সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে আমরা সুসংগঠিত

ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে আমরা সুসংগঠিত

“সদাপ্রভু প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন, বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল অটল করিয়াছেন।”—হিতো. ৩:১৯.

গান সংখ্যা: ১৫, ১৬

১, ২. (ক) ঈশ্বরের একটা সংগঠন রয়েছে, এই ধারণা সম্বন্ধে কেউ কেউ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

ঈশ্বরের কি কোনো সংগঠন রয়েছে? কেউ কেউ বলে থাকে: “আপনাকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য কোনো সংগঠনের প্রয়োজন নেই। আপনাকে শুধু ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখলেই হবে।” এটা কি সত্য? এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় কী প্রকাশ করে?

এই প্রবন্ধে আমরা দেখব, যিহোবা সুশৃঙ্খল উপায়ে বিভিন্ন বিষয় করে থাকেন এবং তিনি তাঁর লোকেদের সংগঠিত করেন। আর আমরা এটাও আলোচনা করব, যিহোবার সংগঠন যখন আমাদের নির্দেশনা প্রদান করে, তখন আমাদের কী করা প্রয়োজন। (১ করি. ১৪:৩৩, ৪০) প্রথম শতাব্দীতে, যিহোবার লোকেরা শাস্ত্রের নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল ও অনেক জায়গায় সুসমাচার প্রচার করতে পেরেছিল। তাদের মতো আমরাও এখন বাইবেলের দ্বারা নিজেদের নির্দেশিত হতে দিই। আর আমরা ঈশ্বরের সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার বাধ্য হই। এর ফলে, আমরা বিশ্বব্যাপী সুসমাচার প্রচার করতে পারছি। এ ছাড়া, আমরা মণ্ডলীকে শুচি, শান্তিপূর্ণ ও একতাবদ্ধ রাখতে পারছি।

যিহোবা হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর

৩. কেন আপনি এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, যিহোবা হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর?

আমরা যখন যিহোবার বিভিন্ন সৃষ্টির দিকে তাকাই, তখন আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, তিনি হলেন শৃঙ্খলার ঈশ্বর। তিনি “প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন, বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল অটল করিয়াছেন।” (হিতো. ৩:১৯) যিহোবার বিভিন্ন সৃষ্টি সম্বন্ধে আমরা অনেক কিছুই জানি না। আসলে, “তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়।” (ইয়োব ২৬:১৪) তবে, আমাদের নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে আমরা যে-সামান্য বিষয় জানি, তা থেকেই এটা স্পষ্ট হয়, এই নিখিলবিশ্ব অত্যন্ত সুসংগঠিত। (গীত. ৮:৩, ৪) মহাশূন্যে কোটি কোটি নক্ষত্র সুশৃঙ্খল উপায়ে প্রদক্ষিণ করছে। আর আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো যেভাবে সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করছে, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন। যিহোবা গ্রহ-নক্ষত্রগুলোকে যেভাবে সংগঠিত করেছেন, সেটার কারণেই এই বিস্ময়কর শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভবপর হয়েছে। তিনি কীভাবে “বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল” ও পৃথিবী “নির্ম্মাণ করিয়াছেন,” সেই বিষয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা তাঁর প্রশংসা ও উপাসনা করতে চাই এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকতে চাই।—গীত. ১৩৬:১, ৫-৯.

৪. কেন বিজ্ঞানীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না?

