সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তুলুন

ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তুলুন

“আত্মার ফল . . . ইন্দ্রিয়দমন।”​—গালা. ৫:২২, ২৩.

গান সংখ্যা: ৫২, ২৬

১, ২. (ক) ইন্দ্রিয়দমনের অভাবের ফলে কী ঘটতে পারে? (খ) কেন আমাদের ইন্দ্রিয়দমন গুণটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে?

ইন্দ্রিয়দমন হল এমন একটা গুণ, যেটা যিহোবা ঈশ্বর আমাদের গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। (গালা. ৫:২২, ২৩) যিহোবা নিখুঁতভাবে ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করেন। কিন্তু, আমরা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই আমরা এমনটা করতে পারি না। সত্যি বলতে কী, বর্তমানে লোকেদের অনেক সমস্যার কারণ হল ইন্দ্রিয়দমনের অভাব। এটার ফলে একজন ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করায় দেরি করতে পারেন অথবা স্কুল বা কাজের জায়গায় উত্তম ফলাফল লাভ করায় ব্যর্থ হতে পারেন। এ ছাড়া, ইন্দ্রিয়দমনের অভাব এই বিষয়গুলোর দিকে পরিচালিত করতে পারে যেমন, গালিগালাজ, মত্ততা, দৌরাত্ম্য, বিবাহবিচ্ছেদ, অপ্রয়োজনীয় ঋণ, আসক্তি, কারাদণ্ড, আবেগগত কষ্ট, যৌনবাহিত রোগ ও অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ।—গীত. ৩৪:১১-১৪.

যে-লোকেদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা নেই, তারা নিজেদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের জন্য সমস্যা ডেকে আনে। আর সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়টা স্পষ্ট হচ্ছে যে, লোকেদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এটা দেখে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় কারণ ঈশ্বরের বাক্যে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হয়েছিল, অজিতেন্দ্রিয়তা বা ইন্দ্রিয়দমনের অভাব হবে এই বিষয়ের একটা প্রমাণ যে, আমরা “শেষ কালে” বাস করছি।—২ তীম. ৩:১-৩.

৩. কেন আমাদের ইন্দ্রিয়দমনের প্রয়োজন রয়েছে?

কেন আমাদের ইন্দ্রিয়দমনের প্রয়োজন রয়েছে? এর পিছনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, যে-লোকেরা নিজেদের আবেগঅনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তারা সাধারণত কম সমস্যার মুখোমুখি হয়। এ ছাড়া, এর ফলে তাদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং রাগ, উদ্‌বিগ্নতা অথবা হতাশা এড়িয়ে চলা সহজ হয়। দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য আমাদের প্রলোভন প্রতিরোধ করতে এবং মন্দ আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আদম ও হবা ঠিক এই বিষয়টাই করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। (আদি. ৩:৬) তাদের মতো বর্তমানেও, অনেক লোকের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা থাকে না বলে তারা দুঃখজনক পরিণতির মুখোমুখি হয়।

৪. যে-লোকেরা নিজেদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লড়াই করছে, তাদের জন্য কোন বিষয়টা উৎসাহজনক হওয়া উচিত?

যিহোবা বোঝেন যে, আমরা অসিদ্ধ আর আমাদের পক্ষে ইন্দ্রিয়দমন করা কঠিন। কিন্তু, তিনি আমাদের সাহায্য করতে চান যেন আমরা আমাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলোর উপর জয় লাভ করতে পারি। (১ রাজা. ৮:৪৬-৫০) একজন প্রেমময় বন্ধু হিসেবে তিনি সেই ব্যক্তিদের সদয়ভাবে উৎসাহিত করেন, যাদের পক্ষে নিজেদের অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা কখনো কখনো কঠিন হয়। এই প্রবন্ধে আমরা ইন্দ্রিয়দমনের বিষয়ে যিহোবার উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করব। এ ছাড়া, আমরা বাইবেল থেকে কিছু উত্তম ও মন্দ উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করব এবং এমন কিছু ব্যাবহারিক পরামর্শ সম্বন্ধে বিবেচনা করব, যেগুলো আমাদের সাহায্য করতে পারে।

যিহোবা উদাহরণ স্থাপন করেন

৫, ৬. ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করার বিষয়ে যিহোবা আমাদের জন্য কোন উদাহরণ স্থাপন করেন?

