সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার প্রতি আপনার আনুগত্যের প্রমাণ দিন

যিহোবার প্রতি আপনার আনুগত্যের প্রমাণ দিন

“সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী, এবং আমার বংশের ও তোমার বংশের মধ্যবর্ত্তী থাকিবেন।”১ শমূ. ২০:৪২.

গান সংখ্যা: ২৯, ৩১

১, ২. দায়ূদের সঙ্গে যোনাথনের বন্ধুত্ব কেন আনুগত্যের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ?

যোনাথন নিশ্চয়ই যুবক দায়ূদের সাহস দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। দায়ূদ দৈত্যাকৃতির গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন এবং “ঐ পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু” যোনাথনের বাবা অর্থাৎ ইস্রায়েলের রাজা শৌলের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। (১ শমূ. ১৭:৫৭) ঈশ্বর যে দায়ূদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, সেই বিষয়ে যোনাথনের কোনো সন্দেহই ছিল না আর তখন থেকে যোনাথন ও দায়ূদ ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তারা সবসময় পরস্পরের প্রতি অনুগত থাকবেন। (১ শমূ. ১৮:১-৩) যোনাথন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়ূদের প্রতি অনুগত ছিলেন।

যিহোবা ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে যোনাথনকে মনোনীত না করে দায়ূদকে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু তারপরও যোনাথন দায়ূদের প্রতি অনুগত ছিলেন। আর শৌল যখন দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করছিলেন, তখন যোনাথন তার বন্ধুর জন্য উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। যোনাথন জানতেন, দায়ূদ বনের কাছাকাছি প্রান্তরে আছেন আর তাই তাকে যিহোবার উপর নির্ভরতা বজায় রাখার জন্য উৎসাহিত করতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। যোনাথন দায়ূদকে বলেছিলেন: “ভয় করিও না, আমার পিতা শৌলের হস্ত তোমাকে পাইবে না, আর তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব।”—১ শমূ. ২৩:১৬, ১৭.

৩. দায়ূদের প্রতি অনুগত থাকার চেয়ে কোন বিষয়টা যোনাথনের কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর কীভাবে আমরা তা জানতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আমরা সাধারণত সেই ব্যক্তিদের প্রশংসা করি, যারা আনুগত্য বজায় রাখে। কিন্তু, যোনাথন শুধু দায়ূদের প্রতি অনুগত ছিলেন বলেই কি আমরা তার প্রশংসা করি? না, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য ছিল যোনাথনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের কারণেই তিনি দায়ূদের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং দায়ূদ যে তার স্থলে রাজা হবেন, তা জানা সত্ত্বেও তাকে ঈর্ষা করেননি। যোনাথন এমনকী দায়ূদকে যিহোবার উপর নির্ভর করতে সাহায্য করেছিলেন। তারা দু-জনেই যিহোবার প্রতি ও পরস্পরের প্রতি অনুগত ছিলেন। তারা নিজেদের এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিলেন: “সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী, এবং আমার বংশের ও তোমার বংশের মধ্যবর্ত্তী থাকিবেন।”—১ শমূ. ২০:৪২.

৪. (ক) কোন বিষয়টা আমাদের সত্যিই সুখী ও পরিতৃপ্ত হতে সাহায্য করবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

আমাদেরও নিজেদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের প্রতি “অনুগত” থাকতে হবে। (১ থিষল. ২:১০, NW, ১১) কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমাদের যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে হবে। কারণ তিনিই আমাদের জীবনদাতা! (প্রকা. ৪:১১) আমরা যখন তাঁর প্রতি অনুগত থাকি, তখন আমরা সত্যিই সুখী ও পরিতৃপ্ত হই। তবে আমরা জানি, এমনকী কঠিন সময়েও ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য বজায় রাখতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে যোনাথনের উদাহরণ আমাদের এই চারটে পরিস্থিতিতে যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে: (১) আমরা যখন মনে করি, কর্তৃত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি আমাদের সম্মান লাভের যোগ্য নন, (২) আমরা কার প্রতি অনুগত থাকব, তা যখন আমাদের বাছাই করতে হয়, (৩) নেতৃত্বে রয়েছেন এমন কোনো ভাই যখন আমাদের ভুল বোঝেন অথবা আমাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করেন এবং (৪) কোনো প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা যখন আমাদের কাছে খুব কঠিন বলে মনে হয়।

