সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমি তোমার সত্যে চলিব”

“আমি তোমার সত্যে চলিব”

“হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব।”—গীত. ৮৬:১১.

গান সংখ্যা: ২৬, ১০

১-৩. (ক) বাইবেলের সত্যের বিষয়ে আমাদের কেমন অনুভব করা উচিত? একটা উদাহরণ দিন। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

বর্তমানে, একটা খুব সাধারণ বিষয় হল লোকেরা কোনো দোকান থেকে কিছু কেনে আর তারপর, সেটা ফিরিয়ে দেয়। আর লোকেরা যখন অনলাইনে কিছু কেনে, তখন সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আরও বেশি হয়ে থাকে। হতে পারে, তারা যা কেনে, সেটা পছন্দ না হওয়ার কারণে অথবা সেটাতে কোনো খুঁত থাকার কারণে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, হয় তারা সেটার পরিবর্তে অন্য কোনো পণ্য নেবে অথবা তাদের টাকা ফেরত চাইবে।

আমরা বাইবেলের সত্যের বিষয়ে কখনো এমনটা করব না। একবার সত্য ‘ক্রয় করিবার’ পর আমরা কখনো সেটা ‘বিক্রয় করিতে’ চাইব না অর্থাৎ একবার সত্য শেখার পর, আমরা কখনো সেটাকে পরিত্যাগ করতে চাইব না। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৩:২৩; ১ তীম. ২:৪) আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন আলোচনা করেছি, আমরা সত্য শেখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছি। এ ছাড়া, আমরা হয়তো এমন একটা কেরিয়ার ত্যাগ করেছি, যেটার মাধ্যমে আমরা অনেক অর্থ উপার্জন করতাম। আর আমাদের হয়তো কোনো কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রদবদল করতে হয়েছে, আমাদের চিন্তাভাবনা ও আচরণ পরিবর্তন করতে হয়েছে অথবা এমন প্রথা ও অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হয়েছে, যেগুলো যিহোবাকে খুশি করে না। কিন্তু, আমরা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, আমরা যে-বিষয়গুলো ত্যাগ করেছি, সেগুলোর কোনোটাই সত্য জানার ফলে আসা আশীর্বাদগুলোর মতো মূল্যবান নয়।

যিশু একজন ভ্রমণকারী বণিকের দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন, যিনি উত্তম উত্তম মুক্তার অন্বেষণ করছিলেন। সেই ব্যক্তি যখন এমন একটা মুক্তা পেয়েছিলেন, যেটা খুবই মূল্যবান ছিল, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে তার কাছে থাকা সমস্ত কিছু বিক্রি করে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি সেটা কিনতে পারেন। সেই মুক্তা ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সত্যকে চিত্রিত করেছিল। এভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, যারা সত্যের অন্বেষণ করে, তাদের কাছে এটা কতটা মূল্যবান হবে। (মথি ১৩:৪৫, ৪৬) আমরা যখন প্রথম সত্য অর্থাৎ ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সত্য এবং বাইবেলে প্রাপ্ত অন্যান্য সমস্ত মূল্যবান সত্য শিখেছিলাম, তখন আমরাও তা লাভ করার জন্য যেকোনো ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক ছিলাম। আমরা যদি ক্রমাগত সত্যকে মূল্যবান হিসেবে দেখি, তা হলে আমরা কখনো এটাকে পরিত্যাগ করব না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ এটাকে মূল্যবান হিসেবে দেখা বন্ধ করেছে আর এমনকী এটাকে পরিত্যাগ করেছে। আমরা কখনোই এমনটা করতে চাই না! আমাদের বাইবেলে প্রাপ্ত ক্রমাগত ‘সত্যে চলিবার’ পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে। (পড়ুন, ৩ যোহন ২-৪.) এর অর্থ হল আমরা সত্যকে প্রথমে রাখি এবং আমাদের জীবনধারার মাধ্যমে তা প্রকাশ করি। কিন্তু, কেন ও কীভাবে একজন ব্যক্তি সত্যকে ‘বিক্রয় করিতে’ বা পরিত্যাগ করতে পারেন? কীভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি যেন আমরা কখনো এমনটা না করি? আর কীভাবে আমরা ক্রমাগত ‘সত্যে চলিবার’ বিষয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে পারি?

