সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার উপর আস্থা রাখুন এবং বেঁচে থাকুন!

যিহোবার উপর আস্থা রাখুন এবং বেঁচে থাকুন!

“তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।”—হিতো. ৩:৫.

গান সংখ্যা: ২৩, ৪৯

১. কেন আমাদের সবারই সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে?

আমাদের সবারই সান্ত্বনার প্রয়োজন রয়েছে। হতে পারে, আমাদের জীবন দুশ্চিন্তা, হতাশা ও উদ্‌বিগ্নতায় ভরে গিয়েছে। আমরা হয়তো কষ্ট ভোগ করছি কারণ আমরা অসুস্থতায় ভুগছি, আমরা ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি অথবা আমাদের কোনো প্রিয়জন মারা গিয়েছেন। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যদের কাছ থেকে খারাপ আচরণের শিকার হচ্ছে। এর পাশাপাশি, আমাদের চারপাশের লোকেরা আরও বেশি দৌরাত্ম্যপরায়ণ হয়ে উঠছে। সত্যিই, এই “বিষম সময়” প্রমাণ করে যে, আমরা “শেষ কালে” বাস করছি এবং প্রতিদিন আমরা নতুন জগতের আরও কাছে এগিয়ে যাচ্ছি। (২ তীম. ৩:১) তারপরও, আমরা হয়তো যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছি আর আমরা হয়তো আরও বেশি সমস্যা ভোগ করছি। তাই, কোথায় আমরা সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারি?

২, ৩. (ক) হবক্‌কূক সম্বন্ধে আমরা কী জানি? (খ) কেন আমরা হবক্‌কূক বইটা পরীক্ষা করব?

আসুন, আমরা এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য হবক্‌কূক বইটা পরীক্ষা করে দেখি। যদিও শাস্ত্র আমাদের হবক্‌কূকের জীবন সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য জানায় না, তবে তার এই বই সত্যিই উৎসাহজনক। হবক্‌কূক নামের অর্থ সম্ভবত “উষ্ণ আলিঙ্গন।” এটা হয়তো যিহোবার উষ্ণ আলিঙ্গনকে নির্দেশ করতে পারে, যেটা তাঁর উপাসকদের সান্ত্বনা প্রদান করে। অথবা এটা হয়তো তাঁর উপাসকরা যেভাবে তাঁকে আঁকড়ে ধরে থাকে, সেটাকেও নির্দেশ করতে পারে। হবক্‌কূক ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাঁকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। যিহোবা হবক্‌কূককে সেই কথোপকথন লিখে রাখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন কারণ ঈশ্বর জানতেন যে, আমরা এর থেকে উপকার লাভ করব।—হবক্‌. ২:২.

বাইবেল আমাদের হবক্‌কূক সম্বন্ধে কেবল এতটুকুই জানায় যে, সেই অত্যন্ত দুঃখিত ভাববাদী ও যিহোবার মধ্যে কোন কথোপকথন হয়েছিল। কিন্তু, তার লেখা বই হল ঈশ্বরের বাক্যে “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল,” সেই সমস্ত কিছুর এক অংশ “যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) কীভাবে হবক্‌কূক বইটা আমাদের প্রত্যেককে সাহায্য করতে পারে? এটা আমাদের বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে যে, যিহোবার উপর আস্থা রাখার অর্থ কী। আর হবক্‌কূকের ভবিষ্যদ্‌বাণী আমাদের আশ্বস্ত করে যে, আমরা মনের শান্তি বজায় রাখতে পারি, তা আমাদের সামনে যেকোনো সমস্যা অথবা পরীক্ষাই আসুক না কেন।

যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন

৪. কেন হবক্‌কূক অত্যন্ত দুঃখিত ছিলেন?

