সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্মরণার্থ সভা ঈশ্বরের লোকেদের একতাবদ্ধ করে

স্মরণার্থ সভা ঈশ্বরের লোকেদের একতাবদ্ধ করে

“ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে!”—গীত. ১৩৩:১.

গান সংখ্যা: ৫, ৩০

১, ২. দু-হাজার আঠারো সালে কোন অনুষ্ঠান আমাদের এক অদ্বিতীয় উপায়ে একতাবদ্ধ করবে এবং কেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

দু-হাজার আঠারো সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি এমন একটা অনুষ্ঠানে যোগ দেবে, যেটা বছরে কেবল এক বারই অনুষ্ঠিত হয়। সেই দিন সূর্যাস্তের পর যিহোবার সাক্ষিরা ও সেইসঙ্গে অন্যান্য ব্যক্তিরা যিশুর সেই বলিদান স্মরণ করার জন্য একত্রিত হবে, যা তিনি আমাদের জন্য দিয়েছিলেন। প্রতি বছর, পৃথিবীর অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানের চেয়ে খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ সভা লোকেদের এক চমৎকার উপায়ে আরও বেশি একতাবদ্ধ করে।

যিহোবা ও যিশু যখন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে সারা বিশ্বে একের পর এক সেই বিশেষ অনুষ্ঠানে যেতে দেখেন, তখন তারা সত্যিই আনন্দিত হন। বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করে, “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, [যাহা] গণনা করিতে সমর্থ কেহ [হবে না],” চিৎকার করে বলবে: “পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।” (প্রকা. ৭:৯, ১০) এটা সত্যিই চমৎকার যে, প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যিহোবা ও যিশুকে তাঁদের মহৎ কাজগুলোর জন্য সম্মানিত করে!

৩. এই প্রবন্ধে আপনি কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবেন?

এই প্রবন্ধে আপনি চারটে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন: (১) কীভাবে আমি স্মরণার্থ সভার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি যেন সেখান থেকে সত্যিই উপকৃত হতে পারি? (২) কোন কোন উপায়ে স্মরণার্থ সভা ঈশ্বরের সমস্ত লোককে একতাবদ্ধ হতে সাহায্য করে? (৩) কীভাবে আমি ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে একতা বৃদ্ধি করতে পারি? (৪) কখনো কি শেষ বারের মতো স্মরণার্থ সভা অনুষ্ঠিত হবে? যদি হয়, তা হলে সেটা কখন হবে?

কীভাবে আমরা স্মরণার্থ সভার জন্য প্রস্তুতি নিতে ও সেখানে উপস্থিত থেকে উপকৃত হতে পারি?

৪. কেন আমাদের জন্য স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

কেন আমাদের জন্য স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ? এর একটা কারণ বিবেচনা করুন। সভায় উপস্থিত হওয়া হল যিহোবার উপাসনা করার একটা উপায়। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা ও যিশু এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে লক্ষ করেন, যিনি বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেন। আমরা যিহোবা ও যিশুকে দেখাতে চাই যে, আমরা স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হব, যদি না সেটা করা আমাদের পক্ষে একেবারে অসম্ভব হয়। আমাদের কাজগুলো যখন প্রমাণ করে যে, সভায় উপস্থিত হওয়া আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তখন আমরা যিহোবাকে তাঁর ‘স্মরণার্থক পুস্তকে’ আমাদের নাম রাখার জন্য আরও একটা কারণ জোগাই। এই পুস্তকটা ‘জীবনপুস্তক’ নামেও পরিচিত। এটার মধ্যে সেইসমস্ত ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের যিহোবা অনন্তজীবন প্রদান করতে চান।—মালাখি ৩:১৬; প্রকা. ২০:১৫.

৫. স্মরণার্থ সভার আগের সপ্তাহগুলোতে, কীভাবে আপনি ক্রমাগত ‘পরীক্ষা করিয়া দেখিবেন, [আপনি] বিশ্বাসে আছেন কি না’?

