সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনকাহিনি

আমি পরিপক্ব ভাইদের সঙ্গে কাজ করার আশীর্বাদ লাভ করেছি

আমি পরিপক্ব ভাইদের সঙ্গে কাজ করার আশীর্বাদ লাভ করেছি

উনিশ-শো ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমার বাবা ও মা—জেমস্‌ ও জেসি সিনক্লেয়ার—ব্রন্‌স্ক নামে নিউ ইয়র্ক সিটির একটা শহরে বাস করার জন্য চলে আসেন। তাদের যে-নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় হয়, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন উইলি স্নেডান, যিনি আমার বাবা-মায়ের মতোই স্কটল্যান্ড থেকে এসেছিলেন। প্রথম বার দেখা হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমার বাবা-মা ও উইলি স্নেডান নিজেদের পরিবার নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এটা হল আমার জন্মের কয়েক বছর আগের ঘটনা।

আমার মা উইলিকে বলেন যে, মহাযুদ্ধের কিছুসময় আগে তার বাবা ও দাদা উত্তর সাগরে একটা মাছ ধরার নৌকায় করে যাওয়ার সময় একটা বোমা বিস্ফোরণের কারণে প্রাণ হারান। এটা শুনে উইলি বলেন, “আপনার বাবা নরকে আছেন!” উইলি ছিলেন একজন যিহোবার সাক্ষি আর এই প্রথম বার আমার মায়ের খুবই অদ্ভুত এক উপায়ে বাইবেলের সত্যের সঙ্গে পরিচয় হয়।

উইলি ও লিজ স্নেডান

উইলির কথায় মা দুঃখ পান কারণ তিনি জানতেন, তার বাবা একজন ভালো ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু, এরপর উইলি জিজ্ঞেস করেন: “আমি যদি আপনাকে বলি যে যিশুও নরকে গিয়েছিলেন, তা হলে আপনি কি কিছুটা সান্ত্বনা লাভ করবেন?” আমার মায়ের সেইসময় গির্জায় শেখা একটা প্রার্থনা মনে পড়ে যায়, যেখানে বলা হয়েছিল যে, যিশু নরকে নেমে গিয়েছিলেন এবং তৃতীয় দিনে উত্থাপিত হয়েছিলেন। তাই, মা চিন্তা করেন, ‘নরক যদি এমন এক অগ্নিময় স্থান হয়, যেখানে দুষ্ট লোকেদের যাতনা দেওয়া হয়, তা হলে কেন যিশু সেখানে গিয়েছিলেন?’ এভাবেই আমার মায়ের সত্যের প্রতি আগ্রহ জেগে ওঠে। তিনি ব্রন্‌স্ক মণ্ডলীর সভায় যোগ দিতে শুরু করেন এবং ১৯৪০ সালে বাপ্তিস্ম নেন।

আমার মায়ের সঙ্গে ও পরবর্তী সময়ে আমার বাবার সঙ্গে

সেই সময়, খ্রিস্টান বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার বিষয়ে কোনো বিশেষ উৎসাহ দেওয়া হতো না। আমি যখন সবেমাত্র হাঁটতে শিখি, তখন আমার মা সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে সভায় যোগ দিতেন এবং সাক্ষ্যদানের কাজে অংশ নিতেন আর আমার বাবা বাড়িতে থেকে আমার যত্ন নিতেন। কয়েক বছর পর আমি ও আমার বাবাও মায়ের সঙ্গে সভায় যোগ দিতে শুরু করি। আমার মা সুসমাচারের প্রচার কাজে খুবই সক্রিয় ছিলেন এবং তিনি বেশ কয়েক জন আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন। সত্যি বলতে কী এমনও হয়েছে যে, আমার মা কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে দলগতভাবে অধ্যয়ন করেছেন কারণ তারা একে অন্যের কাছাকাছিই বাস করত। আমি স্কুলের ছুটির সময় মায়ের সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতাম। এভাবে আমি বাইবেল সম্বন্ধে ও সেইসঙ্গে এটি যা বলে, তা কীভাবে অন্যদের শেখানো যায়, সেই সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখি।