যিহোবা নিখুঁতভাবে ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করেন কারণ তিনি সমস্ত দিক দিয়ে সিদ্ধ। (দ্বিতীয়. ৩২:৪) এর বিপরীতে, আমরা হলাম অসিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও, ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করার বিষয়ে যিহোবার উদাহরণ নিয়ে আমাদের পরীক্ষা করতে হবে, যাতে আমরা আরও ভালোভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি। তা করা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে যে, আমরা যদি কোনো কারণে বিরক্ত হই, তা হলে কীভাবে আমরা সঠিক উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি। যিহোবা যে-পরিস্থিতিগুলোতে ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করেছেন, সেগুলোর কয়েকটা উদাহরণ কী?

একটু চিন্তা করুন, শয়তান যখন এদন উদ্যানে বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। খুব সম্ভবত, দিয়াবলের সেই দাবির কারণে স্বর্গে থাকা ঈশ্বরের সমস্ত অনুগত দাস অবাক ও রাগান্বিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং দিয়াবলকে ঘৃণার চোখে দেখেছিলেন। আপনিও হয়তো শয়তানের কারণে ঘটা সমস্ত দুঃখকষ্ট নিয়ে চিন্তা করার সময় একইরকম অনুভব করেন। কিন্তু, যিহোবা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তিনি একেবারে সঠিক উপায়ে উত্তর দিয়েছিলেন। যিহোবা শয়তানের বিদ্রোহের সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় দেখিয়েছেন যে, তিনি ক্রোধে ধীর ও ন্যায্য। (যাত্রা. ৩৪:৬; ইয়োব ২:২-৬) কেন? যিহোবা সময় অতিবাহিত হতে দিয়েছেন কারণ তিনি চান না যেন কোনো লোক বিনষ্ট হয়। বরং, “সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।”—২ পিতর ৩:৯.

৭. যিহোবার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

যিহোবার উদাহরণ থেকে আমরা শিখতে পারি যে, আমাদের কথা বলার আগে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে এবং খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানো এড়িয়ে চলতে হবে। তাই, আপনাকে যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করার জন্য সময় বের করে নিন। সঠিক কথা বলার অথবা কাজ করার জন্য প্রজ্ঞা চেয়ে প্রার্থনা করুন। (গীত. ১৪১:৩) আমরা যখন রাগান্বিত অবস্থায় থাকি অথবা বিরক্ত হই, তখন খুব সহজেই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলতে পারি। আর তাই, অনেকে চিন্তা না করে কথা বলার অথবা কাজ করার জন্য পরবর্তী সময় অনুশোচনা করে।—হিতো. ১৪:২৯; ১৫:২৮; ১৯:২.

ঈশ্বরের দাসদের মধ্যে কিছু উত্তম ও মন্দ উদাহরণ

৮. (ক) কোথায় আমরা ইন্দ্রিয়দমনের বিষয়ে বিভিন্ন উত্তম উদাহরণ খুঁজে পেতে পারি? (খ) পোটীফরের স্ত্রী যখন যোষেফকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন কী তাকে সেই প্রলোভন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো ইন্দ্রিয়দমনের মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে? একটা যে-উদাহরণের কথা আপনি চিন্তা করতে পারেন, সেটা হল যাকোবের ছেলে যোষেফের উদাহরণ। তিনি সেইসময় প্রলোভনের প্রতিরোধ করেছিলেন, যখন তিনি পোটীফরের বাড়িতে সেবা করছিলেন, যিনি ফরৌণের রক্ষক-সেনাপতি ছিলেন। পোটীফরের স্ত্রী যোষেফের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন কারণ যোষেফ “রূপবান্‌ ও সুন্দর” ছিলেন। আর তাই, পোটীফরের স্ত্রী তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য একাধিক বার তাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কী যোষেফকে সেই প্রলোভন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছিল? সম্ভবত, তিনি আগে থেকে এই বিষয়টা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করার জন্য সময় বের করে নিয়েছিলেন যে, তিনি যদি পোটীফরের স্ত্রীর প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেন, তা হলে সেটার পরিণতি কী হবে। পরবর্তী সময়ে, সেই স্ত্রী যখন তার বস্ত্র টেনে ধরেছিলেন, তখন তিনি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?”—আদি. ৩৯:৬, ৯; পড়ুন, হিতোপদেশ ১:১০.

৯. কীভাবে আপনি প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন?