বিজ্ঞানীরা নিখিলবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী সম্বন্ধে যা-কিছু জেনেছেন, সেগুলোর মধ্যে অনেক বিষয় ব্যবহার করে তারা আমাদের জীবনযাপনকে আরও সহজ করে তুলেছেন। কিন্তু, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। উদাহরণ স্বরূপ, নিখিলবিশ্ব কীভাবে শুরু হয়েছে অথবা কেন পৃথিবীতে মানুষ, পশুপাখি ও গাছপালার অস্তিত্ব রয়েছে, তা জ্যোতির্বিদরা সঠিকভাবে বলতে পারেন না। আর অধিকাংশ লোক ব্যাখ্যা করতে পারে না, কেন মানুষের মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকার এক দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। ( উপ. ৩:১১.) কেন তারা এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না? এর একটা কারণ হল, বিজ্ঞানীরা ও অন্যেরা বলে থাকেন, ঈশ্বর বলতে কেউ নেই আর তারা বিবর্তনবাদের শিক্ষাকে সমর্থন করেন। কিন্তু, ঈশ্বর তাঁর বাক্য বাইবেলের মধ্যে আমাদের জন্য এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন।

৫. কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মের উপর নির্ভর করে?

যিহোবা অনেক প্রাকৃতিক নিয়ম তৈরি করেছেন। এসব নিয়ম পরিবর্তন হয় না। ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার (জলের মিস্ত্রি), ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, সার্জন ও অন্যেরা নিজেদের কাজ করার জন্য এসব নিয়মের উপর নির্ভর করে। উদাহরণ স্বরূপ, মানুষের হৃৎপিণ্ড সাধারণত দেহের একই জায়গায় থাকে আর তাই সার্জনরা জানেন, রোগীর দেহের কোন অংশে হৃৎপিণ্ড রয়েছে। আর সকলেই জানে, কোনো ব্যক্তি যদি উঁচু জায়গা থেকে ঝাঁপ দেন, তা হলে তিনি নীচে পড়ে যাবেন আর এমনকী মারাও যেতে পারেন। আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ম, যেমন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির নিয়ম অনুসরণ করে থাকি কারণ আমরা বেঁচে থাকতে চাই।

ঈশ্বর যে-বিষয়গুলো সংগঠিত করেছেন

৬. কীভাবে আমরা জানতে পারি, যিহোবা চান যেন তাঁর লোকেরা সুসংগঠিত উপায়ে তাঁর উপাসনা করে?

যিহোবা সত্যিই চমৎকার উপায়ে নিখিলবিশ্বকে সংগঠিত করেছেন। তাই নিশ্চিতভাবেই তিনি চান, যেন তাঁর লোকেরা সুসংগঠিত উপায়ে তাঁর উপাসনা করে। আসলে, কীভাবে তাঁকে উপাসনা করতে হবে, সেই বিষয়ে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যিহোবা বাইবেল দিয়েছেন। বাইবেল ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে তিনি আমাদের যে-নির্দেশনা দিয়েছেন, একমাত্র সেগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমেই আমরা এক সুখী ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারব।

৭. কোন বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করে, বাইবেল সুসংগঠিত উপায়ে লেখা হয়েছে?

বাইবেল হচ্ছে ঈশ্বরের কাছ থেকে এক অতুলনীয় উপহার। কোনো কোনো পণ্ডিত ব্যক্তি বলে থাকেন, বাইবেল হচ্ছে যিহুদি ও খ্রিস্টানদের কিছু বইয়ের সংকলন, যেগুলো মানুষেরা লিখেছেন। কিন্তু সত্য বিষয়টা হল, কারা এই বইগুলো লিখবেন, তারা কখন সেগুলো লিখবেন এবং তারা কোন বিষয়ে লিখবেন, তা ঈশ্বরই নির্ধারণ করেছেন। তাই, বাইবেলের সমস্ত বই আমাদেরকে ঈশ্বরের বার্তা বুঝতে সাহায্য করে। বাইবেলের আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য বইয়ে এই বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে, এক ‘বংশ’ এই পৃথিবীকে আবার পরমদেশে পরিণত করবে। আর আমরা জানি, এই ‘বংশ’ হলেন যিশু খ্রিস্ট এবং তাঁর রাজ্য এটা প্রমাণ করবে, সকলকে শাসন করার অধিকার যিহোবারই রয়েছে।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১৫; মথি ৬:১০; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫.

