ফিরে আসবে। আর সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো সত্যিই পরিপূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু, সেগুলো বর্তমানে আমাদের জন্যও অর্থ রাখে। আমরা যখন সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করব, তখন লক্ষ করুন, কীভাবে সেগুলো আমাদের এই আশা রাখার কারণ জোগায় যে, ভবিষ্যতে পৃথিবীতে পরমদেশ আসবে।

১১. কীভাবে যিশাইয় ১১:৬-৯ পদ প্রথম বার পরিপূর্ণ হয়েছিল কিন্তু আমরা এখনও কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?

১১ যিশাইয় ১১:৬-৯ পদ পড়ুন। ঈশ্বর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, ইস্রায়েলীয়রা যখন তাদের নিজেদের দেশে ফিরে আসবে, তখন সেই দেশ শান্তিপূর্ণ হবে। কাউকেই পশু অথবা মানুষের আক্রমণের ভয়ে থাকতে হবে না। অল্পবয়সি ও বয়স্ক, উভয়েই সুরক্ষিত থাকবে। এই ভবিষ্যদ্‌বাণী সেই সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছিল। এটা কি আপনাকে এদন উদ্যানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা মনে করিয়ে দেয়? (যিশা. ৫১:৩) যিশাইয় এও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি” শুধু ইস্রায়েল জাতি নয় কিন্তু পুরো পৃথিবী “সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” কখন এটা ঘটবে? স্পষ্টতই, এটা ভবিষ্যতের বিষয়ে নির্দেশ করে।

১২. (ক) বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করেছিল? (খ) কী দেখায় যে, যিশাইয় ৩৫:৫-১০ পদ ভবিষ্যতেও পরিপূর্ণ হবে?

১২ যিশাইয় ৩৫:৫-১০ পদ পড়ুন। লক্ষ করুন, যিশাইয় আবারও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, বাবিল থেকে ফিরে আসা ইস্রায়েলীয়রা পশু অথবা লোকেদের আক্রমণের শিকার হবে না। তিনি বলেছিলেন, তাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে উত্তম খাদ্য উৎপন্ন হবে কারণ সেখানে প্রচুর পরিমাণে জল থাকবে, ঠিক যেমনটা এদন উদ্যানে ছিল। (আদি. ২:১০-১৪; যির. ৩১:১২) এই ভবিষ্যদ্‌বাণী কি কেবল সেই ইস্রায়েলীয়দের সময়েই পরিপূর্ণ হবে? লক্ষ করুন, ভবিষ্যদ্‌বাণীতে এও বলা হয়েছিল যে, অন্ধ, খঞ্জ ও বধির লোকেরা সুস্থ হবে। কিন্তু, এটা সেই ইস্রায়েলীয়দের প্রতি ঘটেনি, যারা বাবিল থেকে ফিরে এসেছিল। এর পরিবর্তে, ঈশ্বর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে, ভবিষ্যতে তিনি সমস্ত ধরনের অসুস্থতা দূর করবেন।

১৩, ১৪. ইস্রায়েলীয়রা যখন বাবিল থেকে ফিরে এসেছিল, তখন কীভাবে যিশাইয় ৬৫:২১-২৩ পদ পরিপূর্ণ হয়েছিল কিন্তু সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীর কোন অংশ এখনও পরিপূর্ণ হওয়ার বাকি আছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৩ যিশাইয় ৬৫:২১-২৩ পদ পড়ুন। যিহুদিরা যখন তাদের নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল, তখন তারা আরামদায়ক বাড়ি কিংবা শস্যে পরিপূর্ণ খেত অথবা ফলে পরিপূর্ণ দ্রাক্ষালতা দেখতে পায়নি। কিন্তু, যেহেতু ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন, তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পালটে গিয়েছিল। কল্পনা করুন, লোকেরা যখন বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বাস করেছিল এবং তাদের উৎপাদিত সুস্বাদু খাদ্য উপভোগ করেছিল, তখন তারা কতটা আনন্দিত হয়েছিল!