আমরা যখন মনে করি, কর্তৃত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি আমাদের সম্মান লাভের যোগ্য নন

৫. শৌল যখন রাজা হিসেবে শাসন করছিলেন, তখন কেন ইস্রায়েলের লোকেদের জন্য ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল?

যোনাথন এবং ইস্রায়েলের লোকেরা এক কঠিন পরিস্থিতিতে ছিল। যোনাথনের বাবা, রাজা শৌল অবাধ্য হয়ে পড়েছিলেন এবং যিহোবা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (১ শমূ. ১৫:১৭-২৩) তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর শৌলকে অনেক বছর ধরে শাসন করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই, “সদাপ্রভুর সিংহাসনে” উপবিষ্ট রাজা যখন খুব খারাপ কাজ করছিলেন, তখন লোকেদের জন্য ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল।—১ বংশা. ২৯:২৩.

৬. কোন বিষয়টা দেখায় যে, যোনাথন যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন?

যোনাথন যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। শৌল ঈশ্বরের অবাধ্য হতে শুরু করার পরও যোনাথন কী করেছিলেন, তা একটু চিন্তা করুন। (১ শমূ. ১৩:১৩, ১৪) সেই সময়ে, এক বিরাট পলেষ্টীয় সেনাবাহিনী ৩০,০০০ রথ নিয়ে ইস্রায়েল আক্রমণ করতে এসেছিল। শৌলের কাছে তখন মাত্র ৬০০ সৈন্য ছিল আর শুধু শৌল ও যোনাথনের কাছেই অস্ত্র ছিল। কিন্তু যোনাথন ভয় পাননি। তিনি ভাববাদী শমূয়েলের বলা এই কথা স্মরণ করেছিলেন: “সদাপ্রভু আপন মহানামের গুণে আপন প্রজাদিগকে ত্যাগ করিবেন না।” (১ শমূ. ১২:২২) যোনাথন একজন সৈন্যকে বলেছিলেন: “অনেকের দ্বারা হউক বা অল্পের দ্বারা হউক, নিস্তার করিতে সদাপ্রভুর কোন প্রতিবন্ধক নাই।” তাই, তিনি ও সেই সৈন্য মিলে একদল পলেষ্টীয়কে আক্রমণ করেছিলেন আর তাদের মধ্যে প্রায় ২০ জনকে হত্যা করেছিলেন। যিহোবার প্রতি যোনাথনের বিশ্বাস ছিল আর যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। যিহোবা একটা ভূমিকম্প ঘটিয়েছিলেন আর পলেষ্টীয়রা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এরপর তারা নিজেরা একে অন্যকে আক্রমণ করে হত্যা করেছিল আর ইস্রায়েলীয়রা সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল।—১ শমূ. ১৩:৫, ১৫, ২২; ১৪:১, ২, ৬, ১৪, ১৫, ২০.

৭. যোনাথন তার বাবার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন?

যদিও শৌল ক্রমাগত যিহোবার অবাধ্য হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরও যোনাথন ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে না গিয়ে যতদূর সম্ভব তার বাবার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবার লোকেদের রক্ষা করার জন্য তারা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন।—১ শমূ. ৩১:১, ২.

৮, ৯. যারা কর্তৃত্বে রয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমে আমরা কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য দেখাই?

