সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উৎসাহ প্রদানকারী ঈশ্বর যিহোবাকে অনুকরণ করুন

উৎসাহ প্রদানকারী ঈশ্বর যিহোবাকে অনুকরণ করুন

“ধন্য আমাদের . . . ঈশ্বর; তিনি আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা [“উৎসাহিত,” পাদটীকা, NW] করেন।”—২ করি. ১:৩, ৪.

গান সংখ্যা: ২৩, 

১. আদম ও হবা যখন বিদ্রোহ করেছিলেন, তখন কীভাবে যিহোবা মানবজাতিকে উৎসাহ ও আশা প্রদান করেছিলেন?

যিহোবা হলেন এমন একজন ঈশ্বর, যিনি উৎসাহ প্রদান করেন। যখন থেকে মানুষ পাপ করেছে ও অসিদ্ধ হয়েছে, তখন থেকেই তিনি এমনটা করে আসছেন। সত্যি বলতে কী, আদম ও হবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পর পরই, তিনি এমন একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যেটার অর্থ ভবিষ্যতে পৃথিবীতে আসা মানুষরা যখন বুঝতে পারবে, তখন তারা সাহস ও আশা লাভ করবে। আমরা এই ভবিষ্যদ্‌বাণী আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে পাই আর এটা প্রতিজ্ঞা করে, শয়তান দিয়াবল ও তার সমস্ত মন্দ কাজকে ধ্বংস করা হবে।—১ যোহন ৩:৮; প্রকা. ১২:৯.

যিহোবা অতীতে তাঁর দাসদের উৎসাহিত করেছিলেন

২. কীভাবে যিহোবা নোহকে উৎসাহিত করেছিলেন?

চিন্তা করুন, কীভাবে যিহোবা তাঁর দাস নোহকে উৎসাহিত করেছিলেন। তার সময়ের লোকেরা দৌরাত্ম্যপ্রিয় ও অনৈতিক ছিল এবং একমাত্র নোহ ও তার পরিবার যিহোবার উপাসনা করতেন। নোহ নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারতেন। (আদি. ৬:৪, ৫, ১১; যিহূদা ৬) কিন্তু, যিহোবা নোহকে প্রয়োজনীয় সাহস প্রদান করেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর উপাসনা ও সেইসঙ্গে যা সঠিক, তা করে যেতে পারেন। (আদি. ৬:৯) যিহোবা নোহকে বলেছিলেন, তিনি সেই মন্দ জগৎকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন এবং তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, নোহের পরিবার যাতে রক্ষা পেতে পারে, সেই জন্য নোহকে কী করতে হবে। (আদি. ৬:১৩-১৮) যিহোবা নোহের জন্য উৎসাহের একজন ঈশ্বর ছিলেন।

৩. কীভাবে যিহোবা যিহোশূয়কে উৎসাহিত করেছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

পরবর্তী সময়ে, যিহোবা তাঁর দাস যিহোশূয়কে উৎসাহিত করেছিলেন, যার সামনে এক বিশাল কাজের দায়িত্ব ছিল। তাকে ঈশ্বরের লোকেদের নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার এবং সেখানকার বিভিন্ন জাতির শক্তিশালী সৈন্যদের পরাজিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যিহোবা জানতেন, যিহোশূয়ের ভয় পাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে আর তাই, তিনি মোশিকে বলেছিলেন: “তুমি যিহোশূয়কে আজ্ঞা কর, তাহাকে আশ্বাস” বা উৎসাহ “দেও, এবং তাহাকে বীর্য্যবান্‌ কর, কেননা সে এই লোকদের অগ্রগামী হইয়া পার হইবে, আর যে দেশ তুমি দেখিবে, সেই দেশ সে তাহাদিগকে অধিকার করাইবে।” (দ্বিতীয়. ৩:২৮) তারপর, যিহোবা নিজে যিহোশূয়কে উৎসাহিত করার জন্য বলেছিলেন: “আমি কি তোমাকে আজ্ঞা দিই নাই? তুমি বলবান হও ও সাহস কর, মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ হইও না; কেননা তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।” (যিহো. ১:১, ৯) কী মনে হয়, এই কথাগুলো শুনে যিহোশূয়ের কেমন লেগেছিল?