১৪ লক্ষ করুন, এই ভবিষ্যদ্‌বাণী অনুযায়ী আমাদের আয়ু “বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে।” কিছু কিছু গাছ হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকে। এত বছর বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে খুবই স্বাস্থ্যবান হতে হবে। আর তারা যদি যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা শান্তিপূর্ণ ও অপূর্ব পরিবেশে বাস করতে পারে, তা হলে সেটা সত্যিই চমৎকার এক পরমদেশ হবে! আর সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হবে!

পরমদেশ সম্বন্ধে করা যিশুর সেই প্রতিজ্ঞা কীভাবে পরিপূর্ণ হবে? (১৫, ১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. যিশাইয় বইয়ে উল্লেখিত আশীর্বাদগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?

১৫ চিন্তা করুন, আমরা সবেমাত্র যে-প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো কীভাবে দেখায় যে, ভবিষ্যতে পরমদেশ আসবে। পুরো পৃথিবী এমন লোকেদের দ্বারা পরিপূর্ণ হবে, যাদের উপর যিহোবার আশীর্বাদ থাকবে। কাউকেই পশু অথবা দৌরাত্ম্যপূর্ণ লোকেদের আক্রমণের ভয়ে থাকতে হবে না। অন্ধ, বধির ও খঞ্জ লোকেরা সুস্থ হবে। লোকেরা নিজেদের বাড়ি তৈরি করবে এবং আনন্দের সঙ্গে নিজেদের জন্য খাদ্য উৎপন্ন করবে। তারা গাছের চেয়েও বেশি বছর বেঁচে থাকবে। হ্যাঁ, বাইবেল প্রমাণ দেয় যে, এইরকম এক পরমদেশ আসতে চলেছে। কিন্তু, কেউ কেউ হয়তো বলতে পারে, এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোর অর্থ আসলে এই নয় যে, পৃথিবীতে পরমদেশ আসবে। আপনি তাদের কী বলবেন? পৃথিবীতে প্রকৃত পরমদেশ দেখার জন্য অপেক্ষা করার কোন যুক্তিযুক্ত কারণ আপনার কাছে রয়েছে? সর্বকালের সর্বমহান পুরুষ যিশু আমাদের এক যুক্তিযুক্ত কারণ দিয়েছিলেন।

তুমি পরমদেশে উপস্থিত হবে!

১৬, ১৭. কখন যিশু পরমদেশের বিষয়ে কথা বলেছিলেন?

১৬ যদিও যিশু নির্দোষ ছিলেন, তবুও তাঁকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তাঁকে দু-জন যিহুদি অপরাধীর মাঝে একটা দণ্ডে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেই অপরাধীদের মধ্যে একজন বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিশু হলেন একজন রাজা আর তাই, তিনি বলেছিলেন: “যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।” (লূক ২৩:৩৯-৪২) যিশু সেই অপরাধীর কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেটা আপনার ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। যিশুর সেই কথাগুলো লূক ২৩:৪৩ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই বাক্যে কোথায় কমা বসা উচিত, সেই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। বাইবেল সোসাইটি অভ্‌ ইন্ডিয়া-র পবিত্র বাইবেল (O.V.) এই পদটাকে এভাবে অনুবাদ করে: “আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।” কিন্তু, যিশু যখন “অদ্যই” শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

১৭ অনেক আধুনিক ভাষায়, কোনো বাক্যের অর্থকে স্পষ্ট করার জন্য বিভিন্ন যতিচিহ্ন যেমন, কমা অথবা কোলন ব্যবহার করা হয় কিংবা বাক্যের গঠন পরিবর্তন করা হয়। সবচেয়ে প্রাচীন যে-গ্রিক পাণ্ডুলিপিগুলো পাওয়া গিয়েছে, সেগুলোতে যতিচিহ্ন খুব-একটা ব্যবহার করা হয়নি। তাই প্রশ্ন ওঠে: যিশু কি এমনটা বলছিলেন, “আমি তোমাকে বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে”? না কি তিনি বলছিলেন, “অদ্যই আমি তোমাকে বলিতেছি, তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে”? যিশু যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, সেই বিষয়ে অনুবাদকরা হয়তো নিজেদের মতামত অনুযায়ী বাক্যের গঠন পরিবর্তন করেছে অথবা যতিচিহ্ন ব্যবহার করেছে। কীভাবে আমরা তা জানি? আমরা বর্তমানে বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণে এই বাক্যের ভিন্ন ভিন্ন অনুবাদ খুঁজে পাই।

১৮, ১৯. কী আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, যিশু আসলে কী বুঝিয়েছিলেন?