যোনাথনের মতো, আমরাও ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে না গিয়ে যতদূর সম্ভব আমাদের দেশের সরকারের প্রতি বাধ্য থাকার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারি। যিহোবা এই “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” আমাদের উপর কর্তৃত্ব করতে দিয়েছেন আর তিনি চান, যেন আমরা তাদের প্রতি সম্মান দেখাই। (পড়ুন, রোমীয় ১৩:১, ২.) এই কারণে, একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি সৎ না হন আর আমাদের মনে হয়, তিনি আমাদের সম্মান লাভের যোগ্য নন, তারপরও সেই ব্যক্তির প্রতি আমাদের সম্মান দেখিয়ে আচরণ করা উচিত। আসলে, যারা যিহোবার কাছ থেকে কর্তৃত্ব লাভ করেছেন, তাদের সকলকে আমাদের সম্মান করা উচিত।—১ করি. ১১:৩; ইব্রীয় ১৩:১৭.

একটা যে-উপায়ে আমরা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারি তা হল, আমাদের স্বামী অথবা স্ত্রী যিহোবার উপাসক না হলেও তার সঙ্গে সম্মানপূর্ণ আচরণ করার মাধ্যমে (৯ অনুচ্ছেদ)

অল্‌গা নামে দক্ষিণ আমেরিকার একজন বোন তার স্বামীর প্রতি সম্মানপূর্ণ আচরণ দেখানোর মাধ্যমে যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন, যদিও তার স্বামী তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। [১] তিনি যিহোবার সাক্ষি হয়েছেন বলে তার স্বামী মাঝে মাঝে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না কিংবা অপমানজনক কথা বলতেন। এমনকী তিনি বোনকে এই হুমকি দিয়েছিলেন, তিনি তাকে ছেড়ে তাদের সন্তানদের নিয়ে চলে যাবেন। কিন্তু বোন অল্‌গা “মন্দের পরিশোধে . . . মন্দ” করেননি। তিনি একজন উত্তম স্ত্রী হওয়ার জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন। তিনি স্বামীর জন্য রান্না করতেন, তার জামাকাপড় ধুয়ে দিতেন এবং স্বামীর পরিবারের সদস্যদেরও যত্ন নিতেন। (রোমীয় ১২:১৭) আর যখনই তার পক্ষে সম্ভব হতো, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। যেমন, তার স্বামী যখন তার বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য আরেকটা শহরে যেতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি তাদের যাত্রার জন্য সমস্ত কিছু প্রস্তুত করেছিলেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় তিনি গির্জার বাইরে দাঁড়িয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। অনেক বছর পর, বোন অল্‌গার স্বামী তার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে শুরু করেছিলেন। এর কারণ হল বোন অল্‌গা ধৈর্যশীল ছিলেন এবং সবসময় তার স্বামীর প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। এখন বোনের স্বামী তাকে সভাতে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন আর নিজে তাকে সেখানে পৌঁছে দেন। মাঝে মাঝে তিনি তার সঙ্গে সভাতেও যোগ দেন।—১ পিতর ৩:১.

কার প্রতি অনুগত থাকা উচিত, সেই বিষয়ে আমাদের যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়

১০. কার প্রতি অনুগত থাকা উচিত, সেই বিষয়টা যোনাথন কীভাবে বুঝতে পেরেছিলেন?

১০ শৌল যখন বলেছিলেন, তিনি দায়ূদকে হত্যা করবেন, তখন যোনাথনকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তিনি তার বাবার প্রতি অনুগত থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একইসঙ্গে, তিনি দায়ূদের প্রতিও অনুগত থাকতে চেয়েছিলেন। যোনাথন জানতেন, শৌলের সঙ্গে নয় বরং দায়ূদের সঙ্গে ঈশ্বর আছেন আর তাই তিনি দায়ূদের প্রতি অনুগত থাকা বেছে নিয়েছিলেন। তিনি দায়ূদকে লুকিয়ে থাকার জন্য সতর্ক করেছিলেন আর এরপর শৌলকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন তার দায়ূদকে হত্যা করা উচিত নয়।—পড়ুন, ১ শমূয়েল ১৯:১-৬.

