সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের বিশ্বাস এবং বাধ্যতা অনুকরণ করুন

নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের বিশ্বাস এবং বাধ্যতা অনুকরণ করুন

“নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব, . . . আপন আপন ধার্ম্মিকতায় আপন আপন প্রাণমাত্র রক্ষা করিবে।”—যিহি. ১৪:১৪.

গান সংখ্যা: ৬, ৫৪

১, ২. (ক) কেন নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের উদাহরণ পরীক্ষা করে দেখা আমাদের উৎসাহিত করতে পারে? (খ) যিহিষ্কেল যখন যিহিষ্কেল ১৪:১৪ পদের কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল?

আপনি কি অসুস্থতা, আর্থিক সমস্যা অথবা তাড়নার কারণে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন? আপনার পক্ষে কি কখনো কখনো যিহোবার সেবায় আনন্দ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে? আপনি যদি এমনটা অনুভব করেন, তা হলে নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের উদাহরণ পরীক্ষা করে দেখা আপনাকে উৎসাহিত করতে পারে। এই ব্যক্তিরা অসিদ্ধ ছিলেন এবং তাদেরও সেই একই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যেগুলোর মুখোমুখি বর্তমানে আমরা হয়ে থাকি। কখনো কখনো, তাদের জীবন এমনকী ঝুঁকির মুখে ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন এবং যিহোবা তাদের বিশ্বাস ও বাধ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে উদাহরণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে দেখেছিলেন।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ১৪:১২-১৪.

খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ সালে, যিহিষ্কেল বাবিলে থাকাকালীন আমাদের এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদের কথাগুলো লিখেছিলেন। * (যিহি. ১:১; ৮:১) এর কিছুসময় পরই খ্রিস্টপূর্ব ৬০৭ সালে যিরূশালেমকে ধ্বংস করা হয়েছিল। যিরূশালেমে খুবই অল্পসংখ্যক ব্যক্তি নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের মতো বিশ্বস্ত ও বাধ্য ছিল আর তাই, তারা রক্ষা পেয়েছিল। (যিহি. ৯:১-৫) তাদের মধ্যে কয়েক জন ব্যক্তি ছিলেন যিরমিয়, বারূক, এবদ-মেলক ও রেখবীয়রা।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

একইভাবে বর্তমানে, যিহোবা যাদের ধার্মিক হিসেবে দেখেন অর্থাৎ যে-লোকেরা নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের মতো, কেবল তারাই এই মন্দ জগৎ ধ্বংস হওয়ার সময় রক্ষা পাবে। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) তাই আসুন আমরা শিখি, কেন যিহোবা এই ব্যক্তিদের ধার্মিকতার উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। আমরা আলোচনা করব: (১) তাদের প্রত্যেককে কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং (২) কীভাবে আমরা তাদের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করতে পারি।

নোহ ৯০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বস্ত ও বাধ্য ছিলেন!

৪, ৫. নোহের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী ছিল এবং নোহের মধ্যে কোন বিষয়টা উল্লেখযোগ্য ছিল?

নোহের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী ছিল? নোহের ঠাকুরদাদার বাবা হনোকের সময় লোকেরা ইতিমধ্যেই খুব মন্দ ছিল। তারা প্রভু যিহোবার বিষয়ে “কঠোর বাক্য” বলেছিল। (যিহূদা ১৪, ১৫) এরপর, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জগৎ আরও দৌরাত্ম্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। নোহের সময় “পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল।” মন্দদূতেরা পৃথিবীতে নেমে এসেছিল, মানবদেহ ধারণ করেছিল এবং নারীদের বিয়ে করেছিল। তাদের ছেলেরা নিষ্ঠুর ও দৌরাত্ম্যপ্রিয় ছিল। (আদি. ৬:২-৪, ১১, ১২) কিন্তু, সকলেই লক্ষ করেছিল, নোহ অন্যদের চেয়ে আলাদা। বাইবেল বলে, “নোহ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইলেন।” তার চারপাশের লোকেদের বিপরীতে নোহ যা সঠিক, তা-ই করেছিলেন। “নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।”—আদি. ৬:৮, ৯.

