সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা​—⁠“আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর”

অল্পবয়সিরা​—⁠“আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর”

“তোমরা সর্ব্বদা যেমন আজ্ঞাবহ হইয়া আসিতেছ, তেমনি . . . সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর।”—ফিলি. ২:১২.

গান সংখ্যা: ৪১, ১১

১. কেন বাপ্তিস্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখো।)

প্রতি বছর, হাজার হাজার বাইবেল ছাত্র বাপ্তিস্ম নেয়। তাদের মধ্যে অনেকেই হল অল্পবয়সি অর্থাৎ কিশোর-কিশোরী অথবা আরও ছোটো বয়সের সন্তান। তারা হয়তো সত্যে বড়ো হয়েছে। তুমি কি তাদের মধ্যে একজন? যদি হয়ে থাকো, তা হলে তুমি খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছ। প্রত্যেক খ্রিস্টানকে বাপ্তাইজিত হতে হবে। আর বাপ্তিস্ম হল পরিত্রাণ লাভ করার ও চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য এক বিষয়।—মথি ২৮:১৯, ২০; ১ পিতর ৩:২১.

২. কেন যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার বিষয়ে তোমার ভয় পাওয়া উচিত নয়?

তুমি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলে, তখন থেকে যিহোবা তোমাকে অনেক নতুন উপায়ে আশীর্বাদ করতে শুরু করেছেন। কিন্তু, তুমি কিছু নতুন দায়িত্বও লাভ করেছিলে। কেন তা বলা যায়? তোমার বাপ্তিস্মের দিনে যে-ভাই বাপ্তিস্মের বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “যিশু খ্রিস্টের বলিদানের ভিত্তিতে আপনি কি আপনার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন এবং যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাঁর কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন?” এর উত্তরে তুমি হ্যাঁ বলেছিলে। তুমি যিহোবাকে ভালোবাসার এবং তাঁর সেবাকে তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে তোলার প্রতিজ্ঞা করেছিলে। তুমি এইরকম একটা গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা করেছিলে বলে কি তোমার অনুশোচনা করা উচিত? অবশ্যই না! তুমি যদি যিহোবাকে তোমার জীবনে নির্দেশনা দিতে দাও, তা হলে তোমাকে কখনো অনুশোচনা করতে হবে না। যারা যিহোবাকে জানে না, তারা আসলে শয়তানের জগতের অংশ। দিয়াবল তাদের অথবা তোমার মঙ্গলের জন্য একটুও চিন্তা করে না। আসলে, তুমি যদি তার পক্ষ নেওয়ার এবং যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা হারাও, তা হলে সে খুবই খুশি হবে।

৩. তুমি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলে বলে কীভাবে তিনি তোমাকে আশীর্বাদ করেছেন?

একটু চিন্তা করো, তুমি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলে ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলে বলে তিনি তোমাকে কীভাবে আশীর্বাদ করেছেন। যেহেতু তুমি যিহোবার কাছে নিজের জীবন সমর্পণ করেছ, তাই তুমি আস্থা সহকারে বলতে পার: “সদাপ্রভু আমার সপক্ষ, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিতে পারে?” (গীত. ১১৮:৬) ঈশ্বরের পক্ষে থাকার এবং তিনি যে তোমাকে নিয়ে গর্বিত, তা জানার চেয়ে মহৎ সম্মানের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না।

এক ব্যক্তিগত দায়িত্ব

৪, ৫. (ক) কেন আমরা বলতে পারি যে, উৎসর্গীকরণ হল এক ব্যক্তিগত দায়িত্ব? (খ) সমস্ত বয়সের খ্রিস্টানই কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়?

