সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কে আপনার চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে?

কে আপনার চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলে?

“এই যুগের অনুরূপ হইও না।”—রোমীয় ১২:২.

গান সংখ্যা: ১১, ২২

১, ২. (ক) পিতর যখন যিশুকে নিজের প্রতি সদয় হতে বলেছিলেন, তখন তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) কেন যিশু এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

যিশুর শিষ্যরা একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন! তারা ভেবেছিলেন, যিশু ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু, তিনি বলেছিলেন যে, শীঘ্রই তিনি দুঃখ ভোগ করবেন এবং মারা যাবেন। তাঁর কথা শুনে প্রেরিত পিতরই প্রথমে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রভু, ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক, ইহা আপনার প্রতি কখনও ঘটিবে না।” উত্তরে যিশু বলেছিলেন: “আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান, তুমি আমার বিঘ্নস্বরূপ; কেননা যাহা ঈশ্বরের, তাহা নয়, কিন্তু যাহা মনুষ্যের, তাহাই তুমি ভাবিতেছ।”—মথি ১৬:২১-২৩; প্রেরিত ১:৬.

এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে যিশু এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, শয়তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই জগতের ধারণাগুলোর চেয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা ভিন্ন। (১ যোহন ৫:১৯) পিতর যিশুকে সেই স্বার্থপরতার মনোভাব পোষণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন, যেটা জগতের অনেক লোকের রয়েছে। কিন্তু যিশু জানতেন যে, যিহোবা চান যেন তিনি শীঘ্রই যে-দুঃখ ভোগ ও মৃত্যু বরণ করবেন, সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। যিশুর উত্তর স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিল যে, তিনি যিহোবার চিন্তাভাবনাকে গ্রহণ করেছিলেন এবং জগতের চিন্তাভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

৩. কেন যিহোবার চিন্তাভাবনা মেনে নেওয়া ও জগতের চিন্তাভাবনা প্রত্যাখ্যান করা কঠিন?

আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি যিহোবার মতো করে চিন্তা করি, না কি জগতের লোকেদের মতো করে? খ্রিস্টান হিসেবে আমরা এটা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি যে, আমাদের কাজ যেন ঈশ্বরকে খুশি করে। কিন্তু, আমরা যেভাবে চিন্তা করি, সেটার বিষয়ে কী বলা যায়? আমরা কি যিহোবার মতো করে চিন্তা করার অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর মতো করে দেখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছি? তা করার জন্য অনেক প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। তবে, জগতের লোকেদের মতো করে চিন্তা করা খুব সহজ। এর কারণ হল জগতের আত্মা আমাদের চারপাশে সব জায়গায় রয়েছে। (ইফি. ২:২) এ ছাড়া, জগতের লোকেরা প্রায়ই নিজেদের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে আর আমরা হয়তো তাদের মতো চিন্তা করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারি। হ্যাঁ, যিহোবার মতো করে চিন্তা করা কঠিন কিন্তু জগতের লোকেদের মতো করে চিন্তা করা খুব সহজ।

৪. (ক) আমরা যদি জগৎকে আমাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলতে দিই, তা হলে কী হবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

আমরা যদি জগৎকে আমাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলতে দিই, তা হলে আমরা হয়তো স্বার্থপর হয়ে উঠব এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে চাইব যে, কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল। (মার্ক ৭:২১, ২২) তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা “যাহা মনুষ্যের” চিন্তাভাবনা, সেই অনুযায়ী নয় বরং “যাহা ঈশ্বরের” চিন্তাভাবনা, সেই অনুযায়ী চিন্তা করতে শিখি। এই প্রবন্ধ আমাদের তা করতে সাহায্য করবে। আমরা এই বিষয়ে কিছু কারণ বিবেচনা করব যে, কেন বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখা আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয় না বরং কেন এটা উপকারজনক। আমরা এও বিবেচনা করব যে, কীভাবে আমরা এই জগতের চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি। পরের প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কীভাবে আমরা নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার চিন্তাভাবনা জানতে পারি এবং কীভাবে আমরা তাঁর চিন্তাভাবনাকে নিজের করে নিতে পারি।

যিহোবার চিন্তাভাবনা উপকারজনক

৫. কেন কোনো কোনো ব্যক্তি চায় না যে, অন্য কেউ তাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলুক?

কোনো কোনো ব্যক্তি চায় না যে, অন্য কেউ তাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলুক। তারা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে চায় আর তারা মনে করে, তাদের তা করার অধিকার রয়েছে। তারা চায় না যে, অন্যেরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করুক অথবা অন্য সকলের মতো হওয়ার জন্য জোর করুক। *

৬. (ক) যিহোবা আমাদের কোন স্বাধীনতা দেন? (খ) এই স্বাধীনতা কি সীমাহীন?