হবক্‌কূক ১:২, ৩ পদ পড়ুন। হবক্‌কূক অত্যন্ত কঠিন এক সময়ে বাস করতেন। তার চারপাশের লোকেরা মন্দ ও দৌরাত্ম্যপরায়ণ ছিল আর এই কারণে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত ছিলেন। তিনি যে-দিকেই তাকাতেন, দেখতেন যে, ইস্রায়েলীয়রা একে অন্যের সঙ্গে নিষ্ঠুর ও অন্যায্য আচরণ করছে। হবক্‌কূক চিন্তা করেছিলেন: ‘কখন এই মন্দতা শেষ হবে? কেন যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এত দেরি করছেন?’ তিনি নিজেকে অসহায় বলে মনে করেছিলেন। তাই, তিনি যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন যেন তিনি পদক্ষেপ নেন। হবক্‌কূক হয়তো এমনটা চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য আর চিন্তা করেন না অথবা তিনি পদক্ষেপ নেবেন না। আপনি কি কখনো এইরকম চিন্তা করেছেন?

৫. হবক্‌কূক বই থেকে আমার কী শিখতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

হবক্‌কূক কি এই কারণে সেই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি যিহোবা ও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর আস্থা রাখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন? একেবারেই না! হবক্‌কূক তার সন্দেহ ও সমস্যাগুলোর বিষয়ে যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, যেটা দেখায় যে, তিনি আশা ছেড়ে না দিয়ে বরং তখনও তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলেন। হবক্‌কূক স্পষ্টতই দুশ্চিন্তা ও বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন। তিনি এটা বুঝতে পারেননি যে, কেন যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং কেন তিনি তাকে এতটা কষ্ট ভোগ করতে দিচ্ছিলেন। যিহোবা যে হবক্‌কূককে তার চিন্তার বিষয়গুলো লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন, সেই বিষয়টা আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। আমরা যেন আমাদের চিন্তা অথবা সন্দেহ সম্বন্ধে যিহোবাকে জানানোর বিষয়ে ভয় না পাই। সত্যি বলতে কী, তিনি আমাদের প্রার্থনা করার এবং আমাদের অনুভূতি সম্বন্ধে সমস্ত কিছু তাঁকে জানানোর জন্য সদয়ভাবে আমন্ত্রণ জানান। (গীত. ৫০:১৫; ৬২:৮) হিতোপদেশ ৩:৫ পদ আমাদের সবাইকে উৎসাহিত করে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর” বা আস্থা রাখো, “তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” হবক্‌কূক এই কথাগুলো নিজের জীবনে কাজে লাগিয়েছিলেন।

৬. কেন প্রার্থনা করা গুরুত্বপূর্ণ?

হবক্‌কূক তার বন্ধু ও পিতা যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন এবং তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। হবক্‌কূক কেবল তার পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেননি এবং তিনি নিজে নিজেই সেটার সমাধান করার চেষ্টা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি তার অনুভূতি ও চিন্তার বিষয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। এটা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ। যিহোবা, যিনি হলেন প্রার্থনা শ্রবণকারী, আমাদের আমন্ত্রণ জানান যেন আমরা প্রার্থনা করার এবং আমাদের চিন্তার বিষয়গুলো তাঁকে বলার মাধ্যমে দেখাই যে, তাঁর উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। (গীত. ৬৫:২) আমরা যখন এমনটা করব, তখন আমরা দেখব যে, কীভাবে যিহোবা আমাদের প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন। তিনি যখন আমাদের সান্ত্বনা ও নির্দেশনা দেবেন, তখন আমরা তাঁর উষ্ণ আলিঙ্গন অনুভব করব। (গীত. ৭৩:২৩, ২৪) তিনি আমাদের বুঝতে সাহায্য করবেন যে, তিনি আমাদের পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখেন, তা আমরা যেকোনো পরীক্ষাই ভোগ করি না কেন। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা হল তাঁর উপর আমাদের আস্থা প্রকাশ করার সবচেয়ে ভালো উপায়গুলোর মধ্যে একটা।

যিহোবার কথা শুনুন

৭. হবক্‌কূক যখন যিহোবাকে তার চিন্তার বিষয়ে বলেছিলেন, তখন তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