কেন ও কীভাবে কেউ কেউ সত্য ‘বিক্রয় করে?’

৪. কেন যিশুর সময়ে কোনো কোনো ব্যক্তি ক্রমাগত সত্যে চলেনি?

যিশুর সময়ে কোনো কোনো ব্যক্তি, যারা প্রথমে সত্য গ্রহণ করেছিল, তারা ক্রমাগত সত্যে চলেনি। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু একটা অলৌকিক কাজের মাধ্যমে এক বৃহৎ জনতাকে খাওয়ানোর পর সেই জনতা গালীল সমুদ্রের অপর প্রান্ত পর্যন্ত তাঁকে অনুসরণ করেছিল। কিন্তু এরপর, যিশু এমন কিছু বলেছিলেন, যেটা তাদের একেবারে হতবাক করে দিয়েছিল: “তোমরা যদি মনুষ্যপুত্ত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই।” যিশু আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, সেটা ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করার পরিবর্তে তারা বলেছিল: “এ কঠিন” বা হতবাক করে দেওয়ার মতো “কথা, কে ইহা শুনিতে পারে?” এর ফলে, “তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না।”—যোহন ৬:৫৩-৬৬.

৫, ৬. (ক) কেন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সত্য থেকে সরে পড়েছে? (খ) কীভাবে একজন ব্যক্তি সত্য থেকে ভেসে চলে যেতে পারেন?

দুঃখের বিষয় হল বর্তমানেও কেউ কেউ সত্যকে পরিত্যাগ করেছে। কেন? কেউ কেউ বাইবেলের কোনো পদের বোধগম্যতার রদবদলের কারণে অথবা কোনো সুপরিচিত ভাইয়ের কথা অথবা কাজের কারণে বিঘ্ন পেয়েছে। অন্যদের যখন কেউ বাইবেল থেকে পরামর্শ দিয়েছে, তখন তাদের সেটা পছন্দ হয়নি কিংবা মণ্ডলীর কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তাদের গুরুতর মতবিরোধ হয়েছে। আর অন্যেরা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের ও যারা আমাদের বিষয়ে মিথ্যা কথা বলে, তাদের মিথ্যা শিক্ষাকে অনুসরণ করেছে। এগুলো হল কয়েকটা কারণ, যেগুলোর জন্য কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যিহোবা ও মণ্ডলীর কাছ থেকে সরে পড়েছে। (ইব্রীয় ৩:১২-১৪) তারা যদি পিতরের মতো যিশুর উপর আস্থা রাখত, তা হলে সেটা কতই-না ভালো হতো! যখন সেই জনতার অন্যান্য লোকেরা যিশুর কথা শুনে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিল, তখন যিশু তাঁর প্রেরিতদের জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তারাও চলে যেতে চান কি না। পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “প্রভু, কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।”—যোহন ৬:৬৭-৬৯.

অন্যেরা আবার ধীরে ধীরে সত্য থেকে ভেসে চলে গিয়েছে আর তা হতে পারে নিজেদের অজান্তেই। যে-ব্যক্তি ধীরে ধীরে সত্য পরিত্যাগ করেন, তিনি হলেন এমন একটা নৌকার মতো, যেটা ধীরে ধীরে নদীর কিনারা থেকে ভেসে চলে যায়। বাইবেল আমাদের সতর্ক হওয়ার জন্য সাবধানবাণী দেয়, “পাছে কোন ক্রমে” আমরা “ভাসিয়া চলিয়া যাই।” (ইব্রীয় ২:১) সাধারণত, যে-ব্যক্তি সত্য থেকে ভেসে চলে যান, তার এমনটা করার উদ্দেশ্য থাকে না। কিন্তু, তিনি যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে দুর্বল হয়ে যেতে দেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়তো সেটা হারিয়ে ফেলেন। কীভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি যেন কখনো আমাদের প্রতি এমনটা না ঘটে?

কীভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি যেন আমরা কখনো সত্য বিক্রি না করি?

৭. কী আমাদের কখনো সত্য বিক্রি না করতে সাহায্য করবে?

ক্রমাগত সত্যে চলার জন্য আমাদের অবশ্যই যিহোবার বলা সমস্ত কিছু গ্রহণ করতে ও সেগুলোর বাধ্য হতে হবে। আমাদের অবশ্যই সত্যকে আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে তুলতে হবে এবং আমাদের করা সমস্ত কাজে বাইবেলের নীতি অনুসরণ করতে হবে। রাজা দায়ূদ প্রার্থনায় যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তোমার সত্যে চলিব।” (গীত. ৮৬:১১) দায়ূদ ক্রমাগত সত্যে চলার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন আর আমাদেরও এমনটাই হতে হবে। আমরা যদি এমনটা না হই, তা হলে আমরা হয়তো সেই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা শুরু করতে পারি, যেগুলো আমরা সত্যের জন্য ত্যাগ করেছিলাম আর আমাদের মনে এমনকী সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু বিষয় ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু, আমরা এটা বাছাই করতে পারি না যে, বাইবেলের কোন সত্যগুলো গ্রহণ করব এবং কোন সত্যগুলো উপেক্ষা করব। আমাদের অবশ্যই “সমস্ত সত্যে” চলতে হবে। (যোহন ১৬:১৩) আগের প্রবন্ধে আমরা এমন পাঁচটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলো আমরা হয়তো সত্য শেখার ও জীবনে তা কাজে লাগানোর জন্য ত্যাগ করেছি। এখন আমরা দেখব যে, কীভাবে আমরা সতর্ক থাকতে পারি যেন আমরা পিছনে ছেড়ে আসা সেই বিষয়গুলোর দিকে কখনো ফিরে না যাই।—মথি ৬:১৯.

৮. একজন খ্রিস্টান যেভাবে তার সময়কে ব্যয় করেন, সেটার কারণে কীভাবে তিনি সত্য থেকে ভেসে চলে যেতে পারেন? একটা উদাহরণ দিন।

সময়। সত্য থেকে ভেসে চলে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই নিজেদের সময়কে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করে যেতে হবে। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা এই বিষয়গুলোর পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে ফেলতে পারি যেমন, বিনোদন, শখ, ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করা অথবা টিভি দেখা। যদিও এমন নয় যে, এই বিষয়গুলো করা ভুল, তারপরও আমরা হয়তো এগুলোর পিছনে সেই সময়টা ব্যয় করতে পারি, যেটা আমরা আগে অধ্যয়ন করার ও পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার জন্য ব্যয় করতাম। এমা * নামে একজন বোনের প্রতি এইরকমই কিছু ঘটেছিল। ছোটোবেলা থেকেই তিনি ঘোড়া ভালোবাসতেন এবং যখনই সম্ভব, ঘোড়ার পিঠে চড়তেন। কিন্তু, তিনি তার এই শখের পিছনে যে-সময় ব্যয় করছিলেন, সেটার কারণে দোষী বোধ করতে শুরু করেছিলেন আর তাই, তিনি তার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি বোন কোরি ওয়েল্‌জের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিলেন, যিনি ঘোড়ায় চড়ে খেলা দেখাতেন। * এখন বোন এমা যিহোবার সেবায় আরও বেশি সময় ব্যয় করেন এবং তার কাছে তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য আরও বেশি সময় থাকে, যারা যিহোবার সেবা করে। তিনি ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী বোধ করেন এবং তিনি এটা জেনে খুশি যে, তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে তার সময় ব্যয় করছেন।

৯. কীভাবে বস্তুগত বিষয়গুলো আমাদের জীবনে অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে?

