সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাবা-মায়েরা, আপনারা কি আপনাদের সন্তানকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য উন্নতি করতে সাহায্য করছেন?

বাবা-মায়েরা, আপনারা কি আপনাদের সন্তানকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য উন্নতি করতে সাহায্য করছেন?

“কেন বিলম্ব করিতেছ? উঠ, . . . বাপ্তাইজিত হও।”—প্রেরিত ২২:১৬.

গান সংখ্যা: ৭, ১১

১. তাদের সন্তান বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান?

“বেশ কয়েক মাস ধরে আমি বাবা ও মাকে বলতাম যে, আমি বাপ্তিস্ম নিতে চাই এবং তারাও প্রায়ই সেই বিষয়টা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতেন। তারা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চাইতেন যেন আমি এটা বুঝি যে, আমার সিদ্ধান্ত কতটা গুরুগম্ভীর এক বিষয়। তারপর, ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে আমার জীবনে সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটা আসে।” বোন ব্লসম ব্র্যান্ট এভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে, তিনি যখন বাপ্তিস্ম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন কী হয়েছিল। বর্তমানেও, বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সাহায্য করতে চান। কোনো সন্তান যদি কোনো উত্তম কারণ ছাড়াই বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে, তা হলে সেটা যিহোবার সঙ্গে সেই সন্তানের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। (যাকোব ৪:১৭) তাদের সন্তান বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে বিজ্ঞ বাবা-মায়েরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান যে, তাদের সন্তান খ্রিস্টের শিষ্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত।

২. (ক) কোনো কোনো সীমা অধ্যক্ষ কোন সমস্যা লক্ষ করেছেন? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

কোনো কোনো সীমা অধ্যক্ষ লক্ষ করেছেন যে, কিশোর বয়সের শেষের দিকের অথবা ২০-র কোঠার প্রথম দিকের অনেক অল্পবয়সি এখনও বাপ্তিস্ম নেয়নি, যদিও তারা সাক্ষি পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ সময়েই এই অল্পবয়সিরা সভায় যোগ দেয়, পরিচর্যায় অংশ নেয় এবং নিজেদের যিহোবার সাক্ষি হিসেবে মনে করে। তা সত্ত্বেও, কোনো এক কারণে তারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেনি ও বাপ্তিস্ম নেয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর কারণ হল বাবা-মায়েরা মনে করেন যে, তাদের সন্তানরা বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এই প্রবন্ধে আমরা এমন চারটে চিন্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর কারণে কোনো কোনো বাবা-মা তাদের সন্তানদের বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করেননি।

আমার সন্তানের কি যথেষ্ট বয়স হয়েছে?

৩. ব্লসমের বাবা-মা কোন বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন?

প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ব্লসমের বাবা-মা এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন যে, বাপ্তিস্ম নেওয়ার অর্থ কী এবং সেটা কতটা গুরুগম্ভীর এক বিষয়, তা বোঝার মতো যথেষ্ট বয়স তাদের মেয়ের হয়েছিল কি না। কীভাবে বাবা-মায়েরা জানতে পারেন যে, তাদের সন্তান যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত কি না?

৪. কীভাবে মথি ২৮:১৯, ২০ পদে পাওয়া যিশুর আজ্ঞাটা বর্তমানে বাবা-মায়েদের সাহায্য করতে পারে?

মথি ২৮:১৯, ২০ পদ পড়ুন। বাইবেল এমনটা বলে না যে, একজন ব্যক্তির একটা নির্দিষ্ট বয়সে বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত। কিন্তু, বাবা-মায়েদের জন্য এই বিষয়টা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করা উত্তম হবে যে, শিষ্য তৈরি করার অর্থ কী। গ্রিক ভাষায়, মথি ২৮:১৯ পদে “শিষ্য কর” অভিব্যক্তিটার জন্য ব্যবহৃত শব্দের অর্থ হল কোনো ব্যক্তিকে এই লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা দেওয়া যেন তিনি একজন ছাত্র অথবা শিষ্য হয়ে ওঠার বিষয়ে সাহায্য লাভ করেন। একজন শিষ্য হলেন এমন কেউ, যিনি যিশুর শিক্ষা সম্বন্ধে শেখেন ও বোঝেন এবং তাঁর বাধ্য হতে চান। তাই, সন্তানদের জন্মের সময় থেকেই বাবা-মায়েদের এই লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত যেন তারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করার এবং খ্রিস্টের শিষ্য হয়ে ওঠার বিষয়ে সাহায্য লাভ করে। এটা ঠিক যে, শিশুদের বাপ্তিস্ম নেওয়ার মতো যোগ্যতা নেই। তা সত্ত্বেও, বাইবেল দেখায় যে, এমনকী ছোটো সন্তানেরাও বাইবেলের সত্য বুঝতে পারে এবং সেগুলোকে ভালোবাসতে পারে।

