একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হিসেবে উন্নতি করে চলুন!
“আত্মার বশে চল।”—গালা. ৫:১৬.
গান সংখ্যা: ১৬, ১০
১, ২. একজন ভাই নিজের সম্বন্ধে কী বুঝতে পেরেছিলেন এবং তিনি কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?
রবার্ট নামে একজন ভাই ১৫ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন কিন্তু সত্য তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না। তিনি বলেন: “আমি কখনো খারাপ কিছু করিনি কিন্তু আমি কেবল দায়সারাভাবে যিহোবার সেবা করে যাচ্ছিলাম। আমাকে দেখে আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় বলে মনে হতো কারণ আমি প্রত্যেকটা সভায় যোগ দিতাম এবং বছরে কয়েক বার সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতাম। কিন্তু, আমার জীবনে কিছু-একটার অভাব ছিল।”
২ রবার্ট বিয়ে না করা পর্যন্ত বুঝতে পারেননি যে, তার জীবনে কীসের অভাব ছিল। তিনি ও তার স্ত্রী মাঝে মাঝে খেলার ছলে একে অন্যকে বাইবেলের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন। যেহেতু তার স্ত্রী বাইবেল সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন, তাই তিনি সহজেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারতেন। কিন্তু, রবার্ট প্রায়ই সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারতেন না এবং লজ্জিত হয়ে পড়তেন। তিনি বলেন: “মনে হয়েছিল যেন আমি কিছুই জানি না। আমি নিজেকে বলেছিলাম, ‘আমি যদি আমার স্ত্রীর আধ্যাত্মিক মস্তক হতে চাই, তা হলে আমাকে কিছু-একটা করতে হবে।’” তাই, তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন: “আমি বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম এবং সেটার পিছনে আরও বেশি করে সময় ব্যয় করেছিলাম। এর ফলে, আমি বাইবেলের অনেক কিছু বুঝতে শুরু করেছিলাম। আমি বোধগম্যতা লাভ করেছিলাম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমি যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলাম।”
৩. (ক) রবার্টের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (খ) এখন আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব?
ফিলি. ৩:১৬) এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব: (১) কী আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, আমরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি কি না? (২) কীভাবে আমরা আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারি? (৩) কীভাবে আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করতে পারে?
৩ রবার্টের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। আমাদের হয়তো বাইবেলের কিছুটা জ্ঞান রয়েছে এবং আমরা হয়তো নিয়মিতভাবে সভায় যোগ দিই ও পরিচর্যায় অংশ নিই কিন্তু এই বিষয়গুলো আমাদের আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি করে তোলে না। অথবা আমরা হয়তো ইতিমধ্যেই আরও বেশি আধ্যাত্মিকমনা হয়ে ওঠার জন্য প্রচেষ্টা করেছি কিন্তু আমরা যখন আত্মপরীক্ষা করে দেখি, তখন হয়তো এমন ক্ষেত্রগুলো খুঁজে পাই, যেখানে আমরা আরও উন্নতি করতে পারি। (যেভাবে এটা বোঝা যায়, আমরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি কি না
৪. ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪ পদের পরামর্শ কাদের প্রতি প্রযোজ্য?
৪ আমরা যখন ঈশ্বরের সেবা করতে শুরু করেছিলাম, তখন আমরা এমন পরিবর্তনগুলো করেছিলাম, যেগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছিল। তবে, এই প্রক্রিয়া আমাদের বাপ্তিস্ম নেওয়ার সময় থেমে যায়নি। বাইবেল আমাদের বলে: “আপন আপন মনের ভাবে . . . ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও।” (ইফি. ৪:২৩, ২৪) যেহেতু আমরা সিদ্ধ নই, তাই আমাদের পরিবর্তন করে যেতে হবে। এমনকী আমরা যদি বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করে থাকি, তারপরও তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী রাখতে হবে।—ফিলি. ৩:১২.
৫. কোন প্রশ্নগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, আমরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি কি না?