হবক্‌কূক ১:৫-৭ পদ পড়ুন। হবক্‌কূক যিহোবাকে তার দুশ্চিন্তার বিষয়ে বলার পর হয়তো ভেবেছিলেন, যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে যিহোবা বুঝেছিলেন যে, হবক্‌কূক কেমন অনুভব করছেন। তিনি জানতেন যে, হবক্‌কূক কষ্ট ভোগ করছেন এবং সাহায্য ভিক্ষা করছেন। তাই, যিহোবা হবক্‌কূকের উপর রেগে যাননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাকে বলেছিলেন যে, তিনি সেই অবিশ্বস্ত যিহুদিদের প্রতি শীঘ্রই কী করবেন। সত্যি বলতে কী, হবক্‌কূকই হয়তো সেই প্রথম ব্যক্তি, যাকে যিহোবা বলেছিলেন যে, তারা শীঘ্রই শাস্তি পাবে।

৮. কেন হবক্‌কূক যিহোবার এই উত্তরের বিষয়ে একেবারেই আশা করেননি?

যিহোবা হবক্‌কূকের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি যিহূদার দৌরাত্ম্যপরায়ণ ও মন্দ লোকেদের শাস্তি দেবেন। যিহোবা বলেছিলেন, এই বিষয়গুলো “তোমাদের সময়ে” ঘটবে আর এভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, এই বিচার হবক্‌কূকের অথবা তার চারপাশের ইস্রায়েলীয়দের জীবনকালেই আসবে। হবক্‌কূক একেবারেই আশা করেননি যে, যিহোবা এইরকম উত্তর দেবেন। কল্‌দীয়রা অর্থাৎ বাবিলীয়রা নির্মম ছিল। তারা ইস্রায়েলীয়দের চেয়েও দৌরাত্ম্যপরায়ণ ছিল, যারা অন্ততপক্ষে যিহোবার মান সম্বন্ধে জানত। তা হলে, কেন যিহোবা তাঁর লোকেদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এই নিষ্ঠুর পৌত্তলিক জাতিকে ব্যবহার করবেন? এটা তো যিহূদার জন্য কেবল আরও কষ্ট আনবে। আপনি হবক্‌কূকের জায়গায় থাকলে কেমন অনুভব করতেন?

৯. হবক্‌কূক আর কোন কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন?

হবক্‌কূক ১:১২-১৪, ১৭ পদ পড়ুন। * যদিও হবক্‌কূক এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা তার চারপাশে থাকা মন্দ লোকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বাবিলীয়দের ব্যবহার করতে চলেছেন, তারপরও তিনি বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন। কিন্তু, তিনি নম্র ছিলেন এবং যিহোবার উপর ক্রমাগত নির্ভরতা বা আস্থা রাখার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সত্যি বলতে কী, তিনি বলেছিলেন যে, যিহোবা তখনও তার “শৈল” ছিলেন। (দ্বিতীয়. ৩২:৪; যিশা. ২৬:৪) হবক্‌কূক এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যিহোবা হলেন প্রেমময় ও সদয় আর তাই, তিনি যিহোবাকে আরও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ভয় পাননি যেমন: কেন যিহোবা যিহূদার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ হতে দেবেন এবং তাঁর লোকেদের আরও কষ্ট ভোগ করতে দেবেন? কেন তিনি সঙ্গেসঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন না? কেন সর্বশক্তিমান ‘নীরব থাকিবেন’ এবং চারিদিকে ছেয়ে থাকা দুষ্টতার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না? যেহেতু যিহোবা হলেন “পবিত্রতম” আর তাঁর ‘এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পারেন না,’ তাই কেন তিনি এই বিষয়গুলো ঘটতে দেবেন?

১০. কেন আমরা হয়তো কখনো কখনো হবক্‌কূকের মতো অনুভব করি?

