সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কীভাবে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন?

আপনি কীভাবে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন?

“প্রভুর [ঈশ্বরের] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝ।”—ইফি. ৫:১৭.

গান সংখ্যা: ১১, ২২

১. বাইবেলের কিছু আজ্ঞা কী আর সেগুলোর বাধ্য থাকার ফলে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?

যিহোবা বাইবেলের মধ্যে বিভিন্ন আইন দিয়েছেন, যেগুলো আমাদের স্পষ্টভাবে জানায়, তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি প্রতিমাপূজা, চুরি, মত্ততা অথবা যৌন অনৈতিকতার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। (১ করি. ৬:৯, ১০) আর যিহোবার পুত্র যিশু তাঁর অনুসারীদের এই সুনির্দিষ্ট আজ্ঞা দিয়েছেন: “তোমরা . . . সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) যিহোবা এবং যিশু আমাদের যা-কিছু করতে বলেন, সেই সমস্ত কিছু আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। সেগুলোর বাধ্য থাকা আমাদের আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে, সুস্বাস্থ্য লাভের ক্ষেত্রে অবদান রাখে এবং পারিবারিক সুখ বৃদ্ধি করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা যখন প্রচার করার আজ্ঞা-সহ যিহোবার অন্যান্য আজ্ঞার বাধ্য হই, তখন তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন ও আমাদের আশীর্বাদ করেন।

২, ৩. (ক) কেন বাইবেলে আমাদের জীবনের প্রতিটা পরিস্থিতির জন্য নিয়মকানুন দেওয়া নেই? (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

কিন্তু, বাইবেলের মধ্যে আমাদের জীবনের প্রতিটা পরিস্থিতি সম্বন্ধে আজ্ঞা বা নিয়ম উল্লেখ করা নেই। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের কোন ধরনের পোশাক-আশাক পরা উচিত, সেই বিষয়ে বাইবেলে একেবারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এটা কীভাবে যিহোবার প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে? পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার লোকেরা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরে এবং ফ্যাশন ক্রমাগত পরিবর্তন হয়। বাইবেলে যদি গ্রহণযোগ্য পোশাক-আশাক ও সাজগোজের নির্দিষ্ট তালিকা দেওয়া থাকত, তা হলে এখন সেই তালিকা সেকেলে হয়ে যেত। একইভাবে, আমাদের কোন ধরনের চাকরি অথবা বিনোদন বাছাই করা উচিত কিংবা সুস্বাস্থ্য লাভ করার জন্য আমাদের ঠিক কী করা উচিত, সেই বিষয়ে বাইবেলে অনেক নিয়মকানুন নেই। এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যিহোবা ব্যক্তি-বিশেষকে এবং পরিবারের মস্তকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।

তাই, আমাদের যখন এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা আমাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে এবং যে-বিষয়ে বাইবেলে কোনো আইন খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন আমরা হয়তো চিন্তা করতে পারি: ‘যিহোবা কি আমার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আগ্রহী? বাইবেলের আইন লঙ্ঘন না করে আমি যেকোনো সিদ্ধান্তই নিই না কেন, তাতেই কি তিনি খুশি হবেন? কীভাবে আমি নিশ্চিত হতে পারি, আমি যা বাছাই করব, তা দেখে তিনি খুশি হবেন?’

আমাদের সিদ্ধান্ত নিজেদের ও অন্যদের উপর প্রভাব ফেলে

৪, ৫. কীভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত নিজেদের ও অন্যদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে?

