সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি যিহোবার চিন্তাভাবনাকে নিজের করে নিচ্ছেন?

আপনি কি যিহোবার চিন্তাভাবনাকে নিজের করে নিচ্ছেন?

“মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও।”—রোমীয় ১২:২.

গান সংখ্যা: ৩৪, ৪৩

১, ২. আমরা যখন উন্নতি করে চলি, তখন আমরা কী শিখি? একটা উদাহরণ দিন।

কল্পনা করুন, একজন ব্যক্তি একটি ছোটো বাচ্চাকে কোনো উপহার দিয়েছেন। তার বাবা-মা তাকে বলেন, “ধন্যবাদ বলো।” সে তা বলে কারণ তারা তাকে তা বলতে বলেছেন। কিন্তু, সেই বাচ্চা বড়ো হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শুরু করে, কেন তার বাবা-মা মনে করেন যে, অন্যেরা সদয় কাজগুলো করলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। একসময় সে নিজে থেকেই অন্যদের ধন্যবাদ জানাতে অনুপ্রাণিত হয় কারণ সে কৃতজ্ঞ হওয়ার বিষয়টা শিখেছে।

আমাদের প্রতি একইরকম বিষয় ঘটেছে। আমরা যখন সত্য শিখতে শুরু করেছিলাম, তখন আমরা শিখেছিলাম যে, যিহোবার মৌলিক আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, আমরা যখন উন্নতি করে চলি, তখন আমরা তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে অর্থাৎ তিনি কী পছন্দ করেন, কী পছন্দ করেন না এবং বিভিন্ন বিষয়কে কীভাবে দেখেন, সেই সম্বন্ধে আরও বেশি করে শিখি। আমরা যখন যিহোবার চিন্তাভাবনাকে আমাদের ব্যক্তিগত বাছাই ও কাজের উপর প্রভাব ফেলতে দিই, তখন আমরা তাঁর চিন্তাভাবনাকে আমাদের নিজের করে নিই।

৩. কেন যিহোবার মতো করে চিন্তা করা কঠিন হতে পারে?

যদিও আমরা যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে শেখাকে উপভোগ করি, তা সত্ত্বেও আমাদের অসিদ্ধতার কারণে কখনো কখনো তাঁর মতো করে চিন্তা করা কঠিন হয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা জানি যে, যিহোবা নৈতিক শুদ্ধতা, বস্তুবাদিতা, প্রচার কাজ, রক্তের অপব্যবহার এবং অন্যান্য বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন। কিন্তু, আমাদের জন্য এটা বোঝা কঠিন হতে পারে যে, কেন তিনি এই বিষয়গুলোকে এভাবে দেখেন। তাই, কীভাবে আমরা আরও বেশি করে যিহোবার মতো করে চিন্তা করা শিখতে পারি? আর কীভাবে এটা আমাদের বর্তমানে ও ভবিষ্যতে সঠিক কাজ করতে সাহায্য করবে?

যেভাবে আমরা ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে নিজের করে নিই

৪. আমাদের মনকে নতুন করে তোলার অর্থ কী?

রোমীয় ১২:২ পদ পড়ুন। এই পদে প্রেরিত পৌল বর্ণনা করেছিলেন যে, যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে শেখার জন্য আমাদের কী করতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই এই কথার বাধ্য হতে হবে: “এই যুগের অনুরূপ” বা এটার দ্বারা প্রভাবিত “হইও না।” আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন শিখেছি, এর অর্থ হল আমাদের অবশ্যই জগতের ধারণা ও মনোভাবকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। কিন্তু, পৌল আরও বলেছিলেন যে, আমাদের মনকে নতুন করে তুলতে হবে। এর অর্থ হল আমাদের ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করতে হবে, তাঁর চিন্তাভাবনা বুঝতে হবে, সেটা নিয়ে ধ্যান করতে হবে এবং ঈশ্বরের মতো করে চিন্তা করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে।

৫. পড়ার ও ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার মধ্যে থাকা পার্থক্য ব্যাখ্যা করুন।