১০ কখনো কখনো আমরা হয়তো হবক্‌কূকের মতো অনুভব করি। আমরা যিহোবার কথা শুনি। আমরা তাঁর উপর আস্থা রাখি এবং তাঁর বাক্য পড়ি ও অধ্যয়ন করি, যেটা আমাদের আশাকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়া, আমরা তাঁর সংগঠনের দ্বারা জোগানো নির্দেশনাগুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে শুনি। কিন্তু, আমরা হয়তো তারপরও চিন্তা করতে পারি, ‘কখন আমাদের কষ্ট শেষ হবে?’ হবক্‌কূক এরপর যা করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি।

যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন

১১. হবক্‌কূক কী করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন?

১১ হবক্‌কূক ২:১ পদ পড়ুন। যিহোবার সঙ্গে হবক্‌কূকের কথোপকথন তাকে মনের শান্তি প্রদান করেছিল। এটা তাকে যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ করেছিল। হবক্‌কূক তার দৃঢ়সংকল্পের বিষয়ে পুনরায় উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমাকে বিশ্রাম করিতে হইবে, সঙ্কটের দিনের অপেক্ষায় [“আমি সেদিনের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]।” (হবক্‌. ৩:১৬) ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসেরাও যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করেছিল। তাদের উদাহরণ আমাদের উৎসাহিত করে কারণ এটা প্রমাণ করে যে, আমরাও একই বিষয় করতে পারি।—মীখা ৭:৭; যাকোব ৫:৭, ৮.

১২. হবক্‌কূকের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ হবক্‌কূকের দৃঢ়সংকল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি? প্রথমত, আমরা যেন কখনোই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা বন্ধ না করি, তা আমরা যেকোনো সমস্যাই ভোগ করি না কেন। দ্বিতীয়ত, যিহোবা তাঁর বাক্য ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের যা-কিছু বলেন, আমাদের সেগুলো শুনতে হবে। আর তৃতীয়ত, যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়াপর্যন্ত আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত আর এই আস্থা রাখা উচিত যে, তিনি তাঁর সময়ে আমাদের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দেবেন। আমরা যদি হবক্‌কূককে অনুকরণ করি, তা হলে আমরা মনের শান্তি বজায় রাখব এবং ধৈর্য ধরতে পারব। আমাদের প্রত্যাশা আমাদের ধৈর্য ধরতে ও সুখী হতে সাহায্য করবে, তা যেকোনো সমস্যাই আসুক না কেন। আমাদের এই বিষয়ে আস্থা রয়েছে যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা পদক্ষেপ নেবেন।—রোমীয় ১২:১২.

১৩. কীভাবে যিহোবা হবক্‌কূককে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন?

১৩ হবক্‌কূক ২:৩ পদ পড়ুন। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, হবক্‌কূক যে যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেইজন্য যিহোবা খুশি হয়েছিলেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর খুব ভালোভাবে জানতেন যে, হবক্‌কূক কীরকম কষ্ট ভোগ করছিলেন আর তাই, তিনি সেই ভাববাদীকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং প্রেমের সঙ্গে তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তিনি তার আন্তরিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন।। হবক্‌কূক শীঘ্রই তার সমস্ত দুশ্চিন্তা থেকে স্বস্তি পাবেন। এটা এমন ছিল যেন যিহোবা হবক্‌কূককে বলছিলেন: “শুধু ধৈর্য ধরো আর আমার উপর আস্থা রাখো। যদি মনে হয় অনেক দেরি হচ্ছে, তা সত্ত্বেও আমি তোমার প্রার্থনার উত্তর দেব।” যিহোবা হবক্‌কূককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কখন তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন। তাই, তিনি হবক্‌কূককে অপেক্ষা করে চলতে উৎসাহিত করেছিলেন। পরিশেষে, সেই ভাববাদী হতাশ হবেন না।

কেন আমরা যিহোবার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ? (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. পরীক্ষা ভোগ করার সময়ে আমাদের কী করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?

