সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহিষ্কেল ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে যিরূশালেম নগরের অবরুদ্ধ অবস্থার অভিনয় করেছিলেন

ভাববাদীদের মনোভাব অনুকরণ করুন

ভাববাদীদের মনোভাব অনুকরণ করুন

প্রাচীন কালের ভাববাদীদের সঙ্গে আপনার কি কোনো বিষয়ে মিল রয়েছে? নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলের ২০১৩ সালের সংস্করণে “বাইবেলের শব্দকোষ” বলে যে-অংশ রয়েছে, সেখানে একজন ভাববাদী সম্বন্ধে এভাবে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে: “একজন ব্যক্তি, যার মাধ্যমে ঐশিক উদ্দেশ্য জানানো হয়। ভাববাদীরা ঈশ্বরের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন, তারা ভবিষ্যদ্‌বাণী করতেন ও সেইসঙ্গে যিহোবার শিক্ষা, আজ্ঞা এবং বিচার প্রকাশ করতেন।” আপনি যদিও ভবিষ্যদ্‌বাণী করেন না, কিন্তু আপনি যখন ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া বিষয়বস্তু ঘোষণা করেন, তখন আপনিও ঈশ্বরের হয়ে কথা বলেন।—মথি ২৪:১৪.

অন্যদের কাছে আমাদের ঈশ্বর যিহোবা সম্বন্ধে কথা বলা এবং মানবজাতির জন্য তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া কতই-না চমৎকার এক সুযোগ! আমরা “আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন” এমন দূতের সঙ্গে একত্রে এই কাজে অংশ নিচ্ছি। (প্রকা. ১৪:৬) কিন্তু, আমরা হয়তো এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে পারি, যেগুলোর কারণে আমরা এই চমৎকার সুযোগ সম্বন্ধে ভুলে যেতে পারি। এইরকম কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা কী? আমাদের মধ্যে হয়তো ক্লান্তি, নিরুৎসাহিতা অথবা অযোগ্যতার অনুভূতি আসতে পারে। প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত ভাববাদীরাও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না, কিন্তু তারা হাল ছেড়ে দেননি। আর যিহোবা তাদের কার্যভার সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছিলেন। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন এবং আমরা কীভাবে তাদের অনুকরণ করতে পারি, তা লক্ষ করুন।

তারা উদ্যমের সঙ্গে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন

আমরা হয়তো রোজকার বিভিন্ন কাজের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি আর এইরকম অনুভব করতে পারি, আমরা প্রচারে যেতে পারব না। এটা ঠিক যে, আমাদের বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন; এমনকী যিশু ও তাঁর প্রেরিতরাও বিশ্রাম নিয়েছিলেন। (মার্ক ৬:৩১) কিন্তু, যিহিষ্কেলের কথা চিন্তা করুন, যিনি বাবিলে ছিলেন এবং সেখানে যিরূশালেম থেকে বন্দি করে নিয়ে আসা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে নিজের কার্যভার পালন করেছিলেন। ঈশ্বর একবার যিহিষ্কেলকে একটা ইট নিয়ে সেটার উপর যিরূশালেম নগরের ছবি খোদাই করে আঁকতে বলেছিলেন। এরপর যিহিষ্কেলকে এই নগরের ক্ষুদ্র প্রতিলিপির দিকে মুখ করে বাম দিকে ৩৯০ দিন এবং ডান দিকে ৪০ দিন শয়ন করতে হয়েছিল আর এভাবে এই নগর যে অবরুদ্ধ, সেটার অভিনয় করতে হয়েছিল। যিহোবা যিহিষ্কেলকে বলেছিলেন: “দেখ, আমি রজ্জু দিয়া তোমাকে বদ্ধ করিব, তাহাতে তুমি যাবৎ তোমার অবরোধের দিন সমাপ্ত না করিবে, তাবৎ এক পার্শ্ব হইতে অন্য পার্শ্বে ফিরিবে না।” (যিহি. ৪:১-৮) এটা হয়তো নির্বাসিত ইস্রায়েলীয়দের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহিষ্কেলকে এমন তালিকা অনুসরণ করতে হয়েছিল, যার ফলে তিনি শারীরিকভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়তেন। কীভাবে ভাববাদী তার কার্যভার সম্পন্ন করেছিলেন?

যিহিষ্কেল এটা বুঝতে পেরেছিলেন, কেন তাকে একজন ভাববাদী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। যিহিষ্কেলকে পাঠানোর সময় ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “[ইস্রায়েল] শুনুক বা না শুনুক . . . তথাপি জানিতে পাইবে, তাহাদের মধ্যে এক জন ভাববাদী উপস্থিত হইল।” (যিহি. ২:৫) যিহিষ্কেল সবসময় নিজের কার্যভারের উদ্দেশ্য মনে রেখেছিলেন। তাই, তিনি ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে যিরূশালেম নগরের রূপক অবরুদ্ধ অবস্থার অভিনয় করেছিলেন। তিনি নিজেকে একজন প্রকৃত ভাববাদী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। তিনি এবং তার সঙ্গে থাকা নির্বাসিত ব্যক্তিরা এই খবর পেয়েছিলেন: “নগর পরাজিত হইয়াছে।” হ্যাঁ, ইস্রায়েলীয়রা তখন বুঝতে পেরেছিল, তাদের মাঝে একজন ভাববাদী আছেন।—যিহি. ৩৩:২১, ৩৩.