স্মরণার্থ সভার আগের সপ্তাহগুলোতে, আমরা এই বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক ও সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করার জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে পারি যে, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কতটা দৃঢ়। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১৩:৫.) প্রেরিত পৌল খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না।” কীভাবে আমরা তা করতে পারি? আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, এটা হল সেই একমাত্র সংগঠন, যেটাকে যিহোবা তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য মনোনীত করেছেন? আমি কি সুসমাচার প্রচার করার ও সেই সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিজের সর্বোত্তমটা করছি? আমার কাজগুলো কি দেখায় যে, আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, আমরা শেষকালে বাস করছি এবং শয়তানের শাসনের শেষ খুবই সন্নিকট? আমি যখন প্রথম যিহোবার সেবা করা শুরু করেছিলাম, তখন যিহোবা ও যিশুর প্রতি আমার আস্থা যতটা দৃঢ় ছিল, এখনও কি আমার আস্থা ততটাই দৃঢ়?’ (মথি ২৪:১৪; ২ তীম. ৩:১; ইব্রীয় ৩:১৪) এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে চিন্তা করা আমাদের ক্রমাগত ‘প্রমাণ’ করতে সাহায্য করবে যে, আমরা আসলে কেমন।

৬. (ক) আমাদের জন্য অনন্তজীবন লাভ করার একমাত্র উপায় কী? (খ) কীভাবে একজন প্রাচীন প্রতি বছর স্মরণার্থ সভার জন্য প্রস্তুতি নেন এবং কীভাবে আপনি একইরকম কিছু করতে পারেন?

একটা যে-উপায়ে আপনি স্মরণার্থ সভার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন, তা হল এমন প্রবন্ধগুলো পড়া ও সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা, যেগুলো ব্যাখ্যা করে যে, এই অনুষ্ঠান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, যোহন ৩:১৬; ১৭:৩.) আমাদের জন্য অনন্তজীবন লাভ করার একমাত্র উপায় হল যিহোবাকে জানা এবং তাঁর পুত্র যিশুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। স্মরণার্থ সভার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমরা এমন কিছু অধ্যয়ন প্রকল্প বেছে নিতে পারি, যেগুলো আমাদের তাঁদের আরও নিকটবর্তী বোধ করতে সাহায্য করবে। একজন ভাই, যিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন, তিনি ঠিক এইরকমই কিছু করেন। অনেক বছর ধরে তিনি প্রহরীদুর্গ পত্রিকা থেকে এমন প্রবন্ধগুলো সংগ্রহ করেছেন, যেগুলোতে স্মরণার্থ সভা এবং আমাদের প্রতি দেখানো যিহোবা ও যিশুর প্রেম সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। স্মরণার্থ সভার আগের সপ্তাহগুলোতে তিনি এই প্রবন্ধগুলো আবারও পড়েন এবং গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করেন যে, কেন এই অনুষ্ঠান এত গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো তিনি তার এই সংগ্রহে একটা অথবা দুটো প্রবন্ধ যুক্ত করেন। এ ছাড়া, তিনি স্মরণার্থের বাইবেল পাঠ পড়েন এবং সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। সেই প্রাচীন ভাই বলেন যে, এমনটা করার মাধ্যমে তিনি প্রতি বছর নতুন নতুন বিষয় শেখেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এভাবে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে তিনি যিহোবা ও যিশুকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হন। আপনি যখন এভাবে অধ্যয়ন করবেন, তখন আপনিও যিহোবা ও যিশুকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হবেন। এ ছাড়া, আপনি তাঁদের কাজের জন্য আরও বেশি কৃতজ্ঞ হবেন এবং স্মরণার্থ সভা থেকে আরও বেশি উপকৃত হবেন।

স্মরণার্থ সভা আমাদের একতাবদ্ধ হতে সাহায্য করে

৭. (ক) প্রথম বার প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্‌যাপন করার রাতে যিশু কী নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন? (খ) কী দেখায় যে, যিহোবা যিশুর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন?

প্রথম বার প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্‌যাপন করার রাতে যিশু একটা বিশেষ প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি প্রার্থনায় তাঁর পিতা ও তাঁর মধ্যে থাকা মূল্যবান একতার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর, যিশু প্রার্থনা করেছিলেন যেন তাঁর শিষ্যরাও একইভাবে একতাবদ্ধ হয়। (পড়ুন, যোহন ১৭:২০, ২১.) যিহোবা নিশ্চিতভাবেই তাঁর প্রিয় পুত্রের সেই প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। অন্য যেকোনো সভার চেয়ে স্মরণার্থ সভা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যিহোবার সাক্ষিরা একতাবদ্ধ। সেই দিনে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ও বর্ণের লক্ষ লক্ষ লোক একত্রে মিলিত হয় এবং দেখায় যে, তারা বিশ্বাস করে, যিহোবা তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছিলেন। কিছু কিছু জায়গায়, বিভিন্ন জাতির লোকেদের মিলিত হয়ে ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত করা একেবারেই প্রচলিত নয় অথবা তারা যদি এমনটা করে, তা হলে অন্যেরা মনে করে, সেটা সঠিক নয়। কিন্তু, যিহোবা ও যিশু এমনটা মনে করেন না। তাঁদের দৃষ্টিতে, স্মরণার্থ সভায় আমাদের একতা হল খুব সুন্দর এক বিষয়।

৮. যিহোবা যিহিষ্কেলকে কোন বার্তা দিয়েছিলেন?

