সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে”

“আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে”

“তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।”​—যিশা. ৪০:৮.

গান সংখ্যা: ৪৩, ৪৮

১, ২. (ক) বাইবেল না থাকলে জীবন কেমন হতো? (খ) কী আমাদের ঈশ্বরের বাক্য থেকে উপকার লাভ করতে সাহায্য করে?

আপনার কাছে যদি বাইবেল না থাকত, তা হলে আপনার জীবন কেমন হতো? আপনার কাছে প্রতিদিন নির্দেশিত হওয়ার জন্য বিজ্ঞ পরামর্শ থাকত না। আপনি ঈশ্বর, জীবন অথবা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সত্য জানতে পারতেন না। আর আপনার এই বিষয়ে কোনো ধারণাই থাকত না যে, যিহোবা অতীতে মানুষের জন্য কী করেছেন।

আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমরা এইরকম এক করুণ পরিস্থিতির মধ্যে নেই। যিহোবা আমাদের তাঁর বাক্য বাইবেল দিয়েছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, এটির বার্তা চিরকাল টিকে থাকবে। প্রেরিত পিতর যিশাইয় ৪০:৮ পদের কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন। এমনকী যদিও এই শাস্ত্রপদ নির্দিষ্টভাবে প্রভু যিহোবার বাক্য বাইবেলের বিষয়ে উল্লেখ করে না, তবে এটা বাইবেলের বার্তার প্রতি প্রযোজ্য। (পড়ুন, ১ পিতর ১:২৪, ২৫.) আমরা বাইবেল থেকে সেইসময় সবচেয়ে বেশি উপকার লাভ করতে পারি, যখন আমরা নিজেদের ভাষায় এটি পড়ি। যারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসে, তারা সবসময় এই সত্যটা জেনে এসেছে। শত শত বছর ধরে, বিভিন্ন ব্যক্তিরা চরম বিরোধিতা ও সমস্যার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও বাইবেল অনুবাদ করার এবং লোকেরা যাতে এটি সহজেই পেতে পারে, সেইজন্য কঠোর পরিশ্রম করে এসেছে। যিহোবা চান যেন যথাসম্ভব সবচেয়ে বেশি লোক “পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান” বা সঠিক জ্ঞান “পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।”—১ তীম. ২:৩, ৪.

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য এই বিষয়গুলো সত্ত্বেও টিকে থেকেছে: (১) ভাষাগত পরিবর্তন, (২) প্রচলিত ভাষাকে পরিবর্তন করে এমন রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং (৩) বাইবেল অনুবাদের বিরুদ্ধে বিরোধিতা। কীভাবে এই আলোচনা আমাদের সাহায্য করবে? এটার ফলে বাইবেল ও এটির গ্রন্থকারের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আরও বৃদ্ধি পাবে।—মীখা ৪:২; রোমীয় ১৫:৪.

ভাষাগত পরিবর্তন

৪. (ক) সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে ভাষার পরিবর্তন ঘটে? (খ) কীভাবে আমরা জানি যে, ঈশ্বর কোনো নির্দিষ্ট ভাষাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না আর এটা জেনে আপনি কেমন অনুভব করেন?

সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাষার পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন শব্দ ও অভিব্যক্তির অর্থ হয়তো আগের চেয়ে অনেকটা ভিন্ন হয়ে উঠতে পারে। আপনি হয়তো আপনার ভাষার এইরকম কোনো উদাহরণের কথা চিন্তা করতে পারেন। প্রাচীন কালের বিভিন্ন ভাষার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। আজকে লোকেরা যে-ইব্রীয় (হিব্রু) ও গ্রিক ভাষায় কথা বলে, সেগুলো বাইবেল যে-ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষায় লেখা হয়েছিল, সেগুলোর চেয়ে খুবই ভিন্ন। বেশিরভাগ লোক বাইবেল যে-প্রাচীন ভাষায় লেখা হয়েছিল, সেই ভাষায় সেটি পড়ে বুঝতে পারে না আর তাই তাদের অনুবাদের প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ মনে করেছে যে, তারা যদি প্রাচীন ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষা শেখে, তা হলে তারা আরও ভালোভাবে বাইবেল বুঝতে পারবে। কিন্তু এমনটা করা, তারা যতটা মনে করে ততটা সাহায্যকারী না-ও হতে পারে। * আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে, বাইবেল সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ৩,২০০-রও বেশি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। স্পষ্টতই, যিহোবা চান যেন ‘প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষার’ লোকেরা তাঁর বাক্য থেকে উপকার লাভ করে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬.) আর এই বিষয়টা আমাদের ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী অনুভব করতে সাহায্য করে, যিনি হলেন প্রেমময় এবং যিনি “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] করেন না।”—প্রেরিত ১০:৩৪.