আমি এই বিষয়ে দুঃখিত যে, ছোটোবেলায় আমি সত্যের প্রতি পূর্ণরূপে উপলব্ধিবোধ দেখাইনি। আমি এটাকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করিনি। কিন্তু, আমার বয়স যখন প্রায় ১২ বছর, তখন আমি রাজ্যের প্রকাশক হই এবং সেইসময় থেকে নিয়মিতভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নিতে শুরু করি। আমি যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করি এবং ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসের ২৪ তারিখে কানাডার টরোন্টোয় অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নিই। সেইসময় আমার বয়স ছিল ১৬ বছর।

বেথেল সেবা

আমাদের মণ্ডলীর কয়েক জন ভাই সেইসময় বেথেলে সেবা করত আর এমন কয়েক জন ভাইও ছিল, যারা আগে বেথেল পরিবারের অংশ ছিল। তারা আমার উপর এক জোরালো প্রভাব ফেলে। তারা যেভাবে পরিচর্যায় থাকার সময় ও বক্তৃতা দেওয়ার সময় শিক্ষা দিত এবং বাইবেলের সত্য ব্যাখ্যা করত, তা দেখে আমি অভিভূত হই। যদিও আমার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাইতেন যেন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিই কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল, বেথেলে গিয়ে সেবা করা। তাই, আমি টরোন্টোর সেই সম্মেলনে, বেথেলে সেবা করার একটা আবেদনপত্র জমা দিই। আমি ১৯৫৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির ইয়াংকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একটা সম্মেলনে আবারও তা করি। এর অল্পসময় পর সেই বছরেই, আমাকে সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখ থেকে ব্রুকলিন বেথেলে গিয়ে সেবা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেইসময় আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। বেথেলে সেবা করার দ্বিতীয় দিনে আমি ১১৭ আ্যডামস্‌ স্ট্রিটে বাঁধাই বিভাগ-এ কাজ করতে শুরু করি। শীঘ্রই, আমি কাগজ একত্রিত করার একটা মেশিন চালানোর কাজ করতে আরম্ভ করি, যেটা বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার খণ্ডগুলোকে একত্রিত করত। এরপর, সেই একত্রিত খণ্ডগুলোকে আরেকটা মেশিনে পাঠানো হতো, যেটা সেই খণ্ডগুলো একসঙ্গে সেলাই করে বই তৈরি করত।

১৭ বছর বয়সে আমি ব্রুকলিন বেথেলে সেবা করতে শুরু করি

বাঁধাই বিভাগ-এ প্রায় এক মাস কাজ করার পর আমাকে পত্রিকা বিভাগ-এ পাঠানো হয়, কারণ আমি টাইপ করতে জানতাম। সেই সময়, ভাই ও বোনেরা টাইপ করে প্রহরীদুর্গ সজাগ হোন! পত্রিকার নতুন গ্রাহকদের ঠিকানার স্টেনসিল্‌ (ধাতুর তৈরি ছোটো প্লেট) তৈরি করত। কয়েক মাস পর আমি শিপিং ডিমার্টমেন্ট-এ কাজ করতে শুরু করি। সেই বিভাগের অধ্যক্ষ ভাই ক্ল্যাউস জেনসান আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, আমি সেই ট্রাকচালকের সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক কি না, যিনি ট্রাকে করে সাহিত্যাদির অনেক বাক্স বিভিন্ন বন্দরে নিয়ে যেতেন, যাতে সেগুলো জাহাজে করে বিশ্বব্যাপী পাঠানো যায়। এ ছাড়া আরেকটা কাজ ছিল, পত্রিকার বড়ো বড়ো ব্যাগ পোস্ট অফিসে পৌঁছে দেওয়া, যাতে সেগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত মণ্ডলীতে পাঠানো যায়। ভাই জেনসান আমাকে বলেন যে, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আমার জন্য উত্তম হবে। সেইসময় আমার ওজন ছিল মাত্র ৫৭ কিলোগ্রাম (১২৫ পাউন্ড) আর আমি কাঠির মতো রোগা ছিলাম। নিয়মিতভাবে বন্দরে ও পোস্ট অফিসে সাহিত্যাদি নিয়ে যাওয়ার ফলে আমি শারীরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠি। ভাই জেনসান সত্যিই জানতেন যে, আমার জন্য কোন বিষয়টা উত্তম!

