সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

লোকেদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুন

লোকেদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুন

“তোমরা . . . ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে . . . প্রভেদ দেখিবে।”​—মালাখি ৩:১৮.

গান সংখ্যা: ২৯, ৫৩

১, ২. কেন বর্তমানে ঈশ্বরের দাসদের জন্য জীবন কঠিন হতে পারে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

অনেক ডাক্তার ও নার্স সংক্রামক রোগীদের মাঝে কাজ করে থাকে। তারা রোগীদের যত্ন নেয় কারণ তারা তাদের সাহায্য করতে চায়। কিন্তু, ডাক্তার ও নার্সদের নিজেদেরও সুরক্ষিত রাখতে হয়, যাতে তারা সেই রোগের দ্বারা আক্রান্ত না হয়, যে-রোগ থেকে তারা রোগীদের সুস্থ করতে চায়। যিহোবার দাস হিসেবে আমরাও প্রায় একইরকম পরিস্থিতিতে রয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই এমন লোকেদের সঙ্গে বাস করে ও কাজ করে, যারা সেই মনোভাব ও গুণগুলোর দ্বারা আক্রান্ত, যেগুলো ঈশ্বরের গুণাবলির চেয়ে একেবারে আলাদা। তাই, এটা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে।

এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে যে-লোকেরা ঈশ্বরকে ভালোবাসে না, তারা সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে তাঁর মানকে অগ্রাহ্য করে। প্রেরিত পৌল তীমথিয়ের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে এই লোকেদের নেতিবাচক গুণগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন। পৌল বলেছিলেন, এই বিধিব্যবস্থার শেষ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই নেতিবাচক গুণগুলো লোকেদের মধ্যে আরও বেশি সাধারণ হয়ে উঠবে। (পড়ুন, ২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩.) যদিও আমরা হয়তো এই খারাপ গুণগুলোকে জঘন্য বলে মনে করি কিন্তু তারপরও, আমাদের আশেপাশের লোকেরা যেভাবে চিন্তা করে, কথা বলে ও কাজ করে, সেগুলোর দ্বারা আমরা প্রভাবিত হতে পারি। (হিতো. ১৩:২০) এই প্রবন্ধে আমরা লক্ষ করব যে, তাদের খারাপ গুণগুলো ও ঈশ্বরের লোকেদের উত্তম গুণগুলোর মধ্যে কতটা পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়া, আমরা এও লক্ষ করব যে, যিহোবাকে জানার বিষয়ে লোকেদের সাহায্য করার সময়, এই খারাপ গুণগুলোর দ্বারা আক্রান্ত না হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি।

৩. দ্বিতীয় তীমথিয় ৩:২-৫ পদে কোন ধরনের লোকের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে?

পৌল লিখেছিলেন, শেষকালে “বিষম সময়” উপস্থিত হবে। এরপর, তিনি ১৯টা নেতিবাচক গুণের একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন, যে-গুণগুলো আমাদের সময়ে খুবই সাধারণ হবে। এই নেতিবাচক গুণগুলো অনেকটা সেই খারাপ গুণগুলোর মতোই, যেগুলো পৌল রোমীয় ১:২৯-৩১ পদে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু, তীমথিয়ের প্রতি লেখা তার চিঠিতে তিনি যে-তালিকার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, সেটার মধ্যে এমন শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো আমরা খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এর অন্য আর কোথাও পাই না। তবে, পৌল যে-নেতিবাচক গুণগুলোর বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন, সেগুলো সমস্ত মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। খ্রিস্টানরা একেবারে ভিন্ন গুণাবলি প্রদর্শন করে।—পড়ুন, মালাখি ৩:১৮.

যেভাবে আমরা নিজেদের দেখি

৪. আপনার কী মনে হয়, গর্বান্ধ হওয়ার অর্থ কী?

লোকেরা যে আত্মপ্রিয় ও অর্থপ্রিয় হবে, সেই বিষয়ে উল্লেখ করার পর পৌল আরও বলেছিলেন, লোকেরা আত্মশ্লাঘী, অভিমানী গর্বান্ধ হবে। যে-লোকেদের এই খারাপ গুণগুলো রয়েছে, তারা প্রায়ই মনে করে যে, তারা তাদের শারীরিক সৌন্দর্য, কাজ করার ক্ষমতা, বিষয়সম্পত্তি অথবা পদমর্যাদার কারণে অন্যদের চেয়ে উত্তম। এই ধরনের লোকেরা অন্য যে-কোনো কিছুর চেয়ে বরং প্রশংসা লাভ করতে চায়। এইরকম একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে একজন পণ্ডিত লিখেছিলেন: “তার হৃদয়ে একটা ছোট্ট বেদি রয়েছে, যেখানে তিনি নত হয়ে নিজের উপাসনা করেন।” কেউ কেউ বলে, গর্ব এতটাই খারাপ যে, এমনকী গর্বিত লোকেরা যখন অন্যদের মনে গর্ব দেখতে পায়, তখন তারা সেটা পছন্দ করে না।

৫. কীভাবে এমনকী যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরাও গর্বিত হয়ে গিয়েছে?