৫. কী কিং জেমস্‌ ভারশন বাইবেলকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল?

সত্যি বলতে কী, ভাষা পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টা বাইবেল অনুবাদের উপরও প্রভাব ফেলে। একটা অনুবাদ, যেটা প্রথম বার প্রকাশিত হওয়ার সময় খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যেত, সেটা হয়তো পরবর্তী সময় ততটা স্পষ্টভাবে বোঝা না-ও যেতে পারে। এর একটা উদাহরণ হল কিং জেমস্‌ ভারশন বাইবেল, যেটা ১৬১১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এটি ইংরেজি ভাষার বাইবেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি বাইবেল হয়ে উঠেছিল। কিং জেমস্‌ ভারশন-এ ব্যবহৃত কথাগুলো এমনকী ইংরেজি ভাষার উপরও প্রভাব ফেলেছিল। * তবে, এই অনুবাদে যিহোবার নাম মাত্র কয়েক বার ব্যবহার করা হয়েছিল। ইব্রীয় শাস্ত্র-এর বেশিরভাগ জায়গায় যেখানে মূল ভাষায় ঈশ্বরের নাম ছিল, এই অনুবাদে সেই জায়গাগুলোতে বড়ো অক্ষরে “প্রভু” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল। পরবর্তী মুদ্রণগুলোতে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এও কয়েকটা পদে বড়ো অক্ষরে “প্রভু” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল। এইভাবে কিং জেমস্‌ ভারশন স্বীকার করেছিল যে, তথাকথিত নূতন নিয়ম-এ ঈশ্বরের নাম রয়েছে।

৬. কেন আমরা নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলের জন্য কৃতজ্ঞ?

কিং জেমস্‌ ভারশন যখন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, তখন এটিতে ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দগুলোকে আধুনিক বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অনুবাদের কিছু কিছু শব্দকে সেকেলে বলে মনে হয়েছিল আর আজকে সেই শব্দগুলো বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য ভাষার প্রাথমিক বাইবেল অনুবাদগুলোর ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটেছে। তাই, আমরা যতটা সম্ভব বেশি ভাষায় পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল পেয়ে খুবই কৃতজ্ঞ, যেটির মধ্যে আধুনিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এই অনুবাদ সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ১৫০টারও বেশি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হল, সারা বিশ্বের বেশিরভাগ লোক এখন তাদের নিজেদের ভাষায় এই অনুবাদ পড়তে পারে। এটিতে ব্যবহৃত আধুনিক ও স্পষ্ট শব্দগুলোর সাহায্যে ঈশ্বরের বার্তা সহজেই আমাদের হৃদয়ে পৌঁছায়। (গীত. ১১৯:৯৭) কিন্তু, নতুন জগৎ অনুবাদ-এর প্রধান বিশেষত্ব হল, এই অনুবাদে সেই জায়গাগুলোতে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে মূল ভাষায় ঈশ্বরের নাম পাওয়া যায়।

রাজনৈতিক পরিবর্তন

৭, ৮. (ক) কেন খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে অনেক যিহুদি ইব্রীয় শাস্ত্র বুঝতে পারত না? (খ) গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট কী?

কখনো কখনো বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে লোকেরা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে যে-ভাষায় কথা বলত, তা পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু, যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন যেন লোকেরা এমন ভাষায় বাইবেল পেতে পারে, যে-ভাষা তারা বুঝতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, বাইবেলের প্রথম ৩৯টা বই যিহুদিদের বা ইস্রায়েলীয়দের দ্বারা লেখানো হয়েছিল। তারাই ছিল সেই প্রথম ব্যক্তি, যাদের কাছে “ঈশ্বরের বচনকলাপ . . . গচ্ছিত হইয়াছিল।” (রোমীয় ৩:১, ২) সেই সময় তারা এই বইগুলো হয় ইব্রীয় নতুবা অরামীয় ভাষায় লিখেছিল। কিন্তু, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে অনেক যিহুদি আর ইব্রীয় ভাষা বুঝতে পারত না। কেন? কারণ সেই সময় মহান আলেকজান্ডার বিশ্বের এক বিরাট অংশকে জয় করেছিলেন আর এভাবে গ্রিক সাম্রাজ্য বৃদ্ধি লাভ করেছিল। ফল স্বরূপ, যে-সমস্ত এলাকায় যবন বা গ্রিস দেশ রাজত্ব করেছিল, সেই সমস্ত এলাকায় গ্রিক ভাষাটা প্রচলিত ভাষা হয়ে উঠেছিল আর অনেক লোক নিজেদের ভাষার পরিবর্তে গ্রিক ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল। (দানি. ৮:৫-৭, ২০, ২১) অনেক যিহুদির ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছিল আর তাই তাদের পক্ষে ইব্রীয় ভাষায় বাইবেল বোঝা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হয়েছিল?