একজন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান হিসেবে যিহোবার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক এমন কোনো পৈতৃক সম্পত্তি অথবা জমির মতো নয়, যেটা তুমি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করতে পারবে। তুমি যদি এখনও তোমার বাবা-মায়ের সঙ্গে বাস করো, তা সত্ত্বেও যিহোবার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক বজায় রাখা হল তোমার ব্যক্তিগত দায়িত্ব। কেন এই বিষয়টা স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ আমরা কেউই জানতে পারি না যে, ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্বাস কীভাবে পরীক্ষিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, তুমি হয়তো কিশোর বয়সে পা দেওয়ার আগেই বাপ্তিস্ম নিয়েছিলে। কিন্তু, এখন কিশোর বয়সে পৌঁছানোর পর তোমাকে নতুন নতুন অনুভূতি ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। একজন কিশোরী বলেছিলেন: “সাধারণত, একটি সন্তান কেবল স্কুলে এক টুকরো জন্মদিনের কেক না খেতে পারার কারণে যিহোবার সাক্ষি হওয়াকে বিরক্তিকর বলে মনে করবে না। কিন্তু, কয়েক বছরের মধ্যে যখন যৌন সম্পর্ক করার আকাঙ্ক্ষা ধীরে ধীরে তীব্র হবে, তখন তাকে এই বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে যে, যিহোবার আইনের বাধ্য হওয়া সবসময়ই সর্বোত্তম।”

কেবল অল্পবয়সিদেরই যে নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে, এমন নয়। এমনকী যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বাপ্তিস্ম নেয়, তাদের বিশ্বাসও অনেক অপ্রত্যাশিত উপায়ে পরীক্ষিত হয়। তাদের হয়তো বিয়ে, স্বাস্থ্য অথবা চাকরির কারণে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের বয়স যা-ই হোক না কেন, আমাদের প্রত্যেককেই আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে।—যাকোব ১:১২-১৪.

৬. (ক) যিহোবার কাছে করা তোমার উৎসর্গীকরণ যে এক শর্তহীন প্রতিজ্ঞা, সেটার অর্থ কী? (খ) ফিলিপীয় ৪:১১-১৩ পদে বলা কথাগুলো থেকে তুমি কী শিখতে পার?

তোমার বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য সবসময় মনে রাখবে যে, তুমি যিহোবার কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলে, সেটা শর্তহীন। এর অর্থ হল, তুমি নিখিলবিশ্বের শাসকের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলে, যা-ই ঘটুক না কেন, এমনকী তোমার বন্ধুবান্ধব অথবা বাবা-মা যদি তাঁর সেবা করা বন্ধও করে দেন, তা সত্ত্বেও তুমি তাঁর সেবা করে যাবে। (গীত. ২৭:১০) সমস্ত পরিস্থিতিতেই যিহোবার কাছে সাহায্য চাও, যাতে তিনি তোমাকে তোমার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করতে সাহায্য করেন।—পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:১১-১৩.

৭. “সভয়ে ও সকম্পে” তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার অর্থ কী?

যিহোবা চান যেন তুমি তাঁর বন্ধু হয়ে ওঠো। কিন্তু, এই বন্ধুত্ব দৃঢ় রাখার এবং তোমার পরিত্রাণ সম্পন্ন করার বা সেটার উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। ফিলিপীয় ২:১২ পদ বলে: “সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর।” এর অর্থ হল আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে যে, কীভাবে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী থাকতে এবং তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি, তা যা-ই ঘটুক না কেন। আমরা এমনটা ধরে নিতে পারি না যে, আমরা এমনি এমনিই তা করতে পারব। মনে রেখো, দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরের সেবা করেছে এমন কোনো কোনো ব্যক্তি তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখেনি। কোন ব্যাবহারিক বিষয়গুলো তোমাকে তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

বাইবেল অধ্যয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ

৮. ব্যক্তিগত অধ্যয়নের অন্তর্ভুক্ত কী এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?

যিহোবার বন্ধু হওয়ার জন্য আমাদের তাঁর কথা শুনতে হবে এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা যে-প্রধান উপায়ে যিহোবার কথা শুনি, তা হল বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে। এর অন্তর্ভুক্ত হল ঈশ্বরের বাক্য ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা পড়া এবং সেগুলো নিয়ে ধ্যান করা। কিন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন করা বিভিন্ন তথ্য মুখস্থ করার মতো নয়, যেমনটা তুমি হয়তো স্কুলের কোনো পরীক্ষার জন্য করে থাকো। এর পরিবর্তে, এটা হল একটা রোমাঞ্চকর যাত্রার মতো, যেখানে তুমি যিহোবা সম্বন্ধে নতুন নতুন বিষয় জানতে ও খুঁজে বের করতে পারবে। এভাবে, তুমি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হবে এবং তিনিও তোমার নিকটবর্তী হবেন।—যাকোব ৪:৮.