৮. কোন কোন উপায়ে ইস্রায়েলীয়রা সুসংগঠিত ছিল?

ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তা তারা অনুসরণ করেছিল ও সুসংগঠিত হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এমন ‘স্ত্রীলোকেরা’ ছিল “যাহারা সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সেবার্থে শ্রেণীভূত” বা সংগঠিত হতো। (যাত্রা. ৩৮:৮) এ ছাড়া, ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে তাদের শিবির ও আবাস সুশৃঙ্খল উপায়ে সরিয়ে নিয়ে যাবে, সেই ব্যাপারেও তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, রাজা দায়ূদ মন্দিরে নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য যাজক ও লেবীয়দের সংগঠিত করেছিলেন। (১ বংশা. ২৩:১-৬; ২৪:১-৩) ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার বাধ্য হয়েছিল, তখন যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন। তারা সুসংগঠিত ছিল এবং শান্তি ও একতা উপভোগ করেছিল।—দ্বিতীয়. ১১:২৬, ২৭; ২৮:১-১৪.

৯. কীভাবে প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলো সংগঠিত হয়েছিল?

প্রথম শতাব্দীতেও মণ্ডলীগুলো সংগঠিত ছিল। সেখানে পরিচালকগোষ্ঠী অর্থাৎ মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এক দল পুরুষ ছিলেন। প্রথমে এই দলটা প্রেরিতদের নিয়ে গঠিত ছিল। পরে, সেখানে অন্য প্রাচীনরাও যুক্ত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ৬:১-৬; ১৫:৬) যিহোবা পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্যদের এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন এমন ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যেন তারা মণ্ডলীগুলোকে পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে চিঠি লেখেন। (১ তীম. ৩:১-১৩; তীত ১:৫-৯) পরিচালকগোষ্ঠীর নির্দেশনা অনুসরণ করে মণ্ডলীগুলো কীভাবে উপকৃত হয়েছিল?

১০. প্রথম শতাব্দীতে মণ্ডলীগুলো যখন পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল, তখন কী হয়েছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১০ প্রেরিত ১৬:৪, ৫ পদ পড়ুন। প্রথম শতাব্দীতে কিছু ভাই “যিরূশালেমস্থ প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের” অর্থাৎ পরিচালকগোষ্ঠীর “নিরূপিত নিয়মাবলী” জানানোর জন্য বিভিন্ন মণ্ডলীতে পরিদর্শন করেছিলেন। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে মণ্ডলীগুলো “বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।” তাদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি, যা বর্তমানে আমাদের মণ্ডলীগুলোকে সাহায্য করবে?

আপনি কি নির্দেশনা অনুসরণ করেন?

১১. দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়েরা যখন ঈশ্বরের সংগঠনের কাছ থেকে নির্দেশনা পান, তখন তাদের কী করা উচিত?

১১ শাখা কমিটি অথবা কান্ট্রি কমিটির সদস্য, সীমা অধ্যক্ষ, প্রাচীন ও পরিচারক দাসদেরকে ঈশ্বরের সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার বাধ্য হতে হয়। আসলে, যিহোবার বাক্য আমাদের সকলকে সেই ব্যক্তিদের বাধ্য হতে বলে, যারা নেতৃত্ব দেন। (দ্বিতীয়. ৩০:১৬; ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) যারা যিহোবার প্রতি অনুগত, তারা বিদ্রোহ করে না আর তারা যে-নির্দেশনা পায়, সেগুলোর বিষয়ে অভিযোগ করে না। আমরা দিয়ত্রিফির মতো হতে চাই না। সেই সময়ে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, সেই ভাইদের প্রতি দিয়ত্রিফির কোনো সম্মান ছিল না। (পড়ুন, ৩ যোহন ৯, ১০.) আমাদের যে-সমস্ত নির্দেশনা দেওয়া হয় সেগুলো যখন আমরা অনুসরণ করি, তখন আমরা মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় রাখতে সাহায্য করি। তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি আমার ভাই-বোনদেরকে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে উৎসাহিত করি? ঈশ্বরের সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা কি আমি দ্রুত অনুসরণ করি?’