তবে আমরা এটা জেনে খুশি যে, যিহোবার চিন্তাভাবনা মেনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজেদের মতামত অনুযায়ীও চিন্তা করতে পারি। দ্বিতীয় করিন্থীয় ৩:১৭ পদ বলে: “যেখানে প্রভুর [ঈশ্বরের] আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।” যিহোবা আমাদের স্বাধীনতা দেন যেন আমরা যেরকম চাই, সেরকম ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারি। আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে আর আমরা বেছে নিতে পারি যে, কোন বিষয়গুলোতে আগ্রহ দেখাব। যিহোবা আমাদের এভাবেই তৈরি করেছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমাদের সীমাহীন স্বাধীনতা রয়েছে। (পড়ুন, ১ পিতর ২:১৬.) আমাদের যখন এটা জানার প্রয়োজন হয় যে, কোনটা সঠিক অথবা কোনটা ভুল, তখন যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর বাক্যকে আমাদের নির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করি। এটা কি আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়, না কি এটা উপকারজনক?

৭, ৮. বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখা কি আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়? একটা উদাহরণ দিন।

আমরা এটাকে একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারি। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের উত্তম মূল্যবোধ সম্বন্ধে শেখানোর চেষ্টা করেন। তারা হয়তো তাদের সত্যবাদী হওয়ার, কঠোর পরিশ্রমী হওয়ার এবং অন্যদের জন্য চিন্তা করার বিষয়টা শেখাতে পারেন। এগুলো তাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয় না। এর বিপরীতে, বাবা-মায়েরা এভাবে তাদের সন্তানদের জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন। সন্তানরা যখন বড়ো হয়ে যাবে এবং বাড়ি ছেড়ে নিজেদের মতো জীবনযাপন করতে শুরু করবে, তখন তারা তাদের ব্যক্তিগত বাছাইগুলো করার জন্য স্বাধীন হয়ে যাবে। তারা যদি তাদের বাবা-মায়ের শেখানো উত্তম মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবনযাপন করা বেছে নেয়, তা হলে তারা আরও বেশি করে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারবে আর অনেক সমস্যা ও উদ্‌বিগ্নতার শিকার হওয়া এবং আপশোস করার কারণগুলো এড়াতে পারবে।

ঠিক একজন উত্তম বাবা অথবা মায়ের মতো, যিহোবা চান যেন তাঁর সন্তানরা সবচেয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন লাভ করে। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮) তাই, তিনি আমাদের নৈতিক আচরণ এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের আচার-ব্যবহারের বিষয়ে কিছু মৌলিক নীতি শেখান। তিনি আমাদের বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর মতো করে দেখতে শেখার এবং তাঁর মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। এটা আমাদের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয় না। এর পরিবর্তে, এটা আমাদের আরও বিজ্ঞ করে তোলে এবং আমাদের আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। (গীত. ৯২:৫; হিতো. ২:১-৫; যিশা. ৫৫:৯) আমরা এমনটা করার পরও আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে, তবে আমরা এমন বাছাইগুলো করব, যেগুলো আমাদের সুখী করে তুলবে। (গীত. ১:২, ৩) আমরা যখন যিহোবার মতো করে চিন্তা করি, তখন আমরা অনেক উপায়ে উপকৃত হই!

যিহোবার চিন্তাভাবনা শ্রেষ্ঠ

৯, ১০. কী প্রমাণ করে যে, জগতের চিন্তাভাবনার চেয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা শ্রেষ্ঠ?

আরেকটা যে-কারণে আমরা চাই যে, আমাদের চিন্তাভাবনা আরও বেশি করে যিহোবার মতো হোক, তা হল জগতের চিন্তাভাবনার চেয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। জগৎ আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্বন্ধে পরামর্শ দেয় যেমন, কোন ধরনের আচরণ নৈতিকভাবে সঠিক, কীভাবে সুখী পরিবার লাভ করা যায় এবং কীভাবে আমাদের কেরিয়ারে সাফল্য লাভ করা যায়। কিন্তু, এই পরামর্শগুলোর বেশিরভাগই যিহোবার চিন্তাভাবনার সঙ্গে মেলে না। উদাহরণ স্বরূপ, জগৎ প্রায়ই লোকেদের উৎসাহিত করে যেন তারা কেবল নিজেদের আগ্রহের বিষয়গুলোর পিছনে ছোটে এবং যৌন অনৈতিকতাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখে। আর এটা কখনো কখনো বিবাহিত দম্পতিদের পরামর্শ দেয়, তারা যদি ছোটোখাটো কারণগুলোর জন্য পৃথক থাকে অথবা বিবাহবিচ্ছেদ করে, তা হলে তারা আরও সুখী হবে। এই পরামর্শ বাইবেলের শিক্ষার বিপরীত। কিন্তু, বর্তমানে জগতের পরামর্শ কি বাইবেলের পরামর্শের চেয়ে আরও বেশি ব্যাবহারিক?

