সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমি ঈশ্বরে . . . প্রত্যাশা করিতেছি”

“আমি ঈশ্বরে . . . প্রত্যাশা করিতেছি”

“শেষ আদম জীবনদায়ক আত্মা হইলেন।”—১ করি. ১৫:৪৫.

গান সংখ্যা: ১২, ২৪

১-৩. (ক) কোন বিষয়টাকে আমাদের মূল বিশ্বাসগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত? (খ) কেন পুনরুত্থান এতটা গুরুত্বপূর্ণ? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

কোনো ব্যক্তি যদি আপনাকে আপনার বিশ্বাসের মূল শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন, তা হলে আপনি কী বলবেন? নিশ্চিতভাবেই আপনি বলবেন, আপনি বিশ্বাস করেন যে, যিহোবা হলেন সৃষ্টিকর্তা এবং একমাত্র তিনিই আমাদের জীবন দিয়েছেন। সম্ভবত আপনি এও বলবেন, আপনি যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করেন, যিনি মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান হিসেবে নিজের জীবন দিয়েছিলেন। আপনি নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের পরমদেশ পৃথিবীর বিষয়ে বলবেন, যেখানে ঈশ্বরের লোকেরা চিরকাল বেঁচে থাকবে। কিন্তু, আপনি কি আপনার সবচেয়ে মূল্যবান বিশ্বাসগুলোর মধ্যে পুনরুত্থানকে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

আমরা যদি মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পেয়ে চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখি, তারপরও পুনরুত্থানকে আমাদের মূল বিশ্বাসগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার উত্তম কারণ রয়েছে। প্রেরিত পৌল দেখিয়েছিলেন, কেন পুনরুত্থান এতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন: “মৃতগণের পুনরুত্থান যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও ত উত্থাপিত হন নাই।” যিশুকে যদি পুনরুত্থিত করা না হতো, তা হলে তিনি স্বর্গে রাজা হিসেবে শাসন করতে পারতেন না এবং আমাদের প্রচার কাজ বৃথা হয়ে যেত। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:১২-১৯.) কিন্তু আমরা জানি, যিশুকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল। যেহেতু আমরা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করি, তাই আমরা সেই যিহুদি সদ্দূকীদের মতো নই, যারা দৃঢ়ভাবে দাবি করত যে, মৃতেরা পুনরায় জীবিত হতে পারে না। এমনকী যখন অন্যেরা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে, তখনও এই বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় থাকে যে, ঈশ্বর মৃতদের পুনরুত্থিত করতে পারেন।—মার্ক ১২:১৮; প্রেরিত ৪:২, ৩; ১৭:৩২; ২৩:৬-৮.

পৌল বলেছিলেন, ‘মৃতগণের পুনরুত্থানের’ শিক্ষা হল “খ্রীষ্ট-বিষয়ক আদিম কথা” বা মৌলিক শিক্ষার অংশ। (ইব্রীয় ৬:১, ২) তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, পুনরুত্থানের উপর তার বিশ্বাস রয়েছে। (প্রেরিত ২৪:১০, ১৫, ২৪, ২৫) এমনকী যদিও এটা হল একটা মৌলিক শিক্ষা, ঈশ্বরের বাক্য থেকে শেখা আমাদের প্রাথমিক বিষয়গুলোর মধ্যে একটা, তারপরও আমাদের সতর্কতার সঙ্গে পুনরুত্থানের বিষয়টা নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১২) কেন?

৪. পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমরা হয়তো কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

লোকেরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে, তখন সাধারণত তারা অতীতের পুনরুত্থানের বিবরণগুলো যেমন, লাসারের পুনরুত্থান সম্বন্ধে পড়ে। এ ছাড়া তারা শেখে যে, অব্রাহাম, ইয়োব এবং দানিয়েল এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, ভবিষ্যতে মৃত ব্যক্তিরা আবারও জীবিত হবে। তা সত্ত্বেও, কেউ যদি আপনাকে বাইবেল থেকে প্রমাণ করতে বলে যে, কেন আপনি শত শত বছর আগে করা পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞাগুলোর উপর বিশ্বাস করেন, তা হলে আপনি কী বলবেন? আর বাইবেল কি জানায় যে, ভবিষ্যতে কখন পুনরুত্থান হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে।