যিহোবার লোক হিসেবে আমরা এতে অবাক হই না যে, আমরা এভাবে একতাবদ্ধ। যিহোবা যিহিষ্কেলকে দেওয়া তাঁর বার্তায় এই একতার বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন। তিনি যিহিষ্কেলকে দুটো কাঠের টুকরো নিতে বলেছিলেন, একটা “যিহূদার জন্য” এবং অন্যটা “যোষেফের জন্য।” তিনি সেগুলোকে পাশাপাশি আনতে বলেছিলেন যেন সেগুলো এক হয়। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৭:১৫-১৭.) ২০১৬ সালের জুলাই মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় প্রকাশিত “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” প্রবন্ধটা ব্যাখ্যা করেছিল: “যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিহিষ্কেলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, তাঁর লোকেরা প্রতিজ্ঞাত দেশে ফিরে আসবে এবং তারা আবারও এক জাতি হিসেবে একতাবদ্ধ হবে। সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী এটাও প্রকাশ করেছিল, এই শেষকালে যারা ঈশ্বরের উপাসনা করবে, তারাও একটা দল হিসেবে একতাবদ্ধ হবে।”

৯. কীভাবে আমরা প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা একতা দেখতে পাই?

উনিশ-শো উনিশ সাল থেকে যিহোবা প্রথমে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ধীরে ধীরে পুনরায় সংগঠিত ও একতাবদ্ধ করেছিলেন। তারা ছিল “যিহূদার জন্য” সেই কাষ্ঠের মতো। এরপর, আরও বেশি বেশি লোক অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেছিল, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে। এই পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিরা হল “যোষেফের জন্য” সেই কাষ্ঠের মতো। যিহোবা এই দুটো কাষ্ঠকে জোড়ার এবং তাঁর হাতে ‘তাহাদিগকে একটি কাষ্ঠ করিবার’ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (যিহি. ৩৭:১৯) তিনি অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ও ‘আরও মেষকে’ একতাবদ্ধ করে তাদের “এক পাল” করেছিলেন। (যোহন ১০:১৬; সখ. ৮:২৩) বর্তমানে, উভয় দলের মধ্যে একতা রয়েছে এবং তারা একসঙ্গে যিহোবার সেবা করে। আর তাদের কেবল একজন রাজা রয়েছেন, যিনি হলেন যিশু খ্রিস্ট, যাঁকে যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে ঈশ্বরের “দাস দায়ূদ” বলা হয়েছে। (যিহি. ৩৭:২৪, ২৫) প্রতি বছর আমরা যখন যিশুর মৃত্যু স্মরণ করার জন্য স্মরণার্থ সভায় একত্রিত হই, তখন আমরা এই দুটো দলের মধ্যে থাকা একতা দেখতে পাই, যেমনটা যিহিষ্কেলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল। কিন্তু, কীভাবে আমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে থাকা একতাকে বজায় রাখতে ও বৃদ্ধি করতে পারি?

কীভাবে আমরা প্রত্যেকে একতা বৃদ্ধি করতে পারি?

১০. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে একতা বৃদ্ধি করতে পারি?

১০ ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে একতা বৃদ্ধি করার প্রথম উপায় কী? প্রথম উপায়টা হল নম্র হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তাদের অবশ্যই নত বা নম্র হতে হবে। (মথি ২৩:১২) জগতের লোকেরা প্রায়ই অন্যদের চেয়ে নিজেদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। কিন্তু, আমরা যদি নম্র হই, তা হলে আমরা মণ্ডলীতে নেতৃত্বদানকারী ভাইদের সম্মান করব এবং তাদের নির্দেশনা পালন করব। একমাত্র এভাবেই মণ্ডলী একতাবদ্ধ হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা যদি নম্রতা বজায় রাখি, তা হলে আমরা ঈশ্বরকে খুশি করব কারণ তিনি “অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।”—১ পিতর ৫:৫.