এই কথাগুলো নোহ সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়? প্রথমত, চিন্তা করুন জলপ্লাবনের আগের সেই মন্দ জগতে নোহ কত সময় ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন। তিনি কেবল ৭০ কিংবা ৮০ বছর ধরে নয় বরং প্রায় ৬০০ বছর ধরে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন! (আদি. ৭:১১) দ্বিতীয়ত, মনে রাখবেন সাহায্য ও উৎসাহ লাভ করার জন্য নোহের কাছে কোনো মণ্ডলী ছিল না, যেমনটা বর্তমানে আমাদের কাছে রয়েছে। এমনটা মনে করা হয় যে, এমনকী তার নিজের ভাই-বোনেরাও তাকে সমর্থন করেনি। *

৬. কীভাবে নোহ প্রচুর সাহস দেখিয়েছিলেন?

নোহ এমনটা মনে করেননি যে, কেবল একজন ভালো ব্যক্তি হওয়াই যথেষ্ট। তিনি সাহসের সঙ্গে যিহোবার প্রতি তার বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের জানিয়েছিলেন। বাইবেল তাকে “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” বলে সম্বোধন করে। (২ পিতর ২:৫) প্রেরিত পৌল নোহের ‘বিশ্বাস’ সম্বন্ধে বলেছিলেন, তিনি “তদ্দ্বারা জগৎকে দোষী করিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৭) এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, লোকেরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করেছিল এবং তার কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। হতে পারে, তারা এমনকী তাকে আঘাত করার হুমকিও দিয়েছিল। কিন্তু, নোহ তার চারপাশের লোকেদের ভয় পাননি। (হিতো. ২৯:২৫) এর পরিবর্তে, তার বিশ্বাস ছিল এবং সেইজন্য যিহোবা তাকে সাহস প্রদান করেছিলেন। আর যিহোবা বর্তমানেও তাঁর সমস্ত বিশ্বস্ত দাসকে সেই একই সাহস প্রদান করেন।

৭. নোহ যখন জাহাজ নির্মাণ করছিলেন, তখন তিনি কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?

নোহ ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার পর, যিহোবা তাকে একটা বিশাল জাহাজ নির্মাণ করতে বলেছিলেন। এই জাহাজটা জলপ্লাবন থেকে অল্প কয়েক জন ব্যক্তিকে ও সেইসঙ্গে জীবজন্তুদের রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হবে। (আদি. ৫:৩২; ৬:১৪) এইরকম একটা বিশাল জাহাজ নির্মাণ করাকে নোহ নিশ্চয়ই অনেক কঠিন বলে মনে করেছিলেন। আর তিনি নিশ্চিতভাবেই জানতেন, লোকেরা আরও বেশি করে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে এবং তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। কিন্তু, নোহের বিশ্বাস ছিল এবং তিনি যিহোবার বাধ্য হয়েছিলেন। বাইবেল জানায়, “নোহ সেইরূপ করিলেন।”—আদি. ৬:২২.

৮. কীভাবে নোহ তার পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য যিহোবার উপর আস্থা রেখেছিলেন?

নোহকে আরেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাকে তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য ভরণ-পোষণ জোগাতে হয়েছিল। জলপ্লাবনের আগে শস্য উৎপাদন করার জন্য লোকেদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হতো। নোহও একইভাবে পরিশ্রম করেছিলেন। (আদি. ৫:২৮, ২৯) কিন্তু, তিনি তার পরিবারের প্রয়োজনের বিষয়টাকে তার প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে দেননি। যিহোবার সেবা করা সবসময়ই তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এমনকী যদিও নোহ প্রায় ৪০ অথবা ৫০ বছর ধরে জাহাজ নির্মাণ করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু তারপরও, তিনি যিহোবার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন। আর তিনি জলপ্লাবনের পর আরও ৩৫০ বছর ধরে সেই একই বিষয় করেছিলেন। (আদি. ৯:২৮) নোহ হলেন বিশ্বাস ও বাধ্যতা দেখানোর ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ!