এ ছাড়া, পত্রিকা বিভাগ-এ বিভিন্ন মণ্ডলীর কাছ থেকে আসা পত্রিকার আবেদন পূরণ করা হতো। তাই, আমি এমন বিভিন্ন ভাষা সম্বন্ধে জানতে পারি, যে-ভাষাগুলোতে ব্রুকলিনে পত্রিকা ছাপানো হতো এবং এরপর বিশ্বের অন্যান্য অংশে পাঠানো হতো। সেই ভাষাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ভাষার নাম আমি আগে কখনো শুনিনি। কিন্তু, আমি এটা জেনে আনন্দিত হই যে, দূরদূরান্তের এলাকাগুলোতে হাজার হাজার পত্রিকা পাঠানো হচ্ছিল। আমি কখনো আশা করিনি, আমি সেই জায়গাগুলোতে যেতে পারব। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আমি সেগুলোর বেশ কয়েকটা জায়গা পরিদর্শন করার সুযোগ লাভ করি।

ভাই রবার্ট ওঅলেন, চার্লস মালাহ্যান ও ডন আ্যডামসের সঙ্গে

১৯৬১ সালে আমাকে কোষাধ্যক্ষের অফিস-এ ভাই গ্র্যান্ট সুইটারের তত্ত্বাবধানে কাজ করার কার্যভার দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর আমাকে ভাই নেথেন নরের অফিসে ডাকা হয়, যিনি সেইসময় আমাদের বিশ্বব্যাপী কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি আমার কাছে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তার অফিসে কাজ করেন এমন একজন ভাই এক মাসের জন্য রাজ্যের পরিচর্যা বিদ্যালয়-এ যোগ দিতে যাচ্ছেন আর তারপর সেই ভাই পরিচর্যা বিভাগ-এ কাজ করবেন। তাই, আমাকে সেই ভাইয়ের জায়গায় কাজ করার কার্যভার দেওয়া হয়। সেখানে আমি ডন আ্যডামস্‌ নামে একজন ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ লাভ করি। আগ্রহজনক বিষয় হল, ভাই ডনই হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ১৯৫৫ সালের সম্মেলনে আমার বেথেলে সেবা করার আবেদনপত্র গ্রহণ করেছিলেন। সেই একই বিভাগে আরও যে-দুই জন ভাই কাজ করতেন, তারা হলেন ভাই রবার্ট ওঅলেন ও ভাই চার্লস মালাহ্যান। আমরা চার জন ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি। এইরকম পরিপক্ব ভাইদের সঙ্গে সেবা করতে পারা যে কত আনন্দের এক বিষয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!—গীত. ১৩৩:১.

১৯৭০ সালে ভেনেজুয়েলায় আমার প্রথম আঞ্চলিক পরিদর্শনের সময়

১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে আমাকে প্রতি এক অথবা দুই বছরে, ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটি-র বেশ কয়েকটা শাখা অফিস পরিদর্শন করার উদ্দেশ্যে কয়েক সপ্তাহের জন্য ভ্রমণ করার কার্যভার দেওয়া হয়। এই পরিদর্শনগুলোকে সেইসময় আঞ্চলিক পরিদর্শন বলা হতো। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল বিশ্বব্যাপী বেথেল পরিবারের সদস্য ও মিশনারিদের সঙ্গে দেখা করা, আধ্যাত্মিক উৎসাহ প্রদান করা এবং শাখা অফিসের বিভিন্ন রেকর্ড দেখা। গিলিয়েড স্কুল-এর প্রাথমিক ক্লাসগুলো থেকে যারা গ্র্যাজুয়েট হয়েছিল, তাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করা কতই-না আনন্দের এক বিষয় ছিল, যারা তখনও বিশ্বস্তভাবে বিদেশে তাদের কার্যভারের এলাকায় সেবা করছিল! আমি যে পরিদর্শন করার উদ্দেশ্যে ৯০টারও বেশি দেশে ভ্রমণ করতে পেরেছি, সেটা সত্যিই এক বিশেষ সুযোগ ও আনন্দদায়ক বিষয়।

৯০টারও বেশি দেশে ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করা সত্যিই এক আনন্দদায়ক বিষয়!

