গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টার উপর আপনার দৃষ্টি রাখুন
“আর জানুক যে তুমি, যাঁহার নাম সদাপ্রভু, একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।”—গীত. ৮৩:১৮.
গান সংখ্যা: ৪৬, ১৬
১, ২. (ক) কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা সমস্ত মানবজাতিকে প্রভাবিত করে? (খ) কেন এই বিষয়টা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
আমাদের দিনের অনেক লোকের কাছে টাকাপয়সাই হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা সেটা নিয়েই চিন্তা করে ও উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে। তারা আরও বেশি টাকাপয়সা লাভ করার অথবা তাদের জমানো টাকাপয়সা সুরক্ষিত রাখার জন্য বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকে। অন্যান্য লোকের কাছে, তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাদের পরিবার, তাদের স্বাস্থ্য অথবা এমন বিষয়গুলো, যেগুলো তারা তাদের জীবনে সম্পাদন করতে চায়।
২ কিন্তু, একটা বিষয় রয়েছে, যেটা এই সমস্ত কিছুর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিষয়টা হল, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া। এই বিষয়টার উপর থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে না নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা রোজকার জীবনে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারি কিংবা আমাদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়তে পারি যে, এই বিষয়টা আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা ভুলে যেতে পারি। আমরা যদি নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করি, তা হলে আমরা আমাদের রোজকার জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারব এবং যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারব।
কেন এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ?
৩. ঈশ্বরের শাসন ব্যবস্থা সম্বন্ধে শয়তান কী দাবি করে?
৩ শয়তান দিয়াবল এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে যে, যিহোবার শাসন করার অধিকার আছে কি না। শয়তান চায় যেন মানুষ এমনটা মনে করুক, যিহোবা হলেন একজন দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক আর তিনি আমাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয়টা চান না। শয়তান এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, লোকেরা যদি নিজেরাই নিজেদের উপর শাসন করে, তা হলে তারা আরও বেশি সুখী হবে। (আদি. ৩:১-৫) এ ছাড়া, সে এই বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, কোনো মানুষই আসলে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত নয় আর জীবন যদি খুবই কঠিন হয়ে পড়ে, তা হলে যেকোনো ব্যক্তিই তাঁকে শাসক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করবে। (ইয়োব ২:৪, ৫) তাই, যিহোবা সময় অতিবাহিত হতে দিচ্ছেন, যাতে সবার কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে, ঈশ্বরের শাসন ছাড়া জীবন খুবই দুর্দশাগ্রস্ত।
৪. কেন নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টা অবশ্যই মীমাংসিত হতে হবে?
৪ অবশ্য, যিহোবা জানেন যে, দিয়াবলের অভিযোগগুলো মিথ্যা। তা হলে, কেন তিনি শয়তানকে তার বিষয়টা প্রমাণ করার জন্য সময় দিয়েছেন? আসলে, উত্তরটার সঙ্গে সকলে—স্বর্গ ও পৃথিবী, উভয় স্থানের ব্যক্তিরাই—জড়িত। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৩:১৮.) আদম ও হবা যিহোবার শাসন ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আর সেই সময় থেকে অন্যান্য অনেকে তা করেছে। এটার কারণে কেউ কেউ মনে করতে পারে, দিয়াবলের কথাগুলো সঠিক। যতদিন পর্যন্ত এই বিষয়টা মানুষ কিংবা স্বর্গদূতদের কাছে অমীমাংসিত থাকবে, ততদিন পর্যন্ত প্রকৃত শান্তি ও একতা বিরাজ করতে পারবে না। কিন্তু, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর, সকলে চিরকাল তাঁর চমৎকার শাসনের অধীনে বেঁচে থাকবে। তখন নিখিলবিশ্বে শান্তি বিরাজ করবে।—ইফি. ১:৯, ১০.
৫. নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টার সঙ্গে আমরা কীভাবে জড়িত?