৫, ৬. (ক) তীমথিয়ের বিষয়ে বাইবেলের বর্ণনা থেকে আমরা তার বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে কোন উপসংহারে পৌঁছাতে পারি? (খ) বিজ্ঞ বাবা-মায়েদের জন্য তাদের সন্তানদের সাহায্য করার সর্বোত্তম উপায় কী?

তীমথিয় ছিলেন এমন একজন শিষ্য, যিনি অল্পবয়সেই যিহোবার সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, তীমথিয় “শিশুকাল অবধি” বা শিশুকাল থেকে ঈশ্বরের বাক্যের সত্য সম্বন্ধে শিখতে শুরু করেছিলেন। তীমথিয়ের বাবা যিহোবার সেবা করতেন না কিন্তু তার মা ও দিদিমা তাকে ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসতে সাহায্য করেছিলেন। এর ফলে, তার বিশ্বাস অনেক দৃঢ় হয়ে উঠেছিল। (২ তীম. ১:৫; ৩:১৪, ১৫) তার বয়স যখন হয়তো কিশোর বয়সের শেষের দিকে অথবা ২০-র কোঠার প্রথম দিকে ছিল, তখন তিনি মণ্ডলীতে বিভিন্ন বিশেষ কার্যভার লাভ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন।—প্রেরিত ১৬:১-৩.

প্রত্যেকটা সন্তানই ভিন্ন। সবাই একই বয়সে পরিপক্ব হয়ে ওঠে না। কোনো কোনো সন্তান অল্পবয়সেই সত্য সম্বন্ধে বুঝতে পারে, বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেয় এবং বাপ্তিস্ম নিতে চায়। আবার অন্যেরা হয়তো আরেকটু বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় না। বিজ্ঞ বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য চাপ দেন না। এর পরিবর্তে, তারা প্রতিটা সন্তানকে সাহায্য করেন, যাতে তারা তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী উন্নতি করতে পারে। বাবা-মায়েরা সেইসময় খুবই আনন্দিত হন, যখন তাদের সন্তান হিতোপদেশ ২৭:১১ পদে বলা কথাগুলো কাজে লাগায়। (পড়ুন।) কিন্তু, তাদের অবশ্যই এই বিষয়টা মনে রাখতে হবে যে, তাদের লক্ষ্য হল তাদের সন্তানদের শিষ্য হয়ে উঠতে সাহায্য করা। এই বিষয়টা মাথায় রেখে তাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমার সন্তানের কি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার ও বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে?’

আমার সন্তানের কি যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে?

৭. বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে কোনো ব্যক্তিকে কি বাইবেলের প্রতিটা শিক্ষার খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে? ব্যাখ্যা করুন।

বাবা-মায়েরা যখন তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেন, তখন তারা সন্তানদের সত্য সম্বন্ধে ভালোভাবে শিখতে সাহায্য করেন। এই জ্ঞান সন্তানদের ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, একজন সন্তান নিজেকে উৎসর্গ করার ও বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে, তাকে বাইবেলের প্রতিটা শিক্ষার খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। খ্রিস্টের প্রতিটা শিষ্যকে এমনকী বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও অবশ্যই শিক্ষা লাভ করে যেতে হবে। (পড়ুন, কলসীয় ১:৯, ১০.) তা হলে, বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে একজন ব্যক্তিকে কতটা জ্ঞান অর্জন করতে হবে?