বর্তমানে, আমরা শয়তানের পুরো বিধিব্যবস্থার উপর আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে লোকেদের সতর্ক করে থাকি। আমরা হয়তো শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকতে পারি, কিন্তু আমরা ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করার, পুনর্সাক্ষাৎ করার ও বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য আমাদের শক্তি ব্যবহার করি। এই বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখার সময়, আমরা এমন “একজন ব্যক্তি” হওয়ার পরিতৃপ্তি লাভ করছি, “যার মাধ্যমে ঐশিক উদ্দেশ্য জানানো হয়।”

তারা নিরুৎসাহিতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন

আমরা যিহোবার আত্মার সাহায্যে নিজেদেরকে উদ্যমের সঙ্গে বিলিয়ে দিই; তা সত্ত্বেও, আমাদের বার্তার প্রতি লোকেরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেই কারণে আমরা কখনো কখনো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। আমাদের ভাববাদী যিরমিয়ের উদাহরণ মনে রাখা উচিত। তিনি ইস্রায়েলীয়দের কাছে ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করার কারণে ঠাট্টা, টিটকারি ও বিদ্রূপ সহ্য করেছিলেন। এক পর্যায়ে, যিরমিয় এমনকী এইরকম কথা বলে ফেলেছিলেন: “তাঁহার বিষয় আর উল্লেখ করিব না, তাঁহার নামে আর কিছু কহিব না।” যিরমিয় আমাদের মতোই অনুভূতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু, তিনি সবসময় ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করেছিলেন। কেন তা বলা যায়? কারণ ভাববাদী এটাও বলেছিলেন: “তবে আমার হৃদয়ে যেন দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ হয়; তাহা সহ্য করিতে করিতে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়ি, আর তিষ্ঠিতে পারি না।”—যির. ২০:৭-৯.

একইভাবে, আমাদের বার্তার প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়ার কারণে আমরা যদি নিরুৎসাহিত হই, তা হলে যে-বার্তা আমরা ঘোষণা করি, তা নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা সেই অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে পারি। তখন আমাদের মধ্যেও এমন অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে, যেন ‘দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ’ হয়েছে। প্রতিদিন বাইবেল পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের মধ্যে সেই আগুন জ্বালিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

তারা নেতিবাচক অনুভূতি কাটিয়ে উঠেছিলেন

কিছু খ্রিস্টান কোনো কার্যভার পাওয়ার পর উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়তে পারে, কারণ কী করতে হবে অথবা কেন তাদের সেই কার্যভার দেওয়া হয়েছে, তা তারা জানে না। ভাববাদী হোশেয় হয়তো একইরকম অনুভব করেছিলেন। যিহোবা তাকে আদেশ দিয়েছিলেন: “তুমি যাও, ব্যভিচারের স্ত্রীকে ও ব্যভিচারের সন্তানদিগকে গ্রহণ কর।” (হোশেয় ১:২) মনে করুন, আপনি বিয়ে করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর ঈশ্বর সেইসময় আপনাকে বলেন, আপনার ভাবী স্ত্রী একজন বেশ্যা। তখন আপনার কেমন লাগবে? হোশেয় এই কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি গোমরকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন আর গোমরের একটা ছেলে হয়েছিল। পরে, গোমরের আরও একটি মেয়ে ও একটি ছেলে হয়। স্পষ্টতই, শেষের দুই ছেলে-মেয়ে তার ব্যভিচারের ফল। যিহোবা হোশেয়কে বলেছিলেন, তার স্ত্রী “আপন প্রেমিকদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া যাইবে।” “প্রেমিকদের,” এই বহুবচন শব্দটা লক্ষ করার মতো। পরে আবার গোমর হোশেয়র কাছে ফিরে আসার চেষ্টা করবে। এখন চিন্তা করুন, আপনি যদি সেই ভাববাদীর জায়গায় থাকতেন, তা হলে আপনি কি নিজের স্ত্রীকে আবার গ্রহণ করতেন? যিহোবা হোশেয়কে ঠিক সেটাই করতে বলেছিলেন! ভাববাদী এমনকী অনেক মূল্য দিয়ে তার স্ত্রীকে ক্রয় করেছিলেন।—হোশেয় ২:৭; ৩:১-৫.