১২. কীভাবে প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করা হয়?

১২ সম্প্রতি, পরিচালকগোষ্ঠী মণ্ডলীতে প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের যেভাবে নিযুক্ত করা হয়, সেই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করেছে। ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় “পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল” শিরোনামের প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, প্রথম শতাব্দীতে পরিচালকগোষ্ঠী ভ্রমণ অধ্যক্ষদের অধিকার দিয়েছিল, যেন তারা প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের নিযুক্ত করেন। তাই, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সীমা অধ্যক্ষরা এই ভাইদের নিযুক্ত করতে শুরু করেছেন। কোনো মণ্ডলীর প্রাচীনগোষ্ঠী যখন কোনো ভাইকে প্রাচীন অথবা পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার দায়িত্ব দেওয়া যায় বলে সুপারিশ করে, তখন সীমা অধ্যক্ষ সেই ভাই ও তার পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি হয়তো ক্ষেত্রের পরিচর্যায় সেই ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেন। (১ তীম. ৩:৪, ৫) তারপর, সীমা অধ্যক্ষ ও প্রাচীনগোষ্ঠী মিলিত হন। তারা একজন প্রাচীন অথবা পরিচারক দাসের জন্য শাস্ত্রে বর্ণিত গুণাবলি সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করেন।—১ তীম. ৩:১-১০, ১২, ১৩; ১ পিতর ৫:১-৩.

১৩. আমরা যে প্রাচীনদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার সঙ্গে সহযোগিতা করছি, তা আমরা কীভাবে দেখাতে পারি?

১৩ প্রাচীনরা বাইবেল থেকে আমাদের নির্দেশনা দেন কারণ তারা মণ্ডলীর সুরক্ষা করতে চান ও এর যত্ন নিতে চান। তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে কারণ এই নির্দেশনা আমাদের উপকারের জন্য। (১ তীম. ৬:৩) প্রথম শতাব্দীতে কেউ কেউ “অনিয়মিতরূপে” চলছিল। তারা কোনো কাজ না করে অনধিকারচর্চা করছিল। প্রাচীনরা তাদের সংশোধন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারা পরিবর্তন হয়নি। এই ধরনের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে মণ্ডলীর কেমন আচরণ করা উচিত, সেই বিষয়ে পৌল উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “তাহাকে চিহ্নিত করিয়া রাখ, তাহার সংসর্গে থাকিও না।” সেই ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে হতো, তবে তারা সেই ব্যক্তিকে শত্রু হিসেবে দেখত না। (২ থিষল. ৩:১১-১৫) বর্তমানেও, প্রাচীনরা সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকেন, যিনি ঈশ্বরের মান উপেক্ষা করেন, যেমন তিনি হয়তো কোনো ন-সাক্ষির সঙ্গে ডেটিং করেন। (১ করি. ৭:৩৯) সেই ব্যক্তি যদি নিজের আচরণ পরিবর্তন করতে প্রত্যাখ্যান করেন, তা হলে প্রাচীনরা হয়তো একটা বক্তৃতা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যেখানে ব্যাখ্যা করা হবে, এই ধরনের আচরণ কীভাবে অন্যদেরকে মণ্ডলী সম্বন্ধে খারাপ কথা বলার সুযোগ দেয়। আপনার মণ্ডলীতে প্রাচীনরা যদি এইরকম কোনো বক্তৃতা দেন, তা হলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? কে সেই ব্যক্তি তা যদি আপনি বুঝতে পারেন, তা হলে আপনি কি তার সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা করা এড়িয়ে চলবেন? তা করার মাধ্যমে, আপনি হয়তো তাকে এটা উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন যে, তার আচরণ তার নিজের জন্য ক্ষতিকর এবং তা যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করবে। তখন তিনি হয়তো তার মনোভাব পরিবর্তন করতে পারেন। [১]

মণ্ডলীকে শুচি, শান্তিপূর্ণ ও একতাবদ্ধ রাখুন

১৪. কীভাবে আমরা মণ্ডলীকে শুচি রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি?

