সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের আর্কাইভ থেকে

“ব্রিটেনের রাজ্য প্রকাশকরা​—⁠জেগে উঠুন!!”

“ব্রিটেনের রাজ্য প্রকাশকরা​—⁠জেগে উঠুন!!”

একটা জোরালো আহ্বান করা হয়েছিল: “ব্রিটেনের রাজ্য প্রকাশকরা—জেগে উঠুন!!” (ইনফরম্যান্ট, * ডিসেম্বর ১৯৩৭, লন্ডন সংস্করণ) এ ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ একটা উপশিরোনাম ছিল: “বিগত দশ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো বৃদ্ধি হয়নি।” প্রথম পৃষ্ঠায় ১৯২৮ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত দশ বছরের পরিচর্যা রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছিল।

অগ্রগামীর সংখ্যা কি খুব বেশি?

কোন কারণে ব্রিটেনে ক্ষেত্রের পরিচর্যার উদ্দীপনা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল? মণ্ডলীগুলো বহু বছর আগে থেকে “একই ধারায়” চলছিল বলে মনে হয়। এ ছাড়া, শাখা অফিস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই এলাকায় শুধুমাত্র ২০০ জনের মতো অগ্রগামী সেবা করতে পারবে আর তারা মণ্ডলীর সঙ্গে নয় বরং বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে কাজ করবে। তাই, শাখা অফিস থেকে সম্ভাব্য অগ্রগামীদের জানানো হয়েছিল, ব্রিটেনে অগ্রগামীদের কাজ করার মতো আর এলাকা নেই। এ ছাড়া, তাদেরকে ইউরোপের অন্যান্য দেশে গিয়ে সেবা করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। প্রশংসার বিষয় হল, একনিষ্ঠ অগ্রগামীদের বিরাট এক দল ব্রিটেন ছেড়ে বিভিন্ন দেশে যেমন, ফ্রান্সে চলে গিয়েছিল, যদিও তারা সেখানকার ভাষা সামান্যই জানত কিংবা একেবারেই জানত না।

“কাজ করার এক আহ্বান”

১৯৩৭ সালের ইনফরম্যান্ট-এ ১৯৩৮ সালের জন্য এক কঠিন লক্ষ্যস্থাপন করা হয়েছিল: দশ লক্ষ ঘণ্টা! যদি প্রতি মাসে প্রকাশকরা ১৫ ঘণ্টা এবং অগ্রগামীরা ১১০ ঘণ্টা প্রচার কাজে ব্যয় করে, তা হলে সেই লক্ষ্য সহজেই পূরণ করা যাবে। সেখানে এমন কয়েকটা পরিচর্যা দল গঠন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, যে-দলগুলো নির্দিষ্ট দিনগুলোতে পাঁচ ঘণ্টা করে প্রচার করবে এবং সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতে সন্ধ্যা বেলায় পুনর্সাক্ষাৎ করার উপর মনোযোগ দেবে।

উদ্যমী অগ্রগামীরা ক্ষেত্রের পরিচর্যার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিল

পরিচর্যার ব্যাপারে নতুনভাবে জোর দেওয়া হয়েছিল বলে অনেকে রোমাঞ্চিত হয়েছিল। “এটা ছিল বিশ্বপ্রধান কার্যালয় থেকে কাজ করার এক আহ্বান, যেটার জন্য আমাদের মধ্যে অধিকাংশই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিলাম আর খুব শীঘ্রই এর চমৎকার ফলাফল দেখা গিয়েছিল,” হিলডা প্যাজেট স্মরণ করে বলেছিলেন। * বোন ই. এফ. ওয়ালিস বলেছিলেন: “দিনে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করার পরামর্শটা দারুণ ছিল! একেক দিন পুরো সময় প্রভুর সেবায় ব্যয় করার চেয়ে আনন্দের আর কীই-বা হতে পারে? . . . যদিও আমরা ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসতাম, কিন্তু আমরা কি এই কাজে আনন্দ পেতাম? অবশ্যই!” যুবক ভাই স্টিভেন মিলার তৎপরতার মনোভাব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং সেই আহ্বানের প্রতি সাড়া দিয়েছিলেন। সুযোগ পেলেই তিনি তা করতে চাইতেন! তিনি স্মরণ করে বলেছিলেন, তারা সাইকেলে চড়ে দলগতভাবে পুরো দিন প্রচারে ব্যয় করতেন আর গ্রীষ্মের সময়ে সন্ধ্যা বেলা রেকর্ড করা বক্তৃতা শোনাতেন। তারা উদ্যোগের সঙ্গে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে তথ্য জানাতেন ও পত্রিকা নিয়ে রাস্তায় সাক্ষ্যদান করতেন।