৮, ৯. ফিলিপীতে একজন কারারক্ষকের প্রতি কী ঘটেছিল এবং তার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

অতীতের একটা পরিবারের অভিজ্ঞতা বর্তমানে বাবা-মায়েদের সাহায্য করতে পারে। (প্রেরিত ১৬:২৫-৩৩) ৫০ খ্রিস্টাব্দে, পৌল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় ফিলিপী নগরে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তাকে ও সীলকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল। সেই রাতে সেখানে খুবই তীব্র এক ভূমিকম্প হয়েছিল আর এর ফলে, কারাগারের সমস্ত দরজা খুলে গিয়েছিল। সেখানকার কারারক্ষক ভেবেছিলেন যে, সমস্ত বন্দি পালিয়ে গিয়েছে আর তাই, তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, পৌল তাকে তা করা থেকে থামিয়েছিলেন। এরপর, পৌল ও সীল সেই কারারক্ষক ও তার পরিবারকে যিশু সম্বন্ধে সত্য জানিয়েছিলেন। তারা যিশু সম্বন্ধে যা-কিছু শিখেছিলেন, সেগুলো বিশ্বাস করেছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর বাধ্য হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই, তারা সঙ্গেসঙ্গে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

সেই কারারক্ষক হয়তো একজন অবসরপ্রাপ্ত রোমীয় সৈনিক ছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে জানতেন না। তাই, একজন খ্রিস্টান হওয়ার জন্য তাকে বাইবেলের মৌলিক সত্যগুলো শিখতে হয়েছিল, যিহোবা তাঁর দাসদের কাছ থেকে কী চান, তা বুঝতে হয়েছিল এবং যিশুর শিক্ষার বাধ্য হওয়ার বিষয়ে ইচ্ছুক হতে হয়েছিল। সেই অল্প সময়ে তিনি যা-কিছু শিখেছিলেন, সেগুলো তাকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়ে ইচ্ছুক হতে সাহায্য করেছিল। অবশ্যই, বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর তিনি আরও শিক্ষা লাভ করে গিয়েছিলেন। তাই, আপনার সন্তান যখন যিহোবার প্রতি তার ভালোবাসার ও তাঁর প্রতি বাধ্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কারণে আপনাকে বলে যে, সে বাপ্তিস্ম নিতে চায়, তখন আপনি কী করতে পারেন? আপনি হয়তো তাকে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বলতে পারেন, যাতে তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, আপনার সন্তান বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছে কি না। * সমস্ত বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানের মতোই সেও যত দিন বেঁচে থাকবে, এমনকী চিরকাল ধরে, যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করে চলবে।—রোমীয় ১১:৩৩, ৩৪.

আমার সন্তানের জন্য কোন শিক্ষা সর্বোত্তম?

১০, ১১. (ক) কোনো কোনো বাবা-মা কী মনে করেন? (খ) কী একজন সন্তানকে প্রকৃতই সুরক্ষিত রাখবে?

১০ কোনো কোনো বাবা-মা মনে করেন যে, তাদের সন্তানের জন্য একমাত্র উচ্চ শিক্ষা লাভ করার ও একটা ভালো কেরিয়ার গড়ে তোলার পর বাপ্তিস্ম নেওয়া সর্বোত্তম হবে। এই বাবা-মায়েদের হয়তো ভালো উদ্দেশ্য থাকতে পারে কিন্তু তাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘এই বিষয়গুলো কি আমার সন্তানকে সত্যিই সফল হয়ে উঠতে সাহায্য করবে? এগুলো কি বাইবেল থেকে আমরা যা শিখি, সেটার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? আমরা আমাদের জীবন কীভাবে ব্যবহার করব, সেই বিষয়ে যিহোবা কী চান?’—পড়ুন, উপদেশক ১২:১.

১১ এই বিষয়টা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই জগৎ ও এটার মধ্যে যা-কিছু রয়েছে, সেগুলো যিহোবার ইচ্ছা ও চিন্তাভাবনার বিপরীত। (যাকোব ৪:৭, ৮; ১ যোহন ২:১৫-১৭; ৫:১৯) যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হল আপনার সন্তানের জন্য শয়তান, এই জগৎ ও জগতের মন্দ চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে সর্বোত্তম সুরক্ষা। বাবা-মায়েরা যদি শিক্ষা ও একটা ভালো চাকরিকে জীবনে প্রথমে রাখেন, তা হলে খুব সম্ভবত তাদের সন্তান মনে করবে যে, জগতের বিষয়গুলো যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা বিপদজনক বিষয়। প্রেমময় বাবা-মা হিসেবে আপনারা কি সত্যিই চান যে, এই জগৎ আপনাদের সন্তানকে এমন শিক্ষা দিক, যেটাকে জগতের লোকেরা সুখী হওয়ার চাবিকাঠি বলে মনে করে? সফল হওয়ার এবং প্রকৃত আনন্দ লাভ করার একমাত্র উপায় হল যিহোবাকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখা।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১:২, ৩.