১০ যিশু বলেছিলেন: “প্রজ্ঞা নিজ কর্ম্মসমূহ দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়।” (মথি ১১:১৯) যদিও জগৎ প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক উন্নতি করেছে, তা সত্ত্বেও এটা সেই বড়ো বড়ো সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেনি, যেগুলো আমাদের সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয় যেমন, যুদ্ধ, বর্ণবিদ্বেষ ও অপরাধ। আর সেইসঙ্গে, জগৎ যৌন অনৈতিকতাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখে। কিন্তু, অনেকে স্বীকার করে যে, এটা পরিবারগুলোকে ভেঙে দেয়, স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য খারাপ পরিণতি ডেকে আনে। যিহোবার পরামর্শের বিষয়ে কী বলা যায়? যে-খ্রিস্টানরা যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিকে মেনে নিয়েছে, তাদের পরিবার আরও সুখী, তাদের স্বাস্থ্য আরও ভালো এবং তাদের বিশ্বব্যাপী ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। (যিশা. ২:৪; প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; ১ করি. ৬:৯-১১) এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, জগতের চিন্তাভাবনার চেয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা শ্রেষ্ঠ।

১১. কে মোশির চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

১১ অতীতে যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা জানত যে, যিহোবার চিন্তাভাবনা হল শ্রেষ্ঠ। উদাহরণ স্বরূপ, যদিও মোশিকে ‘মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যা’ বা প্রজ্ঞা শেখানো হয়েছিল, তা সত্ত্বেও তিনি জানতেন যে, প্রকৃত প্রজ্ঞা যিহোবার কাছ থেকে আসে। (প্রেরিত ৭:২২; গীত. ৯০:১২) তাই, তিনি যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন: “আমাকে তোমার পথ সকল জ্ঞাত কর।” (যাত্রা. ৩৩:১৩) যেহেতু মোশি যিহোবাকে তার চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলতে দিয়েছিলেন, তাই যিহোবা তাকে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য এক চমৎকার উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন এবং তাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করার মাধ্যমে সম্মানিত করেছিলেন, যার প্রচুর বিশ্বাস রয়েছে।—ইব্রীয় ১১:২৪-২৭.

১২. পৌল কীসের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

১২ প্রেরিত পৌল একজন বুদ্ধিমান ও সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষা জানতেন। (প্রেরিত ৫:৩৪; ২১:৩৭, ৩৯; ২২:২, ৩) কিন্তু, তিনি জগতের প্রজ্ঞাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ১৭:২; ১ করিন্থীয় ২:৬, ৭, ১৩.) ফল স্বরূপ, তিনি পরিচর্যায় খুবই সফল হয়েছিলেন এবং এমন এক পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন, যেটা চিরস্থায়ী হবে।—২ তীম. ৪:৮.

১৩. আমরা যাতে যিহোবার মতো করে বিভিন্ন বিষয়কে দেখতে পারি, সেইজন্য আমাদের চিন্তাভাবনায় রদবদল করার দায়িত্ব কার?

১৩ স্পষ্টতই, জগতের চিন্তাভাবনার চেয়ে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। আমরা যদি ঈশ্বরের মানগুলো অনুসরণ করি, তা হলে আমরা প্রকৃত অর্থে সুখী ও সফল হব। কিন্তু, যিহোবা আমাদের তাঁর মতো করে চিন্তা করার জন্য জোর করবেন না। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে না আর প্রাচীনরাও তা করেন না। (মথি ২৪:৪৫; ২ করি. ১:২৪) আমাদের চিন্তাভাবনায় রদবদল করার দায়িত্ব হল আমাদের প্রত্যেকের, যাতে আমরা যিহোবার মতো করে বিভিন্ন বিষয়কে দেখতে পারি। কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

এই জগতের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়িয়ে চলুন

১৪, ১৫. (ক) যিহোবার মতো করে চিন্তা করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী নিয়ে ধ্যান করতে হবে? (খ) কেন আমাদের জগতের ধারণাগুলোকে আমাদের মনে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়? একটা উদাহরণ দিন।