বস্তুগত বিষয়। ক্রমাগত সত্যে চলার জন্য আমরা বস্তুগত বিষয়গুলোকে আমাদের জীবনে অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দিতে পারি না। আমরা যখন সত্য শিখেছিলাম, তখন আমরা এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে, যিহোবার সেবা করা বস্তুগত বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা সত্যের জন্য সেগুলোর মধ্যে যেকোনো কিছু আনন্দের সঙ্গে ত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলাম। কিন্তু, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হয়তো দেখতে পারি, অন্যেরা সবচেয়ে আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো কিনছে অথবা এমন অন্যান্য বিষয়গুলো উপভোগ করছে, যেগুলো টাকা দিয়ে কেনা যায়। আমরা হয়তো এমনটা অনুভব করা শুরু করতে পারি যে, আমরা সেগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এমনটা হতে পারে যে, আমরা আমাদের কাছে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে আর সন্তুষ্ট নই এবং আমরা হয়তো যিহোবার সেবা করার উপর নয় বরং আরও বেশি বস্তুগত বিষয় লাভ করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা শুরু করতে পারি। এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দীমার প্রতি কী ঘটেছিল। তিনি ‘এই বর্ত্তমান যুগকে’ এতটাই ভালোবেসেছিলেন যে, তিনি প্রেরিত পৌলের সঙ্গে সেবা করার কার্যভার ত্যাগ করেছিলেন। (২ তীম. ৪:১০) হতে পারে, দীমা ঈশ্বরের সেবা করার চেয়ে বস্তুগত বিষয়গুলোকে বেশি ভালোবেসেছিলেন। অথবা হতে পারে, তিনি পৌলের সঙ্গে সেবা করার জন্য আর ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। আমাদের জন্য শিক্ষাটা কী? হতে পারে, অতীতে আমরা বস্তুগত বিষয়গুলোকে সত্যিই ভালোবাসতাম। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে সেই ভালোবাসা আমাদের হৃদয়ে আবারও গড়ে উঠতে পারে এবং এতটাই শক্তিশালী হয়ে যেতে পারে যে, আমরা সত্যের প্রতি আমাদের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলতে পারি।

১০. আমাদের অবশ্যই কোন প্রভাবকে প্রতিরোধ করতে হবে?

১০ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক। ক্রমাগত সত্যে চলার জন্য আমরা যেন সেই ব্যক্তিদের দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে না দিই, যারা যিহোবার সেবা করে না। আমরা যখন সত্য শিখেছিলাম, তখন ন-সাক্ষি বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছিল। হতে পারে, কেউ কেউ আমাদের নতুন বিশ্বাসগুলোর প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল কিন্তু অন্যেরা হয়তো সেগুলোর বিরোধিতা করেছিল। (১ পিতর ৪:৪) অবশ্য, আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মানিয়ে চলার এবং তাদের প্রতি সদয় আচরণ করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করার চেষ্টা করি। কিন্তু, আমরা তাদের খুশি করার জন্য যিহোবার মানগুলোকে উপেক্ষা করতে পারি না। আর আমরা ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩ পদ থেকে যেমন শিখেছি, আমাদের সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করা উচিত, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে।

১১. কীভাবে আমরা অশুচি চিন্তাভাবনা ও আচরণ এড়িয়ে চলতে পারি?

১১ অশুচি চিন্তাভাবনা ও আচরণ। সত্যে চলার জন্য আমাদের যিহোবার দৃষ্টিতে পবিত্র বা শুচি হতে হবে। (যিশা. ৩৫:৮; পড়ুন, ১ পিতর ১:১৪-১৬.) আমরা যখন সত্য শিখেছিলাম, তখন আমরা বাইবেলের মানগুলো অনুসরণ করার জন্য আমাদের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করেছিলাম। কেউ কেউ অনেক বড়ো বড়ো পরিবর্তন করেছিল। কিন্তু, আমাদের এখনও সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা কখনো এক অনৈতিক জীবনের বিনিময়ে আমাদের শুচি জীবন ত্যাগ না করি। কী আমাদের কোনো অনৈতিক কাজ করার যেকোনো প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারে? চিন্তা করুন, আমরা যেন পবিত্র হতে পারি, সেইজন্য যিহোবা কী দিয়েছেন। তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র যিশু খ্রিস্টের বহুমূল্য রক্ত দিয়েছেন! (১ পিতর ১:১৮, ১৯) যিহোবার দৃষ্টিতে শুচি থাকার জন্য আমাদের সবসময় এটা মনে রাখতে হবে যে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান কতটা মূল্যবান।