একটা পুনরুত্থান, যেটার বিষয়ে শত শত বছর আগে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল

৫. প্রথমে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

কোনো ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর কিছুসময় পরই পুনরুত্থিত করার বিষয়টা আমরা হয়তো সহজেই কল্পনা করতে পারি। (যোহন ১১:১১; প্রেরিত ২০:৯, ১০) কিন্তু, আমরা কি এমন একটা প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রাখতে পারি যে, কোনো ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে অনেক বছর পর, হতে পারে এমনকী শত শত বছর পর, পুনরুত্থিত করা হবে? সেই প্রতিজ্ঞা যদি এমন কোনো ব্যক্তির বিষয়ে করা হয়ে থাকে, যিনি অনেক আগে মারা গিয়েছেন কিংবা এমন কারো সম্বন্ধে যিনি সম্প্রতি মারা গিয়েছেন, তা হলে আমরা কি তা বিশ্বাস করতে পারি? আসলে, আপনি ইতিমধ্যেই এমন একটা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেন, যেটা প্রতিজ্ঞা করার শত শত বছর পর ঘটেছিল। আমরা কোন পুনরুত্থানের বিষয়ে কথা বলছি? আর সেটা কীভাবে ভবিষ্যতের পুনরুত্থানের বিষয়ে আপনার আশার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

৬. কীভাবে গীতসংহিতা ১১৮ গীতে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্‌বাণীর পরিপূর্ণতার সঙ্গে যিশু জড়িত?

আসুন, আমরা গীতসংহিতা ১১৮ গীত ব্যবহার করে এমন একটা পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনা করি, যেটার বিষয়ে অনেক বছর আগে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল। এই গীত সম্ভবত দায়ূদ রচনা করেছিলেন। এটার মধ্যে এই কথাগুলো পাওয়া যায়: “সদাপ্রভু, বিনয় করি, পরিত্রাণ কর” এবং “ধন্য তিনি, যিনি সদাপ্রভুর নামে আসিতেছেন।” লোকেরা সেইসময় মশীহের বিষয়ে করা এই ভবিষ্যদ্‌বাণী উদ্ধৃতি করেছিল, যখন যিশু তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে নিশান মাসের ৯ তারিখে একটা গাধার পিঠে চড়ে যিরূশালেমে প্রবেশ করেছিলেন। (গীত. ১১৮:২৫, ২৬; মথি ২১:৭-৯) কিন্তু, কীভাবে গীতসংহিতা ১১৮ গীত এমন একটা পুনরুত্থানের বিষয়ে নির্দেশ করেছিল, যেটা ভবিষ্যতে অনেক বছর পর ঘটবে? লক্ষ করুন, এই গীতে আরও কী বলা হয়েছে: “গাঁথকেরা যে প্রস্তর অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল।”—গীত. ১১৮:২২.

“গাঁথকেরা” মশীহকে ‘অগ্রাহ্য করিয়াছিল’ (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. কীভাবে যিহুদিরা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল?

যে-“গাঁথকেরা” মশীহকে অগ্রাহ্য বা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারা হল যিহুদি নেতারা। তারা কেবল যিশুকে উপেক্ষা করার অথবা খ্রিস্ট হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করার বিষয়টা অস্বীকার করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিল। অনেক যিহুদি যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জোরালোভাবে দাবি করার মাধ্যমে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। (লূক ২৩:১৮-২৩) হ্যাঁ, তারা যিশুর মৃত্যুর জন্যও দায়ী ছিল।

ঈশ্বর যিশুকে “কোণের প্রধান প্রস্তর” হওয়ার জন্য পুনরুত্থিত করেছিলেন (৮, ৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. কীভাবে যিশু “কোণের প্রধান প্রস্তর” হয়ে উঠতে পারতেন?