৫ নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হবে এবং শয়তান ও মানুষের শাসন পুরোপুরি ব্যর্থ হবে আর সেইসঙ্গে সেটাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের শাসন সফল হবে। বিশ্বস্ত লোকেরা এই বিষয়টা প্রমাণ করবে যে, মানুষের পক্ষে তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখা আর সেইসঙ্গে অনুগতভাবে ঈশ্বরের শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করা সম্ভব। (যিশা. ৪৫:২৩, ২৪) আমরা কি এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হতে চাই? অবশ্যই! তা হলে আমাদের বুঝতে হবে যে, এই বিষয়টা আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
পরিত্রাণের চেয়ে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ
৬. নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
৬ নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া, আমাদের ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে, আমাদের পরিত্রাণ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় অথবা যিহোবা প্রকৃতপক্ষে আমাদের ব্যাপারে চিন্তা করেন না। কীভাবে আমরা তা জানি?
৭, ৮. কীভাবে নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়া আমাদের উপকৃত করবে?
৭ যিহোবা মানুষকে খুব ভালোবাসেন। সত্যি বলতে কী, আমরা তাঁর কাছে এতটাই মূল্যবান যে, তিনি আমাদের জন্য তাঁর পুত্রকে দান করেছিলেন, যাতে আমরা অনন্তজীবন লাভ করতে পারি। (যোহন ৩:১৬; ১ যোহন ৪:৯) যিহোবা যদি আমাদের ভবিষ্যতের বিষয় করা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ না করেন, তা হলে শয়তান ও অন্যান্য বিরোধীদের কথা সঠিক হয়ে যাবে। শয়তান দাবি করে, যিহোবা হলেন একজন মিথ্যাবাদী, যিনি মানুষকে ভালো বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত করেন এবং অন্যায্যভাবে শাসন করেন। বিরোধীরা যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে ঠাট্টা করে এবং বলে: “তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে।” (২ পিতর ৩:৩, ৪) কিন্তু, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন। তিনি এই বিষয়ে খেয়াল রেখেছেন, যেন নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে তাঁর অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাধ্য মানুষও পরিত্রাণ লাভ করে। (পড়ুন, যিশাইয় ৫৫:১০, ১১.) নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের ভিত্তি হল প্রেম আর তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, তিনি সবসময় তাঁর অনুগত দাসদের প্রতি ‘দয়া [‘অনুগত প্রেম,’ NW]’ দেখাবেন এবং তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখবেন।—যাত্রা. ৩৪:৬.
৮ নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকার যদিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমাদের পরিত্রাণের বিষয়টা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। যিহোবা আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। তাই, আমাদের মনে রাখতে হবে, কোন বিষয়টা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও সেইসঙ্গে আমাদের অনুগতভাবে যিহোবার শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করতে হবে।
যেভাবে ইয়োব তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছিলেন
৯. ইয়োবের বিষয়ে শয়তান কী বলেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৯ নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টা আমরা ইয়োব বইটা পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পারি, যেটা বাইবেলের প্রথম লেখা বইগুলোর মধ্যে একটা। সেখানে আমরা পড়ি যে, শয়তান দাবি করেছিল, ইয়োব যদি অনেক কষ্ট ভোগ করেন, তা হলে তিনি ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করবেন। শয়তান এমনকী ঈশ্বরকে বলেছিল, যেন ঈশ্বর ইয়োবকে কষ্ট দেন। যিহোবা তেমনটা করেননি কিন্তু তিনি এই বলে শয়তানকে ইয়োবের পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছিলেন: “তাহার সর্ব্বস্বই তোমার হস্তগত।” (পড়ুন, ইয়োব ১:৭-১২.) এর পর পরই, ইয়োব তার দাস-দাসী ও বিষয়সম্পত্তি হারিয়েছিলেন। তারপর তিনি জানতে পেরেছিলেন, তার দশ জন ছেলে-মেয়েই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। শয়তান এই বিষয়গুলোকে এমনভাবে তুলে ধরেছিল, যেন ঈশ্বরই এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন। (ইয়োব ১:১৩-১৯) এরপর, শয়তান ইয়োবকে এক যন্ত্রণাদায়ক ও জঘন্য রোগ দ্বারা আক্রান্ত করেছিল। (ইয়োব ২:৭) আরও দুঃখজনক বিষয় হল, ইয়োবের নিজের স্ত্রী ও তিন জন মিথ্যা বন্ধু, সকলেই তাকে আঘাতদায়ক ও হতাশাজনক কথা বলেছিলেন।—ইয়োব ২:৯; ৩:১১; ১৬:২.