৪, ৫. (ক) কীভাবে যিহোবা অতীতে তাঁর লোকেদের উৎসাহিত করেছিলেন? (খ) কীভাবে যিহোবা তাঁর পুত্রকে উৎসাহিত করেছিলেন?

যিহোবা তাঁর লোকেদের একটা দল হিসেবেও উৎসাহিত করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ যিহোবা জানতেন, বাবিলে বন্দিত্বে থাকার সময় যিহুদিদের উৎসাহের প্রয়োজন হবে আর তাই, তিনি এই বলে তাদের এক উৎসাহজনক ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রদান করেছিলেন: “ভয় করিও না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; ব্যাকুল হইও না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব; আমি আপন ধর্ম্মশীলতার দক্ষিণ হস্ত দ্বারা তোমাকে ধরিয়া রাখিব।” (যিশা. ৪১:১০) পরবর্তী সময়ে, তিনি প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন এবং তিনি আমাদেরও একইভাবে উৎসাহিত করেন।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:৩, ৪.

যিহোবা তাঁর পুত্রকেও উৎসাহিত করেছিলেন। বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর যিশু স্বর্গ থেকে এই কথাগুলো শুনেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৭) আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, এই কথাগুলো যিশুর পার্থিব পরিচর্যার সময় তাঁকে কতটা শক্তিশালী করেছিল?

যিশু অন্যদের উৎসাহিত করেছিলেন

৬. কীভাবে যিশুর বলা তালন্তের দৃষ্টান্ত আমাদের উৎসাহিত করতে পারে?

যিশু অন্যদের বিশ্বস্ত থাকার জন্য উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন। তিনি তালন্তের দৃষ্টান্তে এমনটা করেছিলেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, সেই প্রভু তার প্রতিটা বিশ্বস্ত দাসকে বলেছিলেন: “বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস; তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে, আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করিব; তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও।” (মথি ২৫:২১, ২৩) এই কথাগুলো তাঁর শিষ্যদের বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল!

৭. কীভাবে যিশু তাঁর প্রেরিতদের, বিশেষ করে পিতরকে উৎসাহিত করেছিলেন?

এমনকী যদিও প্রেরিতরা প্রায়ই এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক করতেন যে, তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, কিন্তু যিশু সবসময় তাদের প্রতি ধৈর্য দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদের অন্যদের কাছ থেকে সেবা পেতে চাওয়ার পরিবর্তে বরং নম্র হওয়ার ও অন্যদের সেবা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। (লূক ২২:২৪-২৬) পিতর একাধিক বার ভুল করেছিলেন এবং যিশুকে হতাশ করেছিলেন। (মথি ১৬:২১-২৩; ২৬:৩১-৩৫, ৭৫) কিন্তু, যিশু কখনো পিতরকে প্রত্যাখ্যান করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি পিতরকে উৎসাহিত করেছিলেন আর এমনকী তাকে অন্যদের শক্তিশালী করার কার্যভার দিয়েছিলেন।—যোহন ২১:১৬.

প্রাচীন কালের ব্যক্তিরা অন্যদের উৎসাহিত করেছিলেন

৮. কীভাবে হিষ্কিয় যিহূদার সেনাপতিদের ও লোকেদের উৎসাহিত করেছিলেন?

যিহোবার দাসেরা এমনকী অনুসরণের জন্য যিশুর উদাহরণ পাওয়ার আগেই জানত যে, তাদের অন্যদের উৎসাহিত করার প্রয়োজন রয়েছে। হিষ্কিয়ের কথা চিন্তা করুন। অশূরীয়রা যখন যিরূশালেমকে আক্রমণ করতে যাচ্ছিল, তখন হিষ্কিয় তার সেনাপতিদের ও লোকেদের উৎসাহিত করার জন্য একত্রিত করেছিলেন আর এর ফলে, তারা ‘তার বাক্যে নির্ভর করিয়াছিল’ বা তার কথা শুনে শক্তিশালী হয়েছিল।—পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩২:৬-৮.