তুমি যিহোবার সঙ্গে কত ভালোভাবে ভাববিনিময় করো? (৮-১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৯. কোন হাতিয়ারগুলো তোমাকে তোমার ব্যক্তিগত অধ্যয়নে সাহায্য করেছে?

যিহোবার সংগঠন এমন অনেক হাতিয়ার জোগায়, যেগুলো তোমাকে তোমার অধ্যয়নের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেলের বিবরণগুলো থেকে তুমি যা শেখো, তা কাজে লাগাতে সাহায্য করার জন্য jw.org-এর “Teenagers” বিভাগে “Bible Study Activities” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া, তুমি jw.org ইংরেজি ওয়েবসাইটে “বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়?” শিরোনামের বইয়ের অধ্যয়ন সহায়কগুলো খুঁজে পেতে পার। এগুলো তোমাকে তোমার বিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং অন্যদের কাছে তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে জানাতে সাহায্য করতে পারে। তুমি ২০১৭ সালের প্রহরীদুর্গ (জনসাধারণের সংস্করণ) পত্রিকার নং ১ সংখ্যার ৪ থেকে ৬ পৃষ্ঠায় ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য আরও কিছু পরামর্শ খুঁজে পেতে পার। পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য অধ্যয়ন ও ধ্যান করা গুরুত্বপূর্ণ।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.

প্রার্থনা করা অপরিহার্য

১০. কেন একজন বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানকে প্রার্থনা করতে হবে?

১০ আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি, তখন আমরা যিহোবার কথা শুনি এবং আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলি। আমাদের প্রার্থনাকে কেবল একটা অভ্যাস অথবা সাফল্য লাভ করার জন্য ‘সৌভাগ্যের তাবিজকবজ’ হিসেবে দেখা উচিত নয়। প্রার্থনা হল আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে এক বাস্তব ভাববিনিময়। একটু চিন্তা করো: তুমি যা বলতে চাও, তা শোনার জন্য যিহোবা আগ্রহী! (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬.) তাই বাইবেল বলে, তুমি যখন কোনো কারণে উদ্‌বিগ্ন হও, তখন “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর।” (গীত. ৫৫:২২) লক্ষ লক্ষ ভাই-বোন তোমাকে এ-বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারে যে, এই পরামর্শ সত্যিই তাদের সাহায্য করেছে। আর এটা তোমাকেও সাহায্য করতে পারে!

১১. কেন তোমার সবসময় যিহোবাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত?

১১ তবে, আমাদের শুধু প্রয়োজনের সময়ই যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত নয়। বাইবেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “কৃতজ্ঞ হও।” (কল. ৩:১৫) কখনো কখনো আমরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করি যে, আমরা নিজেদের কাছে থাকা ভালো বিষয়গুলো লক্ষই করি না। তাই, এটা করার চেষ্টা করো: প্রতিদিন, অন্ততপক্ষে এমন তিনটে বিষয়ের কথা চিন্তা করো, যেগুলোর জন্য তুমি কৃতজ্ঞ এবং এরপর সেগুলোর জন্য যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাও। এবিগেল নামে একজন কিশোরী, যিনি ১২ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, বলেন: “আমি মনে করি, নিখিলবিশ্বের যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে যিহোবার প্রতি আমাদের আরও বেশি করে কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত। তিনি আমাদের যে-উপহারগুলো দিয়েছেন, সেগুলো জন্য আমাদের প্রতিটা সুযোগে তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।” কখনো কখনো বোন এবিগেল নিজেকে এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেন, যেটা তিনি একবার অন্য কারো কাছ থেকে শুনেছিলেন: “আমি যদি কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে কেবল সেই বিষয়গুলোই দেখতে পাই, যেগুলোর জন্য আমি আজকে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি, তা হলে আমার কাছে আসলে ক-টা বিষয় থাকবে?”