৯, ১০. (ক) কীভাবে আমরা নোহের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করতে পারি? (খ) আপনি যদি যিহোবার আইনের বাধ্য হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হন, তা হলে আপনি কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন?

কীভাবে আমরা নোহের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করতে পারি? আমরা সেইসময় নোহের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করি, যখন আমরা যা সঠিক, সেই বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষ সমর্থন করি, শয়তানের জগতের অংশ হওয়া এড়িয়ে চলি এবং যিহোবাকে জীবনে প্রথমে রাখি। (মথি ৬:৩৩; যোহন ১৫:১৯) অবশ্য, এই কারণগুলোর জন্য জগৎ আমাদের পছন্দ করে না। উদাহরণ স্বরূপ, যেহেতু আমরা যৌনতা ও বিয়ে সম্বন্ধে ঈশ্বরের আইনের বাধ্য হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, তাই লোকেরা হয়তো প্রচারমাধ্যমে আমাদের সম্বন্ধে নেতিবাচক কথা বলতে পারে। (পড়ুন, মালাখি ৩:১৭, ১৮.) নোহের মতো আমরাও আমাদের চারপাশের লোকেদের ভয় পাই না। আমরা যিহোবাকে ভয় করি অর্থাৎ আমরা তাঁকে গভীরভাবে সম্মান করি এবং আমরা তাঁকে হতাশ করতে চাই না। আমরা জানি, তিনিই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি আমাদের অনন্তজীবন দিতে পারেন।—লূক ১২:৪, ৫.

১০ নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি সেইসময়েও ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা-ই করে চলব, যখন অন্যেরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে অথবা সমালোচনা করবে? আমি কি সেইসময়েও এই বিষয়ে আস্থা রাখি যে, যিহোবা আমার পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাতে পারেন, যখন তা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে?’ আপনি যদি নোহের মতো যিহোবার উপর আস্থা রাখেন এবং তাঁর বাধ্য হন, তা হলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনার যত্ন নেবেন।—ফিলি. ৪:৬, ৭.

দানিয়েল এক মন্দ নগরে বাস করা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত ও বাধ্য ছিলেন

১১. দানিয়েল ও তার তিন বন্ধুকে বাবিলে কোন কোন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ দানিয়েলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী ছিল? দানিয়েলকে একটা বিদেশি নগর বাবিলে বাস করার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, যেটা মিথ্যা দেবতা ও প্রেতচর্চায় পরিপূর্ণ ছিল। সেখানকার লোকেরা যিহুদিদের অপছন্দ করত এবং তাদের বিষয়ে ও তাদের ঈশ্বর যিহোবার বিষয়ে উপদ্রবকারী কথা বলত বা ঠাট্টা করত। (গীত. ১৩৭:১, ৩) এই বিষয়টা নিশ্চয়ই দানিয়েলকে ও যিহোবাকে ভালোবাসত এমন অন্যান্য যিহুদিদের প্রচণ্ড দুঃখ দিয়েছিল! এ ছাড়া, অনেক লোক হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের উপর সবসময় নজর রাখত কারণ তারা বাবিলের রাজার জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষিত হতে যাচ্ছিলেন। তাদের কাছ থেকে আশা করা হয়েছিল, রাজা যে-ধরনের খাবার খেতেন, তারাও যেন সেই একই ধরনের খাবার খান। সেগুলোর মধ্যে এমন খাবার ছিল, যেগুলো যিহোবা তাঁর লোকেদের খেতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু, দানিয়েল “রাজার আহারীয় দ্রব্যে . . . আপনাকে অশুচি” করেননি।—দানি. ১:৫-৮, ১৪-১৭.

