সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা, দিয়াবলের বিরুদ্ধে অটল থাকো

অল্পবয়সিরা, দিয়াবলের বিরুদ্ধে অটল থাকো

“ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার।”—ইফি. ৬:১১.

গান সংখ্যা: ৭, ৫৫

১, ২. (ক) কেন অল্পবয়সি খ্রিস্টানরা শয়তান ও মন্দদূতদের বিরুদ্ধে করা যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখো।) (খ) আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের সৈনিকদের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আমরা একটা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছি আর আমাদের শত্রুরা হল বাস্তব ব্যক্তি! কিন্তু, আমাদের যুদ্ধ মানুষের বিরুদ্ধে নয় বরং শয়তান ও মন্দদূতদের বিরুদ্ধে। তারা হাজার হাজার বছর ধরে যুদ্ধ করছে আর তারা এই বিষয়ে খুবই পারদর্শী। তাই, এমনটা মনে হতে পারে যে, আমরা কোনোভাবেই এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারব না, বিশেষভাবে যদি আমরা অল্পবয়সি হয়ে থাকি। অল্পবয়সিরা কি এই ধরনের শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে? হ্যাঁ, তারা পারে আর তারা জয়ী হচ্ছে! কেন? কারণ তারা যিহোবার কাছ থেকে শক্তি লাভ করে। এ ছাড়া, সুপ্রশিক্ষিত সৈনিকদের মতো তারা ‘ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান করে,’ যাতে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।—পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১০-১২.

পৌল যখন এই দৃষ্টান্তটা ব্যবহার করছিলেন, তখন তিনি হয়তো রোমীয় সৈনিকদের যুদ্ধসজ্জা সম্বন্ধে চিন্তা করছিলেন। (প্রেরিত ২৮:১৬) এই প্রবন্ধে আমরা সেই চমৎকার দৃষ্টান্ত নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া আমরা এটা নিয়েও আলোচনা করব যে, আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার প্রতিটা অংশ পরার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উপকারিতা সম্বন্ধে কোনো কোনো অল্পবয়সি কী বলে।

আপনি কি আপনার যুদ্ধসজ্জার প্রতিটা অংশ পরে আছেন?

‘সত্যের কটিবন্ধনী’

৩, ৪. কীভাবে বাইবেল থেকে পাওয়া সত্য একজন রোমীয় সৈনিকের বেল্টের মতো?

ইফিষীয় ৬:১৪ পদ পড়ুন। রোমীয় সৈনিকদের কটিবন্ধনী বা বেল্টে ধাতুর পাত থাকত, যাতে সেটা একজন সৈনিকের কোমরকে সুরক্ষিত রাখে এবং তার ভারী বুকপাটাকে সঠিক স্থানে ধরে রাখে। কোনো কোনো বেল্টে মজবুত আংটা থাকত, যাতে সেটা একটা তলোয়ার ও ছোরাকে ধরে রাখতে পারে। একজন সৈনিক যখন কোমরে শক্তভাবে তার বেল্টটা বাঁধতেন, তখন তিনি আস্থার সঙ্গে যুদ্ধে যেতে পারতেন।

ঠিক একটা বেল্টের মতোই ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা যে-সত্যগুলো শিখি, সেগুলো আমাদের বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা থেকে সুরক্ষিত রাখে। (যোহন ৮:৩১, ৩২; ১ যোহন ৪:১) আর ঈশ্বরের বাক্য থেকে পাওয়া সত্যগুলোকে আমরা যত বেশি করে ভালোবাসতে শিখি, আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা অর্থাৎ আমাদের “বুকপাটা” পরা তত বেশি সহজ হয়ে ওঠে। (গীত. ১১১:৭, ৮; ১ যোহন ৫:৩) এ ছাড়া, আমরা যত ভালোভাবে এই সত্যগুলো বুঝব, আমরা তত ভালোভাবে আমাদের শত্রুদের সামনে এই সত্যগুলোর বিষয়ে উত্তর দিতে বা সেগুলোর পক্ষসমর্থন করতে পারব।—১ পিতর ৩:১৫.