১১, ১২. ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কীভাবে আমাদেরকে তাঁর প্রতি অনুগত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে?

১১ আ্যলিস নামে অস্ট্রেলিয়ার একজন বোনকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, তিনি কার প্রতি অনুগত থাকবেন। বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় তিনি যে-বিষয়গুলো শিখেছিলেন, সেগুলো তিনি তার পরিবারের কাছে জানিয়েছিলেন। তিনি তাদের এটাও বলেছিলেন, তিনি আর তাদের সঙ্গে বড়োদিন পালন করবেন না এবং কেন তা করবেন না, সেটাও ব্যাখ্যা করেছিলেন। প্রথমে তার পরিবারের সদস্যরা দুঃখ পেয়েছিল, কিন্তু পরে তারা অত্যন্ত রেগে গিয়েছিল। তারা মনে করেছিল, আ্যলিস আর তাদের ব্যাপারে কোনো চিন্তা করে না। তখন তার মা তাকে বলেন, তিনি আর কখনো আ্যলিসের মুখ দেখতে চান না। বোন আ্যলিস বলেন: “আমি প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিলাম ও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, কারণ আমি আমার পরিবারকে সত্যিই ভালোবাসতাম। তবে, আমি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম, আমার হৃদয়ে আমি যিহোবা এবং তাঁর পুত্রকে প্রথম স্থানে রাখব আর আমি পরের সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম।”—মথি ১০:৩৭.

১২ আমরা যিহোবার চেয়ে অন্য কোনো কিছুর প্রতি যেমন, কোনো ক্রীড়া দল, স্কুল অথবা দেশের প্রতি বেশি আনুগত্য দেখাব না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হেনরি তার স্কুলে দাবা খেলত এবং সে স্কুলের একটা প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চেয়েছিল। কিন্তু, সে যেহেতু প্রত্যেক সপ্তাহে ছুটির দিনে দাবা খেলত, তাই সে প্রচারে ও সভাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেত না। হেনরি বলেছিল, তার কাছে ঈশ্বরের চেয়ে স্কুলের প্রতি অনুগত থাকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তাই সে স্কুলের হয়ে দাবা খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।—মথি ৬:৩৩.

১৩. ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য কীভাবে আমাদেরকে পারিবারিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে?

১৩ মাঝে মাঝে, আমাদের পক্ষে একইসময়ে পরিবারের আলাদা আলাদা সদস্যের প্রতি অনুগত থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যেমন, ভাই কেন্‌ বলেন: “আমি আমার বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে নিয়মিতভাবে দেখা করতে চাইতাম আর তাকে মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে এনে রাখতে চাইতাম। কিন্তু আমার মা ও স্ত্রীর পক্ষে পরস্পরের সঙ্গে মানিয়ে চলা কঠিন ছিল।” তিনি আরও বলেন: “কাকে খুশি করব, সেই ব্যাপারে আমি উভয়সংকটে পড়ে গিয়েছিলাম।” বাইবেল যা বলে, তা নিয়ে ভাই কেন্‌ চিন্তা করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন, এইরকম পরিস্থিতিতে তার স্ত্রীকে খুশি করা উচিত ও তার প্রতি অনুগত থাকা উচিত। তাই, তিনি এমন একটা সমাধান খুঁজে বের করেছিলেন, যেটা তার স্ত্রী খুশিমনে মেনে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি স্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন তাকে তার শাশুড়ির প্রতি সদয় হতে হবে। এ ছাড়া, ভাই তার মায়ের কাছেও ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেন তাকে তার পুত্রবধুর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।—পড়ুন, আদিপুস্তক ২:২৪; ১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.

কোনো ভাই যখন আমাদের ভুল বোঝেন অথবা আমাদের সঙ্গে অনুপযুক্ত আচরণ করেন

১৪. কীভাবে শৌল যোনাথনের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করেছিলেন?