কেউ কেউ মনে করে, তারা যা খুশি তা-ই করতে পারে। কিন্তু আমরা এমন কাজ করতে চাই, যা যিহোবাকে খুশি করে। তাই, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাইবেল কী বলে, তা আমাদের চিন্তা করতে হবে এবং সেটার বাধ্য হতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রক্তের ব্যবহার সম্বন্ধে ঈশ্বর কেমন অনুভব করেন, তা বাইবেল আমাদের জানায় আর তাই আমরা বাইবেলের নির্দেশনা অনুসরণ করি। (আদি. ৯:৪; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) আর যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারি, যা তাঁকে খুশি করে।

আমাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের উপর প্রভাব ফেলে। কোনো উত্তম সিদ্ধান্ত আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, কোনো মন্দ সিদ্ধান্ত তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারে। এ ছাড়া, আমাদের সিদ্ধান্ত অন্যদের উপরও প্রভাব ফেলে। আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যা হয়তো আমাদের ভাই-বোনদের অসন্তুষ্ট করতে পারে অথবা তাদের বিশ্বাস দুর্বল করে দিতে পারে। তা ছাড়া, আমরা মণ্ডলীতে ভাই-বোনদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করতে চাই না। তাই, আমাদের জন্য উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।—পড়ুন, রোমীয় ১৪:১৯; গালাতীয় ৬:৭.

৬. কোন বিষয়টা আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেবে?

আমাদের কী করা উচিত, সেই বিষয়ে বাইবেলে যদি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না থাকে, তা হলে আমরা কীভাবে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারি? সেই ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করার পরিবর্তে, আমাদের নিজেদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে এবং এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা যিহোবাকে খুশি করে। তা হলে আমরা নিশ্চিত হতে পারব, তিনি আমাদের উত্তম ফল লাভ করতে সাহায্য করবেন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৭:৫.

আমি কী করব বলে যিহোবা চান?

৭. বাইবেলে যখন কোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন উল্লেখ করা থাকে না, তখন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা কী করব বলে যিহোবা চান, তা আমরা কীভাবে খুঁজে বের করতে পারি?

কোন বিষয়টা যিহোবাকে খুশি করবে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? ইফিষীয় ৫:১৭ পদ আমাদের বলে: “প্রভুর [ঈশ্বরের] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝ।” বাইবেলে যখন কোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন উল্লেখ করা থাকে না, তখন আমাদের পরিস্থিতিতে আমরা কী করব বলে যিহোবা চান, তা আমাদের বুঝতে হবে। কীভাবে আমরা তা বুঝতে পারি? তাঁর কাছে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে এবং তাঁর আত্মা দ্বারা নিজেদের পরিচালিত হতে দিতে হবে।

৮. নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যিশু কী করবেন বলে যিহোবা চান, তা যিশু কীভাবে বুঝতে পেরেছিলেন? উদাহরণ দিন।

নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে যিশু কী করবেন বলে যিহোবা চান, তা যিশু সবসময় বুঝতে পেরেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, দুটো ঘটনায় লোকেরা যখন ক্ষুধার্ত হয়েছিল, তখন যিশু প্রার্থনা করেছিলেন এবং অলৌকিক কাজের মাধ্যমে তাদের খাবার দিয়েছিলেন। (মথি ১৪:১৭-২০; ১৫:৩৪-৩৭) কিন্তু, প্রান্তরে তিনি নিজে যখন ক্ষুধার্ত হয়েছিলেন এবং শয়তান তাঁকে বলেছিল, যেন তিনি পাথরকে রুটিতে পরিণত করেন, তখন তিনি তা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (পড়ুন, মথি ৪:২-৪.) যিশু যেহেতু তাঁর পিতাকে ভালোভাবে জানতেন তাই তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি নিজের প্রয়োজনে পবিত্র আত্মা ব্যবহার করবেন, তা যিহোবা চান না। যিশু নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর পিতা তাঁকে নির্দেশনা দেবেন এবং প্রয়োজনের সময় তাঁকে খাবার জুগিয়ে দেবেন।

৯, ১০. কোন বিষয়টা আমাদের বিজ্ঞতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে? উদাহরণ দিন।