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মূল্য

১২, ১৩. কীভাবে তুমি ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার মঙ্গলভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ এবং যিহোবা তোমাকে যেভাবে সাহায্য করেছেন, সেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১২ যিহোবা রাজা দায়ূদকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিলেন। তাই, দায়ূদ তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই কথাগুলো বলেছিলেন: “আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার শরণাপন্ন।” (গীত. ৩৪:৮) এই শাস্ত্রপদ আমাদের দেখায় যে, আমাদের ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার মঙ্গলভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। তুমি যখন বাইবেল ও আমাদের প্রকাশনাগুলো পড়ো এবং আমাদের সভাগুলোতে যোগ দাও, তখন তুমি শেখো যে, ঈশ্বর কীভাবে অন্যদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছেন। কিন্তু, যিহোবার সঙ্গে তোমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক দৃঢ় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে নিজের চোখে দেখতে হবে যে, যিহোবা কীভাবে তোমাকে সাহায্য করছেন। কীভাবে তুমি ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার মঙ্গলভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ?

১৩ প্রত্যেক খ্রিস্টানই কোনো-না-কোনো বিশেষ উপায়ে যিহোবার মঙ্গলভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। তিনি আমাদের প্রত্যেককেই তাঁর ও তাঁর পুত্রের নিকটবর্তী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যিশু বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) তুমি কি অনুভব করো যে, যিহোবা তোমাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছেন? না কি তুমি মনে করো, ‘যিহোবা আমার বাবা-মাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছেন আর আমি কেবল আমার বাবা-মাকে অনুসরণ করছি।’ মনে রেখো, তুমি যখন যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলে এবং বাপ্তিস্ম নিয়েছিলে, তখন তুমি তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এক বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলে। বাইবেল আমাদের বলে: “যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সেই তাঁহার জানা লোক।” (১ করি. ৮:৩) যিহোবা তোমাকে তাঁর সংগঠনে যে-স্থান দিয়েছেন, সেটাকে সবসময় মূল্যবান হিসেবে মনে করবে।

১৪, ১৫. কীভাবে পরিচর্যা তোমার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৪ এ ছাড়া, তুমি সেই সময়গুলোতে যিহোবার মঙ্গলভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করো, যখন তিনি তোমাকে অন্যদের সঙ্গে, হোক তা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অথবা স্কুলে, তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলার সাহস জোগান। সহপাঠীদের কাছে প্রচার করা কঠিন হতে পারে। তুমি হয়তো এই বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো যে, তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। বিশেষ করে সহপাঠীদের একটা বড়ো দলের সামনে নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার সময় তোমার আরও বেশি ভয় লাগতে পারে। তাই, কী তোমাকে সাহায্য করতে পারে?

১৫ তোমার বিশ্বাসের পিছনে থাকা কারণগুলো নিয়ে চিন্তা করো। যদি তোমার ভাষায় jw.org-এ অধ্যয়ন সহায়কগুলো পাওয়া যায়, তা হলে অবশ্যই সেগুলো ব্যবহার করো। সেগুলো তোমাকে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করবে যে, তুমি কী বিশ্বাস করো, কেন সেগুলো বিশ্বাস করো এবং কীভাবে তুমি অন্যদের সামনে সেগুলো ব্যাখ্যা করতে পার। তুমি যখন সত্যিই দৃঢ়প্রত্যয়ী হবে এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি নেবে, তখন তুমি যিহোবার বিষয়ে অন্যদের জানাতে আগ্রহী হবে।—যির. ২০:৮, ৯.

১৬. কী তোমাকে তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলার জন্য সাহস প্রদান করতে পারে?