আমি এক বিশ্বস্ত সাথি খুঁজে পাই

ব্রুকলিন বেথেলের সমস্ত সদস্যকেই নিউ ইয়র্ক সিটির এলাকার বিভিন্ন মণ্ডলীতে যোগ দেওয়ার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। আমাকে যে-মণ্ডলীতে যোগ দেওয়ার কার্যভার দেওয়া হয়, সেটা ব্রন্‌স্কে অবস্থিত ছিল। সেই শহরে গঠিত প্রথম মণ্ডলীটা বৃদ্ধি লাভ করেছিল ও দুটো মণ্ডলীতে পরিণত হয়েছিল। সেখানকার পুরোনো মণ্ডলীটা আপার ব্রন্‌স্ক মণ্ডলী নামে পরিচিত হয় আর আমি এই মণ্ডলীর সভায় যোগ দিতাম।

১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একটা লাটভিয়ান পরিবার সেই মণ্ডলীর এলাকায় বাস করার জন্য চলে আসে। সেই পরিবার দক্ষিণ ব্রন্‌স্কে থাকার সময় সত্য গ্রহণ করেছিল। সেই পরিবারের সবচেয়ে বড়ো মেয়ে লিভিয়া হাই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পরই নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেন। কয়েক মাস পর, তিনি যেখানে বেশি রাজ্যের প্রকাশকের প্রয়োজন, সেখানে গিয়ে সেবা করার জন্য ম্যাসাচুসিটসে চলে যান। আমি আমাদের মণ্ডলীতে ঘটা বিভিন্ন ভালো বিষয়গুলো সম্বন্ধে তাকে চিঠি লিখতে শুরু করি আর উত্তরে তিনিও বস্টন এলাকায় তার পরিচর্যার সাফল্যের বিষয় নিয়ে আমাকে চিঠি লিখতে শুরু করেন।

লিভিয়ার সঙ্গে

কয়েক বছর পর, লিভিয়াকে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি যিহোবার সেবায় তার সর্বোত্তমটা দিতে চাইতেন আর তাই তিনি বেথেলে সেবা করার জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। ১৯৭১ সালে তাকে বেথেলে সেবা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমার মনে হয়েছিল যেন এটা যিহোবার কাছ থেকে একটা ইঙ্গিত ছিল! ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসের ২৭ তারিখে আমরা বিয়ে করি আর আমরা এতে খুবই আনন্দিত যে, ভাই নর আমাদের বিয়ের বক্তৃতা দেন। হিতোপদেশ ১৮:২২ পদ বলে: “যে ভার্য্যা [“উত্তম স্ত্রী,” NW] পায়, সে উৎকৃষ্ট বস্তু পায়, এবং সদাপ্রভুর কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়।” তাই, লিভিয়া ও আমি একসঙ্গে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেথেলে সেবা করার সুযোগ লাভ করেছি। আর আমরা এখনও ব্রন্‌স্কের সেই একই জায়গায় আরেকটা মণ্ডলীকে সমর্থন জোগাই।

খ্রিস্টের ভাইদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেবা করা

ভাই নরের সঙ্গে কাজ করা সত্যিই এক আনন্দের বিষয় ছিল। তিনি সত্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন এবং সারা বিশ্বের মিশনারিদের প্রতি প্রচুর উপলব্ধি দেখাতেন। সেই মিশনারিদের মধ্যে অনেকেই এমন এলাকায় সেবা করতেন, যেখানে আগে কোনো সাক্ষি ছিল না। ১৯৭৬ সালে ভাই নরকে ক্যান্সারের কারণে কষ্ট ভোগ করতে দেখা সত্যিই খুব দুঃখজনক ছিল। একবার, তিনি যখন শয্যাশায়ী ছিলেন, তখন তিনি আমাকে এমন কিছু বিষয়বস্তু পড়ে শোনাতে বলেন, যেগুলোকে ছাপানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেন যেন আমি ভাই ফ্রেডরিক ফ্রাঞ্জকে ডেকে আনি, যাতে তিনিও পড়ার সময়ে তা শুনতে পারেন। পরে আমি জানতে পারি, যেহেতু ভাই ফ্রাঞ্জের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছিল, তাই ভাই নর নিয়মিতভাবে বেশ কিছু সময় ব্যয় করে তাকে এইরকম বিষয়বস্তু পড়ে শোনাতেন।