৫. কেন আমাদের সবসময় সত্যি কথা বলা উচিত?

যেহেতু ঈশ্বরের বাক্য থেকে পাওয়া সত্যগুলো আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমরা বাইবেলের কথার বাধ্য হই এবং সবসময় সত্যি কথা বলি। মিথ্যে কথা হল শয়তানের সবচেয়ে সফল অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটা। যে-ব্যক্তি মিথ্যে কথা বলেন ও যে-ব্যক্তি সেই কথা বিশ্বাস করেন, উভয়েরই ক্ষতি হয়। (যোহন ৮:৪৪) তাই, আমরা যদিও সিদ্ধ নই, তারপরও আমরা কখনো মিথ্যে কথা না বলার জন্য যথাসাধ্য করি। (ইফি. ৪:২৫) এমনটা করা কঠিন হতে পারে। ১৮ বছর বয়সি বোন এবিগেল বলেন: “মাঝে মাঝে মনে হতে পারে, সবসময় সত্যি কথা বলে কোনো লাভ নেই, বিশেষভাবে যদি মিথ্যে কথা বলে তুমি কোনো কঠিন সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পার।” তা হলে, কেন তিনি সবসময় সত্যি কথা বলার চেষ্টা করেন? তিনি বলেন: “আমি যখন সত্যি কথা বলি, তখন যিহোবার সামনে আমার এক শুদ্ধ বিবেক থাকে। আর আমার বাবা-মা ও বন্ধুবান্ধবরা জানে যে, তারা আমার উপর আস্থা রাখতে পারে।” ২৩ বছর বয়সি বোন ভিক্টোরিয়া বলেন: “তুমি যদি সত্যি কথা বলো এবং নিজের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করো, তা হলে তোমাকে উত্ত্যক্ত করা হতে পারে। কিন্তু, তুমি সবসময় চমৎকার উপকার পাবে: তুমি আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবে, যিহোবার আরও নিকটবর্তী বোধ করবে এবং যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করবে।” তুমি কি বুঝতে পারছ, কেন ‘সত্যের কটিবন্ধনী’ সবসময় পরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ?

সত্যের কটিবন্ধনী (৩-৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

“ধার্ম্মিকতার বুকপাটা”

৬, ৭. কেন ধার্মিকতাকে একটা বুকপাটার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

একজন রোমীয় সৈনিকের বুকপাটা প্রায়ই লোহার সমতল পাত দিয়ে বানানো হতো, যেগুলোকে এমনভাবে বাঁকানো হতো, যাতে সেটা বুকের উপর পরা যায়। লোহার পাতগুলো ধাতুর তৈরি হুক ও আংটা দিয়ে চামড়ার ফিতের সঙ্গে লাগানো থাকত। সৈনিকের কাঁধের অংশটা লোহার আরও বেশি পাত দিয়ে ঢাকা থাকত আর সেগুলোও চামড়ার টুকরোর সঙ্গে লাগানো থাকত। এই বুকপাটার কারণে তার নড়াচড়া করতে একটু অসুবিধা হতো আর তাকে বার বার দেখতে হতো যে, সেটার পাতগুলো সঠিক জায়গায় আছে কি না। কিন্তু, সেই বুকপাটা তার হৃৎপিণ্ড ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গকে তলোয়ার অথবা তীরের আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখত!

যিহোবার ধার্মিক মানগুলোকে সেই বুকপাটার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেটা আমাদের রূপক হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখে। (হিতো. ৪:২৩) একজন সৈনিক কখনোই লোহার বুকপাটার পরিবর্তে কোনো নরম ধাতুর বুকপাটা পরতেন না। একইভাবে, আমরা কখনোই যা সঠিক, সেই বিষয়ে যিহোবার মানের পরিবর্তে নিজেদের ধারণাগুলো অনুসরণ করব না। সত্যি বলতে কী, আমরা নিজেদের হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখার জন্য যথেষ্ট বিজ্ঞ নই। (হিতো. ৩:৫, ৬) এই কারণে আমাদের অবশ্যই বার বার দেখতে হবে যে, আমাদের “বুকপাটা” আমাদের হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখছে কি না।

৮. কেন আমাদের যিহোবার মানের বাধ্য হওয়া উচিত?

