সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের আর্কাইভ থেকে

“যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে”

“যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে”

দিনটা ছিল ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, সোমবার। বেশ কিছু দিন ধরে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার পর, সেই দিন ভোর বেলা সূর্যের মুখ দেখা যায় ও রোদ ঝলমল করতে থাকে। সেই দিন দুপুরে ১,০০০-রেরও কম অভ্যাগত, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর সিডার পয়েন্টে আয়োজিত সম্মেলনের শুরুর অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ২,৫০০ আসনবিশিষ্ট একটা হলে একত্রিত হয়েছিল। সন্ধ্যার মধ্যে জাহাজ, গাড়ি ও বিশেষ ট্রেনে চড়ে ২,০০০-রেরও বেশি লোক সেখানে এসে পৌঁছেছিল। মঙ্গলবার লোকসংখ্যা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, সম্মেলনের বাকি কার্যক্রম হলের বাইরে বড়ো বড়ো গাছের নীচে করতে হয়েছিল।

কার্যক্রম চলাকালে, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো পুরুষদের কোটের উপর পড়ছিল আর লেসের ডিজাইনের মতো বিভিন্ন ডিজাইন তৈরি হচ্ছিল। এরি লেকের মৃদুমন্দ বাতাসে মহিলাদের টুপির পালক উড়ছিল। একজন ভাই সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেছিলেন, “জগতের কোলাহল থেকে অনেক দূরে, বাগানের মতো অপূর্ব এক পরিবেশে, সত্যিই পরমদেশের মতো মনে হয়েছিল।”

তবে চারপাশের পরিবেশের সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে, সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের চেহারায় আনন্দের দ্যুতি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। স্থানীয় একটা সংবাদপত্রে এভাবে মন্তব্য করা হয়েছিল, “সবাইকে অত্যন্ত ধার্মিক আর সেইসঙ্গে উৎফুল্ল ও সুখী লোক বলে মনে হচ্ছিল।” বিগত কয়েক বছরের চরম পরীক্ষার পর—যুদ্ধকালীন বিরোধিতা, মণ্ডলীর মধ্যে তিক্ত মতবিরোধ, ব্রুকলিন বেথেল বন্ধ ঘোষণা, রাজ্যের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কারাদণ্ডাদেশ আর সেইসঙ্গে নেতৃত্বদানকারী আট জন ভাইয়ের ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশের পর—বাইবেল ছাত্রদের কাছে এই খ্রিস্টীয় সাহচর্যকে খুবই আনন্দময় বলে মনে হয়েছিল। *

বিগত কয়েক বছরের কঠিন অভিজ্ঞতার কারণে বাইবেল ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ নিরুৎসাহিত ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল এবং সাক্ষ্যদান করা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু, অধিকাংশ ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েও দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য করেছিল। এই ধরনের একটা ঘটনায়, একজন তদন্তকারী বলেছিলেন, যদিও কড়া সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছিল, তা সত্ত্বেও যে-বাইবেল ছাত্রদের তিনি জেরা করেছিলেন, তারা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিল, তারা “শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করে যাবে।”

পরীক্ষার এই সময়কালে, বিশ্বস্ত বাইবেল ছাত্ররা “প্রভুর পরিচালনার প্রতি দৃষ্টি রাখছিল, . . . সবসময় পিতার নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করছিল।” সিডার পয়েন্টে অনুষ্ঠিত আনন্দপূর্ণ সম্মেলনে তারা আবার একতাবদ্ধ হয়েছিল। একজন বোন যে-মন্তব্য করেছিলেন, তা থেকে অন্য অনেকের অনুভূতি বোঝা গিয়েছিল। তিনি চিন্তা করেছিলেন, কীভাবে তারা পুনরায় তাদের “কাজ বৃদ্ধি করবে আর সংগঠিত উপায়ে প্রচার করবে।” অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তারা প্রচার কাজ শুরু করতে চেয়েছিল!

“জিএ”—সম্পূর্ণ নতুন এক হাতিয়ার!

সম্মেলনের বিষয়সূচিতে, শুভেচ্ছাবার্তা লেখা কার্ডে ও সম্মেলনস্থলের বিভিন্ন জায়গার সাইনবোর্ডে “জিএ” অক্ষরগুলো লেখা ছিল আর অভ্যাগতরা পুরো সপ্তাহজুড়ে এই অক্ষরগুলো দেখা সত্ত্বেও, সেগুলোর অর্থ কী, তা বুঝতে পারেনি। শুক্রবারকে “সহশ্রমিকদের দিবস” বলে উল্লেখ করা হয়েছিল আর সেই দিন ভাই জোসেফ এফ. রাদারফোর্ড অবশেষে সম্মেলনে যোগদানকারী ৬,০০০ ব্যক্তির কাছে সেই রহস্য উন্মোচন করেছিলেন। “জিএ” অর্থ দা গোল্ডেন এইজ (স্বর্ণযুগ) আর এটা পরিচর্যার জন্য একটা নতুন পত্রিকা। *