১২. (ক) দানিয়েল কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন? (খ) যিহোবা দানিয়েলকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন?

১২ দানিয়েল আরেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যেটাকে হয়তো প্রথমে খুব-একটা কঠিন বলে মনে হয়নি। তার অনেক দক্ষতা ছিল আর এই কারণে রাজা তাকে বিশেষ সুযোগগুলো দিয়েছিলেন। (দানি. ১:১৯, ২০) তা সত্ত্বেও, দানিয়েল গর্বিত হয়ে যাননি অথবা এমনটা ভাবেননি যে, তার মতামতগুলো সবসময়ই সঠিক। তিনি নম্র ও বিনয়ী মনোভাব বজায় রেখেছিলেন। তিনি সবসময় এটা স্বীকার করতেন যে, তার সাফল্যের পিছনে একমাত্র যিহোবার হাত রয়েছে। (দানি. ২:৩০) একটু চিন্তা করুন: যিহোবা, নোহ ও ইয়োবের পাশাপাশি দানিয়েলকেও অনুকরণ করার মতো এক উত্তম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। সেই সময়, নোহ ও ইয়োব ইতিমধ্যেই বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করে তাদের সমস্ত জীবন অতিবাহিত করেছিলেন কিন্তু দানিয়েল তখনও একজন অল্পবয়সি ছিলেন। দানিয়েলের উপর যিহোবার প্রকৃতই আস্থা ছিল! আর তার উপর আস্থা রেখে যিহোবা কোনো ভুল করেননি কারণ দানিয়েল সারাজীবন ধরে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ও বাধ্য ছিলেন। দানিয়েলের বয়স যখন প্রায় ১০০ বছর হয়েছিল, তখন ঈশ্বরের একজন দূত তাকে এই সদয় কথাগুলো বলেছিলেন: “হে মহাপ্রীতি-পাত্র [“খুবই মূল্যবান ব্যক্তি,” NW] দানিয়েল।”—দানি. ১০:১১.

১৩. যিহোবা যে দানিয়েলকে এক উচ্চ পদ পেতে সাহায্য করেছিলেন, সেটার একটা কারণ কী হতে পারে?

১৩ যিহোবার সমর্থনের কারণে দানিয়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন অধ্যক্ষ হয়ে উঠেছিলেন, প্রথমে বাবিলীয় সাম্রাজ্যে এবং পরে মাদীয়-পারসিক সাম্রাজ্যে। (দানি. ১:২১; ৬:১, ২) হতে পারে, যিহোবাই এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যেন দানিয়েল এই উচ্চ পদটা পান, যাতে তিনি নিজের জাতির লোকেদের সাহায্য করতে পারেন, ঠিক যেমনটা যোষেফ মিশরে করেছিলেন এবং ইষ্টের ও মর্দখয় পারস্যে করেছিলেন। * (দানি. ২:৪৮) আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, যিহিষ্কেল ও অন্যান্য যিহুদি বন্দিরা যখন দেখেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা তাদের সাহায্য করার জন্য দানিয়েলকে ব্যবহার করছেন, তখন তাদের কেমন লেগেছিল? এটা নিশ্চয়ই তাদের অনেক উৎসাহিত করেছিল!

আমরা যখন যিহোবার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখি, তখন আমরা তাঁর কাছে মূল্যবান ব্যক্তি হয়ে উঠি (১৪, ১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে বর্তমানে আমরা দানিয়েলের মতো একইরকম পরিস্থিতিতে রয়েছি? (খ) বর্তমান সময়ের বাবা-মায়েরা দানিয়েলের বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোন শিক্ষা লাভ করতে পারেন?