১৪ রোমীয় ১২:২ পদ বলে: “এই যুগের অনুরূপ” বা এটার দ্বারা প্রভাবিত “হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।” এই শাস্ত্রপদ আমাদের শেখায় যে, সত্য শেখার আগে যা-কিছুই আমাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলুক না কেন, আমরা আমাদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তিত করতে পারি এবং সেটাকে আরও বেশি করে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার মতো করে তুলতে পারি। যদিও আমাদের চিন্তাভাবনা জিনগত বিষয়গুলোর দ্বারা এবং জীবনে আমাদের অভিজ্ঞতাগুলোর দ্বারা কিছুটা মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে, তবুও আমরা আমাদের মনকে ক্রমাগত পরিবর্তিত করতে পারি। আর এই পরিবর্তনের বেশিরভাগই নির্ভর করবে সেই বিষয়গুলোর উপর, যেগুলো নিয়ে চিন্তা করা আমরা বেছে নিই। আমরা যদি যিহোবার চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করি, তা হলে আমরা পরীক্ষা করে জানতে পারব যে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সঠিক। তখন আমরা বিভিন্ন বিষয়কে তাঁর মতো করে দেখার জন্য আকাঙ্ক্ষী হব।

১৫ কিন্তু, যিহোবার মতো করে চিন্তা করার উদ্দেশ্যে আমাদের মনকে নতুন করে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই এই কথার বাধ্য হতে হবে: “এই যুগের অনুরূপ” বা এটার দ্বারা প্রভাবিত “হইও না।” এর অর্থ হল আমাদের অবশ্যই এমন যেকোনো কিছু দেখা, পড়া ও শোনা বন্ধ করতে হবে, যেগুলো ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার বিপরীত। এটা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝার জন্য খাবারের উদাহরণ বিবেচনা করুন। যে-ব্যক্তি আরও স্বাস্থ্যবান হতে চান, তিনি আরও ভালো খাবার খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু, তার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি এর পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবে পচা খাবার খান! একইভাবে, যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে শেখার বিষয়ে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি আমরা জগতের ধারণাগুলোকে আমাদের মনে প্রবেশ করতে দিই।

১৬. আমাদের অবশ্যই কী থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে?

১৬ আমরা কি জগতের ধারণাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে পারি? না, আমরা জগতের কোনো-না-কোনো ধারণার মুখোমুখি হবই কারণ আমরা আক্ষরিকভাবে জগৎ থেকে বেরিয়ে যেতে পারি না। (১ করি. ৫:৯, ১০) এমনকী আমরা যখন প্রচার করি, তখনও আমরা লোকেদের ভুল ধারণা ও মিথ্যা বিশ্বাস সম্বন্ধে বলতে শুনি। যদিও এটা ঠিক যে, আমরা ভুল ধারণাগুলো সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে পারি না, তবে এর মানে এই নয় যে, আমাদের সেগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করতে হবে অথবা সেগুলো গ্রহণ করতে হবে। যিশুর মতো আমাদেরও দ্রুত সেই চিন্তাভাবনাগুলো প্রত্যাখ্যান করা উচিত, যেগুলো শয়তান আমাদের মনে ঢুকিয়ে দিতে চায়। আর আমরা অযথা জগতের চিন্তাভাবনার মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে চলার মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি।—পড়ুন, হিতোপদেশ ৪:২৩.

১৭. কীভাবে আমরা অযথা জগতের চিন্তাভাবনার মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

১৭ উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের সতর্কতার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বাছাই করা উচিত। বাইবেল সতর্ক করে যে, আমরা যদি সেই লোকেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠি, যারা যিহোবার উপাসনা করে না, তা হলে আমরা তাদের মতো করে চিন্তা করতে শুরু করব। (হিতো. ১৩:২০; ১ করি. ১৫:১২, ৩২, ৩৩) এ ছাড়া, আমাদের সতর্কতার সঙ্গে আমোদপ্রমোদ বাছাই করা উচিত। আমরা যখন এমন আমোদপ্রমোদ প্রত্যাখ্যান করি, যেগুলো বিবর্তনের মতবাদ, দৌরাত্ম্য অথবা অনৈতিকতাকে তুলে ধরে, তখন আমরা আমাদের মনকে “ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে” থাকা ধারণাগুলোর দ্বারা বিষাক্ত করা এড়িয়ে চলি।—২ করি. ১০:৫.

আমরা কি আমাদের সন্তানদের ক্ষতিকর আমোদপ্রমোদ প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করি? (১৮, ১৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৮, ১৯. (ক) কেন আমাদের অবশ্যই জগতের সেই ধারণাগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যেগুলো খুব সূক্ষ্ম উপায়গুলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়? (খ) কোন প্রশ্নগুলো আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?