৯. আমরা অন্যদের উৎসাহ প্রদান করার বিষয়ে ইয়োবের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

এ ছাড়া, আমরা উৎসাহ প্রদান করার বিষয়ে ইয়োবের কাছ থেকে শিখতে পারি। যদিও তার নিজেরই উৎসাহের প্রয়োজন ছিল কিন্তু তিনি অন্যদের শিখিয়েছিলেন যে, কীভাবে উৎসাহ প্রদান করতে হয়। যে-ব্যক্তিরা ইয়োবকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন, তাদের তিনি বলেছিলেন, তিনি যদি তাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে চাইতেন, তা হলে তিনি তাদের কষ্টদায়ক কথা না বলে বরং এমন কথা বলতেন, যেটা তাদের শক্তিশালী করত এবং যেটা শুনে তাদের ভালো লাগত। (ইয়োব ১৬:১-৫) কিন্তু পরিশেষে, ইয়োব ইলীহূ ও স্বয়ং যিহোবার কাছ থেকে উৎসাহ লাভ করেছিলেন।—ইয়োব ৩৩:২৪, ২৫; ৩৬:১, ১১; ৪২:৭, ১০.

১০, ১১. (ক) কেন যিপ্তহের মেয়ের উৎসাহের প্রয়োজন হয়েছিল? (খ) বর্তমানে আমরা কাদের উৎসাহিত করতে পারি?

১০ যিপ্তহের মেয়েরও উৎসাহের প্রয়োজন হয়েছিল। তার বাবা, বিচারক যিপ্তহ অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন। যিপ্তহ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যিহোবা যদি তাকে সেই যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেন, তা হলে তিনি যখন বাড়ি ফিরে আসবেন, তখন যে-ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রথমে বেরিয়ে আসবেন, তিনি যিহোবার সেবা করার জন্য আবাসে চলে যাবেন। ইস্রায়েল সেই যুদ্ধে জয় লাভ করেছিল এবং যিপ্তহ যখন বাড়ি ফিরে এসেছিলেন, তখন যে-ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রথমে বেরিয়ে এসেছিলেন, তিনি ছিলেন তার একমাত্র সন্তান, তার মেয়ে। যিপ্তহের হৃদয় দুঃখে ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু, তিনি তার প্রতিজ্ঞা রেখেছিলেন এবং তার মেয়েকে তার বাকি জীবন আবাসে সেবা করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।—বিচার. ১১:৩০-৩৫.

১১ যদিও এমনটা করা যিপ্তহের জন্য কঠিন ছিল কিন্তু এটা নিশ্চয়ই তার মেয়ের জন্য আরও কঠিন এক বিষয় ছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি তার বাবার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। (বিচার. ১১:৩৬, ৩৭) এর অর্থ ছিল, তিনি কখনো বিয়ে করবেন না অথবা সন্তানের জন্ম দেবেন না। তাদের বংশ সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। তাই, তার প্রচুর সান্ত্বনা ও উৎসাহের প্রয়োজন হয়েছিল। বাইবেল বলে: “ইস্রায়েলের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত হইল যে, বৎসর বৎসর গিলিয়দীয় যিপ্তহের কন্যার যশঃকীর্ত্তন” বা প্রশংসা “করিতে ইস্রায়েলীয় কন্যাগণ বৎসরের মধ্যে চারি দিবস গমন করে।” (বিচার. ১১:৩৯, ৪০) যিপ্তহের মেয়ের বিবরণ আমাদের বর্তমানের সেই খ্রিস্টানদের কথা মনে করিয়ে দেয়, যারা যিহোবার সেবায় আরও বেশি করার জন্য অবিবাহিত থাকা বেছে নেয়। আমরা কি তাদের প্রশংসা করতে ও উৎসাহিত করতে পারি?—১ করি. ৭:৩২-৩৫.

প্রেরিতরা তাদের ভাইদের উৎসাহিত করেছিলেন

১২, ১৩. কীভাবে পিতর ‘তাহার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিয়াছিলেন’?

১২ যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে প্রেরিত পিতরকে বলেছিলেন: “শিমোন, শিমোন, দেখ, গোমের ন্যায় চালিবার জন্য শয়তান তোমাদিগকে আপনার বলিয়া চাহিয়াছে; কিন্তু আমি তোমার নিমিত্ত বিনতি করিয়াছি, যেন তোমার বিশ্বাসের লোপ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরিলে পর তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিও।”—লূক ২২:৩১, ৩২.