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার অর্থ কেবল দ্রুত কোনো তথ্য পড়া অথবা অধ্যয়নের প্রশ্নের উত্তরের তলায় দাগ দেওয়া নয়। এটা আরও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা যখন অধ্যয়ন করি, তখন আমরা চিন্তা করি যে, বিষয়বস্তুটা যিহোবা, তাঁর কাজ ও তাঁর চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়। আমরা এটা বোঝার চেষ্টা করি যে, কেন যিহোবা আমাদের একটা বিষয় করতে বলেন এবং অন্যটা এড়িয়ে চলতে বলেন। এ ছাড়া, আমরা বিবেচনা করি যে, আমাদের জীবনধারা ও চিন্তাভাবনায় কোন পরিবর্তন করতে হবে। অবশ্য, প্রত্যেক বার অধ্যয়ন করার সময়ে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ধ্যান করা সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু, আমরা যা পড়েছি, তা নিয়ে ধ্যান করার জন্য সময় ব্যয় করা, হতে পারে প্রতিটা অধ্যয়ন পর্বের অর্ধেক সময় ব্যয় করা ভালো।—গীত. ১১৯:৯৭; ১ তীম. ৪:১৫.

৬. আমরা যখন ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করি, তখন কী ঘটে?

আমরা যখন নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করি, তখন চমৎকার কিছু ঘটে। আমরা নিজেদের এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করি যে, যিহোবার চিন্তাভাবনা সিদ্ধ বা নিখুঁত। আমরা এটা বুঝতে শুরু করি যে, বিভিন্ন বিষয়কে তিনি কীভাবে দেখেন এবং একসময় আমরা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হই। এভাবে, আমরা আমাদের মনকে নতুন করে তুলি আর এক নতুন উপায়ে চিন্তা করতে শুরু করি। ধীরে ধীরে আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনাকে আমাদের নিজের করে নিই।

আমাদের চিন্তাভাবনা আমাদের কাজের উপর প্রভাব ফেলে

৭, ৮. (ক) যিহোবা বস্তুগত বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) আমরা যদি বস্তুগত বিষয়গুলোকে যিহোবার মতো করে দেখি, তা হলে কী আমাদের কাছে সবসময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে?

আমাদের চিন্তাভাবনা আমাদের কাজের উপর প্রভাব ফেলে। (মার্ক ৭:২১-২৩; যাকোব ২:১৭) আসুন, আমরা কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করি, যেগুলো এই বিষয়টাকে স্পষ্ট করে। এর মধ্যে একটা উদাহরণ আমরা যিশুর জন্মের বিবরণে পাই আর এটা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার চিন্তাভাবনা কেমন। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে বড়ো করে তোলার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যোষেফ ও মরিয়মকে বেছে নিয়েছিলেন, যদিও তাদের কাছে অনেক অর্থ ছিল না। (লেবীয়. ১২:৮; লূক ২:২৪) যিশু যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তখন মরিয়ম তাঁকে একটা ‘যাবপাত্রে শোয়াইয়া রাখিয়াছিলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁহাদের জন্য স্থান ছিল না।’ (লূক ২:৭) যিহোবা যদি চাইতেন, তা হলে তিনি নিশ্চিত করতে পারতেন যে, যিশুর জন্ম খুবই ভালো একটা জায়গায় হোক। কিন্তু, তিনি চেয়েছিলেন যেন যিশু এমন একটা পরিবারে বড়ো হয়ে উঠুক, যে-পরিবার ঈশ্বরের উপাসনাকে প্রথমে রাখে। এটাই যিহোবার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

যিশুর জন্ম সম্বন্ধে এই বিবরণ আমাদের শেখায় যে, যিহোবা বস্তুগত বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন। কোনো কোনো বাবা-মা চান যেন তাদের সন্তানরা সবচেয়ে ভালো বস্তুগত বিষয়গুলো লাভ করে আর তা এমনকী সেগুলোর কারণে যিহোবার সঙ্গে তাদের সন্তানদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও। কিন্তু স্পষ্টতই, যিহোবা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখেন। আপনি কি এই বিষয়টা সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিয়েছেন? আপনার কাজ কী দেখায়?—পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:৫.