১৮ তবে, যিশু তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে তাঁর অনুসারীদের কী বলেছিলেন, তা স্মরণ করুন। তিনি বলেছিলেন: ‘মনুষ্যপুত্ত্র তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ব্ভে থাকিবেন।’ তিনি আরও বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহাকে বধ করিবে, আর তৃতীয় দিবসে তিনি উঠিবেন।” (মথি ১২:৪০; ১৬:২১; ১৭:২২, ২৩; মার্ক ১০:৩৪) প্রেরিত পিতর সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, এমনটা সত্যিই ঘটেছিল। (প্রেরিত ১০:৩৯, ৪০) তাই, যিশু ও সেই অপরাধী যে-দিন মারা গিয়েছিলেন, সেই দিনেই যিশু পরমদেশে যাননি। বাইবেল বলে, যিশু কিছু দিনের জন্য “পাতালে” বা কবরে ছিলেন, যতক্ষণ না ঈশ্বর তাঁকে পুনরুত্থিত করেছিলেন।—প্রেরিত ২:৩১, ৩২. *

১৯ তাই, যিশু সেই অপরাধীর কাছে করা তাঁর প্রতিজ্ঞার শুরুতে এই অভিব্যক্তিটা ব্যবহার করেছিলেন, “অদ্যই আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি।” এভাবে কথা বলা এমনকী মোশির সময়েও প্রচলিত ছিল। মোশি একবার বলেছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক।”—দ্বিতীয়. ৬:৬; ৭:১১; ৮:১, ১৯; ৩০:১৫.

২০. যিশু যা বলেছিলেন, সেই বিষয়ে কী আমাদের বোধগম্যতাকে সমর্থন করে?

২০ মধ্যপ্রাচ্যের একজন বাইবেল অনুবাদক বলেছিলেন: “এই বাক্যে জোরটা ‘অদ্যই’ শব্দের উপর রয়েছে এবং এটা এভাবে পড়া উচিত, ‘অদ্যই আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।’ প্রতিজ্ঞাটা সেই দিনে করা হয়েছিল এবং এটা পরবর্তী সময়ে পরিপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল।” সেই অনুবাদক আরও বলেছিলেন যে, সেই এলাকার লোকেরা এভাবেই কথা বলে আর এটা ইঙ্গিত দেয় যে, “সেই প্রতিজ্ঞা একটা নির্দিষ্ট দিনে করা হয়েছিল এবং সেটা অবশ্যই রাখা হবে।” পঞ্চম শতাব্দীর একটা সিরীয় ভাষার সংস্করণ এই পদটাকে এভাবে অনুবাদ করেছে: “আমেন, আজ আমি তোমাকে বলছি যে, আমার সঙ্গে তুমি এদন উদ্যানে উপস্থিত হবে।” আমাদের সবারই এই প্রতিজ্ঞার দ্বারা উৎসাহিত হওয়া উচিত।

২১. সেই অপরাধীর প্রতি কী ঘটেনি এবং কেন?