এই কার্যভার সম্পন্ন করে কী মঙ্গলসাধন হবে, হোশেয়র মনে হয়তো এইরকম প্রশ্ন এসেছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বস্তভাবে নিজের বাস্তব জীবনে এমন এক নাটকে অভিনয় করেছিলেন, যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, ইস্রায়েলীয়রা যখন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তখন তিনি কেমন কষ্ট পেয়েছিলেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, সৎহৃদয়ের কিছু ইস্রায়েলীয় ব্যক্তি সেই সময়ে ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল।

বর্তমানে ঈশ্বর কাউকে কোনো ‘ব্যভিচারের স্ত্রীকে গ্রহণ’ বা বিয়ে করতে বলেন না। তা সত্ত্বেও, এইরকম এক কার্যভার গ্রহণ করার বিষয়ে হোশেয়র ইচ্ছুক মনোভাব থেকে আমরা কি কোনো শিক্ষা লাভ করতে পারি? একটা শিক্ষা হল, রাজ্যের সুসমাচার “সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে” ঘোষণা করার কাজকে ব্যক্তিগতভাবে কঠিন বলে মনে হলেও, আমাদের তা করার জন্য ইচ্ছুক হতে হবে। (প্রেরিত ২০:২০) হতে পারে, রাজ্যের প্রচার কাজের কোনো কোনো দিক হয়তো আপনার কাছে সহজ বলে মনে হয় না। যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করে থাকে এমন অনেক ব্যক্তি বলেছিল, তারা বাইবেল অধ্যয়ন করা উপভোগ করে কিন্তু তারা কখনো রাজ্যের বার্তা নিয়ে লোকেদের ঘরে ঘরে যাবে না। তাদের মধ্যে অনেকে পরে সেই কাজটাই করতে শুরু করেছিল, যেটাকে একসময় তাদের কাছে অসম্ভব বলে মনে হতো। এখানে কোন শিক্ষাটা রয়েছে, তা কি আপনি বুঝতে পারছেন?

হোশেয় যে এক কঠিন কার্যভার গ্রহণ করেছিলেন, তা থেকে আমরা আরেকটা শিক্ষা লাভ করতে পারি। নিজের স্ত্রী জড়িত রয়েছে এমন রূপক নাটকে অভিনয় না করার জন্য তিনি বিভিন্ন অজুহাত খুঁজতে পারতেন। হোশেয় যদি এই বিবরণ না লিখতেন, তা হলে অন্য মানুষেরা কি এই কার্যভার সম্বন্ধে জানতে পারত? আমরাও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি, যখন আমরা কারো কাছে যিহোবা সম্বন্ধে কথা বলার যে-সুযোগ পাই, তা অন্য কেউ হয়তো জানতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের হাই স্কুলের একজন ছাত্রী আ্যনার ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছিল। তার শিক্ষিকা তাদের ক্লাসের সবাইকে এমন একটা বিষয়ে রচনা লিখতে বলেছিলেন, যেটা নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তা করে থাকে আর এরপর তারা সেই বিষয়ে ক্লাসের সবাইকে প্রত্যয়ী করার চেষ্টা করবে। আ্যনা সাক্ষ্য দেওয়ার এই সুযোগ উপেক্ষা করতে পারত। কিন্তু, সে এটাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে এক সুযোগ বলে মনে করেছিল। কিন্তু ক্লাসের অন্যেরা বিষয়টাকে কীভাবে নেবে, তা বুঝতে পেরে সে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিল আর তার মধ্যে সেই সুযোগটা লুফে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছিল। সে একটা রচনা লিখেছিল, যেটার শিরোনাম ছিল, “বিবর্তনবাদ: প্রমাণ বিবেচনা করুন।”

আমাদের অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েরা ভাববাদীদের মনোভাব অনুকরণ করে—তারা সাহসের সঙ্গে আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবার পক্ষসমর্থন করে

আ্যনা যখন ক্লাসের সামনে রচনাটা উপস্থাপন করেছিল, তখন বিবর্তনবাদ বিশ্বাস করে এমন একজন ছাত্রী তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিল। আ্যনা তখন সফলভাবে নিজের অবস্থানের পক্ষসমর্থন করতে পেরেছিল। ফলে তার শিক্ষিকা অভিভূত হয়েছিলেন এবং সবচেয়ে বেশি প্রত্যয় উৎপাদনকারী রচনা লেখার জন্য তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। এরপর, যে-মেয়ে তাকে প্রশ্ন করেছিল, তার সঙ্গে আ্যনা সৃষ্টি সম্বন্ধে আরও আলোচনা চালিয়ে যেতে পেরেছিল। যিহোবার কাছ থেকে “কার্যভার” গ্রহণ করার ফল সম্বন্ধে আ্যনা বলে: “এখন আমি নির্ভয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে সুসমাচার প্রচার করতে পারি।”

আমরা যদিও ভাববাদী নই, কিন্তু যিহিষ্কেল, যিরমিয় ও হোশেয়র মতো ভাববাদীদের আত্মত্যাগমূলক মনোভাব অনুকরণ করার মাধ্যমে, আমরাও বর্তমানে আমাদের জন্য যিহোবার ইচ্ছা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি! আপনি কি পারিবারিক উপাসনার সময় অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের প্রকল্প হিসেবে প্রাচীন কালের অন্যান্য ভাববাদী সম্বন্ধে পড়তে পারেন? আর আপনি কীভাবে তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন, তা নিয়ে আপনি কি ধ্যান করতে পারেন?