আমার সন্তান যদি পাপ করে ফেলে, তা হলে?

১২. কেন কোনো কোনো বাবা-মা মনে করেন যে, তাদের সন্তানের জন্য বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়ে অপেক্ষা করা ভালো হবে?

১২ একজন মা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কেন তিনি চাননি তার মেয়ে বাপ্তিস্ম নিক। তিনি বলেছিলেন, “আমার এটা বলতে লজ্জা লাগছে যে, এর পিছনে সবচেয়ে বড়ো কারণ ছিল সমাজচ্যুত করার ব্যবস্থা।” সেই বোনের মতো কোনো কোনো বাবা-মা মনে করেন যে, তাদের সন্তানের জন্য সেইসময় পর্যন্ত বাপ্তিস্মের বিষয়ে অপেক্ষা করা ভালো হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অজ্ঞানতাপূর্ণ বা মূর্খতাপূর্ণ ভুল করা এড়িয়ে চলার মতো যথেষ্ট বয়স হয়। (আদি. ৮:২১; হিতো. ২২:১৫) সেই বাবা-মায়েরা হয়তো মনে করেন যে, তাদের সন্তান যদি বাপ্তিস্ম না নেয়, তা হলে তাকে সমাজচ্যুত করা যাবে না। কিন্তু, কেন এই ধরনের যুক্তি ভুল?—যাকোব ১:২২.

১৩. কোনো ব্যক্তি যদি বাপ্তিস্ম না নিয়ে থাকেন, এর অর্থ কি এই যে, তাকে যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে হবে না? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ এটা ঠিক, বাবা-মায়েরা এমনটা চান না যে, তাদের সন্তান যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার বিষয়ে প্রস্তুত হওয়ার আগেই বাপ্তিস্ম নিক। কিন্তু, এমনটা চিন্তা করা ভুল হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন সন্তান বাপ্তিস্ম নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে হবে না। একজন সন্তানকে সেইসময় থেকেই যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে হয়, যখন থেকে সে সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে জানতে পারে। (পড়ুন, যাকোব ৪:১৭.) বিজ্ঞ বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন না। এমনকী সন্তান যখন খুব ছোটো থাকে, তখন থেকেই তারা তাকে এমন বিষয়গুলো ভালোবাসতে শেখান, যেগুলো যিহোবার দৃষ্টিতে সঠিক এবং এমন বিষয়গুলো ঘৃণা করতে শেখান, যেগুলো যিহোবার দৃষ্টিতে ভুল, ঠিক যেমনটা তারা নিজেরা করে থাকেন। (লূক ৬:৪০) যিহোবার প্রতি আপনার সন্তানের ভালোবাসা তাকে গুরুতর পাপ করা থেকে সুরক্ষিত রাখবে কারণ সে সেই বিষয়গুলোই করতে চাইবে, যেগুলো যিহোবার দৃষ্টিতে সঠিক।—যিশা. ৩৫:৮.

অন্যেরাও সাহায্য করতে পারে

১৪. কীভাবে প্রাচীনরা বাবা-মায়েদের কাজে সমর্থন জোগাতে পারেন?

১৪ প্রাচীনরা যিহোবার সেবায় বিভিন্ন লক্ষ্যের বিষয়ে আলোচনা করার সময় ইতিবাচক মন্তব্য করার মাধ্যমে বাবা-মায়েদের কাজে সমর্থন জোগাতে পারেন। একজন বোন স্মরণ করে বলেন যে, তার বয়স যখন ছ’বছর ছিল, তখন ভাই রাসেল তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বোন বলেছিলেন, “তিনি ঈশ্বরের সেবায় আমার লক্ষ্যগুলো নিয়ে ১৫ মিনিট আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।” এর ফল কী হয়েছিল? পরবর্তী সময় সেই বোন একজন অগ্রগামী হয়েছিলেন এবং ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন! স্পষ্টতই, ইতিবাচক কথা ও উৎসাহ একজন ব্যক্তির সমগ্র জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। (হিতো. ২৫:১১) এ ছাড়া, প্রাচীনরা কিংডম হলের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার জন্য বাবা-মায়েদের ও সন্তানদের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। তারা সন্তানদের বয়স ও ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন কাজ করতে দিতে পারেন।

১৫. কীভাবে মণ্ডলীর অন্যেরা অল্পবয়সিদের সাহায্য করতে পারে?