১১. কীভাবে স্মরণার্থ সভায় ব্যবহৃত রুটি ও দ্রাক্ষারস নিয়ে চিন্তা করা আমাদের একতা বৃদ্ধি করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১১ একতা বৃদ্ধি করার দ্বিতীয় উপায় কী? দ্বিতীয় উপায়টা হল সতর্কতার সঙ্গে এটা নিয়ে চিন্তা করা যে, রুটি ও দ্রাক্ষারস আসলে কোন বিষয়গুলোকে চিত্রিত করে। আমাদের স্মরণার্থ সভার আগের দিনগুলোতে ও বিশেষ করে সেই রাতে এমনটা করা উচিত। (১ করি. ১১:২৩-২৫) তাড়িশূন্য রুটি যিশুর সিদ্ধ দেহকে চিত্রিত করে, যেটা তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে বলিদান করেছিলেন। লাল দ্রাক্ষারস যিশুর রক্তকে চিত্রিত করে। কিন্তু, আমাদের কেবল এই মৌলিক তথ্যগুলো বোঝার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যিশু যে-মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান দিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে প্রেমের সবচেয়ে মহৎ দুটো কাজ জড়িত ছিল। যিহোবা আমাদের জন্য তাঁর পুত্রকে দান করেছিলেন এবং যিশু ইচ্ছুক মনে আমাদের জন্য তাঁর জীবন দান করেছিলেন। আমরা যখন তাঁদের প্রেম নিয়ে চিন্তা করব, তখন আমরা তাঁদের ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হব। আর আমাদের সকলের যিহোবার প্রতি যে-প্রেম রয়েছে, সেটা আমাদের একতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি, তখন আমরা একতা বৃদ্ধি করি (১২, ১৩ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. কীভাবে যিশু একজন রাজা ও তার দাসদের সম্বন্ধে বলা গল্পে এই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন যে, যিহোবা চান যেন আমরা অন্যদের ক্ষমা করি?

১২ একতা বৃদ্ধি করার তৃতীয় উপায় কী? তৃতীয় উপায়টা হল মন থেকে অন্যদের ক্ষমা করা। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা এই বিষয়টার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাই যে, যিহোবা তাঁর পুত্র যিশুর বলিদানের ভিত্তিতে আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করতে পারেন। ক্ষমা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝানোর জন্য যিশু একজন রাজা ও তার দাসদের সম্বন্ধে একটা গল্প বলেছিলেন। দয়া করে মথি ১৮:২৩-৩৪ পদ পড়ুন এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি যিশুর এই শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে অনুপ্রাণিত হই? আমি কি আমার ভাই-বোনদের প্রতি ধৈর্য ধরি এবং তাদের বোঝার চেষ্টা করি? আমি কি সেই ব্যক্তিদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত, যারা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে?’ এটা ঠিক যে, কিছু কিছু পাপ অন্যগুলোর চেয়ে আরও বেশি গুরুতর হয়। আর অসিদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের পক্ষে কিছু কিছু পাপ ক্ষমা করা খুবই কঠিন হতে পারে। কিন্তু, যিশুর বলা সেই গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান। (পড়ুন, মথি ১৮:৩৫.) যিশু এই বিষয়টা স্পষ্ট করেন যে, আমাদের ভাই-বোনেরা প্রকৃতই অনুতপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আমরা যদি তাদের ক্ষমা না করি, তা হলে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করবেন না। নিশ্চিতভাবেই এটা এমন একটা বিষয়, যেটা নিয়ে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। আমাদের মূল্যবান একতাকে রক্ষা করার ও বজায় রাখার জন্য আমাদের যিশুর শিক্ষা অনুযায়ী অন্যদের ক্ষমা করতে হবে।

১৩. আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখি, তখন কীভাবে আমরা একতা বৃদ্ধি করি?

১৩ আমরা যখন অন্যদের ক্ষমা করি, তখন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখি। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, আমাদের একে অন্যের সঙ্গে একতা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত। (ইফি. ৪:৩) তাই, স্মরণার্থের মরসুমে ও বিশেষ করে স্মরণার্থ সভার রাতে এই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন যে, আপনি অন্যদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমার পরিচিত লোকেদের কাছে কি এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, যারা আমাকে অসন্তুষ্ট করে, তাদের প্রতি আমি রাগ পুষে রাখি না? লোকেরা কি এটা দেখতে পায় যে, আমি শান্তি স্থাপন করার ও একতা বৃদ্ধি করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করি?’ এগুলো হল কিছু গুরুগম্ভীর প্রশ্ন, যেগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত।

১৪. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা ‘প্রেমে একে অন্যকে সহ্য করছি’?