আমরাও যিশুর মতো উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারব, যদি আমরা নির্দেশনার জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করি। বাইবেল বলে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন। আপনার দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হইও না; সদাপ্রভুকে ভয় কর, মন্দ হইতে দূরে যাও।” (হিতো. ৩:৫-৭) আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে জানতে পারি, তখন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আমরা কী করব বলে তিনি চান, সেটা আমরা বুঝতে পারব। আর যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে আমরা যত বেশি জানব, যিহোবাকে খুশি করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের জন্য ততই সহজ হবে। এভাবে আমরা যিহোবার নির্দেশনার প্রতি আরও বেশি সাড়া দিতে পারব।—গীত. ১১৯:১১, ১২.

১০ মনে করুন, একজন বিবাহিত মহিলা কেনাকাটা করছেন আর তিনি এক জোড়া সুন্দর জুতো দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু সেই জুতো খুব দামি। যদিও তার স্বামী সঙ্গে নেই, কিন্তু এতগুলো টাকা খরচ করে ফেললে তার স্বামী কী চিন্তা করবেন, তা তিনি জানেন। কীভাবে তিনি তা জানেন? কারণ তার বিয়ের পর বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। তাদের টাকাপয়সা কীভাবে খরচ করতে হবে, সেই বিষয়ে তার স্বামী কী চান, সেটা তিনি জানেন। একইভাবে, যিহোবার চিন্তাভাবনা এবং অতীতে তিনি আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন তা জানার মাধ্যমে আমরাও বুঝতে পারি, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা কী করব বলে তিনি চান।

যিহোবা কী চিন্তা করেন, তা আপনি কীভাবে জানতে পারেন?

১১. বাইবেল পাঠ অথবা অধ্যয়ন করার সময় আমরা নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি? (“ বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন” শিরোনামের বাক্স দেখুন।)

১১ যিহোবা কী চিন্তা করেন, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? তা জানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, নিয়মিতভাবে বাইবেল পাঠ ও অধ্যয়ন করা। তা করার সময় আমরা নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘যিহোবা সম্বন্ধে এই বিবরণ থেকে আমি কী শিখতে পারি? কেন তিনি এভাবে আচরণ করেছেন?’ যিহোবাকে ভালোভাবে জানার জন্য আমাদেরও দায়ূদের মতো তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। দায়ূদ লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও। তোমার সত্যে আমাকে চালাও, আমাকে শিক্ষা দেও, কেননা তুমিই আমার ত্রাণেশ্বর; আমি সমস্ত দিন তোমার অপেক্ষায় থাকি।” (গীত. ২৫:৪, ৫) আমরা যখন যিহোবা সম্বন্ধে কোনো কিছু শিখি, তখন সেই তথ্য কোন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি। আমরা কি এই তথ্য পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে অথবা পরিচর্যায় ব্যবহার করতে পারি? আমরা যখন নির্দিষ্ট পরিস্থিতি সম্বন্ধে চিন্তা করি, তখন সেই তথ্য কীভাবে আমরা ব্যবহার করব বলে যিহোবা চান, সেটা জানা আরও সহজ হয়ে উঠবে।

১২. কীভাবে আমাদের প্রকাশনা ও সভাগুলো আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবার চিন্তাভাবনা আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করতে পারে?

১২ যিহোবার চিন্তাভাবনা জানার আরেকটা উপায় হল, তাঁর সংগঠন আমাদেরকে বাইবেল থেকে যা শিক্ষা দেয়, সেটার প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়া। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যিহোবার চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স এবং যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা আমাদের সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, আমরা যখন খ্রিস্টীয় সভার বিষয়বস্তু মনোযোগ দিয়ে শুনি, সভাতে মন্তব্য করি এবং সেখানে যা শেখানো হয় তা নিয়ে ধ্যান করি, তখনও আমরা উপকৃত হতে পারি। এগুলো আমাদেরকে যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে সাহায্য করবে। এর ফলে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব, যা তাঁকে খুশি করবে এবং সেই সিদ্ধান্তের উপর তাঁর আশীর্বাদ থাকবে।

কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যিহোবা কী চিন্তা করেন, তা নিয়ে ধ্যান করুন

১৩. যিহোবার চিন্তাভাবনা বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে বিজ্ঞতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

১৩ যিহোবার চিন্তাভাবনা বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে বিজ্ঞতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারি, আসুন আমরা এখন সেটার একটা উদাহরণ লক্ষ করি। ধরুন, আপনি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে চান। আপনি যাতে প্রচারে আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন, সেইজন্য আপনি হয়তো আপনার জীবনে ইতিমধ্যেই কিছু পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু, অল্প টাকাপয়সা ও বিষয়বস্তু নিয়ে আপনি সত্যিই সুখী হতে পারবেন কি না, সেই ব্যাপারে আপনি এখনও নিশ্চিত নন। অবশ্য, বাইবেল কখনো এটা বলে না, যিহোবার সেবা করার জন্য আমাদের অগ্রগামী হতে হবে। আমরা প্রকাশক হিসেবে বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করে যেতে পারি। তবে যিশু এটাও বলেছেন, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের আশীর্বাদ করেন, যারা রাজ্যের জন্য বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করে। (পড়ুন, লূক ১৮:২৯, ৩০.) এ ছাড়া, বাইবেলে এটাও বলা আছে, যিহোবার প্রশংসা করার জন্য আমরা যখন যথাসাধ্য করি, তখন তিনি খুশি হন আর তিনি চান, যেন আমরা আনন্দ সহকারে তাঁর সেবা করি। (গীত. ১১৯:১০৮; ২ করি. ৯:৭) এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনা ও ধ্যান করার মাধ্যমে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারি, যা আমাদের পরিস্থিতিতে ব্যাবহারিক হবে এবং যে-সিদ্ধান্তের উপর যিহোবার আশীর্বাদ থাকবে।

১৪. একটা নির্দিষ্ট স্টাইলের পোশাক যিহোবাকে খুশি করবে কি না, তা আপনি কীভাবে বুঝতে পারবেন?

১৪ আরেকটা উদাহরণ লক্ষ করুন: একটা নির্দিষ্ট স্টাইলের পোশাক আপনার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু আপনি জানেন, আপনি যদি এটা পড়েন, তা হলে মণ্ডলীর কেউ কেউ বিরক্ত হতে পারে। সেই নির্দিষ্ট স্টাইল সম্বন্ধে বাইবেলে কিছু বলা নেই। তা হলে, কীভাবে আপনি যিহোবার চিন্তাভাবনা জানতে পারেন? বাইবেল আমাদের বলে: ‘নারীগণ সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক।’ (১ তীম. ২:৯, ১০) নিশ্চিতভাবেই এই কথাগুলো থেকে যিহোবার সমস্ত দাস শিক্ষা লাভ করতে পারে আর এর মধ্যে পুরুষরাও রয়েছে। আমরা যদি বিনয়ী হই, তা হলে আমরা যে-পোশাক পরার জন্য বাছাই করেছি, সেই পোশাক সম্বন্ধে অন্যেরা কী মনে করতে পারে, তা আমরা চিন্তা করব। আর আমরা যেহেতু আমাদের ভাই-বোনদের ভালোবাসি, তাই আমরা তাদের অসন্তুষ্ট বা বিরক্ত করা এড়িয়ে চলি। (১ করি. ১০:২৩, ২৪; ফিলি. ৩:১৭) বাইবেল যা বলে এবং যিহোবা যেভাবে চিন্তা করেন, তা যদি আমরা বিবেচনা করি, তা হলে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারব, যা তাঁকে খুশি করবে।

১৫, ১৬. (ক) আমরা যদি ক্রমাগত যৌন অনৈতিকতার বিষয়ে কল্পনা করি, তা হলে যিহোবা কেমন অনুভব করবেন? (খ) বিনোদন বাছাই করার সময় আমরা কীভাবে জানতে পারি, কোনটা যিহোবাকে খুশি করে? (গ) গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে নেওয়া উচিত?