১৪ কীভাবে আমরা দানিয়েলের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করতে পারি? বর্তমানে আমরা যে-জগতে বাস করি, সেটা অনৈতিকতা ও মিথ্যা উপাসনায় পরিপূর্ণ। লোকেরা মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য মহতী বাবিলের অধীনে রয়েছে, যেটাকে বাইবেলে “ভূতগণের আবাস” বলা হয়েছে। (প্রকা. ১৮:২) কিন্তু, এই জগতে আমরা হলাম বিদেশিদের মতো। ফলে, লোকেরা লক্ষ করে যে, আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা আর তাই, তারা আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করতে পারে। (মার্ক ১৩:১৩) কিন্তু আসুন, আমরা দানিয়েলের মতো আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নিকটবর্তী হই। আমরা যখন নম্র হব, যিহোবার উপর আস্থা রাখব এবং তাঁর বাধ্য হব, তখন তিনি আমাদেরও “মনোরঞ্জন বস্তু [“মূল্যবান,” NW]” হিসেবে দেখবেন।—হগয় ২:৭.

১৫ বাবা-মায়েরা দানিয়েলের বাবা-মায়ের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারেন। ছোটোবেলায় দানিয়েল যখন যিহূদায় বাস করতেন, তখন তার চারপাশের বেশিরভাগ লোক খুবই মন্দ ছিল। তারপরও, তিনি যিহোবাকে ভালোবাসতে শিখেছিলেন। এটা কি এমনি এমনিই হয়েছিল? না। তার বাবা-মা নিশ্চয়ই তাকে যিহোবা সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন। (হিতো. ২২:৬) এমনকী দানিয়েলের নাম দেখায় যে, তার বাবা-মা যিহোবাকে ভালোবাসতেন কারণ তার নামের অর্থ হল “ঈশ্বর আমার বিচারকর্তা।” তাই বাবা-মায়েরা, আপনারা যখন আপনাদের সন্তানদের যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দেন, তখন ধৈর্য ধরুন। হাল ছেড়ে দেবেন না। (ইফি. ৬:৪) তাদের সঙ্গে প্রার্থনা করুন। তাদের জন্য প্রার্থনা করুন। যিহোবার দৃষ্টিতে যা সঠিক, সেটাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনাদের সর্বোত্তমটা করুন আর এমনটা করলে যিহোবা আপনাদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করবেন।—গীত. ৩৭:৫.

ইয়োব, ধনী কিংবা দরিদ্র, উভয় সময়ই বিশ্বস্ত ও বাধ্য ছিলেন

১৬, ১৭. ইয়োব কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, যখন (ক) তিনি একজন ধনী ও সম্মাননীয় ব্যক্তি ছিলেন? (খ) তিনি কষ্ট ভোগ করছিলেন?

১৬ ইয়োবের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী ছিল? ইয়োব তার জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রথমে, ইয়োব “পূর্ব্বদেশের লোকদের মধ্যে . . . সর্ব্বাপেক্ষা মহান্‌ ছিলেন।” (ইয়োব ১:৩) তিনি খুবই ধনী ছিলেন এবং অনেকে তাকে জানত ও গভীরভাবে সম্মান করত। (ইয়োব ২৯:৭-১৬) এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, ইয়োব এমনটা মনে করেননি যে, তিনি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ অথবা তার জীবনে ঈশ্বরের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এই বিষয়টা জানি কারণ যিহোবা তাকে “আমার দাস” বলে সম্বোধন করেছিলেন এবং তার সম্বন্ধে বলেছিলেন: তিনি “সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী” ব্যক্তি।—ইয়োব ১:৮.

১৭ কিন্তু হঠাৎই, ইয়োবের জীবন পুরোপুরি পালটে গিয়েছিল। তিনি সমস্ত কিছু হারিয়েছিলেন এবং এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে, নিজের মৃত্যুকামনা করেছিলেন। বর্তমানে আমরা জানি, শয়তানের কারণেই ইয়োবের জীবনে সমস্যা এসেছিল। শয়তান বলেছিল, ইয়োব কেবল স্বার্থপর কারণগুলোর জন্যই যিহোবার সেবা করেন। (পড়ুন, ইয়োব ১:৯, ১০.) যিহোবা এই মন্দ অভিযোগকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। শয়তান যে একজন মন্দ মিথ্যাবাদী, তা প্রমাণ করার জন্য যিহোবা কী করেছিলেন? তিনি ইয়োবকে সুযোগ দিয়েছিলেন, যাতে ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি তার আনুগত্য প্রমাণ করতে পারেন এবং দেখাতে পারেন যে, তিনি ঈশ্বরের প্রতি তার প্রেমের কারণে তাঁর সেবা করেন।