১৮ এ ছাড়া, আমাদের অবশ্যই জগতের সেইসমস্ত ধারণাকে শনাক্ত করতে ও প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যেগুলো খুব সূক্ষ্ম উপায়গুলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো কোনো খবর এমন উপায়ে তুলে ধরা হয়, যেটা নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক মতামতকে সমর্থন করে। আর কোনো কোনো খবর এমন লক্ষ্য ও সম্পাদিত বিষয়গুলো তুলে ধরে, যেগুলোকে জগৎ খুবই উচ্চমূল্য দিয়ে থাকে। কোনো কোনো সিনেমা ও বই এই ধরনের ধারণার উপর জোর দেয় যেমন, “আগে আমি” ও “আগে আমার পরিবার” এবং সেগুলো এই ধারণাগুলোকে যুক্তিসংগত, আগ্রহজনক আর এমনকী সঠিক বলে তুলে ধরে। তবে, এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বাইবেলকে উপেক্ষা করে। বাইবেল বলে, আমরা যখন সমস্ত কিছুর চেয়ে যিহোবাকে বেশি ভালোবাসব, একমাত্র তখনই আমরা প্রকৃত অর্থে সুখী হব এবং আমাদের পরিবারও প্রকৃত অর্থে সুখী হবে। (মথি ২২:৩৬-৩৯) এ ছাড়া, বাচ্চাদের কোনো কোনো গল্প, কার্টুন ও আমোদপ্রমোদ—যদিও সেগুলোর বেশিরভাগই গ্রহণযোগ্য হতে পারে—তাদের সূক্ষ্মভাবে অনৈতিক আচরণকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখার জন্য পরিচালিত করতে পারে।

১৯ এর মানে এই নয় যে, গঠনমূলক আমোদপ্রমোদ উপভোগ করা ভুল। কিন্তু, আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি সেইসময়ও জগতের ধারণাগুলো শনাক্ত করি, যখন সেগুলোকে পরোক্ষভাবে তুলে ধরা হয়? আমি কি আমার সন্তানদের ও নিজেকে টিভির নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রাম এবং নির্দিষ্ট কিছু পড়ার বিষয়বস্তু থেকে সুরক্ষিত রাখছি? আমি কি আমার সন্তানদের বিভিন্ন বিষয়কে যিহোবার মতো করে দেখতে সাহায্য করি, যাতে তারা জগতের যে-ধারণাগুলো শোনে ও দেখে, সেগুলোর দ্বারা প্রভাবিত না হয়?’ আমরা যদি ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা ও জগতের চিন্তাভাবনার মধ্যে থাকা পার্থক্য বুঝতে পারি, তা হলে আমরা ‘এই যুগের অনুরূপ হওয়া’ বা এটার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি।

কে এখন আপনার উপর প্রভাব ফেলছে?

২০. কী এটা নির্ধারণ করবে যে, কে আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে?

২০ আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কেবল দুটো উৎস থেকেই তথ্য এসে থাকে। একটা উৎস হলেন যিহোবা আর অন্যটা হল শয়তান ও তার জগৎ। কে আপনার উপর প্রভাব ফেলে? এর উত্তর হল আপনি যার কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করেন। আমরা যদি জগতের ধারণাগুলোকে গ্রহণ করি, তা হলে জগৎ আমাদের চিন্তাভাবনার উপর প্রভাব ফেলবে এবং আমরা আমাদের চিন্তায় ও কাজে স্বার্থপরতা প্রকাশ করব। তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করি যে, আমরা কী দেখি, পড়ি, শুনি ও কী নিয়ে চিন্তা করি।

২১. পরের প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

২১ এই প্রবন্ধে আমরা শিখেছি যে, যিহোবার মতো করে চিন্তা করার জন্য আমাদের অবশ্যই জগতের ধারণাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের অবশ্যই এর পাশাপাশি ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করতে হবে, যাতে আমরা আরও বেশি করে তাঁর মতো করে চিন্তা করতে পারি। পরের প্রবন্ধে আমরা শিখব যে, কীভাবে তা করা যায়।

^ অনু. 5 সত্য বিষয়টা হল এমনকী সবচেয়ে স্বাধীন ব্যক্তিরাও অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যা-ই নিয়ে চিন্তা করি না কেন, যেমন জীবনের শুরু কীভাবে হয়েছে অথবা আমরা কোন পোশাক পরব, সব ক্ষেত্রেই অন্যেরা কিছুটা হলেও আমাদের প্রভাবিত করে। কিন্তু, আমরা এটা বেছে নিতে পারি যে, আমরা কাকে আমাদের উপর প্রভাব ফেলতে দেব।