১৪ ঈশ্বরের বাক্য আমাদের জানায়, মণ্ডলীতে দুষ্টতাকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য আমাদের সকলের কী করা উচিত। করিন্থে কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। পৌল সেখানকার ভাই-বোনদের ভালোবাসতেন। তাদের মধ্যে অনেক ব্যক্তিকে তিনি সত্য শিখতে সাহায্য করেছিলেন। (১ করি. ১:১, ২) তাই, পৌল যখন জানতে পেরেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন অনৈতিক জীবনযাপন করছেন আর ভাইয়েরা সেই ব্যক্তিকে মণ্ডলীতে থাকতে দিয়েছেন, তখন তার কেমন লেগেছিল, সেই বিষয়ে একটু কল্পনা করুন! পৌল প্রাচীনদের বলেছিলেন, “তাদৃশ ব্যক্তিকে . . . শয়তানের হস্তে সমর্পণ করিতে হইবে।” তাদের সেই ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বহিষ্কার করার অর্থাৎ তাকে সমাজচ্যুত করার প্রয়োজন ছিল। (১ করি. ৫:১, ৫, ৬, ১২) বর্তমানে, প্রাচীনরা এমন কোনো ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যিনি গুরুতর পাপ করেছেন এবং অনুতপ্ত হননি। সেই ক্ষেত্রে, শাস্ত্র আমাদের যেমনটা নির্দেশ দেয়, আমরা কি সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তির সঙ্গে সেভাবে আচরণ করব? আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা মণ্ডলীকে শুচি রাখতে সাহায্য করব। আর আমরা হয়তো সেই ব্যক্তিকেও বুঝতে সাহায্য করব, তাকে অনুতপ্ত হতে হবে এবং যিহোবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

১৫. কীভাবে আমরা মণ্ডলীতে শান্তি বজায় রাখতে পারি?

১৫ করিন্থে আরেকটা সমস্যাও ছিল। কেউ কেউ তাদের ভাইদের বিচার করার জন্য আদালতে নিয়ে গিয়েছিল। পৌল তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন?” (১ করি. ৬:১-৮) বর্তমানে, মণ্ডলীর মধ্যে কেউ কেউ তাদের ভাইদের সঙ্গে ব্যাবসায়িক চুক্তি করেছে, কিন্তু পরে সেই ব্যাবসায় তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অথবা তারা বুঝতে পেরেছে, তাদের ভাইয়েরা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাই, তারা তাদের ভাইদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। কিন্তু, যখন এইরকম কোনো ঘটনা ঘটে, তখন লোকেরা হয়তো যিহোবা ও তাঁর দাসদের সম্বন্ধে খারাপ কথাবার্তা বলার সুযোগ পায়। আর এটা হয়তো মণ্ডলীর মধ্যেও সমস্যা সৃষ্টি করে। ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, আমাদের ভাইদের সঙ্গে আমাদের শান্তি বজায় রাখতে হবে, যদিও এই কারণে হয়তো আমাদের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। [২] আসলে, কীভাবে গুরুতর সমস্যা ও মতানৈক্য মীমাংসা করতে হয়, সেই বিষয়ে যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। (পড়ুন, মথি ৫:২৩, ২৪; ১৮:১৫-১৭.) আমরা যখন তাঁর নির্দেশনার বাধ্য হই, তখন আমরা মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা বজায় রাখতে পারি।

১৬. কেন ঈশ্বরের লোকেরা একতাবদ্ধ?