যিশুকে যদি উপেক্ষা ও হত্যা করা হতো, তা হলে কীভাবে তিনি “কোণের প্রধান প্রস্তর” হয়ে উঠতে পারতেন? এটা একমাত্র তখনই সম্ভবপর হতে পারত, যদি তাঁকে পুনরুত্থিত করা হতো। যিশু এই বিষয়টা একজন খেতের মালিকের দৃষ্টান্ত বলার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছিলেন। সেই দৃষ্টান্তে, একজন খেতের মালিক এমন কৃষকদের কাছে বার্তাবাহকদের পাঠিয়েছিলেন, যারা তার অধীনে কাজ করত। কিন্তু, সেই কৃষকেরা বার্তাবাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল। অবশেষে, সেই মালিক তার নিজের ছেলেকে তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে, তারা তার কথা শুনবে। কিন্তু, তারা সেই মালিকের ছেলেকে হত্যা করেছিল। এই দৃষ্টান্ত বলার পর যিশু গীতসংহিতা ১১৮:২২ পদে দেওয়া ভবিষ্যদ্‌বাণী উদ্ধৃতি করেছিলেন। (লূক ২০:৯-১৭) প্রেরিত পিতর সেইসময় এই একই শাস্ত্রপদ ব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি ‘যিরূশালেমে একত্র হওয়া’ যিহুদি ‘অধ্যক্ষ, প্রাচীনবর্গ ও অধ্যাপকগণের’ উদ্দেশে কথা বলেছিলেন। তিনি ‘নাসরতীর যীশু খ্রীষ্ট’ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তাদের বিষয়ে বলেছিলেন, “[খ্রিষ্টকে] আপনারা ক্রুশে দিয়াছিলেন, যাহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইলেন।” তারপর তিনি বলেছিলেন: “তিনিই সেই প্রস্তর, যাহা গাঁথকেরা যে আপনারা, আপনাদের দ্বারা অবজ্ঞাত হইয়াছিল, যাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল।”—প্রেরিত ৩:১৫; ৪:৫-১১; ১ পিতর ২:৪ক, ৫-৭.

৯. গীতসংহিতা ১১৮:২২ পদে কোন চমৎকার ঘটনার বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল?

স্পষ্টতই, গীতসংহিতা ১১৮:২২ পদে এমন একটা পুনরুত্থানের বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, যেটা শত শত বছর পর ঘটবে। মশীহকে প্রত্যাখ্যান করা এবং হত্যা করা হবে। কিন্তু, তাঁকে আবারও জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং তিনি কোণের প্রধান প্রস্তর হয়ে উঠবেন। পুনরুত্থিত হওয়ার পর যিশু সেই একমাত্র ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন, যাঁর নাম “মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত” হয়েছে এবং যাঁর “নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।”—প্রেরিত ৪:১২; ইফি. ১:২০.

১০. (ক) গীতসংহিতা ১৬:১০ পদে কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল? (খ) কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি যে, গীতসংহিতা ১৬:১০ পদে দায়ূদের বিষয়ে বলা হয়নি?

১০ আসুন, আমরা আরেকটা শাস্ত্রপদ বিবেচনা করি, যেখানে একটা পুনরুত্থানের বিষয়ে বলা হয়েছিল। এটা এক হাজার বছরেরও বেশি সময় পর পরিপূর্ণ হয়েছিল। এই বিষয়টা বিবেচনা করে আমাদের এই ব্যাপারে আস্থা গড়ে তোলা উচিত যে, ভবিষ্যদ্‌বাণী অথবা প্রতিজ্ঞা করার দীর্ঘসময় পরও পুনরুত্থান ঘটতে পারে। গীতসংহিতা ১৬ গীতে আমরা দায়ূদের লেখা এই কথাগুলো পড়ি: “তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না।” (গীত. ১৬:১০) দায়ূদ এইরকমটা বলতে চাননি যে, তিনি কখনো মারা যাবেন না এবং কখনো পাতালে বা মানবজাতির সাধারণ কবরে যাবেন না। ঈশ্বরের বাক্য স্পষ্টভাবে জানায় যে, দায়ূদ বৃদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন এবং তিনি ‘আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত এবং দায়ূদ-নগরে কবরপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন।’ (১ রাজা. ২:১, ১০) তা হলে, এই শাস্ত্রপদে কার বিষয়ে বলা হয়েছে?