৫ আমরা অল্পবয়সি হই অথবা বৃদ্ধ, আমাদের প্রত্যেককেই সৎভাবে আত্মপরীক্ষা করতে হবে। আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি আমার মধ্যে এমন পরিবর্তনগুলো লক্ষ করি, যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, আমি আরও বেশি আধ্যাত্মিকমনা হয়ে উঠছি? আমি কি আরও বেশি করে খ্রিস্টের মতো হয়ে উঠছি? আমার মনোভাব এবং সভায় আমি যেভাবে আচরণ করি, সেটা কী প্রকাশ করে? জীবনে আমি সত্যিই কী চাই, সেই বিষয়ে আমার কথাবার্তা কী প্রকাশ করে? আমার অধ্যয়নের অভ্যাস, পোশাক-আশাক ও সাজগোজ এবং পরামর্শের প্রতি আমার প্রতিক্রিয়া আমার সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে? আমি যখন খারাপ কিছু করার জন্য প্রলুব্ধ হই, তখন আমি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই? আমি কি একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান হয়ে উঠেছি?’ (ইফি. ৪:১৩) এই প্রশ্নগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে কতটা বৃদ্ধি লাভ করেছি।
৬. আমরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি কি না, তা বোঝার জন্য আর কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৬ আমরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি কি না, তা বোঝার জন্য কখনো কখনো আমাদের অন্যদের কাছ থেকে সাহায্যের প্রয়োজন হয়। প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন, একজন প্রাণিক বা মাংসিক ব্যক্তি এটা বুঝতে পারেন না যে, তার জীবনধারা ঈশ্বরকে খুশি করে না। কিন্তু, একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি এটা বুঝতে পারেন যে, বিভিন্ন বিষয়কে ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন। তিনি জানেন, যিহোবা মাংসিক জীবনধারা অনুসরণ করাকে অনুমোদন করেন না। (১ করি. ২:১৪-১৬; ৩:১-৩) যেহেতু প্রাচীনরা খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করেন, তাই ভাই-বোনেরা যখন মাংসিকভাবে আচরণ করতে শুরু করে, তখন তারা দ্রুত সেটা লক্ষ করেন এবং তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন। প্রাচীনরা যদি আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন, তা হলে আমরা কি তাদের সাহায্য গ্রহণ করব এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো করব? আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে আমরা দেখাব যে, আমরা সত্যিই আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে চাই।—উপ. ৭:৫, ৯.
আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুন
৭. কীভাবে আমরা জানি যে, কেবল বাইবেলের জ্ঞান থাকলেই একজন ব্যক্তি আধ্যাত্মিকমনা হয়ে ওঠেন না?
৭ আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য কেবল বাইবেলের জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। রাজা শলোমন যিহোবা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতেন এবং তার কিছু বিজ্ঞ কথা এমনকী বাইবেলের অংশ হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে, যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তিনি আর বিশ্বস্ত থাকেননি। (১ রাজা. ৪:২৯, ৩০; ১১:৪-৬) তাই, বাইবেলের জ্ঞানের পাশাপাশি আমাদের আর কীসের প্রয়োজন? আমাদের ক্রমাগত নিজেদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন। (কল. ২:৬, ৭) কীভাবে আমরা এটা করতে পারি?