১৪ এ ছাড়া, নেতৃত্বে রয়েছেন এমন কোনো ভাই যদি আমাদের সঙ্গে অনুপযুক্ত আচরণ করেন, তখনও আমরা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকতে পারি। রাজা শৌল ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও, নিজের ছেলের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিলেন। যোনাথন কেন দায়ূদকে ভালোবাসেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তাই, যোনাথন যখন দায়ূদকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন শৌল অত্যন্ত রেগে গিয়েছিলেন এবং অনেক লোকের সামনে নিজের ছেলেকে অপমান করেছিলেন। কিন্তু যোনাথন তারপরও নিজের বাবার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। একইসময়ে, তিনি যিহোবা ও দায়ূদের প্রতি অনুগত ছিলেন, যাকে ঈশ্বর ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।—১ শমূ. ২০:৩০-৪১.

১৫. কোনো ভাই যদি আমাদের সঙ্গে অনুপযুক্ত আচরণ করেন, তা হলে আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

১৫ বর্তমানে আমাদের মণ্ডলীগুলোতে যে-ভাইয়েরা নেতৃত্বে রয়েছেন, তারা সকলের সঙ্গে উপযুক্ত আচরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ভাইয়েরা অসিদ্ধ। এই কারণে, আমরা কেন একটা কাজ করেছি, সেটা তারা বুঝতে না-ও পারেন। (১ শমূ. ১:১৩-১৭) তাই, কোনো ভাই যদি কখনো আমাদের ভুলভাবে বিচার করেন অথবা ভুল বোঝেন, তা হলে সেই সময়েও আমরা যেন যিহোবার প্রতি অনুগত থাকি।

আমাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা যখন খুব কঠিন বলে মনে হয়

১৬. কোন কোন পরিস্থিতিতে আমরা স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা পোষণ না করে বরং ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকব?

১৬ শৌল চেয়েছিলেন, যেন দায়ূদের পরিবর্তে যোনাথন পরবর্তী রাজা হন। (১ শমূ. ২০:৩১) কিন্তু যোনাথন যিহোবাকে ভালোবাসতেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত ছিলেন। তাই, যোনাথন স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করার পরিবর্তে দায়ূদের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন এবং তার কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা রক্ষা করেছিলেন। আসলে, যিহোবাকে ভালোবাসে এবং তাঁর প্রতি অনুগত এমন যেকোনো ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা বা “দিব্য করিলে ক্ষতি হইলেও অন্যথা করে না।” (গীত. ১৫:৪) আমরা যেহেতু ঈশ্বরের প্রতি অনুগত, তাই আমরা সবসময় আমাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করব। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যদি কোনো ব্যাবসায়িক চুক্তি করে থাকি, তা হলে আমাদের চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এমনকী তা করা যদি কঠিনও হয়ে পড়ে। আর যদি বৈবাহিক সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে আমাদের স্বামী অথবা স্ত্রীর প্রতি অনুগত থাকার মাধ্যমে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করব।—পড়ুন, মালাখি ২:১৩-১৬.

আমরা যেহেতু ঈশ্বরের প্রতি অনুগত, তাই কোনো ব্যাবসায়িক চুক্তি করলে আমরা সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কাজ করব (১৬ অনুচ্ছেদ)

১৭. এই অধ্যয়ন কীভাবে আপনাকে সাহায্য করেছে?

১৭ যোনাথনের মতো, আমরাও এমনকী কঠিন সময়ে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকতে চাই। তাই আসুন, আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি সেই সময়েও অনুগত থাকি, যখন তারা আমাদের নিরাশ করে। তা হলে, আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করব আর এটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি সুখী করে। (হিতো. ২৭:১১) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি সবসময় আমাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয়টা করবেন এবং আমাদের যত্ন নেবেন। পরের প্রবন্ধে আমরা দেখব, দায়ূদের সময়ে যারা যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল এবং যারা অনুগত ছিল না, তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

^ [১] (৯ অনুচ্ছেদ) কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।