৯, ১০. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, অন্যদের বিঘ্ন জন্মানোর বিষয়টাকে যিহোবা যেভাবে দেখেন, আমরাও সেভাবেই দেখি?

আরেকটা উদাহরণ হল যিহোবা এমন একজন ব্যক্তিকে কীভাবে দেখেন, যিনি অন্যদের বিঘ্ন জন্মান অর্থাৎ অন্যদের পাপ করতে অথবা যিহোবার সেবা করা বন্ধ করতে পরিচালিত করেন। যিশু বলেছিলেন: “এই যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের এক জনের বিঘ্ন জন্মায়, বরং তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রে ফেলিয়া দিলেও তাহার পক্ষে ভাল।” (মার্ক ৯:৪২) এই কথাগুলো অত্যন্ত জোরালো! আর আমরা জানি যে, যিশু ঠিক তাঁর পিতার মতো। তাই, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যখন একজন ব্যক্তি যিশুর কোনো অনুসারীর বিঘ্ন জন্মান, তখন যিহোবা খুবই অসন্তুষ্ট হন।—যোহন ১৪:৯.

১০ অন্যদের বিঘ্ন জন্মানোর বিষয়টাকে যিহোবা ও যিশু যেভাবে দেখেন, আমরাও কি সেভাবেই দেখি? আমাদের কাজ কী দেখায়? উদাহরণ স্বরূপ, আমরা হয়তো একটা নির্দিষ্ট স্টাইলের পোশাক-আশাক ও সাজগোজ পছন্দ করি, যেটা মণ্ডলীর কাউকে কাউকে অসন্তুষ্ট করতে পারে অথবা অন্যদের মনে অনৈতিক চিন্তাভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারে। ভাই-বোনদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি আমাদের সেই পছন্দের বিষয়টা ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করবে?—১ তীম. ২:৯, ১০.

১১, ১২. আমরা যদি যিহোবা যেটাকে ঘৃণা করেন, সেটাকে ঘৃণা করতে এবং আত্মসংযম গড়ে তুলতে শিখি, তা হলে কীভাবে আমরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখব?

১১ তৃতীয় উদাহরণটা বিবেচনা করুন: যিহোবা দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন। (গীত. ৫:৪) অবশ্য, তিনি জানেন যে, আমাদের অসিদ্ধতার কারণে কখনো কখনো আমাদের পক্ষে যা সঠিক, তা করা কঠিন হয়। তারপরও, তিনি চান যেন আমরা দুষ্টতাকে ঘৃণা করি, ঠিক যেমনটা তিনি দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৯৭:১০.) আমরা যদি এই বিষয়টা নিয়ে ধ্যান করি যে, কেন যিহোবা দুষ্টতাকে অর্থাৎ মন্দ বিষয়গুলোকে ঘৃণা করেন, তা হলে সেটা আমাদের তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে আমাদের নিজের করে নিতে সাহায্য করবে এবং খারাপ কাজ করাকে প্রতিরোধ করার শক্তি দেবে।

১২ আমরা যদি দুষ্টতাকে ঘৃণা করতে শিখি, তা হলে সেটা আমাদের এই বিষয়টাও বুঝতে সাহায্য করবে যে, যদিও কোনো কোনো বিষয় সম্বন্ধে বাইবেলে নির্দিষ্টভাবে বলা নেই, তারপরও সেই বিষয়গুলো করা অন্যায়। উদাহরণ স্বরূপ, বর্তমান জগতে ল্যাপ ড্যান্সিং নামে এক ধরনের অনৈতিক আচরণ খুবই সাধারণ হয়ে উঠছে। কেউ কেউ হয়তো মনে করে, এটা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার মতো একই বিষয় নয় আর তাই তারা ভাবে, এটা খারাপ কিছু নয়। * কিন্তু, যিহোবা কি এই বিষয়টা সম্বন্ধে আসলেই এইরকম মনে করেন? মনে রাখবেন, যিহোবা সব ধরনের দুষ্টতাকে ঘৃণা করেন। তাই আসুন, আমরা আত্মসংযম গড়ে তুলতে শেখার এবং যিহোবা যেটাকে ঘৃণা করেন, সেটাকে ঘৃণা করার মাধ্যমে যেকোনো দুষ্টতা অর্থাৎ মন্দ বিষয় থেকে অনেক দূরে থাকি।—রোমীয় ১২:৯.