১৯৭৭ সালে একটা আঞ্চলিক পরিদর্শনের সময়ে ড্যানিয়েল ও মেরিনা সিডলিকের সঙ্গে

১৯৭৭ সালে ভাই নর মারা যান। কিন্তু, যারা ভাই নরকে জানত ও তাকে ভালোবাসত, তারা এটা জেনে সান্ত্বনা লাভ করে যে, তিনি বিশ্বস্তভাবে তার পার্থিব জীবন শেষ করেছিলেন। (প্রকা. ২:১০) এরপর, ভাই ফ্রাঞ্জ আমাদের কাজে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন।

সেইসময়, আমি ভাই মিলটন হেনশেলের জন্য সচিবের কাজ করতাম, যিনি বহু দশক ধরে ভাই নরের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ভাই হেনশেল আমাকে জানান যে, সেইসময় থেকে বেথেলে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে, যেকোনো প্রয়োজনীয় উপায়ে ভাই ফ্রাঞ্জকে সাহায্য করা। আমি একটা যে-উপায়ে ভাই ফ্রাঞ্জকে সাহায্য করতাম, তা হল বিষয়বস্তু ছাপাখানায় যাওয়ার আগে নিয়মিতভাবে সেগুলো তাকে পড়ে শোনানো। ভাই ফ্রাঞ্জের চমৎকার স্মরণশক্তি ছিল এবং যা পড়া হতো, সেটার উপর পূর্ণরূপে মনোযোগ দেওয়ার অসাধারণ দক্ষতা ছিল। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ভাই ফ্রাঞ্জ তার পার্থিব জীবন শেষ করেন। সেই সময় পর্যন্ত তাকে এভাবে সাহায্য করতে পারাটা আমার জন্য খুবই আনন্দদায়ক এক বিষয় ছিল!

১২৪ কলম্বিয়া হাইটস্‌, যেখানে আমি বহু দশক ধরে কাজ করেছি

বেথেলে কাটানো আমার জীবনের ৬১টা বছর খুব দ্রুত পার হয়ে গিয়েছে। আমার বাবা ও মা দু-জনেই যিহোবার কাছে তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রেখে মারা গিয়েছেন আর আমি এক উত্তম জগতে তাদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করে আছি। (যোহন ৫:২৮, ২৯) এই পুরোনো বিধিব্যবস্থা যা-কিছু দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে, সেগুলোর কোনো কিছুর সঙ্গেই বিশ্বব্যাপী ঈশ্বরের লোকেদের উদ্দেশ্যে বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের সঙ্গে কাজ করার চমৎকার সুযোগের তুলনা করা যায় না। লিভিয়া ও আমি প্রকৃতরূপে বলতে পারি যে, পূর্ণসময়ের সেবায় এতগুলো বছর কাটানোর সময় “সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই [আমাদের] শক্তি” জুগিয়ে এসেছে।—নহি. ৮:১০.

যিহোবার সংগঠনের কাজ কোনো একজন মানুষের উপর নির্ভর করে চলে না আর যা-ই ঘটুক না কেন, রাজ্যের সত্য ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলতেই থাকে। আমি যে এত বছর ধরে বহু নির্ভরযোগ্য ও অনুগত ভাই-বোনদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি, এটা সত্যিই এক আনন্দদায়ক বিষয় ও বিশেষ এক সুযোগ। আমি যে-সমস্ত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। কিন্তু, আমি এই বিষয়ে খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমি যিহোবার সেবায় এইরকম বিশ্বস্ত পরিপক্ব ব্যক্তিদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ লাভ করেছি।