৮, ৯. (ক) কী আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে? (খ) আমরা যখন অধ্যয়ন করি ও ধ্যান করি, তখন আমাদের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
ইব্রীয় ৬:১) কীভাবে আমরা বর্তমানে এই পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি? একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” শিরোনামের বইটা অধ্যয়ন করা। এটা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে আপনি আপনার জীবনে বাইবেলের নীতি কাজে লাগাতে পারেন। আপনি যদি ইতিমধ্যেই এই বইটা অধ্যয়ন করে থাকেন, তা হলে এমন আরও প্রকাশনা রয়েছে, যেগুলো আপনি আপনার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য অধ্যয়ন করতে পারেন। (কল. ১:২৩) এ ছাড়া, আমরা যা শিখি, সেটা নিয়ে আমাদের ধ্যান করতে হবে এবং কীভাবে আমরা সেটা কাজে লাগাতে পারি, তা বোঝার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
৮ প্রথম শতাব্দীতে পৌল খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা ‘সিদ্ধির [“পরিপক্বতার,” NW] চেষ্টায় অগ্রসর হয়।’ (৯ আমরা যখন অধ্যয়ন করি ও ধ্যান করি, তখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, যিহোবাকে খুশি করার ও তাঁর বাধ্য থাকার এক গভীর আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলা। (গীত. ৪০:৮; ১১৯:৯৭) এ ছাড়া, আমাদের এমন যেকোনো কিছু প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করার ক্ষেত্রে বাধা দেবে।—তীত ২:১১, ১২.
১০. আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য অল্পবয়সিরা কী করতে পারে?
১০ তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তা হলে তোমার কি আধ্যাত্মিক লক্ষ্য রয়েছে? একজন ভাই, যিনি বেথেলে সেবা করেন, তিনি প্রায়ই সীমা সম্মেলনগুলোতে এমন অল্পবয়সিদের সঙ্গে কথা বলেন, যারা সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিতে চলেছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন যে, তাদের কোন কোন আধ্যাত্মিক লক্ষ্য রয়েছে। তিনি দেখতে পান, অনেকে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করেছে, তারা ভবিষ্যতে কীভাবে যিহোবার সেবা করতে চায়। কেউ কেউ পূর্ণসময় যিহোবার সেবা করার অথবা যেখানে বেশি প্রকাশকের প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু, কোনো কোনো অল্পবয়সি বুঝতে পারে না যে, উত্তরে তারা কী বলবে। এর অর্থ কি এমনটা হতে পারে যে, তারা মনে করে তাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য স্থাপন করার প্রয়োজন নেই? তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করো: ‘আমি কি কেবল বাবা-মা চান বলেই সভায় ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাই? না কি ঈশ্বরের সঙ্গে আমার এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে?’ অবশ্য, আমরা অল্পবয়সি হই অথবা বৃদ্ধ, আমাদের সকলেরই আধ্যাত্মিক লক্ষ্য থাকা উচিত। এই লক্ষ্যগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।—উপ. ১২:১, ১৩.
১১. (ক) আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) বাইবেলের কোন উদাহরণকে আমরা অনুকরণ করতে পারি?
১১ আমরা কোথায় উন্নতি করতে পারি, তা শনাক্ত করার পর আমাদের পরিবর্তন করা শুরু করতে হবে। এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটার উপর আমাদের জীবন ও মৃত্যু নির্ভর করে। (রোমীয় ৮:৬-৮) যিহোবা আমাদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করেন না এবং তিনি আমাদের সাহায্য করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা দেন। কিন্তু তারপরও, আমাদের নিজেদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। ভাই জন বার, যিনি পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হিসেবে সেবা করতেন, একবার লূক ১৩:২৪ পদের উপর মন্তব্য করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “অনেকে এই বিষয়ে ব্যর্থ হয় কারণ তারা বলবান হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করে না।” আমাদের যাকোবের মতো হতে হবে, যিনি একজন স্বর্গদূতের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করেছিলেন এবং একটা আশীর্বাদ না পাওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়েননি। (আদি. ৩২:২৬-২৮) যদিও বাইবেল অধ্যয়ন করা উপভোগ্য হতে পারে কিন্তু আমাদের এমনটা আশা করা উচিত নয় যে, বাইবেল পড়া কোনো উপন্যাসের মতোই মজার বিষয় হবে। আমাদের এমন মূল্যবান সত্যগুলো খোঁজার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে, যেগুলো আমাদের সাহায্য করবে।