তোমার কি কখনো কখনো মনে হয় যে, যিহোবার মানগুলো তোমার স্বাধীনতাকে কেড়ে নিচ্ছে অথবা তোমার ইচ্ছামতো কাজ করার ক্ষেত্রে তোমাকে বাধা দিচ্ছে? ২১ বছর বয়সি ভাই ড্যানিয়েল বলেন: “আমি যেহেতু বাইবেলের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করি, তাই শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করত। কিছু সময়ের জন্য আমি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি এবং বিষণ্ণ হয়ে পড়ি।” কিন্তু, এখন তিনি কেমন অনুভব করেন? তিনি বলেন: “অবশেষে, আমি যিহোবার মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার উপকারিতা দেখতে পাই। আমার কয়েক জন ‘বন্ধু’ মাদকদ্রব্য সেবন করতে শুরু করে; অন্যেরা আবার পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তাদের জীবনের পরিণতি দেখে আমার দুঃখ হতো। যিহোবা সত্যিই আমাদের সুরক্ষিত রাখেন।” ১৫ বছর বয়সি বোন ম্যাডাসান বলে: “আমার সমবয়সিরা যেগুলোকে আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর বলে মনে করে, সেগুলোর পিছনে না গিয়ে বরং যিহোবার মান অনুযায়ী চলা আমার জন্য অনেক কঠিন।” তাই, তিনি কী করেন? “আমি নিজেকে মনে করিয়ে দিই যে, আমি যিহোবার নাম বহন করি আর প্রলোভন হল আমাকে আক্রমণ করার জন্য কেবল শয়তানের একটা উপায়। আমি যখন কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে জয়ী হই, তখন আমার খুব ভালো লাগে।”

ধার্মিকতার বুকপাটা (৬-৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

‘চরণে শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা’

৯-১১. (ক) খ্রিস্টানরা কোন রূপক জুতো পরে? (খ) কী আমাদের প্রচার করার সময়ে আরও বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

ইফিষীয় ৬:১৫ পদ পড়ুন। একজন রোমীয় সৈনিক তার পাদুকা বা জুতো ছাড়া যুদ্ধে যেতে পারতেন না। সেগুলো চামড়ার তিনটে স্তর দিয়ে তৈরি করা হতো আর তাই, সেগুলো খুব মজবুত হতো। কিন্তু, এই জুতোগুলো আরামদায়কও ছিল, যাতে একজন সৈনিক ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন এবং পা পিছলে পড়ে না যান।

১০ যেখানে রোমীয় সৈনিকদের জুতোগুলো তাদের যুদ্ধে সফল হতে সাহায্য করত, সেখানে আমাদের রূপক জুতোগুলো আমাদের ‘শান্তির সুসমাচার’ প্রচার করতে সাহায্য করে। (যিশা. ৫২:৭; রোমীয় ১০:১৫) তা সত্ত্বেও, কখনো কখনো প্রচার করার জন্য প্রচুর সাহসের প্রয়োজন হয়। ২০ বছর বয়সি ভাই রবার্টো বলেন: “আমি আমার সহপাঠীদের কাছে সাক্ষ্য দিতে ভয় পেতাম। মনে হয়, আমি লজ্জা পেতাম। এখন সেইসময়ের কথা চিন্তা করলে আমি বুঝতে পারি না যে, আমার লজ্জা পাওয়ার কী ছিল। এখন আমি আমার সমবয়সিদের কাছে সাক্ষ্য দিতে পেরে আনন্দিত।”

