সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার আশীর্বাদ লাভের জন্য যুদ্ধ করে চলুন

যিহোবার আশীর্বাদ লাভের জন্য যুদ্ধ করে চলুন

“তুমি ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের সহিত যুদ্ধ করিয়া জয়ী হইয়াছ।”—আদি. ৩২:২৮.

গান সংখ্যা: ২৩, ৩৮

১, ২. যিহোবার দাসেরা কোন লড়াই করে থাকে?

ধার্মিক ব্যক্তি হেবলের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান দিন পর্যন্ত ঈশ্বরের অনুগত দাসেরা সবসময় লড়াই করছে। প্রেরিত পৌল ইব্রীয় খ্রিস্টানদের বলেছিলেন, যিহোবার অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভের চেষ্টায় তারা ‘নানা দুঃখভোগরূপ ভারী সংগ্রাম সহ্য করিয়াছে।’ (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪) পৌল খ্রিস্টানদের সংগ্রাম বা লড়াইকে সেই ক্রীড়াবিদদের লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যারা গ্রিসের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, যেমন দৌড়, মল্লযুদ্ধ ও মুষ্টিযুদ্ধে অংশ নিত। (ইব্রীয় ১২:১, ৪) বর্তমানে, আমরা জীবনের ধাবনক্ষেত্রে বা দৌড় প্রতিযোগিতায় রয়েছি। আমাদের এমন শত্রুরা রয়েছে, যারা আমাদের বিক্ষিপ্ত করতে চায় আর তারা এটাও চায় যেন আমরা আমাদের বর্তমান আনন্দ ও ভবিষ্যতের পুরস্কার হারিয়ে ফেলি।

আমাদের জীবনের কঠিনতম লড়াই বা “মল্লযুদ্ধ” হচ্ছে, শয়তান ও তার জগতের বিরুদ্ধে। (ইফি. ৬:১২) এই জগতের শিক্ষা, দর্শন এবং বিভিন্ন মন্দ অভ্যাস, যেমন অনৈতিকতা, ধুমপান ও মদ অথবা ওষুধের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, নিরুৎসাহিতা ও নিজেদের বিভিন্ন দুর্বলতার বিরুদ্ধেও আমাদের ক্রমাগত লড়াই করতে হয়।—২ করি. ১০:৩-৬; কল. ৩:৫-৯.

৩. কীভাবে ঈশ্বর আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের প্রশিক্ষণ দেন?

এই ধরনের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া কি সত্যিই সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব, তবে তা সহজ নয়! পৌল নিজেকে একজন মুষ্টিযোদ্ধার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যখন তিনি এই কথা বলেছিলেন: “আমি . . . এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” (১ করি. ৯:২৬) একজন মুষ্টিযোদ্ধা যেমন আরেকজন মুষ্টিযোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তেমনই আমাদেরও আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তা করার জন্য যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন ও প্রশিক্ষণ দেন। তিনি বাইবেলের মাধ্যমে তা করে থাকেন। এ ছাড়া, তিনি বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা, খ্রিস্টীয় সভা ও সম্মেলনের মাধ্যমেও আমাদের সাহায্য করেন। আপনি যে-সমস্ত নির্দেশনা পাচ্ছেন, সেগুলোর সব কি আপনি ব্যবহার করছেন? যদি না করে থাকেন, তা হলে আপনি হয়তো আপনার শত্রুদের পুরোপুরি প্রতিরোধ করছেন না, ঠিক যেমনটা একজন মুষ্টিযোদ্ধা শূন্যে আঘাত করে থাকেন।

৪. কীভাবে আমরা মন্দের দ্বারা পরাজিত হওয়া এড়িয়ে চলতে পারি?

আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। কেন? কারণ আমাদের শত্রুরা হয়তো সেই সময়ে আক্রমণ করতে পারে, যখন আমরা তা আশা করি না অথবা যখন আমরা দুর্বল থাকি। এক্ষেত্রে বাইবেল আমাদের একইসঙ্গে সতর্কবাণী ও উৎসাহ প্রদান করে। বাইবেল বলে: “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।” (রোমীয় ১২:২১) আমরা যদি মন্দের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করি, তা হলে আমরা জয়ী হতে পারি! কিন্তু, আমরা যদি অসর্তক হয়ে পড়ি ও লড়াই করা বন্ধ করে দিই, তা হলে শয়তান, তার জগৎ এবং আমাদের নিজেদের বিভিন্ন দুর্বলতা আমাদের পরাস্ত করে ফেলতে পারে। তাই, কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না। নিরুৎসাহিত হবেন না এবং আপনার হস্ত শিথিল হতে দেবেন না!—১ পিতর ৫:৯.