১৬ এমনকী তুমি যদি ভালোভাবে প্রস্তুতি নাও, তা সত্ত্বেও তুমি তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঘাবড়ে যেতে পার। ১৮ বছর বয়সি একজন বোন, যিনি ১৩ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, বলেন: “যদিও আমি আমার বিশ্বাসগুলো সম্বন্ধে জানি কিন্তু তা সত্ত্বেও, মাঝে মাঝে আমার সেই বিষয়ে গুছিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হয়।” তাই, তিনি সত্য সম্বন্ধে স্বাভাবিক ও শান্তভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন: “আমার সহপাঠীরা নির্দ্বিধায় তাদের কাজগুলো নিয়ে কথা বলে। আমারও তা-ই করা উচিত। তাই, কোনো সাধারণ কথা বলার সময় আমি সেই বিষয়ে অল্প কিছু উল্লেখ করি যেমন, ‘সেদিন বাইবেল থেকে শেখানোর সময় . . .।’ এরপর, আমি যে-কথাটা বলছিলাম, সেটাই বলে চলি। যদিও আমি সেইসময় মূলত বাইবেলের বিষয়ে কথা বলি না, কিন্তু প্রায়ই অন্যেরা এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে যে, কীভাবে আমি বাইবেল থেকে শিক্ষা দিয়ে থাকি। কখনো কখনো তারা এই বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। আমি এই পদ্ধতিটা যত বেশি ব্যবহার করি, আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা তত বেশি সহজ হয়ে ওঠে। আর আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার পর সবসময়ই খুব ভালো লাগে!”

১৭. আর কী তোমাকে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৭ অন্যেরা যখন অনুভব করে যে, তুমি তাদের জন্য চিন্তা করো এবং তাদের সম্মান করো, তখন তাদের পক্ষে তোমার ও তোমার বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানো সহজ হয়ে ওঠে। ১৭ বছর বয়সি ওলিভিয়া, যিনি অনেক ছোটো বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, বলেন: “আমি সবসময় এই ভেবে ভয় পেতাম যে, আমি যদি কোনো কথোপকথনের মধ্যে বাইবেলের বিষয়ে উল্লেখ করি, তা হলে লোকেরা মনে করবে, আমি সবসময় ধর্ম নিয়েই কথা বলি।” এরপর তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন। তিনি নিজের ভয়ের বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার পরিবর্তে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবেন: “অনেক অল্পবয়সি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে কিছুই জানে না। সাক্ষি বলতে কেবল আমাদের সঙ্গেই তারা মেলামেশা করে। তাই, আমরা যেভাবে কাজ করি, সেটা তাদের প্রতিক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে। আমরা যদি লাজুক অথবা ভীতু স্বভাবের হই অথবা আমাদের বিশ্বাসের বিষয়ে কথা বলাকে কঠিন বলে মনে করি কিংবা যখন সেই বিষয়ে কথা বলি, তখন ভয়ে জড়সড় হয়ে যাই, তা হলে কী হবে? তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, আমরা আমাদের বিশ্বাসের বিষয়ে গর্ব বোধ করি না। তারা এমনকী আমাদের আস্থার অভাবের কারণে খারাপভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। কিন্তু, আমরা যদি আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে শান্তভাবে ও আস্থা সহকারে কথা বলি এবং সেটাকে কথাবার্তার একটা সাধারণ অংশ করে তুলি, তা হলে তারা সম্ভবত আমাদের প্রতি সম্মান দেখাবে।”

তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করে চলো

১৮. তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য তোমাকে কী করতে হবে?

১৮ আমরা যেমন দেখেছি, তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করা হল এক গুরুগম্ভীর দায়িত্ব। তা করার জন্য তোমাকে ঈশ্বরের বাক্য পড়তে ও সেটি নিয়ে ধ্যান করতে হবে, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে এবং তিনি তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে যে-সমস্ত উপায়ে সাহায্য করেছেন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এগুলো করা তোমাকে এই বিষয়ে আরও আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে যে, যিহোবা হলেন তোমার বন্ধু। আর এটা তোমাকে তোমার বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের কাছে বলার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৭৩:২৮.

১৯. কেন তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা করা সার্থক হবে?

১৯ যিশু বলেছিলেন: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক।” (মথি ১৬:২৪) হ্যাঁ, যিশুকে অনুসরণ করার জন্য প্রত্যেক খ্রিস্টানকে অবশ্যই যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে এবং বাপ্তিস্ম নিতে হবে। কিন্তু, এটা একটা চমৎকার জীবনের কেবল আরম্ভ মাত্র আর এটা ঈশ্বরের নতুন জগতে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করবে। তাই, তোমার পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য যথাসাধ্য করো!