যিহোবা গর্বকে ঘৃণা করেন, যেটাকে বাইবেলে “উদ্ধত দৃষ্টি” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (হিতো. ৬:১৬, ১৭) সত্যি বলতে কী, গর্ব একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। (গীত. ১০:৪) গর্ব হল দিয়াবলের একটা গুণ। (১ তীম. ৩:৬) একটা করুণ সত্য হল, এমনকী যিহোবার কয়েক জন অনুগত দাসও গর্বের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, যিহূদার রাজা উষিয় অনেক বছর ধরে বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু, বাইবেল বলে: “শক্তিমান্‌ হইলে পর তাঁহার মন উদ্ধত হইল, তিনি দুরাচরণ করিলেন, আর তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিলেন।” উষিয় মন্দিরে প্রবেশ করে ধূপ জ্বালিয়েছিলেন, যেটা করার অধিকার তার ছিল না। পরবর্তী সময়, বিশ্বস্ত রাজা হিষ্কিয়ও কিছু সময়ের জন্য গর্বিত হয়ে গিয়েছিলেন।—২ বংশা. ২৬:১৬; ৩২:২৫, ২৬.

৬. কী দায়ূদকে গর্বিত করে তুলতে পারত কিন্তু কেন তিনি নম্রতা বজায় রেখেছিলেন?

কোনো কোনো ব্যক্তি গর্বিত হয়ে যায় কারণ তারা দেখতে খুব সুন্দর, জনপ্রিয়, সংগীতপারদর্শী, শক্তিশালী অথবা তারা অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করে। দায়ূদের কাছে এই সমস্ত ভালো বিষয়গুলো ছিল কিন্তু তিনি সারাজীবন ধরে নম্রতা বজায় রেখেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দায়ূদ যখন গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন, তখন রাজা শৌল দায়ূদকে বলেছিলেন যে, তিনি তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু, উত্তরে দায়ূদ বলেছিলেন: “আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই?” (১ শমূ. ১৮:১৮) কী দায়ূদকে নম্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল? তিনি জানতেন, তার কাছে যে-সমস্ত গুণ, ক্ষমতা ও বিশেষ সুযোগ ছিল, সেগুলো একমাত্র এই কারণেই ছিল যে, ঈশ্বর হলেন নম্র আর তিনি দায়ূদের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন। (গীত. ১১৩:৫-৮) দায়ূদ উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার কাছে থাকা যেকোনো ভালো বিষয় আসলে যিহোবার কাছ থেকেই এসেছে।—তুলনা করুন, ১ করিন্থীয় ৪:৭.

৭. কী আমাদের নম্রতা প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে?

দায়ূদের মতো বর্তমানেও যিহোবার লোকেরা নম্র হওয়ার চেষ্টা করে। এই বিষয়টা জানা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে যে, নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে মহান ব্যক্তি স্বয়ং যিহোবা হলেন নম্র। আমরা বাইবেলের এই কথাগুলো প্রয়োগ করতে চাই: “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর।” (কল. ৩:১২) আমরা এও জানি যে, প্রেম “আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না।” (১ করি. ১৩:৪, ৫) অন্যেরা যখন আমাদের মধ্যে নম্রতা লক্ষ করবে, তখন তারাও হয়তো যিহোবাকে জানার বিষয়ে আগ্রহী হবে। ঠিক যেমন একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর উত্তম আচরণের কারণে তার ন-সাক্ষি স্বামী যিহোবার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন, তেমনই ঈশ্বরের দাসদের নম্রতার কারণে লোকেরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।—১ পিতর ৩:১, ২.

যেভাবে আমরা অন্যদের সঙ্গে আচরণ করি

৮. (ক) বর্তমানে বাবা-মায়ের প্রতি অবাধ্য হওয়ার বিষয়টাকে কেউ কেউ কোন দৃষ্টিতে দেখে থাকে? (খ) বাইবেল সন্তানদের কী করার আজ্ঞা দেয়?