১৫ কীভাবে মণ্ডলীর অন্যেরা সাহায্য করতে পারে? তারা অল্পবয়সিদের প্রতি উপযুক্ত মাত্রায় ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানোর মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি হয়তো এমন চিহ্নগুলো লক্ষ করতে পারেন, যেগুলো দেখায় যে, অল্পবয়সিরা যিহোবার আরও নিকটবর্তী হচ্ছে। কোনো সন্তান কি মণ্ডলীর সভায় একটা ভালো মন্তব্য করেছে অথবা সে কি সপ্তাহের মাঝের সভায় কোনো অংশ তুলে ধরেছে? সে কি স্কুলে কারো কাছে সাক্ষ্যদান করেছে অথবা সে কি কোনো ভুল কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ হওয়া সত্ত্বেও সঠিক কাজ করেছে? যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে দেরি না করে দ্রুত তার প্রশংসা করুন! আমরা সভার আগে ও পরে অল্পবয়সিদের সঙ্গে কথা বলাকে একটা লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করতে পারি। আমরা যখন এমনটা করি, তখন সন্তানরা অনুভব করবে যে, তারা এক “মহাসমাজের” অর্থাৎ বৃহৎ মণ্ডলীর অংশ।—গীত. ৩৫:১৮.

আপনার সন্তানকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য উন্নতি করতে সাহায্য করুন

১৬, ১৭. (ক) কেন সন্তানদের জন্য বাপ্তিস্ম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ? (খ) খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা কোন আনন্দ লাভ করতে পারেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৬ বাবা-মায়েরা সবচেয়ে মহৎ যে-সুযোগগুলো লাভ করেন, সেগুলোর মধ্যে একটা হল তাদের সন্তানদের প্রভু যিহোবাকে ভালোবাসতে শেখানো। (গীত. ১২৭:৩; ইফি. ৬:৪) ইস্রায়েল জাতির সন্তানরা জন্মের সময় থেকেই যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত হয়ে থাকত। কিন্তু, এখন আমাদের সন্তানরা এভাবে উৎসর্গীকৃত হয় না। বাবা-মা যিহোবাকে ও সত্যকে ভালোবাসেন বলেই যে তাদের সন্তানরাও একই বিষয় করবে, এমন নয়। সন্তানের জন্মের দিন থেকেই বাবা-মায়ের এই লক্ষ্য থাকা উচিত যেন তারা তাকে একজন শিষ্য হয়ে উঠতে, ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে সাহায্য করেন। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর কীই-বা হতে পারে? একজন ব্যক্তির উৎসর্গীকরণ, বাপ্তিস্ম ও যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত সেবাই মহাক্লেশের সময় তার পরিত্রাণ লাভ করার বিষয়টাকে সম্ভবপর করবে।—মথি ২৪:১৩.

বাবা-মায়েদের এই লক্ষ্য থাকা উচিত যেন তারা তাদের সন্তানকে একজন শিষ্য হয়ে উঠতে সাহায্য করেন (১৬, ১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭ বোন ব্লসম ব্র্যান্ট যখন বাপ্তিস্ম নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তখন তার বাবা-মা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে, তিনি বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য সত্যিই প্রস্তুত কি না। তারা যখন এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তিনি সত্যিই প্রস্তুত, তখন তারা তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। বোন ব্লসম ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে, তার বাপ্তিস্মের আগের রাতে তার বাবা কী করেছিলেন: “তিনি আমাদের সবাইকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেছিলেন এবং তারপর একসঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন, তিনি এই বিষয়ে খুব খুশি যে, তার ছোট্ট মেয়ে তাঁর কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” ৬০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বোন ব্লসম বলেছিলেন: “আমি কোনো দিনও সেই রাতের কথা ভুলব না!” বাবা-মায়েরা, আপনারা যখন আপনাদের সন্তানদের যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করতে ও বাপ্তিস্ম নিতে দেখবেন, তখন আপনারাও যেন আনন্দ ও পরিতৃপ্তি লাভ করেন।

^ অনু. 9 বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ২ (ইংরেজি) বইয়ের ৩০৪-৩১০ পৃষ্ঠায় এবং ২০১১ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩-৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া সাহায্যকারী তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এ ছাড়া, ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা -র ২ পৃষ্ঠায় দেওয়া “প্রশ্ন বাক্স” দেখুন।