১০. (ক) কীভাবে ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বস্ততা দেখিয়েছিলেন? (খ) কেন ইয়োবকে সংশোধন করার প্রয়োজন হয়েছিল?
১০ শয়তানের দাবি কি সঠিক ছিল? না। যদিও ইয়োব খুবই মর্মান্তিক কিছু ঘটনার শিকার হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। (ইয়োব ২৭:৫) তবে, কিছু সময়ের জন্য ইয়োব ভুলে গিয়েছিলেন যে, কোন বিষয়টা আসলে গুরুত্বপূর্ণ আর তিনি নিজের বিষয়ে বেশি চিন্তা করেছিলেন। তিনি বার বার বলেছিলেন, তিনি কোনো ভুল কাজ করেননি। ইয়োব এও মনে করেছিলেন, তার এটা জানার অধিকার রয়েছে যে, কেন তিনি কষ্ট ভোগ করছেন। (ইয়োব ৭:২০; ১৩:২৪) আমরা সম্ভবত ইয়োবের অনুভূতি বুঝতে পারি। কিন্তু, যিহোবা জানতেন, ইয়োবের দৃষ্টিভঙ্গি আসলে ভুল আর তাই তিনি ইয়োবকে সংশোধন করেছিলেন। কীভাবে যিহোবা তা করেছিলেন?
১১, ১২. যিহোবা ইয়োবকে কোন বিষয়টা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিলেন আর ইয়োব কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
১১ যিহোবা ইয়োবকে যা বলেছিলেন, তা আমরা ইয়োব বইয়ের ৩৮ থেকে ৪১ অধ্যায়ে পড়তে পারি। যিহোবা ইয়োবের কাছে এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করেননি যে, কেন ইয়োব কষ্ট ভোগ করছেন। এর পরিবর্তে, যিহোবা তাকে এটা বোঝার জন্য সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের তুলনায় তিনি কতটা ক্ষুদ্র। তিনি ইয়োবকে এই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো ইয়োবের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (পড়ুন, ইয়োব ৩৮:১৮-২১.) যিহোবার কথাগুলো ইয়োবকে তার দৃষ্টিভঙ্গি রদবদল করতে সাহায্য করেছিল।
১২ ইয়োব এত কষ্ট ভোগ করার পর, এই ধরনের কথা বলার মাধ্যমে যিহোবা কি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছিলেন? না। আর ইয়োব নিজেও এমনটা মনে করেননি। ইয়োব যিহোবার পরামর্শ বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেটাকে মূল্যবান বলে মনে করেছিলেন। তিনি এমনকী বলেছিলেন: “আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি [“আমি যা বলেছি তা এখন ফিরিয়ে নিচ্ছি,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন], ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।” (ইয়োব ৪২:১-৬) এর আগে, ইলীহু নামে তুলনামূলকভাবে কমবয়সি একজন ব্যক্তিও ইয়োবকে তার চিন্তাভাবনা রদবদল করতে সাহায্য করেছিলেন। (ইয়োব ৩২:৫-১০) ইয়োব যিহোবার প্রেমময় পরামর্শ মন দিয়ে শোনার ও সেইসঙ্গে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার পর যিহোবা অন্যদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি ইয়োবের বিশ্বস্ততার কারণে তার উপর খুশি।—ইয়োব ৪২:৭, ৮.
