সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন

পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন

সেই হিতকারীরা কারা, যাদের বিষয়ে যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের সন্ধ্যায় কথা বলেছিলেন এবং কেন তাদের এই উপাধি দেওয়া হতো?

যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের সন্ধ্যায় তাঁর প্রেরিতদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা সহবিশ্বাসীদের মাঝে কোনো বিশেষ পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা না করেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “জাতিগণের রাজারাই তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের শাসনকর্ত্তারাই ‘হিতকারী’ বলিয়া আখ্যাত হয়। কিন্তু তোমরা সেইরূপ হইও না।”—লূক ২২:২৫, ২৬.

সেই হিতকারীরা কারা, যাদের বিষয়ে যিশু উল্লেখ করেছিলেন? বিভিন্ন অভিলিখন, মুদ্রা ও লেখা প্রকাশ করে যে, গ্রিক ও রোমীয় সমাজে বিশিষ্ট পুরুষ ও শাসকদের এভের্‌ইয়েটিস বা হিতকারী উপাধি দিয়ে সম্মানিত করার প্রথা ছিল। এই ধরনের ব্যক্তিদের এই সম্মান দেওয়া হতো কারণ তারা কিছু মূল্যবান জনসেবামূলক কাজ করেছিল।

বেশ কয়েক জন রাজার এই হিতকারী উপাধি ছিল। এদের মধ্যে ছিলেন দু-জন মিশরীয় শাসক, যারা টলেমি ৩য় এভের্‌ইয়েটিস (খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৪৭-২২২ সাল) এবং টলেমি ৮ম এভের্‌ইয়েটিস ২য় (খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ১৪৭-১১৭ সাল) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়া, রোমীয় শাসক জুলিয়াস সিজার (খ্রিস্টপূর্ব ৪৮-৪৪ সাল) ও অগাস্টাসের (খ্রিস্টপূর্ব ৩১ সাল–১৪ খ্রিস্টাব্দ) আর সেইসঙ্গে যিহূদিয়ার রাজা মহান হোরোদেরও এই উপাধি ছিল। হোরোদ সম্ভবত সেইসময় এই সম্মান অর্জন করেছিলেন, যখন তিনি তার লোকেদের একটা দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করার জন্য অন্য জায়গা থেকে গম আনিয়েছিলেন এবং গরিব লোকেদের জন্য পোশাক-আশাক জুগিয়েছিলেন।

জার্মান বাইবেল পণ্ডিত আডল্ফ ডাইসমানের কথা অনুযায়ী, হিতকারী উপাধির ব্যবহার খুবই প্রচলিত ছিল। তিনি বলেছিলেন: “বিভিন্ন অভিলিখন থেকে খুব কম সময়ের মধ্যে [এই উপাধি ব্যবহারের] এক-শোরও বেশি উল্লেখ সংগ্রহ করা খুব-একটা কঠিন কাজ হবে না।”

তা হলে, যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “কিন্তু তোমরা সেইরূপ হইও না,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? যিশু কি তাদের জনসেবার মনোভাব না রাখতে অর্থাৎ তাদের আশেপাশের লোকেদের মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তিত না হতে বলছিলেন? একেবারেই না। যিশু সম্ভবত এই উদারতার কাজগুলো করার পিছনে থাকা উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

যিশুর দিনে ধনী ব্যক্তিরা সুনাম অর্জন করার জন্য স্টেডিয়ামে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজন করার জন্য অর্থ দিত, বিভিন্ন পার্ক ও মন্দির নির্মাণ করত এবং এই ধরনের কাজগুলোতে সমর্থন জোগাত। তবে, এই কাজগুলো করার পিছনে তাদের উদ্দেশ্য থাকত লোকেদের কাছ থেকে প্রশংসা, জনপ্রিয়তা অথবা ভোট পাওয়া। একটা তথ্যগ্রন্থ বলে, ‘যদিও এমন কিছু উদাহরণ রয়েছে, যখন এই ধরনের দানকারী ব্যক্তিরা প্রকৃত উদারতা দেখিয়ে দান করেছিল, তবে প্রায়ই, এই বিষয়টার পিছনে থাকত তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ।’ যিশু তাঁর অনুসারীদের এই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ও স্বার্থপরতার মনোভাব এড়িয়ে চলার বিষয়েই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিছু বছর পর, প্রেরিত পৌল উদারতা দেখানোর পিছনে সঠিক উদ্দেশ্য রাখার এই একই গুরুত্বপূর্ণ সত্যের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি করিন্থে থাকা তার সহবিশ্বাসীদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।”—২ করি. ৯:৭.