১৪ একতা বৃদ্ধি করার চতুর্থ উপায় কী? চতুর্থ উপায়টা হল প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবাকে অনুকরণ করা। (১ যোহন ৪:৮) আমরা কখনো আমাদের সহউপাসকদের সম্বন্ধে এমনটা বলতে চাইব না, “যেহেতু তারা আমার ভাই-বোন, তাই আমাকে তাদের ভালোবাসতেই হবে কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমি তাদের পছন্দ করি না”! আমরা যদি এমনটা চিন্তা করি, তা হলে আমরা আসলে পৌলের এই পরামর্শ অনুসরণ করছি না: “প্রেমে পরস্পর ক্ষমাশীল হও [“একে অন্যকে সহ্য কর,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]।” (ইফি. ৪:২) লক্ষ করুন, পৌল কেবল এতটুকু বলেননি যে, আমাদের ‘একে অন্যকে সহ্য করা’ উচিত কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমাদের “প্রেমে” এমনটা করা উচিত। এই দুটো বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমাদের মণ্ডলীগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি রয়েছে এবং যিহোবা তাদের সকলকেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। (যোহন ৬:৪৪) তাই, তিনি নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিদের ভালোবাসার জন্য অনেক উত্তম কারণ দেখতে পান। আমাদের ভাই-বোনেরা যদি ঈশ্বরের ভালোবাসা লাভ করার যোগ্য হয়, তা হলে কীভাবে আমরা বলতে পারি যে, তারা আমাদের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়? যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যেভাবে চান, ঠিক সেভাবেই তাদের ভালোবাসার বিষয়ে আমাদের আগ্রহী হওয়া উচিত।—১ যোহন ৪:২০, ২১.

কখন শেষ স্মরণার্থ সভা অনুষ্ঠিত হবে?

১৫. কীভাবে আমরা জানি যে, কোনো একদিন শেষ বারের মতো স্মরণার্থ সভা অনুষ্ঠিত হবে?

১৫ একদিন, আমরা শেষ বারের মতো স্মরণার্থ সভায় যোগ দেব। কীভাবে আমরা তা জানি? পৌল অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের বলেছিলেন যে, তারা যখন প্রতি বছর যিশুর মৃত্যু স্মরণ করে, তখন তারা ‘প্রভুর মৃত্যু প্রচার করিয়া থাকে, যে পর্য্যন্ত তিনি না আইসেন।’ (১ করি. ১১:২৬) যিশুও শেষকাল সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করার সময় তাঁর ‘আসিবার’ বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। আসন্ন মহাক্লেশ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং ‘মনুষ্যপুত্ত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে’ দেখিবে। আর তিনি মহা তূরীধ্বনি সহকারে আপন দূতগণকে প্রেরণ করিবেন; তাঁহারা আকাশের এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন।” (মথি ২৪:২৯-৩১) যিশু সেইসময় “তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন,” যখন তিনি পৃথিবীতে অবশিষ্ট সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে স্বর্গে নিয়ে যাবেন। এটা মহাক্লেশ শুরু হওয়ার পর, তবে আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ঘটবে। সেই যুদ্ধে যিশু তাঁর ১,৪৪,০০০ জন সহ-শাসকের সঙ্গে পৃথিবীর রাজাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন এবং জয়ী হবেন। (প্রকা. ১৭:১২-১৪) যিশু অভিষিক্ত ব্যক্তিদের একত্রিত করতে ‘আসিবার’ আগে আমরা শেষ বারের মতো যে-স্মরণার্থ সভায় যোগ দেব, সেটাই হবে শেষ স্মরণার্থ সভা।

১৬. কেন আপনি এই বছর স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৬ দু-হাজার আঠারো সালের মার্চ মাসের ৩১ তারিখে স্মরণার্থ সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। আর যিহোবার কাছে সাহায্য চান যেন তাঁর লোক হিসেবে একতাবদ্ধ থাকার জন্য আপনি আপনার অংশটুকু করতে পারেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৩:১.) একদিন, আমরা শেষ বারের মতো স্মরণার্থ সভায় যোগ দেব। সেই দিন না আসা পর্যন্ত, আসুন আমরা দেখাই যে, প্রতি বছর স্মরণার্থ সভায় আমরা যে-মনোরম একতা উপভোগ করি, সেটা আমাদের কাছে খুবই মূল্যবান।