পৌল বর্ণনা করেছিলেন যে, শেষকালে লোকেরা একে অন্যের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে। তিনি লিখেছিলেন, সন্তানরা পিতা-মাতার অবাধ্য হবে। বর্তমানে অনেক বই, সিনেমা এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়াকে এক সাধারণ ও গ্রহণযোগ্য বিষয় হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু, সত্য বিষয়টা হল অবাধ্যতা পরিবারগুলোকে দুর্বল করে দেয়, যেগুলোর দ্বারা একটা সমাজ গড়ে ওঠে। মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে এই সত্যটা জেনে এসেছে। উদাহরণ স্বরূপ, প্রাচীন গ্রিসে একজন ব্যক্তি যদি তার বাবা-মাকে আঘাত করতেন, তা হলে তিনি সমাজে তার অধিকারগুলো হারিয়ে ফেলতেন। রোমীয় আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি তার বাবাকে আঘাত করতেন, তা হলে তিনি হয়তো সেই একই শাস্তি পেতে পারতেন, যেটা একজন খুনির জন্য নির্ধারিত ছিল। আর ইব্রীয় ও গ্রিক শাস্ত্র, উভয়ই সন্তানদের তাদের বাবা-মাকে সমাদর করার আজ্ঞা দেয়।—যাত্রা. ২০:১২; ইফি. ৬:১-৩.

৯. কী সন্তানদের তাদের বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা দেখাতে সাহায্য করবে?

কী সন্তানদের এমনকী সেইসময়ও তাদের বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, যখন তাদের আশেপাশে থাকা অন্যেরা বাধ্যতা দেখায় না? সন্তানরা যখন তাদের উদ্দেশ্যে করা বাবা-মায়ের সমস্ত উত্তম কাজগুলো নিয়ে চিন্তা করে, তখন তাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এবং বাবা-মায়ের বাধ্য হতে চাওয়া উচিত। এ ছাড়া, অল্পবয়সিদের এটাও বুঝতে হবে যে, ঈশ্বর যিনি আমাদের সকলের পিতা, তিনি আশা করেন যেন তারা তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হয়। অল্পবয়সিরা যখন তাদের বাবা-মা সম্বন্ধে উত্তম বিষয়গুলো বলে, তখন তারা তাদের বন্ধুদের নিজেদের বাবা-মাকে আরও বেশি সম্মান করতে সাহায্য করে। অবশ্য, বাবা-মায়েরা যদি তাদের সন্তানদের বিষয়ে স্নেহরহিত অর্থাৎ স্নেহহীন হয়, তা হলে তাদের পক্ষে হয়তো বাবা-মায়ের প্রতি বাধ্যতা দেখানো আরও বেশি কঠিন হতে পারে। কিন্তু, একজন অল্পবয়সি যখন বুঝতে পারে যে, তার বাবা-মা সত্যিই তাকে ভালোবাসেন, তখন সেটা তাকে এমনকী কঠিন সময়েও তাদের প্রতি বাধ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। অসটান নামে একজন অল্পবয়সি ভাই বলেন: “যদিও প্রায়ই আমি মন্দ কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ হতাম কিন্তু আমার বাবা-মা যুক্তিযুক্ত নিয়মগুলো স্থির করতেন, নিয়মের পিছনে থাকা কারণগুলো ব্যাখ্যা করতেন এবং সবসময় ভাববিনিময়ের পথ খোলা রাখতেন। এটা আমাকে বাধ্য থাকতে সাহায্য করেছিল। আমি বুঝতে পারতাম যে, তারা আমার জন্য চিন্তা করেন আর এই বিষয়টার কারণে আমি তাদের খুশি করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।”

১০, ১১. (ক) কোন খারাপ গুণগুলো দেখায় যে, লোকেদের একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা নেই? (খ) সত্য খ্রিস্টানরা অন্য লোকেদের কতটা ভালোবাসে?