১১ অনেক অল্পবয়সি খ্রিস্টান এটা দেখেছে যে, তারা যদি আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে, তা হলে তারা প্রচার করার সময়ে আরও বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তুমি কী করতে পার? ১৬ বছর বয়সি বোন জুলিয়া বলে: “আমি স্কুলের ব্যাগে বিভিন্ন সাহিত্য রাখি এবং আমার সহপাঠীরা যখন তাদের মতামত ও বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলে, তখন আমি তা শুনি। এর ফলে আমি চিন্তা করতে পারি যে, কোন বিষয়টা তাদের সাহায্য করবে। আমি যখন প্রস্তুত থাকি, তখন আমি তাদের সঙ্গে নির্দিষ্টভাবে এমন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারি, যেগুলো তাদের উপকৃত করবে।” ২৩ বছর বয়সি বোন মাকেনজি বলেন: “তুমি যদি দয়ালু হও ও একজন উত্তম শ্রোতা হও, তা হলে তুমি এই বিষয়ে একটা ধারণা পাবে যে, তোমার সমবয়সিরা কীসের সঙ্গে লড়াই করছে। আমি এই বিষয়টা নিশ্চিত করি যেন আমি অল্পবয়সিদের জন্য প্রকাশিত সমস্ত বিষয়বস্তু পড়ি। এভাবে আমি আমার সমবয়সিদের বাইবেল অথবা jw.org থেকে এমন কিছু দেখাতে পারি, যেটা তাদের সাহায্য করবে।” প্রচার করার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হল এমন “পাদুকা” বা জুতো পরার মতো, যেগুলো তোমার পায়ের জন্য একেবারে উপযুক্ত।

চরণে শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা (৯-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

“বিশ্বাসের ঢাল”

১২, ১৩. শয়তানের কয়েকটা “অগ্নিবাণ” বা আগুনের তীর কী?

১২ ইফিষীয় ৬:১৬ পদ পড়ুন। একজন রোমীয় সৈনিক একটা বড়ো আয়তাকার ঢাল বহন করতেন। এটা তাকে তার কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখত এবং তলোয়ার, বর্শা ও তীরের আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখত।

১৩ শয়তান তোমার দিকে কোন কোন “অগ্নিবাণ” বা আগুনের তীর ছুড়তে পারে? হতে পারে, সে যিহোবা সম্বন্ধে মিথ্যে কথা বলার মাধ্যমে তোমাকে আক্রমণ করে। শয়তান চায় যেন তুমি এমনটা মনে করো যে, যিহোবা তোমাকে ভালোবাসেন না এবং কেউ তোমার জন্য চিন্তা করে না। ১৯ বছর বয়সি বোন ইডা বলেন: “আমি প্রায়ই মনে করতাম যে, যিহোবা আমার চেয়ে অনেক দূরে রয়েছেন এবং তিনি আমার বন্ধু হতে চান না।” তিনি যখন এমনটা মনে করেন, তখন তিনি কী করেন? “সভাগুলো আমার বিশ্বাসকে প্রচুররূপে বাড়িয়ে তোলে। আগে আমি সভায় গিয়ে এই ভেবে কোনো মন্তব্য না করে চুপচাপ বসে থাকতাম যে, কেউই আমার কথা শুনতে আগ্রহী হবে না। কিন্তু, এখন আমি সভাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিই এবং দুটো থেকে তিনটে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। এমনটা করা সহজ নয় কিন্তু আমি যখন তা করি, তখন আমার ভালো লাগে। আর ভাই-বোনেরা আমাকে অনেক উৎসাহ দেয়। আমি প্রতি বার সভার শেষে ফিরে আসার সময়ে অনুভব করি যে, যিহোবা আমাকে ভালোবাসেন।”

১৪. বোন ইডার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখি?