১১. কখন পিতর গীতসংহিতা ১৬:১০ পদটা ব্যাখ্যা করেছিলেন?

১১ দায়ূদ সেই কথাগুলো লেখার এক হাজার বছরেরও বেশি সময় পর পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, গীতসংহিতা ১৬:১০ পদে কার বিষয়ে বলা হয়েছিল। যিশু মারা যাওয়ার ও পুনরুত্থিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর পিতর হাজার হাজার যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তির উদ্দেশে কথা বলেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ২:২৯-৩২.) তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, দায়ূদ মারা গিয়েছেন এবং কবরপ্রাপ্ত হয়েছেন। আর বাইবেল এমনটা বলে না যে, শ্রোতাদের মধ্যে কেউ সেইসময় পিতরের কথার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছিল, যখন তিনি আরও বলেছিলেন যে, দায়ূদ “পূর্ব্ব হইতে দেখিয়া” মশীহের ‘পুনরুত্থান বিষয়ে কথা কহিয়াছিলেন।’

১২. কীভাবে গীতসংহিতা ১৬:১০ পদে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং সেটা পুনরুত্থানের প্রতিজ্ঞার বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা প্রদান করে?

১২ পিতর গীতসংহিতা ১১০:১ পদে লেখা দায়ূদের কথাগুলো উদ্ধৃতি করার মাধ্যমে তার কথার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ২:৩৩-৩৬.) পিতর শাস্ত্র থেকে যুক্তি করার মাধ্যমে সেই বিশাল জনতাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন যে, যিশু হলেন “প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই।” লোকেরা বুঝতে পেরেছিল, যিশুকে যখন মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তখন গীতসংহিতা ১৬:১০ পদে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল। পরবর্তী সময়, প্রেরিত পৌল সেই একই প্রমাণ ব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া নগরের যিহুদিদের উদ্দেশে কথা বলেছিলেন। এই প্রমাণ তাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছিল এবং তারা পৌলের কাছ থেকে আরও বিষয় জানতে চেয়েছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ১৩:৩২-৩৭, ৪২.) এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমাদের এই ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া উচিত যে, ভবিষ্যতের একটা পুনরুত্থানের বিষয়ে করা বাইবেলের সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নির্ভরযোগ্য ছিল, এমনকী যদিও সেগুলো শত শত বছর পর পরিপূর্ণ হয়েছিল।

পুনরুত্থান কখন হবে?

১৩. পুনরুত্থানের বিষয় আমরা হয়তো কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

১৩ এই বিষয়টা জানা উৎসাহজনক যে, ভবিষ্যদ্‌বাণী করার শত শত বছর পরও একটা পুনরুত্থান ঘটতে পারে। তা সত্ত্বেও, কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘এর মানে কি এই যে, আমার মৃত প্রিয়জনকে দেখার জন্য আমাকে অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হবে? পুনরুত্থান কখন হবে?’ আসলে, যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন যে, এমন কিছু বিষয় ছিল, যেগুলো তারা জানতেন না এবং জানতে পারতেন না। সেই “সকল সময় কি কাল” সম্বন্ধে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো “পিতা নিজ কর্ত্তৃত্ত্বের অধীন রাখিয়াছেন।” (প্রেরিত ১:৬, ৭; যোহন ১৬:১২) তবে, কখন পুনরুত্থান ঘটবে, সেই বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু তথ্য রয়েছে।

১৪. কীভাবে যিশুর পুনরুত্থান আগের পুনরুত্থানগুলোর চেয়ে আলাদা ছিল?