প্রেরিতদের চিঠিগুলো প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিল এবং সেগুলো বর্তমানেও আমাদের উৎসাহিত করে (১২-১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৩ পিতর ছিলেন সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যারা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। (গালা. ২:৯) তিনি পঞ্চাশত্তমীর দিনে ও সেটার পরবর্তী সময়ে তার সাহসী কাজগুলোর মাধ্যমে ভাইদের উৎসাহিত করেছিলেন। অনেক বছর ধরে সেবা করার পর তিনি ভাইদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমি . . . সংক্ষেপে তোমাদিগকে লিখিয়া প্রবোধ” বা উৎসাহ “দিলাম, এবং ইহা যে ঈশ্বরের সত্য অনুগ্রহ, এমন সাক্ষ্যও দিলাম; তোমরা ইহাতে স্থির থাক।” (১ পিতর ৫:১২) পিতরের চিঠিগুলো তার দিনের খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিল। আর সেগুলো বর্তমানে আমাদেরও উৎসাহিত করে, যখন আমরা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।—২ পিতর ৩:১৩.

১৪, ১৫. কীভাবে প্রেরিত যোহনের লেখা বাইবেলের বইগুলো আমাদের উৎসাহিত করে?

১৪ প্রেরিত যোহনও ছিলেন সেই ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যারা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। তিনি যিশুর পরিচর্যার বিষয়ে এক রোমাঞ্চকর সুসমাচারের বিবরণ লিখেছিলেন। বাইবেলের এই বইটা শত শত বছর ধরে খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করে এসেছে এবং বর্তমান সময়েও, এটা আমাদের উৎসাহিত করে যাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ, একমাত্র যোহনের বিবরণেই আমরা যিশুর এই কথাগুলো পাই যে, প্রেমই হল সেই গুণ, যেটা তাঁর প্রকৃত শিষ্যদের শনাক্ত করে।—পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.

১৫ যোহনের লেখা তিনটে চিঠিতেও মূল্যবান সত্য রয়েছে। আমরা যখন আমাদের ভুলগুলোর কারণে নিরুৎসাহিত বোধ করি, তখন আমরা এটা পড়ে স্বস্তি লাভ করি যে, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান “আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে।” (১ যোহন ১:৭) আর আমরা যদি নিজেদের দোষী বলে মনে করতেই থাকি, তা হলে আমরা এটা পড়ে সান্ত্বনা লাভ করব, “ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌।” (১ যোহন ৩:২০) যোহন হলেন সেই একমাত্র বাইবেল লেখক, যিনি লিখেছিলেন, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮, ১৬) তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় চিঠি সেই খ্রিস্টানদের প্রশংসা করে, যারা ‘সত্যে চলে।’—২ যোহন ৪; ৩ যোহন ৩, ৪.

১৬, ১৭. কীভাবে প্রেরিত পৌল প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন?

১৬ প্রেরিত পৌল ছিলেন সেই ব্যক্তিদের মধ্যে এক চমৎকার উদাহরণ, যারা ভাইদের উৎসাহিত করেছিল। যিশুর মৃত্যুর অল্পসময় পরই, বেশিরভাগ প্রেরিত যিরূশালেমে বাস করতেন, যেখানে পরিচালকগোষ্ঠী ছিল। (প্রেরিত ৮:১৪; ১৫:২) যিহূদিয়ার খ্রিস্টানরা এমন লোকেদের কাছে খ্রিস্টের বিষয়ে প্রচার করত, যারা ইতিমধ্যেই একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করত। কিন্তু, পবিত্র আত্মা পৌলকে গ্রিক, রোমীয় ও অন্যান্য লোকেদের কাছে প্রচার করতে পাঠিয়েছিল, যারা অনেক ঈশ্বরের উপাসনা করত।—গালা. ২:৭-৯; ১ তীম. ২:৭.