যোষেফের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি? আমাদের যদি ঈশ্বরের কোনো আইন লঙ্ঘন করার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়, তা হলে আমাদের সেই প্রলোভন প্রতিরোধ করতে হবে। যিহোবার সাক্ষি হওয়ার আগে কেউ কেউ অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, যৌন অনৈতিকতা অথবা অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করত। এমনকী বাপ্তিস্ম নেওয়ার পরও, তারা হয়তো কখনো কখনো সেই বিষয়গুলোর দ্বারা প্রলুব্ধ হতে পারে। আপনার ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয়ে থাকে, তা হলে একটু থেমে চিন্তা করুন যে, আপনি যদি প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেন, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আপনি সেই পরিস্থিতিগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করতে পারেন, যেখানে আপনার সামনে প্রলোভন আসতে পারে এবং এরপর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কীভাবে আপনি সেই পরিস্থিতিগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। (গীত. ২৬:৪, ৫; হিতো. ২২:৩) আপনি যদি কখনো এইরকম কোনো পরীক্ষার মুখে পড়েন, তা হলে সেই প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য প্রজ্ঞা ও ইন্দ্রিয়দমন চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন।

১০, ১১. (ক) অনেক তরুণ-তরুণীর প্রতি স্কুলে কী ঘটে থাকে? (খ) ঈশ্বরের আইন লঙ্ঘন করার প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য কী তরুণবয়সি খ্রিস্টানদের সাহায্য করতে পারে?

১০ যোষেফের প্রতি যা ঘটেছিল, বর্তমানে অনেক তরুণবয়সি খ্রিস্টানের প্রতিও প্রায় একইরকম বিষয় ঘটে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, কিম নামে একজন বোনের কথা চিন্তা করুন। তার সহপাঠীরা প্রায়ই সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে করা যৌন সম্পর্কের অভিজ্ঞতাগুলোর বিষয়ে গর্ব করে বলত। কিন্তু, কিমের কাছে বলার মতো এই ধরনের কোনো গল্প থাকত না। সে স্বীকার করে যে, অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে সে নিজেকে “পরিত্যক্ত ও একাকী” বলে মনে করত। আর যেহেতু সে ডেটিং করত না, তাই তার সহপাঠীরা তাকে বোকা বলে মনে করত। কিন্তু, কিম আসলে বিজ্ঞ ছিল। সে জানত, তরুণ বয়সে যৌন সম্পর্ক করার প্রলোভন খুবই প্রবল হতে পারে। (২ তীম. ২:২২) অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা প্রায়ই তাকে জিজ্ঞেস করত যে, সে কারো সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছে কি না। এর ফলে, সে এটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ পেত যে, কেন সে যৌন সম্পর্ক করা বেছে নেয়নি। আমরা সেই তরুণবয়সি খ্রিস্টানদের জন্য গর্ব বোধ করি, যারা যৌন অনৈতিকতার চাপ প্রতিরোধ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ আর যিহোবাও তাদের জন্য গর্ব বোধ করেন!

১১ এ ছাড়া, বাইবেলে এমন লোকেদের উদাহরণ পাওয়া যায়, যারা যৌন অনৈতিকতার প্রলোভন প্রতিরোধ করেনি। আর এটি দেখায় যে, আমাদের মধ্যে যখন ইন্দ্রিয়দমন গুণটা থাকে না, তখন কোন ধরনের খারাপ পরিণতি হতে পারে। আপনি যদি কিমের মতো একইরকম পরিস্থিতিতে থাকেন, তা হলে হিতোপদেশ ৭ অধ্যায়ে বর্ণিত সেই নির্বোধ যুবকের কথা চিন্তা করুন। এ ছাড়া, অম্নোন ও তার আচরণের ভয়াবহ পরিণতি নিয়েও চিন্তা করুন। (২ শমূ. ১৩:১, ২, ১০-১৫, ২৮-৩২) বাবা-মায়েরা পারিবারিক উপাসনার সময় এই উদাহরণগুলো নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করার জন্য সাহায্য করতে পারেন।

১২. (ক) কীভাবে যোষেফ তার ভাইদের প্রতি নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন? (খ) কোন কোন পরিস্থিতিতে আমাদের নিজেদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে?

১২ আরেকটা পরিস্থিতিতে যোষেফ আবারও ইন্দ্রিয়দমন করার বিষয়ে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। এটা সেই সময় ঘটেছিল, যখন তার ভাইয়েরা খাবার কেনার জন্য মিশরে এসেছিলেন। তার ভাইদের হৃদয়ে কী রয়েছে, তা জানার জন্য যোষেফ তাদের কাছে নিজের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। আর তার অনুভূতি যখন খুব প্রবল হয়ে উঠেছিল, তখন তিনি তার ভাইদের ছেড়ে এক নির্জন জায়গায় গিয়ে কেঁদেছিলেন। (আদি. ৪৩:৩০, ৩১; ৪৫:১) কোনো ভাই অথবা বোন যদি এমন কিছু করেন, যেটার কারণে আপনি বিরক্ত হয়ে ওঠেন, তা হলে ইন্দ্রিয়দমনের বিষয়ে যোষেফের উদাহরণ অনুকরণ করা আপনাকে এমন কোনো কথা বলা অথবা কাজ করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে, যেটার কারণে আপনি হয়তো পরবর্তী সময়ে অনুশোচনা করতে পারেন। (হিতো. ১৬:৩২; ১৭:২৭) অথবা আপনার হয়তো এমন আত্মীয়স্বজন রয়েছে, যারা সমাজচ্যুত। যদি তা-ই হয়, তা হলে তাদের সঙ্গে অযথা যোগাযোগ করা এড়িয়ে চলার জন্য আপনাকে আপনার অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমনটা করা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, এটা সেইসময় সহজ হবে, যখন আপনি এই বিষয়টা স্মরণে রাখবেন যে, আপনি যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করছেন এবং তাঁর আজ্ঞা পালন করছেন।