১৮. (ক) ইয়োবের ব্যক্তিত্বের কোন বিষয়টা আপনার উপর গভীর ছাপ ফেলে? (খ) যিহোবা ইয়োবের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখি?

১৮ শয়তান বিদ্বেষপূর্ণ উপায়ে ইয়োবের উপর একের-পর-এক আক্রমণ নিয়ে এসেছিল এবং তাকে এমনটা চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল যে, সেই আক্রমণগুলোর পিছনে ঈশ্বরেরই হাত রয়েছে। (ইয়োব ১:১৩-২১) এরপর, ইয়োবের তিন জন তথাকথিত বন্ধু এসে ইয়োবকে খুব নিষ্ঠুর কথা বলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ইয়োব হলেন একজন মন্দ ব্যক্তি আর তাই, ঈশ্বর তাকে শাস্তি দিচ্ছেন। (ইয়োব ২:১১; ২২:১, ৫-১০) এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, ইয়োব যিহোবার প্রতি তার আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন। এটা ঠিক যে, ইয়োব কখনো কখনো মূর্খতাপূর্ণ কথা বলেছিলেন। (ইয়োব ৬:১-৩) কিন্তু, যিহোবা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ইয়োব কেবল তার কষ্ট ও হতাশার কারণেই সেই কথাগুলো বলেছিলেন। যিহোবা দেখেছিলেন, যদিও শয়তান একজন নিষ্ঠুর উত্ত্যক্তকারীর মতো বার বার ইয়োবকে আক্রমণ করেছিল এবং অপমানিত করেছিল, তা সত্ত্বেও ইয়োব কখনো যিহোবাকে পরিত্যাগ করেননি। এই ভয়াবহ ঘটনা শেষ হওয়ার পর, ইয়োব যা-কিছু হারিয়েছিলেন, প্রভু যিহোবা সেগুলোর দ্বিগুণ তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাকে আরও ১৪০ বছর বেঁচে থাকার আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। (যাকোব ৫:১১) ইয়োব তার জীবনের সেই বাকি সময়েও একাগ্র হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবা করেছিলেন। কীভাবে আমরা তা জানি? কারণ এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদ, যিহিষ্কেল ১৪:১৪ পদ, ইয়োবের মৃত্যুর শত শত বছর পর লেখা হয়েছিল।

১৯, ২০. (ক) কীভাবে আমরা ইয়োবের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করতে পারি? (খ) কীভাবে আমরা যিহোবার মতো করে অন্যদের প্রতি সমবেদনা দেখাতে পারি?

১৯ কীভাবে আমরা ইয়োবের বিশ্বাস ও বাধ্যতাকে অনুকরণ করতে পারি? আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমরা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চাই যে, যিহোবা সবসময়ই আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমরা তাঁর উপর সম্পূর্ণরূপে আস্থা রাখতে চাই এবং একাগ্র হৃদয়ে তাঁর বাধ্য হতে চাই। সত্যি বলতে কী, এমনটা করার জন্য আমাদের কাছে ইয়োবের চেয়ে আরও বেশি কারণ রয়েছে। একটু চিন্তা করুন, বর্তমানে আমরা কোন বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানি। আমরা শয়তান ও তার পদ্ধতিগুলো সম্বন্ধে অনেক কিছু জানি। (২ করি. ২:১১) বাইবেল ও বিশেষ করে ইয়োবের বইয়ের কারণে আমরা জানি, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন। দানিয়েলের ভবিষ্যদ্‌বাণীর সাহায্যে আমরা জানি, ঈশ্বরের রাজ্য হল এক বাস্তব সরকার, যে-সরকারের শাসক হলেন যিশু খ্রিস্ট। (দানি. ৭:১৩, ১৪) আর আমরা জানি, শীঘ্রই এই রাজ্য সারা পৃথিবীর উপর শাসন করবে এবং সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করবে।