১৪ বাইবেলে লিপিবদ্ধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুনরুত্থান হল যিশুর পুনরুত্থান। তাঁকে যদি মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত করা না হতো, তা হলে আমাদের কারোরই নিজেদের মৃত প্রিয়জনদের পুনরায় দেখার কোনো আশা থাকত না। যাদেরকে যিশুর আগে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল যেমন, যে-ব্যক্তিরা এলিয় ও ইলীশায়ের দ্বারা পুনরুত্থিত হয়েছিল, তারা চিরকাল বেঁচে থাকেনি। তারা আবারও মারা গিয়েছিল এবং কবরে মাটিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু, যিশু “মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন।” তিনি “আর কখনও মরেন না, তাঁহার উপরে মৃত্যুর আর কর্ত্তৃত্ব নাই।” তিনি স্বর্গে “যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে” জীবিত আছেন।—রোমীয় ৬:৯; প্রকা. ১:৫, ১৮; কল. ১:১৮; ১ পিতর ৩:১৮.

১৫. কেন যিশুকে “অগ্রিমাংশ” বলা হয়?

১৫ স্বর্গে একজন আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে যিশুর পুনরুত্থান হল এই ধরনের পুনরুত্থানের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুনরুত্থান। (প্রেরিত ২৬:২৩) তবে, একমাত্র যে তাঁকেই স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, এমন নয়। যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতরা তাঁর সঙ্গে স্বর্গে শাসন করবে। (লূক ২২:২৮-৩০) কিন্তু, তারা একমাত্র মারা যাওয়ার পরেই এই পুরস্কার লাভ করবে। এরপর, তাদের যিশুর মতো আত্মিক দেহে পুনরুত্থিত করা হবে। পৌল লিখেছিলেন, “খ্রীষ্ট মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তিনি নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ।” এরপর পৌল বলেছিলেন যে, এমন অন্যান্য ব্যক্তিরাও থাকবে, যারা পুনরুত্থিত হয়ে স্বর্গে যাবে। তিনি বলেছিলেন: “প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে; খ্রীষ্ট অগ্রিমাংশ, পরে খ্রীষ্টের লোক সকল তাঁহার আগমনকালে” বা উপস্থিতির সময়।১ করি. ১৫:২০, ২৩.

১৬. স্বর্গীয় পুনরুত্থান কখন ঘটবে, সেই বিষয়ে আমাদের কাছে কোন ইঙ্গিত রয়েছে?

১৬ পৌলের কথাগুলো আমাদের এই বিষয়ে একটা ইঙ্গিত দেয়, কখন স্বর্গীয় পুনরুত্থান ঘটবে। এটা খ্রিস্টের উপস্থিতির সময় ঘটবে। বিগত অনেক বছর ধরে যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেল থেকে এই বিষয়টা প্রমাণ করে এসেছে যে, খ্রিস্টের ‘আগমনকাল’ বা উপস্থিতির সময় ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল। আমরা এখনও তাঁর ‘আগমনকাল’ বা উপস্থিতির সময়ে বাস করছি এবং এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ খুবই সন্নিকট।

১৭, ১৮. খ্রিস্টের উপস্থিতির সময় কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি কী ঘটবে?

১৭ বাইবেল স্বর্গীয় পুনরুত্থানের বিষয়ে আরও ব্যাখ্যা করে বলে: “আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক; . . . কেননা আমরা যখন বিশ্বাস করি যে, যীশু মরিয়াছেন, এবং উঠিয়াছেন, তখন জানি, ঈশ্বর . . . নিদ্রাগত লোকদিগকেও সেইরূপে তাঁহার সহিত আনয়ন করিবেন। . . . আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা প্রভুর আগমন পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিব, আমরা কোন ক্রমে সেই নিদ্রাগত লোকদের অগ্রগামী হইব না। কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ, . . . স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিবেন, আর যাহারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে, তাহারা প্রথমে উঠিবে। পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা অবশিষ্ট থাকিব, আমরা আকাশে প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত একসঙ্গে তাহাদের সহিত মেঘযোগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব।”—১ থিষল. ৪:১৩-১৭.