এ ছাড়া, ইনফরম্যান্ট-এ এক নতুন আহ্বান করা হয়েছিল: “আমাদের ১,০০০ সদস্যের এক অগ্রগামী বাহিনী প্রয়োজন।” ক্ষেত্রের এলাকার জন্য নতুন কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী, অগ্রগামীরা আর মণ্ডলী থেকে আলাদাভাবে কাজ করবে না বরং মণ্ডলীর সঙ্গেই কাজ করবে, মণ্ডলীকে সমর্থন করবে ও গড়ে তুলবে। জয়েস এলিস (আগের পদবি বারবার) স্মরণ করে বলেন, “অনেক ভাই, তাদের যে অগ্রগামী কাজ করতে হবে সেই ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন। যদিও আমার বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর কিন্তু আমি তা করতে চেয়েছিলাম; আমি অগ্রগামী হতে চেয়েছিলাম।” ১৯৪০ সালের জুলাই মাসে ১৫ বছর বয়সে তিনি তার সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন। ভাই পিটার, যিনি পরে বোন জয়েসকে বিয়ে করেছিলেন, তিনি “জেগে উঠুন” আহ্বান শুনেছিলেন আর এর ফলে “অগ্রগামী কাজ শুরু করার ব্যাপারে চিন্তা” করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ১৯৪০ সালের জুন মাসে ১৭ বছর বয়সে তিনি অগ্রগামী হিসেবে নতুন কার্যভার গ্রহণ করার জন্য ১০৫ কিলোমিটার (৬৫ মাইল) পথ সাইকেল চালিয়ে স্কারবোরায় পৌঁছেছিলেন।

সিরিল ও কিটি জনসন, আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখাতে চায় এমন নতুন অগ্রগামীদের জন্য আদর্শ ছিলেন। তারা পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করার উদ্দেশ্যে অর্থসংস্থানের জন্য নিজেদের বাড়ি ও মালপত্র বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ভাই সিরিল নিজের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন আর এক মাসের মধ্যে তারা অগ্রগামী সেবা শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেছিলেন: “এই বিষয়ে আমাদের পূর্ণ আস্থা ছিল। আমরা স্বেচ্ছায় ও আনন্দের সঙ্গে তা করেছিলাম।”

অগ্রগামী হোম প্রস্তুত করা হয়

যেহেতু অগ্রগামীদের সংখ্যা স্পষ্টতই বৃদ্ধি পেয়েছিল, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইয়েরা এই বৃদ্ধিরত বাহিনীকে সমর্থন করার বিভিন্ন ব্যাবহারিক উপায় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। জিম কার ১৯৩৮ সালে আঞ্চলিক দাস (এখন সীমা অধ্যক্ষ বলা হয়) হিসেবে সেবা করছিলেন। তিনি বিভিন্ন শহরে অগ্রগামী হোমের ব্যবস্থা করার পরামর্শ অনুসরণ করেছিলেন। অগ্রগামীদের বিভিন্ন দলকে খরচ কমানোর জন্য একসঙ্গে থাকার ও কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তারা শেফিল্ডে একটা বড়ো বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল আর একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই সেটার দেখাশোনা করতেন। অর্থসংস্থান ও আসবাবপত্রের জন্য স্থানীয় মণ্ডলী দান দিয়েছিল। ভাই জিম স্মরণ করে বলেছিলেন: “এই ব্যবস্থা সফল করার জন্য সকলে কাজ করেছিল।” দশ জন কঠোর পরিশ্রমী অগ্রগামী সেখানে থাকতেন আর তারা এক উত্তম আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখতেন। “প্রতিদিন সকালে খাবারের টেবিলে [প্রতিদিনের] শাস্ত্রপদ আলোচনা করা হতো” আর “অগ্রগামীরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন অংশে তাদের এলাকায় কাজ করার জন্য চলে যেত।”

ব্রিটেনে অনেকে অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিল

১৯৩৮ সালে দশ লক্ষ ঘণ্টা পূরণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, অগ্রগামীরা ও প্রকাশকরা একইভাবে সেই আহ্বানের প্রতি সাড়া দিয়েছিল। আসলে, বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে বোঝা যায়, ক্ষেত্রের পরিচর্যার সমস্ত দিকে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে ব্রিটেনে প্রকাশকদের সংখ্যা প্রায় তিন গুণ হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যের সেবার প্রতি নতুনভাবে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার ফলে তা যিহোবার লোকেদেরকে আসন্ন কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য শক্তিশালী করেছিল।

বর্তমানে, ঈশ্বরের যুদ্ধ আরমাগিদোন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনে অগ্রগামীদের সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ব্রিটেনে অগ্রগামীদের সংখ্যা ছিল ১৩,২২৪ জন আর বিগত দশ বছরের মধ্যে এটাই হচ্ছে অগ্রগামীদের শীর্ষ সংখ্যা। এই অগ্রগামীরা একটা বিষয় পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে আর তা হল, পূর্ণসময়ের পরিচর্যা হল তাদের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার সর্বোত্তম পথ।

^ অনু. 3 পরে এটার নাম দেওয়া হয় আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা।

^ অনু. 8 ১৯৯৫ সালের ১ অক্টোবর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯-২৪ পৃষ্ঠায় বোন প্যাজেটের জীবনকাহিনি রয়েছে।