আপনি ভবিষ্যতে কী করবেন, তা নিয়ে এখনই চিন্তা করুন

১৩. আমরা যাতে ভবিষ্যতে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেইজন্য কেন আমাদের এখনই চিন্তা করা উচিত যে, বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবা কীভাবে দেখেন?

১৩ আমরা যখন ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করি, তখন আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবা কীভাবে দেখেন কারণ এটা আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে। এরপর, আমরা যদি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়ি, যেখানে আমাদের তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা হলে আমরা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ব না। (হিতো. ২২:৩) আসুন, আমরা বাইবেল থেকে কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করি।

১৪. যোষেফ পোটীফরের স্ত্রীকে যে-উত্তর দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখি?

১৪ পোটীফরের স্ত্রী যখন যোষেফকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। স্পষ্টতই, যোষেফ এটা নিয়ে আগে থেকে ধ্যান করেছিলেন যে, যিহোবা বিয়েকে কীভাবে দেখেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩৯:৮, ৯.) যোষেফ পোটীফরের স্ত্রীকে বলেছিলেন: “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?” এটা দেখায় যে, তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিজের করে নিয়েছিলেন। আমাদের বিষয়ে কী বলা যায়? আপনার সহকর্মী যদি আপনার সঙ্গে প্রেমের ভান করতে শুরু করেন, তা হলে আপনি কী করবেন? অথবা কেউ যদি আপনার মোবাইল ফোনে এমন কোনো মেসেজ অথবা ছবি পাঠান, যেটাতে যৌনতার বিষয়ে খোলাখুলিভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা হলে? * আমরা যদি ইতিমধ্যেই এইরকম বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি জেনে থাকি ও সেটাকে মেনে নিয়ে থাকি এবং কী করব, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি, তা হলে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকা আরও সহজ হয়ে যাবে।

১৫. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি, ঠিক যেমনটা সেই তিন জন ইব্রীয় যুবক করেছিলেন?

১৫ এ ছাড়া, শদ্রক, মৈশক, ও অবেদ্‌-নগো নামে পরিচিত তিন জন ইব্রীয় যুবকের উদাহরণ বিবেচনা করুন। রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যখন তাদের তার তৈরি সোনার প্রতিমার উপাসনা করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তখন তারা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রাজাকে বলা তাদের স্পষ্ট উত্তর দেখিয়েছিল, তারা ইতিমধ্যে এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখলে কী হবে। (যাত্রা. ২০:৪, ৫; দানি. ৩:৪-৬, ১২, ১৬-১৮) বর্তমান সময় সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনার কর্মকর্তা যদি আপনাকে মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো উদ্‌যাপনের জন্য অর্থ দান করতে বলেন, তা হলে আপনি কী করবেন? এইরকম কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে আরও ভালো হবে যদি আমরা এখনই এটা নিয়ে ধ্যান করি যে, যিহোবা এই ধরনের বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখেন। এরপর, আমরা যদি কখনো এই ধরনের কোনো পরিস্থিতিতে পড়ি, তা হলে আমাদের পক্ষে সঠিক কাজ করা ও সঠিক কথা বলা আরও সহজ হবে, ঠিক যেমনটা সেই তিন জন ইব্রীয় যুবক করেছিলেন।