১০ পৌল আরও কয়েকটা খারাপ গুণ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যেগুলো দেখায় যে, লোকেদের একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা নেই। তিনি “পিতামাতার অবাধ্য” হওয়ার বিষয়টা উল্লেখ করার পর অকৃতজ্ঞতার বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন। এটা উপযুক্ত কারণ অকৃতজ্ঞ লোকেরা তাদের জন্য করা উত্তম বিষয়গুলোকে মূল্যবান বলে গণ্য করে না। এ ছাড়া, পৌল বলেছিলেন, লোকেরা “অসাধু [“আনুগত্যহীন,” NW]হবে। তারা ক্ষমাহীন হবে অর্থাৎ তারা অন্যদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে চাইবে না। তারা ধর্মনিন্দক বিশ্বাসঘাতক হবে অর্থাৎ তারা লোকেদের সম্বন্ধে আর এমনকী ঈশ্বর সম্বন্ধে নিষ্ঠুর ও ক্ষতিকর কথা বলবে। এ ছাড়া, তারা অপবাদক হবে অর্থাৎ তারা অন্যদের সুনাম নষ্ট করার জন্য ক্ষতিকর মিথ্যা কথা বলবে। *

১১ যিহোবার দাসেরা জগতের বেশিরভাগ লোকের চেয়ে খুবই আলাদা কারণ তারা অন্যদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখিয়ে থাকে। এটা সবসময়ই সত্য হয়ে এসেছে। সত্যি বলতে কী, যিশু বলেছিলেন, মোশির ব্যবস্থায় একমাত্র যে-আজ্ঞাটা লোকেদের ভালোবাসার আজ্ঞার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটা হল ঈশ্বরকে ভালোবাসার আজ্ঞা। (মথি ২২:৩৭-৩৯) যিশু এও বলেছিলেন, সত্য খ্রিস্টানরা একে অন্যের প্রতি যে-প্রেম দেখায়, সেটার জন্য সুপরিচিত হবে। (পড়ুন, যোহন ১৩:৩৪, ৩৫.) সত্য খ্রিস্টানরা এমনকী তাদের শত্রুদেরও ভালোবাসবে।—মথি ৫:৪৩, ৪৪.

১২. কীভাবে যিশু অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন?

১২ যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সত্যিই লোকেদের ভালোবাসেন। তিনি লোকেদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সুসমাচার জানানোর জন্য এক নগর থেকে আরেক নগরে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি অন্ধ, খঞ্জ, কুষ্ঠরোগী ও বধিরদের সুস্থ করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি মৃত ব্যক্তিদেরও জীবনে উত্থিত করেছিলেন। (লূক ৭:২২) যিশু এমনকী মানবজাতিকে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন দান করেছিলেন, যদিও অনেকে তাঁকে ঘৃণা করেছিল। যিশু একেবারে নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার প্রেমকে অনুকরণ করেছিলেন। আর বিশ্বব্যাপী যিহোবার সাক্ষিরা যিশুকে অনুকরণ করে এবং অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে থাকে।

১৩. আমরা অন্যদের প্রতি যে-ভালোবাসা দেখাই, কীভাবে সেটা তাদের যিহোবাকে জানার বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৩ আমরা যখন লোকেদের দেখাই যে, আমরা তাদের ভালোবাসি, তখন সেটার কারণে তারা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে জানার জন্য আগ্রহী হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, থাইল্যান্ডের একজন ব্যক্তি একবার একটা আঞ্চলিক সম্মেলনে গিয়েছিলেন এবং ভাই-বোনেরা যেভাবে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখায়, সেটা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে আসার পর তিনি সপ্তাহে দু-দিন বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। এরপর, তিনি তার সমস্ত আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রচার করেছিলেন। মাত্র ছ’মাস পর তিনি কিংডম হলে প্রথম বার বাইবেল পাঠ করেছিলেন। আমরা কি অন্যদের প্রতি ভালোবাসা দেখাচ্ছি? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি আমার পরিবার, মণ্ডলী ও পরিচর্যায় অন্যদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য করছি? আমি কি অন্যদের যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করি?’

নেকড়ে ও মেষ

১৪, ১৫. অনেকে কোন খারাপ গুণগুলো প্রদর্শন করে এবং কীভাবে কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করেছে?

১৪ শেষকালে লোকেরা আরও কিছু খারাপ গুণ প্রদর্শন করে, যেগুলো আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, অনেকে সদ্‌বিদ্বেষী। তারা উত্তম বিষয়গুলোকে ঘৃণা করে আর এমনকী সেগুলোর বিরোধিতা করে। এই ধরনের লোকেরা হল অজিতেন্দ্রিয় প্রচণ্ড। কেউ কেউ আবার দুঃসাহসী। তারা কোনোরকম চিন্তাভাবনা না করেই কাজ করে এবং তাদের কাজগুলো অন্যদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, সেই ব্যাপারে চিন্তাই করে না।