৫. (ক) ঈশ্বরের অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভ করার জন্য আমাদের কী মনে রাখতে হবে? (খ) এখন আমরা বাইবেলের কোন চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

জয়ী হওয়ার জন্য আমাদের মনে রাখতে হবে, কেন আমরা লড়াই করছি। আমাদের লড়াই করার কারণ হল, আমরা ঈশ্বরের অনুমোদন ও আশীর্বাদ লাভ করতে চাই। ইব্রীয় ১১:৬ পদ বলে: “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” যিহোবার অন্বেষণ করার অর্থ হল, তাঁর অনুমোদন লাভ করার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। (প্রেরিত ১৫:১৭) বাইবেলে এমন অনেক নারী-পুরুষের উত্তম উদাহরণ রয়েছে, যারা ঠিক সেটাই করেছিলেন। যাকোব, রাহেল, যোষেফ ও পৌল, এরা সকলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা তাদের জন্য আবেগগতভাবে ও শারীরিকভাবে কঠিন ছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পেরেছিলেন। তাদের উদাহরণ এটা প্রমাণ করে, আমরা যদি কঠোর পরিশ্রম করি, তা হলে আমরাও যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করতে পারি। কীভাবে তা সম্ভব, আসুন আমরা এখন তা দেখি।

আপনি যদি প্রচেষ্টা করে চলেন, তা হলে আশীর্বাদ লাভ করবেন

৬. কী যাকোবকে প্রচেষ্টা করে চলতে সাহায্য করেছিল আর তিনি কীভাবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

বিশ্বস্ত পুরুষ যাকোব লড়াই করতে ও ধৈর্য ধরতে পেরেছিলেন কারণ তিনি যিহোবাকে ভালোবাসতেন এবং তাঁর সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে মূল্যবান বলে গণ্য করতেন। তার বংশধরদের আশীর্বাদ করার বিষয়ে যিহোবার প্রতিজ্ঞার প্রতি তার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। (আদি. ২৮:৩, ৪) যাকোবের বয়স যখন প্রায় ১০০ বছর, তখন তিনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য এমনকী একজন স্বর্গদূতের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করেছিলেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩২:২৪-২৮.) যাকোব কি আসলেই এই শক্তিমান স্বর্গদূতের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন? অবশ্যই না! তবে তার সংকল্প অত্যন্ত দৃঢ় ছিল আর তিনি প্রমাণ করেছিলেন, আশীর্বাদ লাভের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করবেন! যিহোবা যাকোবকে তার প্রচেষ্টার জন্য আশীর্বাদ করেছিলেন এবং তার নাম দিয়েছিলেন ইস্রায়েল, যে-নামের অর্থ “ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধকারী।” যাকোব সেই পুরস্কার লাভ করেছিলেন, যে-পুরস্কার আমরাও অন্বেষণ করছি আর তা হল, যিহোবার অনুমোদন ও আশীর্বাদ।

৭. (ক) রাহেলের কোন নিরুৎসাহজনক পরিস্থিতি ছিল? (খ) রাহেল কী করেছিলেন আর তিনি কীভাবে আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন?

যাকোবের প্রিয় স্ত্রী রাহেলও এটা দেখতে উৎসুক ছিলেন, কীভাবে যিহোবা তার স্বামীর কাছে করা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন। কিন্তু একটা সমস্যা ছিল। রাহেল বন্ধ্যা ছিলেন। বাইবেলের সময়ে, এই অক্ষমতা একজন নারীর জন্য অনেক কষ্টদায়ক এক বিষয় ছিল। কীভাবে রাহেল নিজের নিরুৎসাহজনক পরিস্থিতি সত্ত্বেও ক্রমাগত লড়াই করে চলেছিলেন? তিনি কখনো আশা হারিয়ে ফেলেননি। এর পরিবর্তে, তিনি যিহোবার কাছে আরও বেশি প্রার্থনা করার মাধ্যমে তার লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। যিহোবা রাহেলের আন্তরিক প্রার্থনা শুনেছিলেন আর অবশেষে রাহেল সন্তানের জন্ম দেওয়ার মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন: “আমি . . . মল্লযুদ্ধ করিয়া জয়লাভ করিলাম।”—আদি. ৩০:৮, ২০-২৪.

৮. যোষেফ কোন কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন আর কীভাবে তিনি আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ?