১৩. কীভাবে যিহোবার পরামর্শ হয়তো ইয়োবের পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে সাহায্য করেছিল?
১৩ যিহোবার পরামর্শ থেকে ইয়োব ক্রমাগত উপকার লাভ করেছিলেন আর তা এমনকী তার পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পরও। “সদাপ্রভু ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন।” একসময়, তার “সাত পুত্ত্র ও তিন কন্যা জন্মিল।” (ইয়োব ৪২:১২-১৪) যদিও, ইয়োব তার এই ছেলে-মেয়েদের খুবই ভালোবেসেছিলেন, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তিনি তার মৃত সন্তানদের কথা চিন্তা করে কষ্ট পেতেন। আর তিনি সম্ভবত কখনোই তার ও তার পরিবারের প্রতি ঘটা সেই দুঃখজনক ঘটনাগুলো ভুলে যাননি। যদিও ইয়োব হয়তো পরবর্তী সময়ে তার পরীক্ষাগুলোর কারণ সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন, কিন্তু তিনি সম্ভবত এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, কেন ঈশ্বর তার উপর এত কিছু ঘটার অনুমতি দিয়েছিলেন। ইয়োব যদি এমনটা চিন্তা করেও থাকেন, তা হলে তিনি হয়তো তার প্রতি বলা যিহোবার কথাগুলো স্মরণ করতে পারতেন। তা করা তাকে সান্ত্বনা প্রদান করত এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করত।—গীত. ৯৪:১৯.
১৪. ইয়োবের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ ইয়োবের প্রতি যা ঘটেছিল, তা নিয়ে ধ্যান করা আমাদের চিন্তাভাবনা রদবদল করতে সাহায্য করতে পারে এবং আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে। ইয়োব বইটা হল সেই নথির একটা অংশ, যেটা যিহোবা “আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে” লিপিবদ্ধ করিয়েছেন, “যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) এটা আমাদের শিক্ষা দেয়, আমরা যেন নিজেদের সমস্যাগুলো নিয়ে এতটা চিন্তিত হয়ে না পড়ি যে, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টা ভুলে যাই। ইয়োবের মতো আমরাও জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে তাঁর অধিকারকে সমর্থন করি।
১৫. আমরা যখন সমস্যা সত্ত্বেও বিশ্বস্ততা বজায় রাখি, তখন আমরা কী সম্পাদন করি?
১৫ ইয়োবের অভিজ্ঞতা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে কারণ এটা দেখায়, আমাদের প্রতি পরীক্ষা ঘটার অর্থ এই নয় যে, যিহোবা আমাদের উপর রাগান্বিত। পরীক্ষাগুলো আমাদের নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার হিতো. ২৭:১১) আমরা যখন বিশ্বস্ততার সঙ্গে ধৈর্য ধরি, তখন আমরা যিহোবাকে খুশি করি ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের আশা আরও দৃঢ় হয়। (পড়ুন, রোমীয় ৫:৩-৫.) ইয়োবের অভিজ্ঞতা দেখায়, “প্রভু [ঈশ্বর] স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ৫:১১) আমরা যদি নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করি, তা হলে তিনি আমাদের পুরস্কৃত করবেন। আর এই বিষয়টা জানা আমাদের ‘আনন্দ ও সহিষ্ণুতার সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য’ ধরতে সাহায্য করে।—কল. ১:১১.