যিশুর জন্মের প্রায় ২৫০ বছর আগে বাইবেলের প্রথম পাঁচটা বই গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়, ইব্রীয় শাস্ত্র-এর বাকি বইগুলোও অনুবাদ করা হয়েছিল। এই অনুবাদ গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এটাই সম্পূর্ণ ইব্রীয় শাস্ত্র-এর প্রথম লিখিত অনুবাদ হিসেবে পরিচিত।

৯. (ক) কীভাবে সেপ্টুয়াজিন্ট ও অন্যান্য প্রাথমিক অনুবাদ সেই লোকেদের সাহায্য করেছিল, যারা ঈশ্বরের বাক্য পড়ত? (খ) ইব্রীয় শাস্ত্র-এ আপনার প্রিয় অংশ কোনটা?

সেপ্টুয়াজিন্ট-এর কারণে গ্রিকভাষী যিহুদিদের পক্ষে গ্রিক ভাষায় ইব্রীয় শাস্ত্র পড়া সম্ভবপর হয়েছিল। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন, তারা যখন নিজেদের ভাষায় ঈশ্বরের বাক্য পড়তে শুনেছিল অথবা নিজেরা পড়েছিল, তখন তারা কতটা রোমাঞ্চিত হয়েছিল? পরবর্তী সময়, বাইবেলের কিছু অংশ অন্যান্য প্রচলিত ভাষায় যেমন, সিরিয়, গথিক ও ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। আরও বেশি লোক যখন ঈশ্বরের বাক্য পড়তে ও বুঝতে সক্ষম হয়েছিল, তখন তারাও সেটিকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল। আর তারা তাদের প্রিয় শাস্ত্রপদগুলো বাছাই করতে পেরেছিল, ঠিক যেমন বর্তমানে আমরা করে থাকি। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:১৬২-১৬৫.) হ্যাঁ, ঈশ্বরের বাক্য রাজনৈতিক পরিবর্তন ও প্রচলিত ভাষার পরিবর্তন সত্ত্বেও টিকে থেকেছে।

বাইবেল অনুবাদের বিরুদ্ধে বিরোধিতা

১০. জন ওয়াইক্লিফের সময়ে কেন বেশিরভাগ লোক বাইবেল পড়তে পারত না?

১০ শত শত বছর ধরে, অনেক ক্ষমতাশালী নেতা লোকেদের বাইবেল পড়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, লোকেরা যাতে এটি সহজেই পেতে পারে, সেইজন্য ঈশ্বরভয়শীল পুরুষরা তাদের প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেয়নি। এইরকম একজন ব্যক্তি হলেন জন ওয়াইক্লিফ, যিনি চতুর্দশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে বাস করতেন। তিনি মনে করতেন, সমস্ত ব্যক্তিকেই বাইবেল পড়তে দেওয়া উচিত। তার জীবনকালে ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ লোক কখনো তাদের নিজেদের ভাষায় বাইবেলের বার্তা শোনেনি। সেই সময় বাইবেল কেনার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করতে হতো এবং বাইবেলের প্রতিটা প্রতিলিপি হাতে লিখে তৈরি করতে হতো। তাই, খুবই অল্পসংখ্যক লোকের কাছে বাইবেল ছিল। এ ছাড়া, সেই সময় বেশিরভাগ লোক এমনকী পড়তেও পারত না। যারা গির্জায় যেত, তারা হয়তো ল্যাটিন ভাষায় বাইবেল পাঠ শুনত কিন্তু এটা ছিল এমন এক পুরোনো ভাষা, যেটা সাধারণ লোক আর বুঝতে পারত না। কীভাবে যিহোবা এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যেন লোকেরা তাদের নিজেদের ভাষায় বাইবেল পেতে পারে?—হিতো. ২:১-৫.

জন ওয়াইক্লিফ ও অন্যেরা চাইতেন যেন সকলের কাছে ঈশ্বরের বাক্য থাকে। আপনিও কি একই বিষয় চান? (১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১. ওয়াইক্লিফ বাইবেল অনুবাদিত হওয়ার পর কী হয়েছিল?