১২, ১৩. (ক) কী আমাদের ফিলিপীয় ২:৫ পদের কথাগুলো কাজে লাগাতে সাহায্য করবে? (খ) কীভাবে পিতরের উদাহরণ ও পরামর্শ আমাদের সাহায্য করতে পারে? (গ) আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য আপনি কী করতে পারেন? (“ আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করার জন্য আপনি যা যা করতে পারেন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
১২ আমরা যখন আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করার জন্য প্রচেষ্টা করি, তখন পবিত্র আত্মা আমাদের চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে, আমরা খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করা শিখতে পারি। (ফিলি. ২:৫) পবিত্র আত্মা আমাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার এবং ঈশ্বরকে খুশি করে এমন গুণাবলি গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারে। (গালা. ৫:১৬, ২২, ২৩) আমরা যদি বুঝতে পারি, আমরা বস্তুগত বিষয় অথবা বিলাসিতার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছি, তা হলে আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আমাদের যিহোবার কাছে পবিত্র আত্মার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করে যেতে হবে, যাতে আমরা সঠিক বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারি। (লূক ১১:১৩) প্রেরিত পিতরের কথা স্মরণ করুন। তিনি সবসময় খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করেননি। (মথি ১৬:২২, ২৩; লূক ২২:৩৪, ৫৪-৬২; গালা. ২:১১-১৪) কিন্তু, তিনি হাল ছেড়ে দেননি এবং যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন। ধীরে ধীরে, পিতর খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করতে শিখেছিলেন। আর আমরাও একই বিষয় শিখতে পারি।
১৩ পিতর পরে এমন নির্দিষ্ট গুণ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো আমাদের সাহায্য করবে। (পড়ুন, ২ পিতর ১:৫-৮.) আমাদের জিতেন্দ্রিয়তা বা আত্মসংযম, ধৈর্য, ভ্রাতৃস্নেহ ও অন্যান্য উত্তম গুণ গড়ে তোলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আজকে আমি কোন গুণ দেখানোর ক্ষেত্রে কাজ করতে পারি, যেটা আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে?’
প্রতিদিন বাইবেলের নীতি কাজে লাগান
১৪. কীভাবে আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়া আমাদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে?
১৪ আমরা যদি খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করি, তা হলে এটা চাকরির জায়গায় অথবা স্কুলে আমাদের আচরণের উপর, আমাদের কথাবার্তার উপর এবং প্রতিদিন আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর উপর প্রভাব ফেলবে। আমাদের সিদ্ধান্তগুলো দেখাবে, আমরা খ্রিস্টকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমরা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি, তাই আমরা কোনো কিছুকেই যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই না। আমরা যখন খারাপ কিছু করার জন্য প্রলুব্ধ হই, তখন আমাদের আধ্যাত্মিকতা আমাদের সেই প্রলোভনের প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমরা একটু থেমে নিজেদের জিজ্ঞেস করব: ‘বাইবেলের কোন নীতিগুলো আমাকে সাহায্য করতে পারে? খ্রিস্ট এই পরিস্থিতিতে থাকলে কী করতেন? যিহোবাকে কোন বিষয়টা খুশি করবে?’ এভাবে চিন্তা করাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। তাই আসুন, আমরা কয়েকটা সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি। প্রতিটা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আমরা একটা করে বাইবেলের নীতি লক্ষ করব, যেটা আমাদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।
১৫, ১৬. কীভাবে খ্রিস্টের মতো করে চিন্তা করা আমাদের এই ক্ষেত্রগুলোতে বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে: (ক) বিবাহসাথি বাছাই করার ক্ষেত্রে? (খ) বন্ধুবান্ধব বাছাই করার ক্ষেত্রে?
১৫ বিবাহসাথি বাছাই করা। এই বিষয়ে বাইবেলে ২ করিন্থীয় ৬:১৪, ১৫ পদে একটা নীতি রয়েছে। (পড়ুন।) পৌল এটা স্পষ্ট করেছিলেন যে, প্রাণিক বা মাংসিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিষয়কে যেভাবে দেখে, আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিরা সেগুলোকে সেভাবে দেখে না। কীভাবে এই নীতি আপনাকে বিবাহসাথি বাছাই করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
১৬ বন্ধুবান্ধব বাছাই করা। এই বিষয়ে বাইবেলে ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩ পদে একটা নীতি রয়েছে। (পড়ুন।) একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি এমন লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন না, যারা তার বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। এখন চিন্তা করুন, কীভাবে আপনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই নীতি কাজে লাগাতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, কীভাবে এই নীতি আপনাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? কীভাবে এই নীতি আপনাকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে যে, আপনি অচেনা ব্যক্তিদের সঙ্গে অনলাইন গেম খেলবেন কি না?
১৭-১৯. কীভাবে একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হওয়া আপনাকে (ক) মূল্যহীন কাজগুলো এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে? (খ) উত্তম লক্ষ্য স্থাপন করতে সাহায্য করবে? (গ) মতবিরোধ মিটমাট করতে সাহায্য করবে?
১৭ যে-কাজগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত ইব্রীয় ৬:১ পদে একটা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণী খুঁজে পাই। (পড়ুন।) এই ‘মৃত ক্রিয়াগুলো’ কী, যেগুলো আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত? এগুলো হল এমন কিছু মূল্যহীন কাজ, যেগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করে না। মৃত কাজগুলো সম্বন্ধে এই সতর্কবাণীটা আমাদের এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করতে পারে: ‘এই কাজটা কি উপকারজনক না মূল্যহীন? আমার কি এই ধরনের ব্যাবসায় জড়িত হওয়া উচিত? কেন আমার এমন কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত নয়, যেটা জগতের পরিস্থিতিকে পালটানোর চেষ্টা করছে?’
করে। আমরা১৮ আধ্যাত্মিক লক্ষ্য। পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু আমাদের লক্ষ্য স্থাপন করার বিষয়ে উত্তম পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ৬:৩৩) একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ঈশ্বরের রাজ্যকে তার জীবনে প্রথমে রাখেন। এই নীতিটা আমাদের এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে: ‘আমার কি মৌলিক শিক্ষা শেষ করার পর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়া উচিত? আমার কি এই চাকরিটা গ্রহণ করা উচিত?’
১৯ মতবিরোধ। রোমের খ্রিস্টানদের প্রতি পৌলের পরামর্শ আমাদের সেইসময় সাহায্য করতে পারে, যখন অন্যদের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ দেখা দেয়। (রোমীয় ১২:১৮) আমরা খ্রিস্টকে অনুকরণ করি আর তাই আমরা ‘মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাকিবার’ চেষ্টা করি। অন্যদের সঙ্গে যখন আমাদের মতবিরোধ দেখা দেয়, তখন আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই? অন্য কারো মতামত মেনে নেওয়া কি আমাদের জন্য কঠিন হয়? না কি আমরা এমন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, যিনি শান্তি স্থাপন করার চেষ্টা করেন?—যাকোব ৩:১৮.
২০. কেন আপনি আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করে চলতে চান?
২০ এই উদাহরণগুলো দেখায়, কীভাবে বাইবেলের নীতি আমাদের এমন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে, যেগুলো প্রমাণ করে যে, আমরা ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা নির্দেশিত। আমরা যদি আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হই, তা হলে আমাদের জীবন সুখী ও পরিতৃপ্তিদায়ক হবে। রবার্ট, যার বিষয়ে শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছিল, বলেন: “যিহোবার সঙ্গে এক বাস্তব সম্পর্ক গড়ে তোলার পর আমি আরও উত্তম একজন স্বামী ও বাবা হয়ে উঠেছিলাম। আমি পরিতৃপ্তি ও সুখ লাভ করেছিলাম।” আমরা যদি আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি হিসেবে উন্নতি করে চলি, তা হলে আমরাও অনেক আশীর্বাদ উপভোগ করব। আমরা এখনই আরও সুখী এক জীবন লাভ করব এবং ভবিষ্যতে “প্রকৃতরূপে জীবন” লাভ করব।—১ তীম. ৬:১৯.