সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন

পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন

কেন যিশুর প্রাথমিক জীবন সম্বন্ধে মথি ও লূকের বিবরণে পার্থক্য লক্ষ করা যায়?

যিশুর জন্ম ও প্রাথমিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনাগুলো সম্বন্ধে মথি ও লূকের বিবরণের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে কারণ সুসমাচারের বইয়ের এই দু-জন লেখক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন।

মথির বিবরণ যোষেফের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনাগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। এই বিবরণে বর্ণনা করা হয়েছে, যোষেফ সেইসময় কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যখন তিনি প্রথম বার মরিয়মের গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন, কীভাবে একজন স্বর্গদূত স্বপ্নের মাধ্যমে তার কাছে সেই পরিস্থিতির বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং কীভাবে যোষেফ সেই ব্যাখ্যাটা মেনে নিয়েছিলেন। (মথি ১:১৯-২৫) এ ছাড়া, এই বিবরণে আরও বর্ণনা করা হয়েছে, কীভাবে একজন স্বর্গদূত স্বপ্নের মাধ্যমে যোষেফকে তার পরিবারের সঙ্গে মিশরে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন এবং কীভাবে তিনি সেই কথার বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর, মথি আমাদের বলেন যে, যোষেফ আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে একজন স্বর্গদূত তাকে ইস্রায়েলে ফিরে যেতে বলেছিলেন এবং তিনি ফিরে গিয়ে সপরিবারে নাসরতে বাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। (মথি ২:১৩, ১৪, ১৯-২৩) মথির সুসমাচারের বইয়ের প্রথম দুটো অধ্যায়ে যোষেফের নাম ন-বার উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু মরিয়মের নাম কেবল পাঁচ বার উল্লেখ করা হয়েছে।

অপর দিকে, লূকের বিবরণ মরিয়মের উপর আরও বেশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। এই বিবরণে মরিয়মের সঙ্গে গাব্রিয়েল দূতের সাক্ষাৎ, তার আত্মীয়া ইলীশাবেতের সঙ্গে মরিয়মের সাক্ষাৎ এবং যিহোবার প্রশংসার্থে বলা মরিয়মের অভিব্যক্তিগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে। (লূক ১:২৬-৫৬) এ ছাড়া এই বিবরণে, ভবিষ্যতে যিশু যে-কষ্ট ভোগ করবেন, সেই বিষয়ে শিমিয়োন মরিয়মকে যা বলেছিলেন, সেটা সম্বন্ধেও বর্ণনা করা হয়েছে। লূক এমনকী, যিশুর ১২ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে মন্দিরে যাওয়ার বিবরণেও যোষেফের কথা নয় বরং মরিয়মের কথা উদ্ধৃতি করেন। লূক আরও বলেন যে, মরিয়ম এই ঘটনাগুলোর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। (লূক ২:১৯, ৩৪, ৩৫, ৪৮, ৫১) লূকের সুসমাচারের বইয়ের প্রথম দুটো অধ্যায়ে মরিয়মের নাম ১৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু যোষেফের নাম কেবল ৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে। তাই, মথি যোষেফের উদ্‌বেগ ও কাজ সম্বন্ধে বেশি উল্লেখ করেছেন আর অন্যদিকে লূক মরিয়মের ভূমিকা ও অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বেশি তথ্য দিয়েছেন।

একইভাবে, সুসমাচারের বইয়ের এই দু-জন লেখকের দ্বারা উল্লেখিত বংশতালিকার মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। মথি যোষেফের পূর্বপুরুষদের বিষয়ে বর্ণনা করেন এবং দেখান যে, যোষেফের দত্তক পুত্র হিসেবে যিশু দায়ূদের রাজপদ লাভ করার জন্য বৈধ উত্তরাধিকারী ছিলেন। কেন? কারণ যোষেফ, দায়ূদের ছেলে শলোমনের বংশের মাধ্যমে রাজা দায়ূদের একজন বংশধর ছিলেন। (মথি ১:৬, ১৬) কিন্তু, লূক মরিয়মের পূর্বপুরুষদের বিষয়ে বর্ণনা করেন এবং দেখান যে, যিশু “মাংসের সম্বন্ধে” দায়ূদের রাজপদ লাভ করার জন্য জন্মসূত্রে উত্তরাধিকারী ছিলেন। (রোমীয় ১:৩) কেন? কারণ মরিয়ম, দায়ূদের ছেলে নাথনের বংশের মাধ্যমে রাজা দায়ূদের একজন বংশধর ছিলেন। (লূক ৩:৩১) কিন্তু, কেন লূক তার বিবরণে উল্লেখিত বংশতালিকায়, মরিয়মকে তার পিতা এলির কন্যা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেননি? কারণ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বংশতালিকা লেখার সময় সাধারণত পুরুষদের নাম উল্লেখ করা হতো। তাই, লূক যখন যোষেফের নাম তালিকাভুক্ত করেন এবং তাকে এলির পুত্র হিসেবে বর্ণনা করেন, তখন তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে, যোষেফ হলেন এলির জামাই।—লূক ৩:২৩.

মথি ও লূকের দ্বারা লিখিত বংশতালিকাগুলো স্পষ্টভাবে এই বিষয়টা প্রমাণ করে যে, যিশুই ছিলেন ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত মশীহ। যিশু যে রাজা দায়ূদের একজন বংশধর ছিলেন, এই বিষয়টা সম্বন্ধে লোকেরা এত ভালোভাবে জানত যে, এমনকী ফরীশী ও সদ্দূকীরাও এটার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি। বর্তমানে, মথি ও লূক উভয়ের দ্বারা লিখিত বংশতালিকাগুলো আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তির একটা অংশ এবং ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো যে পূর্ণ হবেই, সেই বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করে।