১৮ স্বর্গীয় পুনরুত্থান খ্রিস্টের উপস্থিতি শুরু হওয়ার কিছুসময় পর ঘটবে। যে-অভিষিক্ত ব্যক্তিরা মহাক্লেশের সময় পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে, তারা ‘মেঘযোগে নীত হইবে।’ এর অর্থ কী? যারা ‘নীত হইবে,’ তারা ‘নিদ্রাগত হইবে না’ অর্থাৎ তারা দীর্ঘসময়ের জন্য মৃত অবস্থায় থাকবে না। এর পরিবর্তে, তারা যখন মারা যাবে, তখন তারা ‘সকলে রূপান্তরীকৃত হইবে; এক মুহূর্ত্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে, শেষ তূরীধ্বনিতে হইবে।’—১ করি. ১৫:৫১, ৫২; মথি ২৪:৩১.

১৯. ‘শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান’ কী?

১৯ বর্তমানে, বেশিরভাগ বিশ্বস্ত খ্রিস্টান অভিষিক্ত নয় আর তাদের খ্রিস্টের সঙ্গে স্বর্গে রাজত্ব করার জন্য মনোনীত করা হয়নি। এর পরিবর্তে, তারা ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিনের’ জন্য অপেক্ষা করে আছে, যখন তিনি এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করবেন। কেউই সঠিকভাবে জানে না, শেষ কখন আসবে কিন্তু বিভিন্ন প্রমাণ দেখায় যে, সেই সময় খুব বেশি দূরে নেই। (১ থিষল. ৫:১-৩) যখন ঈশ্বরের নতুন জগৎ আসবে, তখন এক ভিন্ন প্রকারের পুনরুত্থান হবে। সেই সময়, লোকেদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য পুনরুত্থিত করা হবে এবং তারা সিদ্ধতা লাভ করার ও সেইসঙ্গে কখনো মারা না যাওয়ার আশা লাভ করবে। অতীতে যাদের পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তারা কিছুসময় পর আবার মারা গিয়েছিল কিন্তু এই পুনরুত্থান সেগুলোর চেয়ে ‘শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থান’ হবে।—ইব্রীয় ১১:৩৫.

২০. কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, পুনরুত্থান সংগঠিত উপায়ে হবে?

২০ বাইবেল বলে, যাদের স্বর্গে বেঁচে থাকার জন্য পুনরুত্থিত করা হয়, তারা “প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে” পুনরুত্থিত হয়। (১ করি. ১৫:২৩) তাই, আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, পার্থিব পুনরুত্থানও সুশৃঙ্খল বা সংগঠিত উপায়ে হবে। এটা হয়তো আমাদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পরিচালিত করে: যারা সম্প্রতি মারা গিয়েছে, তারা কি খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের শুরুর দিকে পুনরুত্থিত হবে এবং তাদের প্রিয়জনরা তাদের স্বাগত জানাবে? অতীতের যে-বিশ্বস্ত পুরুষরা দক্ষ নেতা ছিল, তারা কি নতুন জগতে ঈশ্বরের লোকেদের সংগঠিত করার জন্য আগে পুনরুত্থিত হবে? সেই ব্যক্তিদের প্রতি কী ঘটবে, যারা কখনো যিহোবার সেবা করেনি? কখন ও কোথায় তারা পুনরুত্থিত হবে? আমরা হয়তো অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি। কিন্তু, আমাদের এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে উদ্‌বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে ভালো হবে, যদি আমরা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। আমরা এই বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি, এটা দেখা খুবই রোমাঞ্চকর হবে যে, কীভাবে যিহোবা এই সমস্ত কিছু করবেন।

২১. আপনার কোন বিষয়ে প্রত্যাশা রয়েছে?

২১ সেই সময় না আসা পর্যন্ত আমাদের যিহোবার উপর নিজেদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা উচিত। তিনি যিশুর মাধ্যমে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, মৃত ব্যক্তিরা তাঁর স্মৃতিতে রয়েছে এবং তারা আবারও জীবিত হবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯; ১১:২৩) যিহোবা যে মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করবেন, সেই বিষয়ে আরও প্রমাণ দিয়ে যিশু একবার বলেছিলেন, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোব “[ঈশ্বরের] সাক্ষাতে সকলেই জীবিত।” (লূক ২০:৩৭, ৩৮) স্পষ্টতই, আমাদের প্রেরিত পৌলের মতো এই একই কথা বলার অনেক উত্তম কারণ রয়েছে: “আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, . . . পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.