১৫ বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি, লোকেরা যখন মন্দ কাজ করে এবং মন্দ বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, তখন যিহোবা খুব দুঃখ পান। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৬:৫, ৬.) তাই এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা চান না, আমরা যৌন অনৈতিকতার মতো বিষয় নিয়ে কল্পনা করে আনন্দ লাভ করি। আসলে, আমরা যদি এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকি, তা হলে আমরা সত্যিই সেই কাজ করে ফেলতে পারি। এর পরিবর্তে, যিহোবা চান যেন আমরা শুদ্ধ ও উত্তম বিষয় নিয়ে চিন্তা করি। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন, যিহোবার জ্ঞান বা প্রজ্ঞা “প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট।” (যাকোব ৩:১৭) তাই বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয়, আমাদের এমন যেকোনো বিনোদন এড়িয়ে চলতে হবে, যা আমাদের মধ্যে অশুদ্ধ ও মন্দ কল্পনা বা আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে পারে। যিহোবা কোন বিষয়টা ভালোবাসেন এবং কোনটা ঘৃণা করেন, সেটা যদি আমরা বুঝতে পারি, তা হলে কোন ধরনের বইপত্র, সিনেমা অথবা খেলাধুলা বাছাই করতে হবে, তা বোঝা আমাদের জন্য আরও সহজ হবে। আমরা কী করব, সেই বিষয়ে অন্যদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হবে না।

১৬ কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমাদের সামনে বিভিন্ন বাছাই থাকতে পারে আর সেগুলোর প্রত্যেকটাই হয়তো যিহোবাকে খুশি করতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, কোনো প্রাচীন কিংবা অভিজ্ঞ ভাই অথবা বোনের কাছে পরামর্শ চাওয়া ভালো হবে। (তীত ২:৩-৫; যাকোব ৫:১৩-১৫) অবশ্য, সেই ব্যক্তিকে আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা ঠিক হবে না। এর পরিবর্তে, বাইবেল থেকে আমরা যা জানি, সেই বিষয় নিয়ে আমাদের মনোযোগ সহকারে চিন্তা করতে হবে আর এরপর নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৪) প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে।”—গালা. ৬:৫.

১৭. যিহোবাকে খুশি করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?

১৭ আমরা যখন এমন সিদ্ধান্ত নিই, যা যিহোবাকে খুশি করে, তখন আমরা তাঁর আরও নিকটবর্তী হই এবং তাঁর অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভ করি। (যাকোব ৪:৮) এ ছাড়া, যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। তাই আসুন, তাঁর চিন্তাভাবনা বোঝার জন্য, আমরা বাইবেল থেকে যা পড়ি, তা নিয়ে ধ্যান করি। নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা সম্বন্ধে নতুন কিছু শেখার সুযোগ আমাদের সবসময়ই থাকবে। (ইয়োব ২৬:১৪) তবে, তাঁর সম্বন্ধে শেখার জন্য আমরা যদি এখনই কঠোর প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা বিজ্ঞ হয়ে উঠব এবং বিভিন্ন উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারব। (হিতো. ২:১-৫) মানুষের ধারণা ও পরিকল্পনা পরিবর্তন হয়, কিন্তু যিহোবা কখনো পরিবর্তন হন না। গীতরচক বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর মন্ত্রণা চিরকাল স্থির থাকে, তাঁহার চিত্তের সঙ্কল্প পুরুষানুক্রমে স্থায়ী।” (গীত. ৩৩:১১) স্পষ্টতই, আমরা যদি যিহোবার মতো করে চিন্তা করতে শিখি আর এরপর তাঁকে খুশি করার জন্য পদক্ষেপ নিই, তা হলে আমরা সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারব।