সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আসা, যিহোশাফট, হিষ্কিয়, যোশিয়

একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করুন!

একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করুন!

“হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, তুমি এখন স্মরণ কর, আমি তোমার সাক্ষাতে সত্যে [“বিশ্বস্তভাবে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] ও একাগ্রচিত্তে চলিয়াছি।”—২ রাজা. ২০:৩.

গান সংখ্যা: ৫২, ৩২

১-৩. যিহোবাকে “একাগ্র অন্তঃকরণে” সেবা করার অর্থ কী? একটা উদাহরণ দিন।

আমরা সবাই অসিদ্ধ এবং ভুল করি। কিন্তু আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা মুক্তির মূল্য জুগিয়েছেন এবং তিনি আমাদের ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। তাই, আমরা যদি নম্র ও অনুতপ্ত হই, তা হলে আমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে পারি। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের সঙ্গে “আমাদের পাপানুযায়ী” ব্যবহার করবেন না। (গীত. ১০৩:১০) তবে, আমাদের অবশ্যই তাঁকে ‘একাগ্র অন্তঃকরণে সেবা করিতে হইবে।’ (১ বংশা. ২৮:৯) অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, কীভাবে আমরা তা করতে পারি?

এক্ষেত্রে আমরা রাজা অমৎসিয়ের সঙ্গে রাজা আসার জীবনী তুলনা করে দেখতে পারি। দু-জন রাজাই ভালো কাজ করেছিলেন কিন্তু তাদের অসিদ্ধতার কারণে তারা ভুলও করেছিলেন। তা সত্ত্বেও বাইবেল বলে, “আসার অন্তঃকরণ যাবজ্জীবন একাগ্র ছিল।” (২ বংশা. ১৫:১৬, ১৭; ২৫:১, ২; হিতো. ১৭:৩) তিনি সবসময় যিহোবাকে খুশি করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তিনি যিহোবার প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু, অমৎসিয় যিহোবাকে “একাগ্রচিত্তে” সেবা করেননি। ঈশ্বরের শত্রুদের পরাজিত করার পর, তিনি তার সঙ্গে করে তাদের প্রতিমাগুলো নিয়ে এসেছিলেন এবং সেগুলোর উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন।—২ বংশা. ২৫:১১-১৬.

যে-ব্যক্তি “একাগ্রচিত্তে” ঈশ্বরের সেবা করেন, তিনি যিহোবাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন এবং চিরকাল তাঁকে উপাসনা করতে চান। বাইবেলে ব্যবহৃত “অন্তঃকরণ,” “চিত্ত” বা হৃদয় শব্দটা সাধারণত আমাদের ভিতরের সত্তাকে বোঝায়। এর অন্তর্ভুক্ত আমাদের আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা, প্রবণতা, মনোভাব, ক্ষমতা, চালিকাশক্তি এবং লক্ষ্য। এমনকী যদিও আমরা অসিদ্ধ, তবুও আমরা যিহোবাকে একাগ্র হৃদয়ে উপাসনা করতে পারি। আমরা তাঁর সেবা করি, কারণ আমরা সত্যিই তাঁর সেবা করতে চাই। এই সেবাকে আমরা কোনো বাধ্যবাধকতা বা রীতিগত কোনো বিষয় বলে মনে করি না।—২ বংশা. ১৯:৯.

৪. আমরা এখন কী বিবেচনা করব?

একাগ্র হৃদয়ে ঈশ্বরের সেবা করার অর্থ কী, তা আরও স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য আসুন আমরা রাজা আসা ও সেইসঙ্গে যিহূদার আরও তিন জন বিশ্বস্ত রাজা, যিহোশাফট, হিষ্কিয় ও যোশিয়ের জীবন সম্বন্ধে বিবেচনা করি। যদিও এই চার জন রাজা ভুল করেছিলেন, কিন্তু তারপরও তারা যিহোবাকে খুশি করেছিলেন। যিহোবা দেখেছিলেন যে, তারা একাগ্র হৃদয়ে তাঁর সেবা করেছেন। কেন ঈশ্বর তাদের এভাবে দেখেছিলেন এবং কীভাবে আমরা তাদের অনুকরণ করতে পারি?

আসার হৃদয় “সদাপ্রভুর উদ্দেশে একাগ্র ছিল”

৫. রাজা হওয়ার পর আসা কী করেছিলেন?

ইস্রায়েল জাতি একসময় ইস্রায়েল রাজ্যে এবং যিহূদা রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। আর আসা ছিলেন যিহূদার তৃতীয় রাজা। আসা যখন যিহূদার রাজা হয়েছিলেন, তখন তিনি তার রাজ্য থেকে মিথ্যা উপাসনা এবং জঘন্য যৌন অনৈতিকতা দূর করার জন্য দৃঢ়সংকল্প নিয়েছিলেন। লোকেরা যে-সমস্ত প্রতিমার উপাসনা করত, সেগুলো তিনি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং মন্দির থেকে সমস্ত পুংগামীদের বা সমকামী ব্যক্তিদের বের করে দিয়েছিলেন। আসা এমনকী তার “মাতা [“ঠাকুরমা,” ইজি-টু-রিড ভারশন] মাখা আশেরার জন্য এক ভীষণ প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহাকে মাতারাণীর পদ” থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। (১ রাজা. ১৫:১১-১৩) এ ছাড়া, তিনি লোকেদের “সদাপ্রভুর অন্বেষণ” করার এবং “ব্যবস্থা ও আজ্ঞা” পালন করার জন্যও উৎসাহিত করেছিলেন। অন্যদের যিহোবার উপাসনা করতে সাহায্য করার জন্য আসা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন।—২ বংশা. ১৪:৪.

৬. কূশীয়রা যখন যিহূদা আক্রমণ করতে এসেছিল, তখন আসা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

রাজা আসার রাজত্বের প্রথম দশ বছরে যিহূদা রাজ্যে কোনো যুদ্ধ হয়নি। এরপর, কূশীয়রা ১০,০০,০০০ সৈন্য এবং ৩০০ রথ নিয়ে যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল। (২ বংশা. ১৪:১, ৬, ৯, ১০) আসা কী করেছিলেন? এই ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহই ছিল না যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য করতে পারেন। তাই, তিনি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ১৪:১১.) কখনো কখনো, যিহোবা এমনকী সেই সময়ও তাঁর লোকেদের তাদের শত্রুদের পরাজিত করতে সাহায্য করতেন, যখন রাজারা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতেন না। আর এর কারণ হল, তিনি চাইতেন যাতে লোকেরা জানতে পারে, তিনিই সত্য ঈশ্বর। (১ রাজা. ২০:১৩, ২৬-৩০) কিন্তু, এই যুদ্ধে যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য করেছিলেন, কারণ আসা তাঁর উপর নির্ভর করেছিলেন। যিহোবা আসার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং তারা যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল। (২ বংশা. ১৪:১২, ১৩) কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যিহোবার কাছে সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে আসা যখন অরামের রাজার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, তখন তিনি গুরুতর ভুল করেছিলেন। (১ রাজা. ১৫:১৬-২২) তা সত্ত্বেও, যিহোবা দেখেছিলেন যে, তাঁর প্রতি আসার ভালোবাসা রয়েছে। আসার হৃদয় “যাবজ্জীবন সদাপ্রভুর উদ্দেশে একাগ্র ছিল।” কীভাবে আমরা আসার উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?—১ রাজা. ১৫:১৪.

৭, ৮. কীভাবে আপনি আসাকে অনুকরণ করতে পারেন?

আমরাও যিহোবার প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত কি না, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি কঠিন সময়ও যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকব? আমি কি তাঁর মণ্ডলীকে শুচি রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?’ চিন্তা করে দেখুন, তার ঠাকুরমাকে মাতারানির পদ থেকে সরানোর জন্য আসার কতটা সাহসের প্রয়োজন হয়েছিল! কখনো কখনো আপনাকেও হয়তো আসার মতো সাহসী হতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনার পরিবারের কোনো সদস্য অথবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু যদি পাপ করার পর অনুতপ্ত না হন এবং তাকে মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হয়, তা হলে? আপনি কি সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা না করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হবেন? আপনার হৃদয় আপনাকে কী করতে পরিচালিত করবে?

আসার মতো কখনো কখনো আমাদেরও মনে হতে পারে, সবাই আমাদের বিপক্ষে। হতে পারে, তুমি যিহোবার সাক্ষি বলে সহছাত্র-ছাত্রীরা অথবা শিক্ষকরা তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা করে। কিংবা আপনি সম্মেলনে যাওয়ার জন্য ছুটি নেন বলে অথবা আরও বেশি টাকা আয় করার জন্য প্রায়ই ওভারটাইম করেন না বলে কর্মক্ষেত্রে লোকেরা আপনাকে বোকা বলে মনে করে। এইরকম পরিস্থিতিগুলোতে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করুন, যেমনটা আসা করেছিলেন। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, সাহসী হোন এবং সবসময় যা ন্যায্য, তা-ই করুন। মনে রাখবেন, ঈশ্বর আসাকে শক্তি দিয়েছিলেন আর তিনি আপনাকেও শক্তি দেবেন।

৯. আমরা যখন প্রচার করি, তখন কীভাবে আমরা যিহোবাকে খুশি করতে পারি?

আসা কেবল নিজের কথাই চিন্তা করেননি; তিনি অন্যদেরও “সদাপ্রভুর অন্বেষণ” করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। আমরাও লোকেদের যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য সাহায্য করতে পারি। আমরা যখন অন্যদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে কথা বলি, তখন তিনি তা লক্ষ করেন। আমরা যখন তাঁর প্রতি প্রেম দেখিয়ে এবং লোকেদের ও সেইসঙ্গে তাদের ভবিষ্যতের প্রতি চিন্তা দেখিয়ে এই কাজ করি, তখন যিহোবা নিশ্চয়ই কত খুশিই-না হন!

যিহোশাফট যিহোবার অন্বেষণ করেছিলেন

১০, ১১. কীভাবে আমরা যিহোশাফটকে অনুকরণ করতে পারি?

১০ আসার ছেলে যিহোশাফট “আপন পিতা আসার পথে চলিতেন।” (২ বংশা. ২০:৩১, ৩২) কীভাবে? তার বাবার মতো যিহোশাফটও লোকেদের উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তারা ক্রমাগত যিহোবাকে উপাসনা করে। তিনি তার লোকেদের যিহূদার বিভিন্ন নগরে পাঠিয়েছিলেন, যেন তারা অন্যদের “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পুস্তক” থেকে উপদেশ বা শিক্ষা দেন। (২ বংশা. ১৭:৭-১০) তিনি এমনকী ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যের এলাকা, পর্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের লোকেদের কাছেও গিয়েছিলেন, যাতে তিনি ‘সদাপ্রভুর পক্ষে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিতে’ পারেন। (২ বংশা. ১৯:৪) যিহোশাফট এমন একজন রাজা ছিলেন, যিনি “সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতেন।”—২ বংশা. ২২:৯.

১১ বর্তমানেও, যিহোবা চান যেন পৃথিবীব্যাপী লোকেরা তাঁর সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করে। তাই, আমরা সকলে এই কাজে সাহায্য করতে পারি। প্রতি মাসে এই কাজে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আপনার কি লক্ষ্য রয়েছে? আপনি কি অন্যদের বাইবেল সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে চান, যেন তারাও যিহোবাকে উপাসনা করা শুরু করতে পারে? এই বিষয়টা নিয়ে আপনি কি প্রার্থনা করেন? আপনি যদি প্রচেষ্টা করেন, তা হলে যিহোবা আপনাকে একটা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার জন্য সাহায্য করতে পারেন। আপনি কি কাউকে অধ্যয়ন করাতে ইচ্ছুক, এমনকী এর জন্য আপনাকে যদি আপনার অবসর সময় থেকে কিছুটা সময় ব্যয়ও করতে হয়? আর যিহোশাফট যেমন পুনরায় যিহোবার সেবা করার জন্য অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন, তেমনই আমরাও সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারি, যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, মণ্ডলীর প্রাচীনরা তাদের মণ্ডলীর এলাকার সেই সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার এবং তাদের সাহায্য করার ব্যবস্থা করেন, যারা হয়তো তাদের অতীতের পাপপূর্ণ অভ্যাস ত্যাগ করেছে।

১২, ১৩. (ক) যিহোশাফট যখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি কী করেছিলেন? (খ) কেন আমাদের যিহোশাফটের উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত?

১২ তার বাবা আসার মতো যিহোশাফটও সেই সময় যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন, যখন এক বিরাট সৈন্যবাহিনী যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ২০:২-৪.) তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এবং যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। প্রার্থনায় তিনি স্বীকার করেছিলেন, সেই শত্রুদের পরাজিত করার ক্ষমতা তার নেই। তিনি আরও বলেছিলেন যে, তিনি ও তাঁর লোকেরা কী করবেন, তা-ও তারা জানেন না। এই ব্যাপারে যিহোশাফটের কোনো সন্দেহই ছিল না যে, যিহোবা তাদের সাহায্য করবেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা কেবল তোমার দিকে চাহিয়া আছি।”—২ বংশা. ২০:১২.

১৩ কোনো একটা সমস্যা দেখা দিলে, যিহোশাফটের মতো মাঝে মাঝে আমরাও হয়তো বুঝতে পারি না যে, কী করব। আমরা হয়তো এমনকী ভয়ও পেতে পারি। (২ করি. ৪:৮, ৯) কিন্তু, যিহোশাফট কী করেছিলেন, তা মনে করে দেখুন। সমস্ত লোকের সামনে তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তারা যে কতটা দুর্বল অনুভব করছেন, সেটা স্বীকার করেছিলেন। (২ বংশা. ২০:৫) পরিবারের মস্তকরা যিহোশাফটের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং কী করতে হবে, তা বুঝতে সাহায্য করেন। পরিবারের সামনে সেই বিষয়ে প্রার্থনা করতে লজ্জা বোধ করবেন না। কারণ এর ফলে তারা বুঝতে পারবে, যিহোবার উপর আপনার কতটা আস্থা রয়েছে। তিনি যিহোশাফটকে সাহায্য করেছিলেন আর তিনি আপনাকেও সাহায্য করবেন।

হিষ্কিয় যা ন্যায্য, তা করে গিয়েছিলেন

১৪, ১৫. কীভাবে হিষ্কিয় পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেছিলেন?

১৪ হিষ্কিয় হলেন আরেকজন রাজা, যিনি “সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলেন।” যদিও তার বাবা এক মন্দ উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন এবং প্রতিমাপূজা করতেন কিন্তু তারপরও হিষ্কিয় যিহোবার প্রতি আসক্ত ছিলেন। হিষ্কিয় “উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন করিলেন, ও স্তম্ভ সকল ভগ্ন করিলেন; এবং আশেরা-মূর্ত্তি ছেদন করিলেন, আর মোশি যে পিত্তলময় সর্প নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন,” কারণ ইস্রায়েলীয়রা সেটার উপাসনা করতে শুরু করেছিল। হিষ্কিয় যিহোবার প্রতি একান্তভাবে নিয়োজিত ছিলেন। “সদাপ্রভু মোশিকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছিলেন, সে সমস্ত” তিনি “পালন” করে চলেছিলেন।২ রাজা. ১৮:১-৬.

১৫ হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময় অশূরীয় সৈন্যবাহিনী যিহূদা আক্রমণ করতে এসেছিল এবং যিরূশালেম ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। অশূরের রাজা সন্‌হেরীব যিহোবাকে টিটকারি দিয়েছিলেন এবং হিষ্কিয়কে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে হিষ্কিয় পুরোপুরিভাবে যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন এবং তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি জানতেন, অশূরীয়দের চেয়ে ঈশ্বর আরও বেশি শক্তিশালী এবং তিনি তাঁর লোকেদের রক্ষা করতে পারেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৩৭:১৫-২০.) ঈশ্বর ১,৮৫,০০০ জন অশূরীয় সৈন্যকে হত্যা করার জন্য একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন।—যিশা. ৩৭:৩৬, ৩৭.

১৬, ১৭. কীভাবে আপনি হিষ্কিয়কে অনুকরণ করতে পারেন?