১২, ১৩. (ক) কেন আমাদের ছুটির দিনগুলোকে অবশ্যই যিহোবার মতো করে দেখতে হবে? (খ) এখন আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১২ যে-প্রথা ও অভ্যাসগুলো ঈশ্বরকে খুশি করে না। পরিবারের সদস্যরা, সহকর্মীরা ও সহপাঠীরা হয়তো আমাদের তাদের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন উদ্‌যাপনে যেমন, জন্মদিনের পার্টিতে অথবা ছুটির দিনগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য বলতে পারে। কী আমাদের এমন প্রথা ও ছুটির দিনগুলোতে অংশ নেওয়ার চাপ প্রতিরোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারে, যেগুলো যিহোবাকে খুশি করে না? আমাদের মনে এই বিষয়টা স্পষ্ট রাখতে হবে যে, কেন যিহোবা এই ছুটির দিনগুলোকে অনুমোদন করেন না। আমরা আমাদের প্রকাশনাদি থেকে গবেষণা করতে পারি এবং নিজেদের স্মরণ করিয়ে দিতে পারি যে, কীভাবে নির্দিষ্ট কিছু ছুটির দিন শুরু হয়েছিল। আমরা যখন এই ছুটির দিনগুলো উদ্‌যাপন না করার শাস্ত্রীয় কারণগুলো নিয়ে ধ্যান করি, তখন আমরা এই নিশ্চয়তা বোধ করি যে, আমরা সেই পথে চলছি, যেটা “প্রভুর প্রীতিজনক।” (ইফি. ৫:১০) আমরা যদি যিহোবা ও তাঁর বাক্যের উপর আস্থা রাখি, তা হলে আমরা এই বিষয়ে ভয় পাব না যে, অন্য লোকেরা কী চিন্তা করে।—হিতো. ২৯:২৫.

১৩ আমরা চিরকাল ধরে সত্যে চলার আশা রাখি। কী আমাদের ক্রমাগত সত্যে চলার বিষয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? তিনটে বিষয় বিবেচনা করুন, যেগুলো আমরা করতে পারি।

সত্যে চলার বিষয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন

১৪. (ক) কীভাবে ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করা আমাদের কখনো সত্যকে পরিত্যাগ না করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে সাহায্য করবে? (খ) কেন আমাদের প্রজ্ঞা, শাসন ও বোধগম্যতার প্রয়োজন রয়েছে?

১৪ প্রথমত, ক্রমাগত বাইবেল অধ্যয়ন করুন এবং আপনি যা শেখেন, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এর জন্য নিয়মিতভাবে সময় আলাদা করে রাখুন। আপনি যতবেশি অধ্যয়ন করবেন, ততবেশি সত্যকে ভালোবাসবেন এবং কখনো তা পরিত্যাগ না করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবেন। হিতোপদেশ ২৩:২৩ পদ আমাদের ‘সত্য ক্রয় করিতে’ ও সেইসঙ্গে “প্রজ্ঞা, শাসন ও সুবিবেচনা” বা বোধগম্যতা কিনতে বলে। কেবল বাইবেলের সত্য জানাই যথেষ্ট নয়। আমাদের এটাকে জীবনে কাজে লাগাতে হবে। আমরা যখন বোধগম্যতা অর্জন করি, তখন আমরা যা শিখি, সেটাকে আমরা ইতিমধ্যেই যা জানি, সেটার সঙ্গে যুক্ত করি। প্রজ্ঞা আমাদের অনুপ্রাণিত করে যেন আমরা যা জানি, সেই অনুযায়ী কাজ করি। কখনো কখনো সত্য আমাদের এটা দেখতে সাহায্য করার মাধ্যমে শাসন করে যে, আমাদের কোন কোন পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের এই ধরনের শাসনের প্রতি দ্রুত সাড়া দিতে হবে, যেটাকে বাইবেল রুপোর চেয়েও বেশি মূল্যবান হিসেবে উল্লেখ করে।—হিতো. ৮:১০.