ভাই রাদারফোর্ড সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে এই কথা বলেছিলেন: “সমস্যাসংকুল সেই সময়কে ছাড়িয়ে তারা বিশ্বাসের চোখে মশীহের গৌরবময় শাসনের স্বর্ণযুগ দেখতে পেয়েছিলেন। . . . তারা মনে করেছিলেন, আসন্ন স্বর্ণযুগ সম্বন্ধে জগতের কাছে ঘোষণা করা হল তাদের প্রধান দায়িত্ব ও বিশেষ সুযোগ। এটা তাদের ঈশ্বরদত্ত কার্যভারের একটা অংশ।”

স্বর্ণযুগ হল “সত্য, আশা ও দৃঢ়প্রত্যয়ের এক পত্রিকা।” এই পত্রিকা নতুন উপায়ে সত্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে আর তা হল, ঘরে ঘরে গ্রাহকভুক্তি অভিযান। কত জন এই কাজ করতে ইচ্ছুক তা যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন উপস্থিত শ্রোতারা সকলে উঠে দাঁড়িয়েছিল। এরপর, তারা এই গান গেয়েছিল: “হে প্রভু, তোমার আলো ও সত্য প্রেরণ করো” আর তা গাওয়ার সময় তাদের মধ্যে এমন “উৎসাহ ও উদ্যম ছিল, যা শুধুমাত্র যিশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যেই দেখা যায়।” গান গাওয়ার সময়ে কী হয়েছিল, তা স্মরণ করে জে. এম. নরিস বলেছিলেন, “গাছগুলো যেভাবে কাঁপছিল, তা আমি কখনোই ভুলব না।”

সেই অধিবেশনের পর অভ্যাগতরা সেই পত্রিকার গ্রাহক হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছিল। অনেকেই মেবেল ফিলব্রিকের মতো অনুভব করেছিল, যিনি বলেছিলেন: “আবার কাজ করতে পারব, তা জানতে পেরে আমরা কতই-না রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম!”

“যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে”

প্রায় ৭,০০০ বাইবেল ছাত্র কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। সংগঠন পদ্ধতি (ইংরেজি) প্রকাশনায় এবং যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে (ইংরেজি) পুস্তিকায় এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল: প্রধান কার্যালয়ে এক নতুন পরিচর্যা বিভাগ এই কাজ পরিচালনা করবে। মণ্ডলীতে একটা পরিচর্যা কমিটি গঠন করা হবে এবং বিভিন্ন নির্দেশনা জানানোর জন্য একজন পরিচালক নিযুক্ত করা হবে। এলাকাগুলো বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা হবে এবং প্রতিটা অংশে ১৫০ থেকে ২০০টা ঘর থাকবে। প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটা পরিচর্যা সভা হবে, যেখানে ভাই-বোনেরা তাদের অভিজ্ঞতা জানাবে এবং পরিচর্যার রিপোর্ট দেবে।

“ঘরে ফেরার পর আমরা সবাই গ্রাহকভুক্তি অভিযান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম,” হার্মেন ফিলব্রিক বলেছিলেন। তারা সব জায়গায় আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে পেয়েছিল। “মনে হয়েছিল, যুদ্ধ ও প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করার পর, সকলে এক স্বর্ণযুগের আগমনবার্তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল,” বুলাহ্‌ কোভে মন্তব্য করেছিলেন। আর্থার ক্লাউস লিখেছিলেন: “গ্রাহকদের বিরাট সংখ্যা দেখে মণ্ডলীর সকলে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছিল।” স্বর্ণযুগ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা বের হওয়ার দু-মাসের মধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ সৌজন্য সংখ্যা অর্পণ করা হয়েছিল এবং ৫০,০০০ ব্যক্তি সেই পত্রিকার গ্রাহক হয়েছিল।

১৯২০ সালের ১ জুলাই প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার “রাজ্যের সুসমাচার” শিরোনামের প্রবন্ধ সম্বন্ধে এ. এইচ. ম্যাকমিলান পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন, এই প্রবন্ধেই “প্রথম বার বিশ্বব্যাপী প্রচার কাজ সম্বন্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল, ঠিক যেমনটা এখন সম্পন্ন করা হচ্ছে।” এই প্রবন্ধে সকল অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে “স্বর্গরাজ্য যে সন্নিকট, সেই বিষয়ে জগতের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার” জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে, খ্রিস্টের ভাইয়েরা অর্থাৎ “যাদেরকে আস্থা সহকারে এই কাজ দেওয়া হয়েছে,” তাদের সঙ্গে আরও লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি মশীহের স্বর্ণযুগ আসার জন্য অপেক্ষা করার সময়ে উদ্যোগ সহকারে প্রচার করে যাচ্ছে।

^ অনু. 5 যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ৬ অধ্যায় দেখুন, যেটার শিরোনাম “পরীক্ষার এক সময় (১৯১৪-১৯১৮)।”

^ অনু. 9 স্বর্ণযুগ (ইংরেজি) পত্রিকার নাম পরিবর্তন করে ১৯৩৭ সালে সান্ত্বনা (ইংরেজি) এবং ১৯৪৬ সালে সচেতন থাক! (ইংরেজি) নাম দেওয়া হয়েছে।