২০ ইয়োবের অভিজ্ঞতা আমাদের এও শেখায়, যখন আমাদের ভাই-বোনেরা দুঃখকষ্ট ভোগ করে, তখন আমরা যেন সমবেদনা দেখাই। ইয়োবের মতো তারাও মূর্খতাপূর্ণ কথা বলতে পারে। (উপ. ৭:৭) কিন্তু, আমরা যেন তাদের খারাপ ব্যক্তি বলে মনে না করি অথবা তারা ভুল কাজ করেছে, এই বলে তাদের দোষারোপ না করি। এর পরিবর্তে, আমরা যেন তাদের বোঝার চেষ্টা করি। আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে আমরা আমাদের পিতা যিহোবার মতো হব, যিনি হলেন ‘দয়াময় [‘প্রেমময়,’ NW]’ ও “স্নেহশীল” বা করুণাময়।—গীত. ১০৩:৮.

যিহোবা ‘তোমাদিগকে সবল করিবেন’

২১. কীভাবে ১ পিতর ৫:১০ পদের কথাগুলো আমাদের নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়?

২১ নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বেঁচে ছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকের পরিস্থিতি খুবই আলাদা ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা সবাই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো ভোগ করার সময় ধৈর্য ধরেছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের প্রেরিত পিতরের এই কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়: “সমস্ত অনুগ্রহের ঈশ্বর, . . . আপনি তোমাদের ক্ষণিক দুঃখভোগের পর তোমাদিগকে পরিপক্ব, সুস্থির, সবল, বদ্ধমূল করিবেন।”—১ পিতর ৫:১০.

২২. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?

২২ এ ছাড়া, ১ পিতর ৫:১০ পদের কথাগুলো বর্তমানে ঈশ্বরের দাসদের ক্ষেত্রেও সত্য। যিহোবা আমাদের আশ্বস্ত করেন যে, তিনি তাঁর দাসদের সুস্থির ও সবল করবেন। আমরা সবাই চাই যেন যিহোবা আমাদের সবল করেন। এ ছাড়া, আমরা সুস্থির থাকতে ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে চাই। এই কারণেই আমরা নোহ, দানিয়েল ও ইয়োবের বিশ্বাস এবং বাধ্যতা অনুকরণ করতে চাই। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা শিখব, এই তিন জন ব্যক্তি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পেরেছিলেন কারণ তারা সত্যিই তাঁকে জানতেন। সত্যি বলতে কী, তারা সেই ‘সকলই বুঝিতে’ সক্ষম হয়েছিলেন, যেগুলো তারা করুক বলে যিহোবা চেয়েছিলেন। (হিতো. ২৮:৫) আর আমরাও একই বিষয় করতে পারি।

^ অনু. 2 যিহিষ্কেলকে খ্রিস্টপূর্ব ৬১৭ সালে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার ‘ষষ্ঠ বৎসরে’ অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ সালে, তিনি যিহিষ্কেল ৮:১–১৯:১৪ পদের কথাগুলো লিখেছিলেন।

^ অনু. 5 নোহের বাবা লেমকের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ছিল কিন্তু তিনি জলপ্লাবনের প্রায় পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন। যদি এমনটা হয় যে, নোহের মা ও ভাই-বোনেরা জলপ্লাবন শুরু হওয়ার সময় বেঁচে ছিলেন, তা হলে তারা রক্ষা পাননি।

^ অনু. 13 এমনটা হতে পারে যে, যিহোবা হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের প্রতিও একই বিষয় করেছিলেন, যাতে তারাও যিহুদিদের সাহায্য করতে পারেন।—দানি. ২:৪৯.