১৪ একজন সৈনিকের ঢালের আকার সবসময় একই থাকে। কিন্তু, আমরা বোন ইডার অভিজ্ঞতা থেকে যেমন শিখলাম, আমাদের বিশ্বাস সবসময় একইরকম থাকে না। আমাদের বিশ্বাস বাড়তে পারে কিংবা কমতে পারে, শক্তিশালী হতে পারে কিংবা দুর্বল হতে পারে। বাছাইটা আমাদেরই করতে হবে। (মথি ১৪:৩১; ২ থিষল. ১:৩) আমরা যদি চাই যে, আমাদের ‘বিশ্বাসের ঢাল’ আমাদের সুরক্ষিত রাখুক, তা হলে আমাদের অবশ্যই ক্রমাগত এটাকে বাড়াতে হবে ও শক্তিশালী করতে হবে!

বিশ্বাসের ঢাল (১২-১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

“পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ”

১৫, ১৬. কীভাবে আমাদের আশা একটা হেলমেটের মতো?

১৫ ইফিষীয় ৬:১৭ পদ পড়ুন। একজন রোমীয় সৈনিক তার মাথা, ঘাড় ও মুখকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটা শিরস্ত্রাণ বা হেলমেট পরতেন। কখনো কখনো সেই হেলমেটে একটা হাতল লাগানো থাকত, যাতে তিনি সেটাকে হাতে করে নিয়ে যেতে পারেন।

১৬ ঠিক যেমন একটা হেলমেট সৈনিকের মগজকে সুরক্ষিত রাখত, তেমনই আমাদের ‘পরিত্রাণের আশা’ আমাদের পরিণামদর্শিতা বা চিন্তা করার ক্ষমতাকে সুরক্ষিত রাখে। (১ থিষল. ৫:৮; হিতো. ৩:২১) আশা আমাদের সমস্যাগুলোর কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে না গিয়ে বরং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করে। (গীত. ২৭:১, ১৪; প্রেরিত ২৪:১৫) কিন্তু আমরা যদি চাই যে, আমাদের আশা আমাদের সুরক্ষিত রাখুক, তা হলে সেটা আমাদের কাছে এক বাস্তব বিষয় হতে হবে। আমাদের নিজেদের “শিরস্ত্রাণ” বা হেলমেট হাতে করে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অবশ্যই মাথায় পরতে হবে!

১৭, ১৮. (ক) কীভাবে শয়তান আমাদের হেলমেট খুলে ফেলার জন্য প্ররোচিত করতে পারে? (খ) কীভাবে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে, আমরা শয়তানের ফাঁদে পা দিইনি?

১৭ কীভাবে শয়তান আমাদের হেলমেট খুলে ফেলার জন্য প্ররোচিত করতে পারে? চিন্তা করো, সে যিশুর প্রতি কী করার চেষ্টা করেছিল। শয়তান জানত, যিশু মানবজাতির শাসক হবেন। কিন্তু, তার আগে যিশুকে কষ্ট ভোগ করতে হবে এবং মারা যেতে হবে। আর তারপর, যিহোবার নিরূপিত সময় না আসা পর্যন্ত যিশুকে রাজা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাই, শয়তান তাঁকে অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি শাসন শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। শয়তান প্রতিজ্ঞা করেছিল, যিশু যদি একবার তার উপাসনা করেন, তা হলে যিশু তৎক্ষণাৎ জগতের শাসক হয়ে যেতে পারবেন। (লূক ৪:৫-৭) একইভাবে শয়তান এও জানে, যিহোবা আমাদের নতুন জগতে চমৎকার বিষয়গুলো প্রদান করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। কিন্তু, সেই প্রতিজ্ঞা বাস্তবে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং এই অপেক্ষার সময়ে আমাদের হয়তো অনেক সমস্যা ভোগ করতে হবে। তাই, শয়তান আমাদের এখনই এক আরামদায়ক জীবন উপভোগ করার প্রস্তাব দেয়। সে চায় যেন আমরা নিজেদের আরামআয়েশকে প্রথম স্থান দিই এবং ঈশ্বরের রাজ্যকে দ্বিতীয় স্থান দিই।—মথি ৬:৩১-৩৩.