১৬ পরবর্তী সময়ে, হিষ্কিয় এত গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, তার আর বাঁচার কোনো আশা ছিল না। সেই কঠিন সময়ে তিনি যিহোবাকে তার বিশ্বস্ততার কথা স্মরণ করার ও সেইসঙ্গে তাকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। (পড়ুন, ২ রাজাবলি ২০:১-৩.) যিহোবা হিষ্কিয়ের প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং তাকে সুস্থ করেছিলেন। তবে, বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি যে, বর্তমানে আমাদের অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করার কিংবা আমাদের আয়ু বৃদ্ধি করার জন্য আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো অলৌকিক বিষয় আশা করতে পারি না। কিন্তু, হিষ্কিয়ের মতো আমরা সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি। আমরা তাঁকে বলতে পারি: “হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, তুমি এখন স্মরণ কর, আমি তোমার সাক্ষাতে বিশ্বস্তভাবে ও একাগ্রচিত্তে চলিয়াছি।” আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, যিহোবা সবসময় আপনার যত্ন নেবেন আর তা এমনকী সেই সময়ও, যখন আপনি অসুস্থ থাকেন?—গীত. ৪১:৩.

১৭ অন্য আর কোন উপায়ে আমরা হিষ্কিয়কে অনুকরণ করতে পারি? হিষ্কিয় তার রাজ্য থেকে প্রতিমাপূজার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত বিষয় দূর করে দিয়েছিলেন। একইভাবে, আমাদেরও যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে অথবা তাঁকে সেবা করার ক্ষেত্রে আমাদের সময় কেড়ে নেয়, এমন যেকোনো কিছু দূর করে দেওয়া উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন মানুষকে তাদের দেবতা হিসেবে দেখে থাকে। তারা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের ও সেইসঙ্গে তারা চেনে না এমন ব্যক্তিদেরও উচ্চসম্মান দিয়ে থাকে। বহু লোক এই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পড়ার এবং তাদের ছবি দেখার জন্য অনেক সময় ব্যয় করে। অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তারা সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য হাতিয়ার ব্যবহার করে। এটা ঠিক যে, আমরা হয়তো এই ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের পরিবার বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভালোবাসি। কিন্তু, আমরা হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনে অনেক সময় ব্যয় করে ফেলতে পারি। এমনকী ইন্টারনেটে আমরা যে-ছবি দিই বা মন্তব্য করি, সেগুলো যদি লোকেরা পছন্দ করে, তা হলে আমরা হয়তো গর্ব বোধ করতে পারি। আবার যদি বুঝতে পারি, কেউ সেগুলো দেখা বন্ধ করে দিয়েছে, তা হলে হয়তো কিছুটা অসন্তুষ্টও হতে পারি। আমরা প্রেরিত পৌল, আক্বিল্লা ও প্রিষ্কিল্লার উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। আপনার কী মনে হয়, তারা লোকেদের, বিশেষভাবে যিহোবার সেবা করে না এমন ব্যক্তিদের রোজকার জীবনের খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় জানার জন্য কি প্রতিদিন সময় ব্যয় করতেন? বাইবেল বলে, পৌল “বাক্যে নিবিষ্ট” ছিলেন। আর আক্বিল্লা ও প্রিষ্কিল্লা প্রচার করার এবং অন্যদের “ঈশ্বরের পথ আরও সূক্ষ্মরূপে” বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের সময় ব্যয় করতেন। (প্রেরিত ১৮:৪, ৫, ২৬) আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি মানুষদের দেবতা হিসেবে না দেখার ব্যাপারে সতর্ক আছি? আমি কি এমন বিষয়গুলোর পিছনে অনেক সময় ব্যয় করা এড়িয়ে চলি, যেগুলো আসলে গুরুত্বপূর্ণ নয়?’—পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১৬. *

যোশিয় যিহোবার আজ্ঞা পালন করেছিলেন

১৮, ১৯. কীভাবে আমরা যোশিয়ের মতো হতে পারি?