১১ জন ওয়াইক্লিফ ও অন্যেরা ১৩৮২ সালে ইংরেজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেছিল। এই ওয়াইক্লিফ বাইবেল, লোলার্ডস্‌ নামে একটা দলের ব্যক্তিদের মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই ব্যক্তিরা বাইবেলকে খুব ভালোবাসত। তারা সমগ্র ইংল্যান্ডে পায়ে হেঁটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ভ্রমণ করত এবং লোকেদের কাছে বাইবেল পড়ে শোনাত। এ ছাড়া, তারা লোকেদের কাছে বাইবেলের কিছু অংশের হাতে লেখা প্রতিলিপি অর্পণ করত। লোলার্ডস্‌দের কাজের কারণে বাইবেল আবারও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

১২. ওয়াইক্লিফ ও তার কাজ সম্বন্ধে গির্জার পাদরিরা কী মনে করেছিল?

১২ গির্জার পাদরিরা ওয়াইক্লিফ, তার বাইবেল ও তার অনুসারীদের ঘৃণা করত। তারা লোলার্ডস্‌দের তাড়না করেছিল এবং যত ওয়াইক্লিফ বাইবেল খুঁজে পেয়েছিল, সেগুলো সব নষ্ট করে দিয়েছিল। যদিও ইতিমধ্যেই ওয়াইক্লিফ মারা গিয়েছিলেন কিন্তু পাদরিরা ঘোষণা করেছিল যে, তিনি একজন ধর্মবিরোধী ব্যক্তি বা গির্জার শত্রু। তারা কবর খুঁড়ে ওয়াইক্লিফের হাড় বের করেছিল, সেগুলো পুড়িয়েছিল এবং সুইফ্ট নদীতে সেই ছাই ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু, অনেক লোক ঈশ্বরের বাক্য পড়তে ও বুঝতে চাইত এবং গির্জা এটাকে থামাতে পারেনি। এরপর শত শত বছর ধরে, ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য অংশের লোকেরা এমন ভাষাগুলোতে বাইবেল অনুবাদ করেছিল ও ছাপিয়েছিল, যে-ভাষা অনেকে বুঝতে পারে।

“আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি”

১৩. আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি এবং এই বিষয়টা কীভাবে আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে?

১৩ বাইবেল ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছিল। কিন্তু, এর মানে এই নয় যে, সেপ্টুয়াজিন্ট, ওয়াইক্লিফের বাইবেল, কিং জেমস্‌ ভারশন অথবা অন্য যেকোনো অনুবাদ সরাসরি ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত। তবে, আমরা যখন পরীক্ষা করে দেখি, কীভাবে এই অনুবাদগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন এটা স্পষ্ট হয় যে, যিহোবার প্রতিজ্ঞা অনুসারে তাঁর বাক্য টিকে থেকেছে। এটা এই বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে যে, যিহোবার করা অন্যান্য প্রতিজ্ঞাগুলোও পরিপূর্ণ হবে।—যিহো. ২৩:১৪.

১৪. বাইবেল সম্বন্ধে আমরা যা শিখি, কীভাবে সেটা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভালোবাসাকে আরও গভীর করে তোলে?

১৪ আমরা যখন শিখি যে, কীভাবে যিহোবা তাঁর বাক্যকে সুরক্ষিত রেখেছেন, তখন তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় এবং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়। * কেন যিহোবা প্রথমে আমাদের বাইবেল দিয়েছেন এবং তারপর এটিকে সুরক্ষিত রাখার প্রতিজ্ঞা করেছেন? কারণ তিনি আমাদের ভালোবাসেন এবং আমাদের উপকারজনক শিক্ষা প্রদান করতে চান। (পড়ুন, যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮.) আর এটা জানা আমাদের তাঁকে ভালোবাসতে ও তাঁর বাধ্য হতে অনুপ্রাণিত করে।—১ যোহন ৪:১৯; ৫:৩.

১৫. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?

১৫ আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে গভীরভাবে ভালোবাসি। তাই, কীভাবে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার লাভ করতে পারি? কীভাবে আমরা পরিচর্যায় লোকেদের বাইবেলের প্রতি উপলব্ধি গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে পারি? কীভাবে মণ্ডলীতে যারা শিক্ষা দেন, তারা এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারেন যে, তারা যা-কিছু শিক্ষা দেন, সেই সমস্তের ভিত্তি হল ঈশ্বরের বাক্য? পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

^ অনু. 4 ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকায় দেওয়া “আপনার কি ইব্রীয় ও গ্রিক ভাষা শেখার প্রয়োজন রয়েছে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।

^ অনু. 5 ইংরেজি ভাষার অনেক সুপরিচিত অভিব্যক্তি কিং জেমস্‌ ভারশন বাইবেল থেকে এসেছে।

^ অনু. 14 নিজের চোখে দেখে আসুন!” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।