১৬ যিহোবার বাক্য আমাদের বলে: “দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!” (গীত. ১৩৩:১) ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার বাধ্য হয়েছিল, তখন তারা সুসংগঠিত ও একতাবদ্ধ ছিল। ঈশ্বর তাঁর লোকেদের বিষয়ে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন: “আমি . . . তাহাদিগকে বস্রার মেষগণের ন্যায় একত্র করিব।” (মীখা ২:১২) এ ছাড়া, যিহোবা এটাও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, তাঁর লোকেরা শাস্ত্র থেকে সত্য শিখবে এবং একতাবদ্ধভাবে তাঁর সেবা করবে। তিনি বলেছিলেন: “তৎকালে আমি জাতিগণকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।” (সফ. ৩:৯) একতাবদ্ধভাবে যিহোবার উপাসনা করতে পেরে আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ!

প্রাচীনরা এমন ভাই অথবা বোনকে সাহায্য করেন, যিনি ‘কোন অপরাধে ধরা পড়েন’ (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. মণ্ডলীতে কেউ যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে প্রাচীনদের কী করা উচিত?

১৭ কোনো ব্যক্তি যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে প্রাচীনদের দ্রুত সেই ব্যক্তিকে প্রেমের সঙ্গে সংশোধন করতে হবে। প্রাচীনরা জানেন, যিহোবা চান যেন তারা যেকোনো ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মণ্ডলীকে সুরক্ষা করেন এবং মণ্ডলীকে শুচি ও একতাবদ্ধ রাখেন। (হিতো. ১৫:৩) পৌল করিন্থের ভাইদের খুব ভালোবাসতেন আর তাই তিনি প্রয়োজনের সময়ে তাদের সংশোধন করেছিলেন, যা আমরা তাদের উদ্দেশে লেখা পৌলের প্রথম চিঠি থেকে পড়তে পারি। সেখানকার প্রাচীনরা যে দ্রুত পৌলের নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন, তা আমরা বুঝতে পারি কারণ এর কয়েক মাস পরেই পৌল তাদের উদ্দেশে লেখা তার দ্বিতীয় চিঠিতে তাদের প্রশংসা করেছিলেন। যদি কোনো ভাই অথবা বোন ‘কোন অপরাধে ধরাও পড়েন,’ তবুও প্রাচীনদের সদয় উপায়ে তাকে সংশোধন করা উচিত।—গালা. ৬:১.

১৮. (ক) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য থেকে পাওয়া নির্দেশনা প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীগুলোকে সাহায্য করেছিল? (খ) পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

১৮ এটা স্পষ্ট যে, প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টানরা যখন ঈশ্বরের বাক্য থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করেছিল, তখন তাদের মণ্ডলীগুলো শুচি, শান্তিপূর্ণ ও একতাবদ্ধ ছিল। (১ করি. ১:১০; ইফি. ৪:১১-১৩; ১ পিতর ৩:৮) এর ফলে, সেই ভাই-বোনেরা “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে পেরেছিল। (কল. ১:২৩) বর্তমানেও, যিহোবার লোকেরা একতাবদ্ধ ও সুসংগঠিত আর তারা পুরো পৃথিবীতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে। তাদের আকুল আকাঙ্ক্ষা হল, সার্বভৌম প্রভু যিহোবাকে সম্মানিত করা এবং তাঁর বাক্য বাইবেল থেকে পাওয়া নির্দেশনার বাধ্য হওয়া। পরের প্রবন্ধ এই বিষয়ে আরও প্রমাণ তুলে ধরবে।—গীত. ৭১:১৫, ১৬.

^ [১] (১৩ অনুচ্ছেদ) যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সংগঠিত (ইংরেজি) বইয়ের ১৩৪-১৩৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ [২] (১৫ অনুচ্ছেদ) কোন পরিস্থিতিতে একজন খ্রিস্টান হয়তো আরেকজন খ্রিস্টানের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেই বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা করবইয়ের ২৫৫ পৃষ্ঠার পাদটীকা দেখুন।