১৪ আমাদেরও যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া, তিনি যা বলেন, তা আমাদের মন দিয়ে শুনতে হবে। এমনটা করলে আমরা আস্থা ও মনের শান্তি বজায় রাখতে পারব, তা আমরা যেকোনো পরীক্ষাই ভোগ করি না কেন। যিশু আমাদের সেইসমস্ত ‘সময় কি কালের’ উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত না করতে উৎসাহিত করেছিলেন, যেগুলোর বিষয়ে ঈশ্বর আমাদের জানাননি। (প্রেরিত ১:৭) আমাদের এই আস্থা রাখতে হবে যে, যিহোবা পদক্ষেপ নেওয়ার সর্বোত্তম সময় সম্বন্ধে জানেন। তাই, আমাদের হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং নম্র হওয়া, ধৈর্য ধরা এবং ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখা উচিত। আর আমাদের এই অপেক্ষা করার সময়কালে বিজ্ঞতার সঙ্গে নিজেদের সময়কে ব্যবহার করা এবং যিহোবার সেবায় যথাসম্ভব সর্বোত্তমটা করা উচিত।—মার্ক ১৩:৩৫-৩৭; গালা. ৬:৯.

যিহোবা সেই ব্যক্তিদের অনন্তজীবন দেবেন, যারা তাঁর উপর আস্থা রাখে

১৫, ১৬. (ক) হবক্‌কূক বইয়ে আমরা কোন প্রতিজ্ঞাগুলো খুঁজে পেতে পারি? (খ) এই প্রতিজ্ঞাগুলো আমাদের কী শেখায়?

১৫ যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন: “ধার্ম্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাঁচিবে” এবং “পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমাবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (হবক্‌. ২:৪, ১৪) হ্যাঁ, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের অনন্তজীবন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন, যারা ধৈর্য ধরে এবং তাঁর উপর আস্থা রাখে।

১৬ হবক্‌কূক ২:৪ পদে পাওয়া সেই প্রতিজ্ঞা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রেরিত পৌল তার বিভিন্ন চিঠিতে তিন বার সেটার উল্লেখ করেছিলেন! (রোমীয় ১:১৭; গালা. ৩:১১; ইব্রীয় ১০:৩৮) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমরা যেকোনো সমস্যাই ভোগ করি না কেন, আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ হতে দেখব। যিহোবা চান যেন আমরা ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের আশার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখি।

১৭. আমরা যদি যিহোবার উপর আস্থা রাখি, তা হলে তিনি আমাদের জন্য কী করবেন বলে আশ্বস্ত করেন?

১৭ আমরা যারা শেষকালে বাস করছি, আমাদের সবার জন্য হবক্‌কূক বইয়ে এক জোরালো শিক্ষা রয়েছে। যিহোবা এমন যেকোনো ধার্মিক ব্যক্তিকে অনন্তজীবন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন, যার তাঁর উপর আস্থা রয়েছে। তাই আসুন, আমরা যেন ঈশ্বরের উপর আমাদের আস্থাকে শক্তিশালী করে চলি, তা আমাদের জীবনে যেকোনো সমস্যা ও দুশ্চিন্তাই থাকুক না কেন। যিহোবা হবক্‌কূককে যা বলেছিলেন, তা আমাদের আশ্বস্ত করে যে, তিনি আমাদের সাহায্য করবেন এবং রক্ষা করবেন। তিনি সদয়ভাবে আমাদের অনুরোধ করেন যেন আমরা তাঁর উপর আস্থা রাখি এবং সেই সময়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করি, যা তিনি ইতিমধ্যেই পৃথিবীর উপর তাঁর রাজ্য শাসন করার জন্য নিরূপিত করে রেখেছেন। সেই সময়ে পৃথিবী এমন সুখী ও শান্তিপূর্ণ লোকদের দ্বারা পূর্ণ হবে, যারা যিহোবার উপাসনা করে।—মথি ৫:৫; ইব্রীয় ১০:৩৬-৩৯.