১৫. কীভাবে সত্য একটা বেল্টের মতো আমাদের সুরক্ষিত রাখে?

১৫ দ্বিতীয়ত, সত্যকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানোর বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। বাইবেল সত্যকে একজন সৈনিকের কটিবন্ধনী বা বেল্টের সঙ্গে তুলনা করে। (ইফি. ৬:১৪) বাইবেলের সময়ে একটা বেল্ট ততক্ষণ পর্যন্ত একজন সৈনিককে যুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করত, যতক্ষণ সেটা শক্ত করে বাঁধা থাকত। যদি সেটা ঢিলে থাকত, তা হলে সেটা তাকে সাহায্য করত না। কীভাবে সত্য একটা বেল্টের মতো আমাদের সুরক্ষিত রাখে? আমরা যদি সবসময় বাইবেলের সত্যকে আমাদের কাছে রাখি, তা হলে এটা আমাদের ভুল চিন্তা করা থেকে সুরক্ষিত রাখবে এবং আমাদের ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আমরা যখন গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হই অথবা কোনো ভুল কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ হই, তখন বাইবেলের সত্য আমাদের যা সঠিক, তা করার বিষয়ে আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ করবে। ঠিক যেমন একজন সৈনিক কখনো তার বেল্ট ছাড়া যুদ্ধে যেতেন না, তেমনই আমরা কখনো সত্যকে পরিত্যাগ করব না। আমরা এটা নিশ্চিত করি যে, আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে বাইবেলের সত্য প্রয়োগ করছি। একজন সৈনিক তার বেল্টে তার খড়্গও বহন করতেন। আসুন আমরা দেখি, কীভাবে আমরা একইরকম কিছু করতে পারি।

১৬. কীভাবে সত্য শেখানো আমাদের ক্রমাগত সত্যে চলতে সাহায্য করে?

১৬ তৃতীয়ত, আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব অন্যদের সত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। বাইবেলকে একটা খড়্গের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ঠিক যেমন একজন দক্ষ সৈনিক তার খড়্গ শক্ত করে ধরে রাখতেন, তেমনই আমাদের ঈশ্বরের বাক্যকে শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। (ইফি. ৬:১৭) আমরা সবাই আরও ভালো শিক্ষক হয়ে উঠতে পারি এবং “সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে” পারি। (২ তীম. ২:১৫) আমরা যখন অন্যদের শেখানোর জন্য বাইবেল ব্যবহার করি, তখন আমরা সত্য সম্বন্ধে আরও বেশি করে জানতে পারি এবং সেটার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আর আমরা ক্রমাগত সত্যে চলার বিষয়ে এমনকী আরও বেশি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে উঠি।

১৭. কেন সত্য আপনার কাছে মূল্যবান?

১৭ সত্য হল যিহোবার কাছে থেকে পাওয়া এক মূল্যবান উপহার। এটা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলাকে সম্ভবপর করে। এই সম্পর্ক হল আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়। যিহোবা ইতিমধ্যেই আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছেন কিন্তু এটা কেবল একটা শুরু! তিনি আমাদের চিরকাল ধরে ক্রমাগত শেখানোর প্রতিজ্ঞা করেন। তাই, সত্যকে মূল্যবান হিসেবে দেখুন, ঠিক যেমন আপনি একটা উত্তম মুক্তাকে মূল্যবান হিসেবে দেখবেন। ক্রমাগত ‘সত্য ক্রয় করুন’ এবং কখনো তা ‘বিক্রয় করিবেন না।’ তা হলে, আপনি দায়ূদের মতোই যিহোবার কাছে করা এই প্রতিজ্ঞা রাখবেন: “আমি তোমার সত্যে চলিব।”—গীত. ৮৬:১১.

^ অনু. 8 নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 8 JW ব্রডকাস্টিং-এ যান এবং INTERVIEWS AND EXPERIENCES > TRUTH TRANSFORMS LIVES-এর অধীনে দেখুন।