১৩. রাজা দায়ূদের জীবনের ঘটনাগুলো থেকে আমরা কোন কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?

১৩ এ ছাড়া, আমরা রাজা দায়ূদের উদাহরণ থেকেও উপকার লাভ করি। শৌল ও শিমিয়ি যখন দায়ূদকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন তিনি রেগে যাননি অথবা তাদের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেননি। (১ শমূ. ২৬:৯-১১; ২ শমূ. ১৬:৫-১০) তবে, দায়ূদ সবসময় ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে সফল হননি। আমরা এই বিষয়টা বৎশেবার সঙ্গে করা তার পাপ এবং নাবলের লোভের প্রতি তার প্রতিক্রিয়ার বিবরণগুলো পড়ার মাধ্যমে জানতে পারি। (১ শমূ. ২৫:১০-১৩; ২ শমূ. ১১:২-৪) দায়ূদের কাছ থেকে আমরা মূল্যবান শিক্ষা লাভ করতে পারি। প্রথমত, ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে বিশেষভাবে অধ্যক্ষদের ইন্দ্রিয়দমনের প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার না করেন। দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তিরই এমনটা চিন্তা করে নিজের উপর অতিরিক্ত আস্থা গড়ে তোলা উচিত নয় যে, তিনি কখনো প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করবেন না।—১ করি. ১০:১২.

আপনি যে-ব্যাবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন

১৪. একজন ভাইয়ের কোন অভিজ্ঞতা হয়েছিল এবং এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৪ আপনার মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা আরও বৃদ্ধি করার জন্য আপনি কী করতে পারেন? লুইজি নামে একজন ভাইয়ের প্রতি কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। একবার, তার গাড়ির পিছনে আরেকটা গাড়ি ধাক্কা মারে। যদিও সেই অন্য গাড়ির চালকই আসলে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিলেন, তবুও সেই চালক লুইজির উপর চিৎকার করতে আরম্ভ করেন এবং তার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করার চেষ্টা করেন। লুইজি শান্ত থাকার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন এবং সেই অন্য চালককে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সেই ব্যক্তি চিৎকার করতেই থাকেন। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও লুইজি নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এক সপ্তাহ পর, লুইজি একজন মহিলার কাছে পুনর্সাক্ষাৎ করতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, ওই মহিলার স্বামী হলেন সেই অন্য গাড়ির চালক! সেই ব্যক্তি নিজের খারাপ আচরণের কারণে লজ্জিত হন এবং ক্ষমা চান। তিনি লুইজিকে সাহায্য করার প্রস্তাব দেন যেন লুইজি বিমা কোম্পানির মাধ্যমে নিজের গাড়ি তাড়াতাড়ি মেরামত করাতে সক্ষম হন। সেই ব্যক্তি বাইবেল আলোচনায় যোগ দেন এবং সত্যিই সেটা উপভোগ করেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে লুইজি বুঝতে পারেন, সেই দুর্ঘটনার পর শান্ত থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর তিনি যদি সেই পরিস্থিতিতে রেগে যেতেন, তা হলে সেটার ফলাফল কতটা খারাপ হতো।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৬:৩-৫.

আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, সেটা আমাদের পরিচর্যাকে প্রভাবিত করতে পারে (১৪ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫, ১৬. কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন আপনাকে ও আপনার পরিবারকে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৫ নিয়মিত ও অর্থপূর্ণ বাইবেল অধ্যয়ন খ্রিস্টানদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুনটা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। ঈশ্বর যিহোশূয়কে যা বলেছিলেন, তা মনে করে দেখুন: “তোমার মুখ হইতে এই ব্যবস্থাপুস্তক বিচলিত না হউক; তন্মধ্যে যাহা যাহা লিখিত আছে, যত্নপূর্ব্বক সেই সকলের অনুযায়ী কর্ম্ম করণার্থে তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর; কেননা তাহা করিলে তোমার শুভগতি হইবে ও তুমি বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবে।” (যিহো. ১:৮) কিন্তু, কীভাবে বাইবেল অধ্যয়ন আপনাকে ইন্দ্রিয়দমন গুনটা বৃদ্ধি করার অথবা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১৬ আমরা শিখেছি, বাইবেলে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো দেখায় যে, আমাদের মধ্যে যখন ইন্দ্রিয়দমন গুণটা থাকে, তখন কীভাবে আমরা উপকৃত হই এবং আমাদের মধ্যে যখন ইন্দ্রিয়দমন গুণটা থাকে না, তখন কীভাবে আমরা কষ্ট ভোগ করি। যিহোবা একটা উদ্দেশ্যে এই উদাহরণগুলো লিপিবদ্ধ করিয়েছেন। (রোমীয় ১৫:৪) তাই, এগুলো পড়া, অধ্যয়ন করা এবং এগুলো নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা আমাদের জন্য বিজ্ঞতার কাজ হবে। কীভাবে এই উদাহরণগুলো আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি প্রযোজ্য, তা বোঝার চেষ্টা করুন। যিহোবার কাছে অনুরোধ করুন, যেন তিনি আপনাকে তাঁর বাক্যে পাওয়া পরামর্শ কাজে লাগাতে সাহায্য করেন। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে, ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করার বিষয়ে কোনো ক্ষেত্রে আপনার দুর্বলতা রয়েছে, তা হলে সেটা উপেক্ষা না করার বিষয়ে সতর্ক হোন। তারপর, সেটা নিয়ে প্রার্থনা করুন এবং কীভাবে আপনি উন্নতি করতে পারেন, তা বোঝার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন। (যাকোব ১:৫) সাহায্যকারী পরামর্শ খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের প্রকাশনা নিয়ে গবেষণা করুন।

১৭. কোন কোন উপায়ে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা বৃদ্ধি করায় সাহায্য করতে পারেন?

১৭ কীভাবে আপনি আপনার সন্তানদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা বৃদ্ধি করায় সাহায্য করতে পারেন? বাবা-মায়েরা জানেন যে, সন্তানদের মধ্যে এই গুণটা এমনি এমনি গড়ে ওঠে না। তাই, বাবা-মায়েদের নিজেদের উদাহরণের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের উত্তম গুণাবলি সম্বন্ধে শেখাতে হবে। (ইফি. ৬:৪) আপনি যদি লক্ষ করেন, সন্তানদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমনের অভাব রয়েছে, তা হলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করছেন কি না। আপনি পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার, সভায় উপস্থিত থাকার ও পারিবারিক উপাসনা পরিচালনা করার বিষয়ে নিয়মিত হওয়ার মাধ্যমে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন। আর প্রয়োজনে আপনার সন্তানদের ‘না’ বলতে ভয় পাবেন না! যিহোবা আদম ও হবার জন্য সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। সেই সীমাগুলো তাদের যিহোবার কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান গড়ে তোলার বিষয়টা শিখতে সাহায্য করতে পারত। একইভাবে, বাবা-মায়েরা যখন তাদের সন্তানদের শাসন করেন এবং তাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন, তখন তাদের সন্তানরা ইন্দ্রিয়দমন করার বিষয়টা শিখতে পারে। আপনি আপনার সন্তানদের সবচেয়ে মূল্যবান যে-বিষয়গুলো লাভ করার জন্য সাহায্য করতে পারেন, সেগুলোর মধ্যে দুটো বিষয় হল ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর মানের প্রতি সম্মান।—পড়ুন, হিতোপদেশ ১:৫, ৭, ৮.

১৮. কেন আপনাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে হবে?

১৮ আপনি বাবা অথবা মা হোন কিংবা না-ই হোন, আপনাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে হবে। আপনার বন্ধুরা যদি যিহোবাকে ভালোবাসে, তা হলে তারা আপনাকে অর্থপূর্ণ লক্ষ্য স্থাপন করার এবং সমস্যা এড়িয়ে চলার বিষয়ে উৎসাহিত করবে। (হিতো. ১৩:২০) তাদের উত্তম উদাহরণ আপনাকে তাদের মতো ইন্দ্রিয়দমন করতে অনুপ্রাণিত করবে। আর এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনার উত্তম আচরণ তাদেরও উৎসাহিত করবে। এর ফলে, আপনার মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটা গড়ে উঠবে আর সেটা আপনাকে ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার, জীবনে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক উপভোগ করার বিষয়ে সাহায্য করবে।