১৭ পৌল সেই এলাকায় ভ্রমণ করেছিলেন, যেটা বর্তমানে তুরস্ক নামে পরিচিত আর সেইসঙ্গে তিনি গ্রিস ও ইতালিতেও ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি সেই এলাকাগুলোতে বসবাসরত ন-যিহুদিদের কাছে প্রচার করেছিলেন এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীগুলো গঠন করেছিলেন। সেই নতুন খ্রিস্টানদের জন্য জীবন সহজ ছিল না। তাদের স্বজাতীয় লোকেরাই তাদের তাড়না করেছিল আর তাই, তাদের উৎসাহের প্রয়োজন হয়েছিল। (১ থিষল. ২:১৪) প্রায় ৫০ খ্রিস্টাব্দে, পৌল থিষলনীকীতে গঠিত নতুন মণ্ডলীর উদ্দেশে এক উৎসাহজনক চিঠি লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা প্রার্থনাকালে তোমাদের নাম উল্লেখ করিয়া তোমাদের সকলের নিমিত্ত সতত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি; আমরা তোমাদের বিশ্বাসের কার্য্য, প্রেমের পরিশ্রম ও . . . ধৈর্য্য . . . অবিরত স্মরণ করিয়া থাকি।” (১ থিষল. ১:২, ৩) এ ছাড়া, তিনি তাদের একে অপরকে শক্তিশালী করতে বলেছিলেন এবং লিখেছিলেন: “পরস্পরকে আশ্বাস” বা উৎসাহ “দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল।”—১ থিষল. ৫:১১.

পরিচালকগোষ্ঠী অন্যদের উৎসাহিত করে

১৮. কীভাবে প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠী ফিলিপকে উৎসাহিত করেছিল?

১৮ প্রথম শতাব্দীতে যিহোবা পরিচালকগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে সমস্ত খ্রিস্টানকে উৎসাহিত করেছিলেন, যাদের মধ্যে মণ্ডলীতে নেতৃত্ব নিয়ে থাকে, এমন ভাইয়েরাও ছিলেন। ফিলিপ যখন শমরীয়দের কাছে খ্রিস্টের বিষয়ে প্রচার করেছিলেন, তখন পরিচালকগোষ্ঠী তাকে সাহায্য করেছিল। তারা তাদের দু-জন সদস্যকে, পিতর ও যোহনকে, সেই নতুন খ্রিস্টানদের জন্য প্রার্থনা করতে পাঠিয়েছিল, যাতে তারা পবিত্র আত্মা লাভ করতে পারে। (প্রেরিত ৮:৫, ১৪-১৭) ফিলিপ ও সেই নতুন ভাই-বোনেরা পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে সাহায্য লাভ করে অনেক উৎসাহিত হয়েছিলেন!

১৯. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা যখন পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে চিঠি পেয়েছিল, তখন তারা কেমন অনুভব করেছিল?

১৯ পরবর্তী সময়ে, পরিচালকগোষ্ঠীকে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের কি ত্বকচ্ছেদ করার প্রয়োজন রয়েছে, যেমনটা যিহুদিরা মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী করত? (প্রেরিত ১৫:১, ২) পরিচালকগোষ্ঠী পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করার এবং শাস্ত্র থেকে যুক্তি করার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ত্বকচ্ছেদ করার আর প্রয়োজন নেই। এরপর, তারা তাদের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে একটা চিঠি লিখেছিল এবং সেটা ভাইদের হাত দিয়ে মণ্ডলীগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। খ্রিস্টানরা যখন সেই চিঠি পড়েছিল, তখন “তাহারা সেই আশ্বাসের” বা উৎসাহের “কথায় আনন্দিত হইল।”—প্রেরিত ১৫:২৭-৩২.

২০. (ক) কীভাবে বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী আমাদের সবাইকে উৎসাহিত করে? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করব?

২০ বর্তমানে, যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী বেথেলকর্মী, ক্ষেত্রের বিশেষ পূর্ণসময়ের দাস এবং আমাদের সবাইকে উৎসাহ প্রদান করে। প্রথম শতাব্দীর সেই ভাইদের মতো আমরাও তাদের কাছ থেকে উৎসাহ লাভ করে আনন্দিত হই! এ ছাড়া, যারা সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছে, তাদের ফিরে আসতে উৎসাহিত করার জন্য ২০১৫ সালে পরিচালকগোষ্ঠী যিহোবার কাছে ফিরে আসুন  শিরোনামের ব্রোশারটা জুগিয়েছিল। কিন্তু, যে-ভাইয়েরা নেতৃত্ব নেয়, কেবল তাদেরই কি অন্যদের উৎসাহিত করা উচিত, না কি আমাদের সবারই তা করা উচিত? আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করব।