১৮ রাজা যোশিয়ও ‘সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত’ যিহোবার আজ্ঞা পালন করেছিলেন। (২ বংশা. ৩৪:৩১) যোশিয় ছিলেন হিষ্কিয়ের প্রপৌত্র। তিনি যখন কিশোর-বয়সি ছিলেন, তখন থেকেই তিনি ‘দায়ূদের ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন।’ আর তার বয়স যখন ২০ বছর, তখন তিনি যিহূদা থেকে প্রতিমাপূজার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো দূর করা শুরু করেছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৪:১-৩.) যোশিয় যিহোবাকে খুশি করার জন্য যিহূদার অন্যান্য রাজাদের চেয়ে আরও বেশি প্রচেষ্টা করেছিলেন। এরপর একদিন, মহাযাজক মন্দিরের মধ্যে ঈশ্বরের ব্যবস্থাপুস্তক খুঁজে পেয়েছিলেন। এই পুস্তকটি সম্ভবত মোশি নিজে লিখেছিলেন! যখন লেখক শাফন যোশিয়ের সামনে সেই পুস্তক পড়েছিলেন, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবাকে পূর্ণরূপে সেবা করার জন্য তাকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। তিনি অন্যদেরও তা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। এর ফলে, যতদিন যোশিয় জীবিত ছিলেন, লোকেরা “সদাপ্রভুর অনুগমনে নিবৃত্ত” হয়নি।—২ বংশা. ৩৪:২৭, ৩৩.

১৯ তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাকো, তা হলে তুমি যোশিয়কে অনুকরণ করতে এবং যিহোবাকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করতে পার। যোশিয় হয়তো তার অনুতপ্ত ঠাকুরদাদা রাজা মনঃশির কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। তুমিও তোমার পরিবার বা মণ্ডলীর বয়স্ক ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিখতে পার। তারা তোমাকে, যিহোবা তাদের জন্য যে-উত্তম বিষয়গুলো করেছেন, সেগুলো বলতে পারেন। এ ছাড়া, শাস্ত্রে যা লেখা আছে, তা জানার পর যোশিয় কেমন অনুভব করেছিলেন, তা মনে করে দেখো। তিনি যিহোবাকে খুশি করতে উৎসুক ছিলেন এবং সঙ্গেসঙ্গে পরিবর্তন করেছিলেন। শাস্ত্র পড়ার মাধ্যমে তুমিও যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে পার। এর ফলে, তাঁর সঙ্গে তোমার বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে এবং তুমি আরও সুখী হবে। আর তুমি অন্যদের যিহোবা সম্বন্ধে বলার জন্যও আগ্রহী হবে। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৩৪:১৮, ১৯.) বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় তুমি হয়তো বুঝতে পারবে যে, ঈশ্বরের সেবায় এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে তুমি উন্নতি করতে পার। যদি উন্নতি করার প্রয়োজন হয়, তা হলে পরিবর্তন করার জন্য যথাসাধ্য করো, যেমনটা যোশিয় করেছিলেন।

একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করুন!

২০, ২১. (ক) যে-চার জন রাজার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কোন বিষয়গুলো সাধারণ ছিল? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী আলোচনা করব?

২০ যিহূদার এই চার জন রাজার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি, যারা একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করেছিলেন? এই ব্যক্তিরা যিহোবাকে খুশি করার এবং সারাজীবন ধরে তাঁকে উপাসনা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। যখন শক্তিশালী শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছিল, তখন তারা যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যিহোবার প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে তারা তাঁর সেবা করেছিলেন।

২১ যদিও এই চার জন রাজা অসিদ্ধ ছিলেন এবং ভুল করেছিলেন, কিন্তু যিহোবা তাদের প্রতি খুশি ছিলেন। তিনি তাদের হৃদয় দেখেছিলেন এবং তিনি জানতেন যে, তারা সত্যিই তাঁকে ভালোবাসে। আমরাও অসিদ্ধ এবং ভুল করে থাকি। কিন্তু, যিহোবা যখন দেখেন যে, আমরা একাগ্র হৃদয়ে তাঁর সেবা করছি, তখন তিনি খুশি হন। পরের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, এই রাজাদের ভুলগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

^ অনু. 17 ইফিষীয় ৫:১৬ (NW): “আপনার সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করুন কারণ এই কাল মন্দ।”