১৮ অনেক অল্পবয়সি খ্রিস্টান শয়তানের ফাঁদে পা দেয়নি। উদাহরণ স্বরূপ, ২০ বছর বয়সি বোন কারিনা বলেন: “আমি জানি আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধানের একমাত্র আশা হল ঈশ্বরের রাজ্য।” কীভাবে তার আশা তার চিন্তাভাবনা ও জীবনযাপনের উপর প্রভাব ফেলে? এটা তাকে মনে রাখতে সাহায্য করে যে, এই জগতের বিষয়গুলো ক্ষণস্থায়ী। এই বিধিব্যবস্থায় একটা কেরিয়ার গড়ে তোলার পিছনে তার সমস্ত সময় ও শক্তি ব্যয় করার পরিবর্তে বোন কারিনা সেগুলো যিহোবার সেবা করার জন্য ব্যবহার করছেন।

পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ (১৫-১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

“আত্মার খড়্গ” ঈশ্বরের বাক্য

১৯, ২০. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করায় আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারি?

১৯ রোমীয় সৈনিকরা যে-খড়্গ বা তলোয়ার ব্যবহার করত, সেটা প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) লম্বা হতো। সেই সৈনিকরা তলোয়ার ব্যবহার করায় খুবই দক্ষ ছিল কারণ তারা প্রতিদিন সেটা ব্যবহার করে অনুশীলন করত।

২০ প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের বাক্য হল একটা তলোয়ারের মতো। যিহোবা এটা আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু, আমাদের বিশ্বাসের পক্ষসমর্থন করার অথবা আমাদের চিন্তাভাবনা রদবদল করার জন্য আমাদের অবশ্যই এটিকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা শিখতে হবে। (২ করি. ১০:৪, ৫; ২ তীম. ২:১৫) কীভাবে তুমি তোমার দক্ষতাগুলোকে আরও বাড়াতে পার? ২১ বছর বয়সি ভাই সেবাসটিয়ান বলেন: “আমি বাইবেল পড়ার সময়ে প্রতিটা অধ্যায় থেকে একটা করে শাস্ত্রপদ লিখে রাখি। আমি আমার প্রিয় শাস্ত্রপদগুলোর একটা তালিকা বানাচ্ছি।” এটা তাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে যে, যিহোবা কীভাবে চিন্তা করেন। ভাই ড্যানিয়েল আরও বলেন: “আমি বাইবেল পড়ার সময়ে এমন শাস্ত্রপদগুলো বাছাই করি, যেগুলো সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে, যাদের সঙ্গে পরিচর্যায় আমার দেখা হয়। আমি লক্ষ করেছি, লোকেরা সেইসময় ভালো প্রতিক্রিয়া দেখায়, যখন তারা দেখে যে, বাইবেলের উপর তোমার গভীর বিশ্বাস রয়েছে এবং তুমি তাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করছ।”

আত্মার খড়্গ (১৯-২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

২১. কেন আমাদের শয়তান ও মন্দদূতদের ভয় পাওয়া উচিত নয়?

২১ আমরা এই প্রবন্ধে উল্লেখিত অল্পবয়সিদের উদাহরণ থেকে যেমন শিখলাম, আমাদের শয়তান ও মন্দদূতদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা ঠিক যে, তারা শক্তিশালী কিন্তু তারা যিহোবার চেয়ে বেশি শক্তিশালী নয়। আর তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে না। খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে তাদের বন্দিত্বে রাখা হবে এবং তারা কারো ক্ষতি করতে পারবে না আর তারপর, তাদের ধ্বংস করা হবে। (প্রকা. ২০:১-৩, ৭-১০) আমরা আমাদের শত্রু, তার ফাঁদগুলো ও তার লক্ষ্য সম্বন্ধে জানি। যিহোবার সাহায্যে আমরা তার বিরুদ্ধে অটল থাকতে পারি!