আপনি কি গবেষণা করেছেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত একটা বৈধ নথি যেমন, স্বাস্থ্যসেবার অগ্রিম নির্দেশিকা পূরণ করেছেন এবং আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছেন? (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. কীভাবে যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে বোঝা আমাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৬ যিহোবার চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করা আমাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো জরুরি অবস্থাতেও তাঁর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে। অবশ্য, আমরা সম্পূর্ণ রক্ত অথবা রক্তের মূল চারটে উপাদানের কোনোটাই গ্রহণ না করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) কিন্তু, রক্ত সংক্রান্ত এমন কিছু চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে, যেগুলোতে প্রত্যেক খ্রিস্টানকে বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা করার সর্বোত্তম সময় কখন? আমরা যখন হাসপাতালে থাকি, সম্ভবত যন্ত্রণার মধ্যে আর আমাদের উপর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ থাকে, তখন সেটা কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বোত্তম সময় হবে? একেবারেই নয়। বরং গবেষণা করার, চিকিৎসা সংক্রান্ত একটা বৈধ নথি যেমন, স্বাস্থ্যসেবার অগ্রিম নির্দেশিকা (ইংরেজি) পূরণ করার এবং আমাদের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সময় এখনই। *

১৭-১৯. কেন এখনই বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার চিন্তাভাবনার বিষয়ে শেখা গুরুত্বপূর্ণ? একটা উদাহরণ দিন।

১৭ পরিশেষে চিন্তা করুন যে, যিশু সেইসময় দ্রুত কী বলেছিলেন, যখন পিতর তাকে এই মূর্খতাপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলেন: “প্রভু, ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক [“নিজের প্রতি সদয় হোন,” NW]।” স্পষ্টতই, যিশু এই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করেছিলেন যে, ঈশ্বর তাঁর কাছে থেকে কী চান এবং পৃথিবীতে তাঁর জীবন ও মৃত্যু সম্বন্ধে কী কী ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছে। এই জ্ঞান তাঁকে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার এবং তাঁর জীবন আমাদের জন্য বলি হিসেবে দেওয়ার জন্য শক্তি জুগিয়েছিল।—পড়ুন, মথি ১৬:২১-২৩.

১৮ বর্তমানে, ঈশ্বর চান যেন আমরা তাঁর বন্ধু হই এবং সুসমাচার প্রচার করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটা করি। (মথি ৬:৩৩; ২৮:১৯, ২০; যাকোব ৪:৮) কিন্তু, কেউ কেউ ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করতে পারে, ঠিক যেমনটা পিতর যিশুকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার কর্মকর্তা হয়তো আপনাকে আরও বেশি বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন কিন্তু আপনি জানেন, আপনি যদি সেটা গ্রহণ করেন, তা হলে আপনাকে কাজের পিছনে আরও বেশি সময় ব্যয় করতে হবে এবং আপনার কাছে সভায় যোগ দেওয়ার অথবা মণ্ডলীর সঙ্গে প্রচার করার জন্য আর আগের মতো সময় থাকবে না। অথবা তুমি যদি স্কুলে পড়ো, তা হলে তোমার শিক্ষক-শিক্ষিকারা হয়তো তোমাকে বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে অতিরিক্ত শিক্ষা লাভ করার সুযোগ দিতে পারেন। যদি আপনার সামনে এই সুযোগগুলো আসে, তা হলে আপনার কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রার্থনা করার, গবেষণা করার এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অথবা প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হবে? আরও ভালো হবে যদি আপনি এখনই শেখেন যে, এই বিষয়গুলো যিহোবা কীভাবে দেখেন আর তারপর, তাঁর চিন্তাভাবনাকে আপনার নিজের করে নেন। তা হলে, আপনাকে যদি কখনো এই বিষয়গুলোর প্রস্তাব দেওয়া হয়, তা হলে আপনি হয়তো সেগুলোকে ততটা প্রলুব্ধকর বলে মনে করবেন না। আপনি একেবারে সঠিকভাবে জানেন যে, কী করতে হবে কারণ আপনি ইতিমধ্যেই যিহোবার সেবা করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