১৫ অনেক ব্যক্তি, যারা একসময় হিংস্র পশুর মতো আচরণ করত, তারা এখন তাদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করেছে। এই নাটকীয় পরিবর্তনের বিষয়ে বাইবেলে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল। (পড়ুন, যিশাইয় ১১:৬, ৭.) সেখানে আমরা পড়ি যে, কেন্দুয়াব্যাঘ্র বা নেকড়ে ও সিংহের মতো বন্য পশুরা মেষ ও বাছুরের মতো গৃহপালিত পশুর সঙ্গে শান্তিতে থাকবে। কেন তাদের মধ্যে শান্তি থাকবে? সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী আরও বলে: “কারণ . . . পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশা. ১১:৯) পশুরা যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে পারে না, তাই এই ভবিষ্যদ্‌বাণী রূপকভাবে, লোকেরা তাদের ব্যক্তিত্বে যে-পরিবর্তনগুলো করবে, সেটাকে নির্দেশ করে।

বাইবেলের নীতিগুলো জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে! (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. কীভাবে বাইবেল লোকেদের নিজেদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করতে সাহায্য করে?

১৬ আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে, যারা একসময় নেকড়ের মতো হিংস্র ছিল কিন্তু এখন তারা শান্তিপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। আপনি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার জনসাধারণের সংস্করণে ছাপানো “বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধে তাদের মধ্যে কারো কারো অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে পড়তে পারেন। যারা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পেরেছে ও তাঁকে সেবা করছে, তারা সেই লোকেদের মতো নয়, যারা ভক্তির অবয়বধারী কিন্তু সেটার শক্তির অস্বীকারকারী। এই লোকেরা ঈশ্বরের উপাসনা করার ভান করে কিন্তু তাদের আচরণ প্রমাণ করে যে, তারা আসলে ঈশ্বরের উপাসনা করে না। তবে, যিহোবার লোকেদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে, যারা একসময় হিংস্র ছিল কিন্তু এখন ‘সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিয়াছে, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।’ (ইফি. ৪:২৩, ২৪) লোকেরা যখন ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখে, তখন তারা বুঝতে পারে যে, তাদের তাঁর মান অনুসরণ করতে হবে। আর এই বিষয়টা তাদের নিজেদের বিশ্বাস, চিন্তাধারা ও কাজ পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। এই ধরনের পরিবর্তন করা সহজ নয় কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করবে, যারা তাঁকে খুশি করতে চায়।

“তুমি এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও”

১৭. কীভাবে আমরা লোকেদের খারাপ গুণগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

১৭ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, যারা ঈশ্বরের সেবা করে ও যারা ঈশ্বরের সেবা করে না, তাদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করাটা সহজ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা সেই লোকেদের খারাপ গুণগুলোর দ্বারা প্রভাবিত না হই, যারা ঈশ্বরের সেবা করে না। আমরা যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করে সেই লোকেদের থেকে সরে যেতে চাই, যাদের বিষয়ে ২ তীমথিয় ৩:২-৫ পদে বর্ণনা করা হয়েছে। এটা ঠিক যে, আমরা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে পুরোপুরিভাবে এড়িয়ে চলতে পারি না, যাদের মধ্যে খারাপ গুণগুলো রয়েছে। আমাদের হয়তো তাদের সঙ্গে কাজ করতে, স্কুলে যেতে অথবা বাস করতে হবে। কিন্তু, আমাদের যে সেই লোকেদের মতো চিন্তা অথবা কাজ করতে হবে, এমন নয়। কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? আমরা বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং তাঁকে ভালোবাসে এমন ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে পারি।

১৮. কীভাবে আমাদের কথা ও কাজ অন্যদের যিহোবাকে জানার বিষয়ে আগ্রহী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৮ আমরা অন্য ব্যক্তিদের সাহায্য করতে চাই, যাতে তারাও যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজুন এবং সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চান। আমাদের অন্যদের জানানো উচিত যে, আমরা যিহোবার সাক্ষি। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমাদের উত্তম আচরণ আমাদের নয় বরং ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসবে। যিহোবা আমাদের শিখিয়েছেন “যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি।” (তীত ২:১১-১৪) আমরা যদি যিহোবাকে অনুকরণ করি এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করি, তা হলে অন্যেরা সেটা লক্ষ করবে। কেউ কেউ হয়তো এমনকী বলবে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।”—সখ. ৮:২৩.

^ অনু. 10 “অপবাদক” বা “অভিযোগকারী”-র জন্য ব্যবহৃত গ্রিক শব্দটা হল ডায়াবোলোস। বাইবেলে এই শব্দটাকে শয়তানের একটা উপাধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, যে একজন মন্দ ব্যক্তি এবং ঈশ্বরকে অপবাদ দেয়।