অধিকারকে সমর্থন করার সুযোগ করে দেয়। (মনোযোগ বজায় রাখুন
১৬. কেন আমাদের নিজেদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
১৬ এটা ঠিক যে, আমরা যখন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করি, তখন আমাদের পক্ষে নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টার উপর মনোযোগ রাখা কঠিন হতে পারে। এমনকী ছোটোখাটো সমস্যাগুলোকেও বড়ো সমস্যা বলে মনে হতে পারে, যদি আমরা সেগুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি। তাই, আমরা যে-কঠিন পরিস্থিতিই ভোগ করি না কেন, আমাদের সবসময় নিজেদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে, নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে ঈশ্বরের অধিকারকে সমর্থন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
১৭. কীভাবে যিহোবার কাজে ব্যস্ত থাকা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টার উপর মনোযোগ রাখতে সাহায্য করবে?
১৭ যিহোবার কাজে ব্যস্ত থাকা আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করবে যে, কোন বিষয়টা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। রানে নামে একজন বোনের উদাহরণ বিবেচনা করুন। তার স্ট্রোক হয়েছিল, তাকে সবসময় যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো ও সেইসঙ্গে তার ক্যান্সারও ছিল। হাসপাতালে থাকার সময়, তিনি সেখানে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের কাছে, অন্যান্য রোগীদের কাছে এবং যারা রোগীদের সঙ্গে দেখা করতে আসত, তাদের কাছে সাক্ষ্য দিতেন। একবার, বোন রানে যখন হাসপাতালে আড়াই সপ্তাহ ধরে ভর্তি ছিলেন, তখন তিনি সেখানে ৮০ ঘণ্টা প্রচার করেছিলেন। যদিও বোন জানতেন, তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি কখনো ভুলে যাননি যে, কোন বিষয়টা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করা তাকে শান্তি প্রদান করেছিল।
১৮. জেনিফারের অভিজ্ঞতা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করার বিষয়ে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
১৮ এ ছাড়া, আমরা যখন প্রতিদিনের ছোটোখাটো সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করি, তখনও নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করতে পারি। জেনিফার নামে একজন বোনকে একবার বাড়ি ফেরার সময় তিন দিন একটা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। একটার পর একটা প্লেন যখন বাতিল হয়ে যাচ্ছিল, তখন জেনিফার খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং নিজেকে একা বলে মনে করেছিলেন। সেই পরিস্থিতির কারণে তিনি দুঃখে ভেঙে পড়তে পারতেন। কিন্তু এর পরিবর্তে, জেনিফার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যেন যিহোবা তাকে এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে এমন অন্যান্য ব্যক্তিদের সুসমাচার সম্বন্ধে জানাতে সাহায্য করেন। ফলে, তিনি বহু লোকের কাছে সাক্ষ্য দিতে এবং প্রচুর সাহিত্য অর্পণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জেনিফার বলেন, “আমি অনুভব করেছিলাম যে, সেই কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও যিহোবা আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তাঁর নামের প্রশংসা করার জন্য যথেষ্ট শক্তি দিয়েছিলেন।”
১৯. কোন বিষয়টা সত্য উপাসকদের শনাক্ত করে?
১৯ কেবল যিহোবার লোকেরাই প্রকৃত অর্থে নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে তাঁর অধিকারের গুরুত্বকে উপলব্ধি করে। এই উপলব্ধিবোধই সত্য উপাসকদের শনাক্ত করে। তাই, আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেন আমরা নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করি।
২০. নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকারকে সমর্থন করার জন্য আপনি যা-কিছু করেন, যিহোবা সেই সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন?
২০ বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করার এবং পরীক্ষা সহ্য করার সময়, আপনি নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে তাঁর অধিকারকে সমর্থন করার জন্য যা-কিছু করেন, যিহোবা সেই সমস্তই লক্ষ করেন এবং সেগুলোকে মূল্যবান বলে মনে করেন। (ইব্রীয় ৬:১০) পরের প্রবন্ধে এই বিষয়ে আরও ব্যাখ্যা করা হবে যে, কেন নিখিলবিশ্বের শাসক হিসেবে যিহোবার অধিকার আপনার সমর্থনলাভের যোগ্য এবং কীভাবে আপনি সেটাকে আরও পূর্ণরূপে সমর্থন করতে পারেন।