১৯ আপনি সম্ভবত অন্যান্য পরিস্থিতির কথা চিন্তা করতে পারেন, যেগুলো হঠাৎই যিহোবার প্রতি আপনার আনুগত্যকে পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে। এটা ঠিক যে, আমরা প্রতিটা সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি না। কিন্তু, আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের সময়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করি, তা হলে আমরা আরও বেশি করে আমাদের শেখা বিষয়গুলো স্মরণ করতে পারব এবং জানব যে, যেকোনো পরিস্থিতিতে কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। তাই আসুন, আমরা যখন অধ্যয়ন করি, তখন যেন বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবা কীভাবে দেখেন, তা খুঁজে দেখি, তাঁর চিন্তাভাবনাকে আমাদের নিজের করে নিই এবং এই বিষয়ে চিন্তা করি যে, কীভাবে সেটা আমাদের বর্তমানে ও ভবিষ্যতে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

যিহোবার চিন্তাভাবনা ও আপনার ভবিষ্যৎ

২০, ২১. (ক) কেন আমরা নতুন জগতে আমাদের স্বাধীনতাকে উপভোগ করব? (খ) কীভাবে আমরা এখনই জীবনকে উপভোগ করতে পারি?

২০ আমরা সবাই সত্যিই নতুন জগতের জন্য অপেক্ষা করে আছি। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই চিরকাল পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখি। ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে আমরা সেই সমস্ত যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে স্বাধীনতা লাভ করব, যেগুলো আমরা এই বিধিব্যবস্থায় ভোগ করি। আর এর পাশাপাশি, আমাদের কাছে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাছাই করার স্বাধীনতা থাকবে।

২১ কিন্তু, এর মানে এই নয় যে, আমাদের স্বাধীনতা সীমাহীন হবে। মৃদুশীল ব্যক্তিরা তখনও যিহোবার নিয়ম ও তাঁর চিন্তাভাবনার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবে। আর এটা প্রচুর আনন্দ ও শান্তি নিয়ে আসবে। (গীত. ৩৭:১১) সেই সময় না আসা পর্যন্ত, আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনাকে আমাদের নিজের করে নিয়ে এখনই জীবনকে উপভোগ করতে পারি।

^ অনু. 12 ল্যাপ ড্যান্সিং হল এমন এক কাজ, যেখানে একজন মনোরঞ্জনকারী, যিনি হয়তো অর্ধনগ্ন অবস্থায় রয়েছেন, একজন খরিদ্দারের কোলে বসে যৌন অঙ্গভঙ্গি করার মাধ্যমে নাচেন। সেই পরিস্থিতিতে যা ঘটেছিল, সেই তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করে এটাকে যৌন অনৈতিকতা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং প্রাচীনদের একটা বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। একজন খ্রিস্টান যদি এই কাজে লিপ্ত হয়ে থাকেন, তা হলে তার প্রাচীনদের কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.

^ অনু. 14 মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যৌনতার বিষয়ে খোলাখুলিভাবে তুলে ধরা হয়েছে এমন কোনো মেসেজ, ছবি অথবা ভিডিও পাঠানোকে সেক্সটিং বলা হয়। বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রাচীনদের একটা বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষ এমনকী কিশোর-কিশোরীদের যৌন অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে কারণ তারা সেক্সটিং-এ লিপ্ত হয়েছে। আরও তথ্যের জন্য jw.org ইংরেজি ওয়েবসাইটে যান এবং অনলাইনে “Young People Ask—What Should I Know About Sexting?” শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ুন। (BIBLE TEACHINGS > TEENAGERS-এর অধীনে দেখুন।) অথবা ২০১৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসের সচেতন থাক! পত্রিকার ৪-৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া “যেভাবে কিশোর বয়সি সন্তানকে সেক্সটিং সম্বন্ধে বলবেন” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 16 বাইবেলের যে-নীতিগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে, সেগুলোর বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের পরিশিষ্টে দেওয়া “রক্তের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ এবং অস্ত্রোপচার পদ্ধতি” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।