২১ যিশু যখন সেই অপরাধীকে পরমদেশের বিষয়ে বলেছিলেন, তখন তিনি স্বর্গীয় পরমদেশের বিষয়ে বলেননি। কীভাবে আমরা তা জানি? এর একটা কারণ হল সেই অপরাধী এমনকী জানতেনই না যে, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন, যাতে তারা তাঁর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করতে পারেন। (লূক ২২:২৯) এ ছাড়া, সেই অপরাধী এমনকী বাপ্তাইজিতও হননি। (যোহন ৩:৩-৬, ১২) তাই, যিশু যখন সেই অপরাধীর কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই এক পার্থিব পরমদেশের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এর অনেক বছর পর, প্রেরিত পৌল একটা দর্শনের বিষয়ে বলেছিলেন, যেখানে একজন পুরুষ ‘পরমদেশে নীত হইয়াছিলেন।’ (২ করি. ১২:১-৪) যদিও পৌল ও অন্যান্য প্রেরিতরা স্বর্গে যাওয়ার ও যিশুর সঙ্গে শাসন করার জন্য মনোনীত ছিলেন কিন্তু পৌল ভবিষ্যতের এক পরমদেশের বিষয়ে কথা বলছিলেন। * সেই পরমদেশ কি পৃথিবীতে আসবে? আপনি কি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন?

আপনি যা আশা করতে পারেন

২২, ২৩. আপনি কোন আশা রাখতে পারেন?

২২ মনে করে দেখুন, দায়ূদ এমন এক সময়ের বিষয়ে বলেছিলেন, যখন “ধার্ম্মিকেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে।” (গীত. ৩৭:২৯; ২ পিতর ৩:১৩) দায়ূদ এমন এক সময়ের বিষয়ে নির্দেশ করছিলেন, যখন পৃথিবীতে থাকা সমস্ত মানুষ ঈশ্বরের ধার্মিক নীতির বাধ্য হবে। যিশাইয় ৬৫:২২ পদে পাওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণী বলে: “আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে।” এটা দেখায় যে, নতুন জগতে যে-লোকেরা যিহোবার সেবা করবে, তারা হাজার হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকবে। আপনি কি এই আশা রাখতে পারেন? হ্যাঁ, কারণ প্রকাশিত বাক্য ২১:১-৪ পদ অনুযায়ী ঈশ্বর মানবজাতিকে আশীর্বাদ করবেন এবং সেই আশীর্বাদগুলোর মধ্যে একটা হল “মৃত্যু আর হইবে না।”

২৩ বাইবেল পরমদেশের বিষয়ে যা শেখায়, তা একেবারে স্পষ্ট। আদম ও হবা চিরকাল পরমদেশে বেঁচে থাকার বিশেষ সুযোগ হারিয়েছিলেন কিন্তু পৃথিবী আবারও এক পরমদেশ হবে। ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী পৃথিবীতে থাকা লোকেদের আশীর্বাদ করবেন। দায়ূদ বলেছিলেন, মৃদুশীল ও ধার্মিকেরা পৃথিবীর অধিকারী হবে এবং চিরকাল এখানে বাস করবে। আর যিশাইয় বইয়ে পাওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো আমাদের এমন এক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে সাহায্য করে, যখন আমরা এক অপূর্ব পরমদেশ পৃথিবীতে জীবন উপভোগ করব। কখন সেটা ঘটবে? যখন সেই অপরাধীর কাছে করা যিশুর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবে। আপনি সেই পরমদেশে উপস্থিত থাকতে পারেন। সেই সময়ে কোরিয়ার সেই সম্মেলনের ভাই-বোনদের বলা এই কথাগুলো পরিপূর্ণ হবে: “পরমদেশে দেখা হবে!”

^ অনু. 18 অধ্যাপক সি. মারভান পেইট লিখেছিলেন যে, অনেক পণ্ডিত মনে করেন, যিশু যখন “অদ্যই” শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, তখন তিনি বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি মারা যাবেন এবং সেই দিনেই অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরমদেশে উপস্থিত হবেন। অধ্যাপক পেইট আরও লিখেছিলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমস্যাটা হল, এটা বাইবেলের অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে মেলে না। উদাহরণ স্বরূপ বাইবেল বলে, যিশু তাঁর মৃত্যুর পর পাতালে বা কবরে ছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি স্বর্গে গিয়েছিলেন।—মথি ১২:৪০; প্রেরিত ২:৩১; রোমীয় ১০:৭.

^ অনু. 21 এই সংখ্যার “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” দেখুন।