যিহোবার উপর আস্থা রাখুন এবং উল্লাসিত হোন

১৮. যিহোবার কথাগুলো হবক্‌কূককে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

১৮ হবক্‌কূক ৩:১৬-১৯ পদ পড়ুন। যিহোবা হবক্‌কূককে যা বলেছিলেন, তা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। হবক্‌কূক সেই চমৎকার বিষয়গুলো নিয়ে ধ্যান করেছিলেন, যেগুলো যিহোবা অতীতে তাঁর লোকেদের জন্য করেছিলেন। এতে, যিহোবার উপর তার আস্থা শক্তিশালী হয়েছিল। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা শীঘ্রই পদক্ষেপ নেবেন! এটা সেই ভাববাদীকে সান্ত্বনা জুগিয়েছিল, যদিও তিনি জানতেন যে, তাকে হয়তো আরও কিছু সময়ের জন্য কষ্ট ভোগ করতে হবে। হবক্‌কূকের মনে আর কোনো সন্দেহ ছিল না। এর পরিবর্তে, তার এই বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা তাকে রক্ষা করবেন। সত্যি বলতে কী, ১৮ পদে তিনি যা বলেছিলেন, সেটা হয়তো বাইবেলে পাওয়া আস্থার সবচেয়ে মহৎ অভিব্যক্তিগুলোর মধ্যে একটা। কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন যে, এর অর্থ হল: “আমি প্রভুতে আনন্দিত হয়ে লাফিয়ে বেড়াব; আমি ঈশ্বরে উল্লাসিত হয়ে নেচে বেড়াব।” আমাদের সবার জন্য কতই-না জোরালো এক শিক্ষা! যিহোবা কেবল আমাদের কাছে ভবিষ্যতের বিষয়ে অপূর্ব প্রতিজ্ঞাগুলোই করেননি কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি আমাদের এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন যে, খুব শীঘ্রই তিনি সেই প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন।

১৯. কীভাবে আমরা হবক্‌কূকের মতো যিহোবার কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি?

১৯ হবক্‌কূক বই থেকে আমরা যে-গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করি, সেটা হল যিহোবার উপর আস্থা রাখা। (হবক্‌. ২:৪) যিহোবার উপর ক্রমাগত আস্থা রাখার জন্য তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে হবে। তাই, আমাদের অবশ্যই এই বিষয়গুলো করতে হবে: (১) আমাদের ক্রমাগত প্রার্থনা করতে হবে এবং যিহোবাকে আমাদের সমস্ত দুশ্চিন্তা ও চিন্তার বিষয়ে জানাতে হবে। (২) যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের যা বলেন, তা মন দিয়ে শুনতে হবে এবং তিনি তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের যে-নির্দেশনা দেন, তা অনুসরণ করতে হবে। (৩) যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময়ে বিশ্বস্ত থাকতে এবং ধৈর্য ধরতে হবে। হবক্‌কূক ঠিক তা-ই করেছিলেন। যদিও তিনি যিহোবার সঙ্গে কথোপকথন শুরু করার সময়ে অত্যন্ত দুঃখিত ছিলেন কিন্তু শেষে, তিনি উৎসাহিত ও উল্লাসিত হয়েছিলেন! আমরা যদি হবক্‌কূককে অনুকরণ করি, তা হলে আমরাও আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার উষ্ণ আলিঙ্গনের দ্বারা সান্ত্বনা লাভ করব। এই মন্দ জগতে আমরা এর চেয়ে বেশি আর কোন সান্ত্বনা লাভ করতে পারি?

^ অনু. 9 হবক্‌কূক ১:১২ (ইজি-টু-রিড ভারশন): “এরপর হবক্‌কূক বললেন, ‘প্রভু, আপনিই হচ্ছেন অনন্তকালীন জীবিত প্রভু। আপনিই আমার পবিত্র ঈশ্বর যিনি অমর। প্রভু, যা করা উচিৎ তাই করতে আপনিই বাবিলীয়দের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের শিলা, যিহূদাবাসীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য আপনি তাদের সৃষ্টি করেছেন।’”