যাকোব ও রাহেলের বিশ্বস্ততার উদাহরণ সম্ভবত তাদের ছেলে যোষেফের উপর প্রভাব ফেলেছিল আর সেই সময়ে তাকে সাহায্য করেছিল, যখন তিনি জীবনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। যোষেফের বয়স যখন ১৭ বছর, তখন তার জীবন পুরোপুরি পালটে গিয়েছিল। তার ভাইয়েরা তাকে ঈর্ষা করত আর তারা তাকে একজন দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে, নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি অনেক বছর মিশরের কারাগারে বন্দি ছিলেন। (আদি. ৩৭:২৩-২৮; ৩৯:৭-৯, ২০, ২১) কিন্তু যোষেফ নিরুৎসাহিত কিংবা তিক্তবিরক্ত হয়ে পড়েননি আর তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেননি। কেন? কারণ যোষেফ যিহোবার সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন এবং সর্বান্তঃকরণে সেই বিষয়ের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন। (লেবীয়. ১৯:১৮; রোমীয় ১২:১৭-২১) যোষেফের উদাহরণ আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমাদের শৈশবের অভিজ্ঞতা যদি খুব খারাপ হয় কিংবা এখনকার জীবন যদি আশাহীন বলে মনে হয়, তারপরও আমাদের লড়াই ও প্রচেষ্টা করে চলতে হবে। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা আমাদের আশীর্বাদ করবেন।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৩৯:২১-২৩.

৯. কীভাবে আমরা যাকোব, রাহেল ও যোষেফকে অনুকরণ করতে পারি?

বর্তমানে, আমাদেরও হয়তো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। আপনি হয়তো অন্যায়, ভেদাভেদ অথবা উপহাসের শিকার হওয়ার কারণে কিংবা আপনার প্রতি কারো ঈর্ষার কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। নিরুৎসাহিত হওয়ার পরিবর্তে, কোন বিষয়টা যাকোব, রাহেল ও যোষেফকে আনন্দ সহকারে যিহোবার সেবা করে যেতে সাহায্য করেছিল, তা মনে রাখুন। ঈশ্বর তাদের শক্তিশালী করেছিলেন ও আশীর্বাদ করেছিলেন কারণ তারা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের যে-সম্পর্ক ছিল, সেটার প্রতি গভীর উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন। তারা লড়াই বা যুদ্ধ করে চলেছিলেন এবং নিজেদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন। আমরা যেহেতু শেষকালে বাস করছি, তাই আমাদের ভবিষ্যতের আশা সবসময় দৃঢ় রাখা গুরুত্বপূর্ণ! আপনি কি যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করার জন্য মল্লযুদ্ধ করতে অর্থাৎ কঠোর পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক?

আশীর্বাদ লাভ করার জন্য মল্লযুদ্ধ করতে ইচ্ছুক হোন

১০, ১১. (ক) ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য কেন আমাদের মল্লযুদ্ধ করতে হতে পারে? (খ) কী আমাদের সঠিক বিষয়গুলো বাছাই করতে সাহায্য করবে?

১০ ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য কেন আমাদের মল্লযুদ্ধ করতে হতে পারে? একটা বিষয় হল, আমরা যেহেতু অসিদ্ধ, তাই আমাদের হয়তো নির্দিষ্ট কিছু মন্দ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। কাউকে কাউকে হয়তো পরিচর্যার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখার জন্য লড়াই করতে হয় আর অন্যদের হয়তো স্বাস্থ্যগত সমস্যা অথবা একাকীত্বের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়। আবার এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা তাদের আঘাত দিয়েছে এমন কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারে না। আমরা যতদিন ধরেই যিহোবার সেবা করি না কেন, আমাদের সবাইকে এমন বিষয়গুলোর সঙ্গে লড়াই করতে হয়, যেগুলোর কারণে যিহোবার সেবা করা কঠিন হতে পারে, যিনি বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পুরস্কার দেন।

আপনি কি ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের জন্য মল্লযুদ্ধ করছেন? (১০, ১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১ সত্যি বলতে কী, একজন খ্রিস্টান হওয়া ও সঠিক বিষয়গুলো বাছাই করা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে, বিশেষভাবে সেই সময়ে, যখন আমাদেরকে নিজেদের মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। (যির. ১৭:৯) আপনার যদি এইরকম মনে হয়, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন ও তাঁর কাছে পবিত্র আত্মা চান। প্রার্থনা ও পবিত্র আত্মা আপনাকে যা সঠিক তা করার জন্য শক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে আর এরপর আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে পারবেন। আপনার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। প্রতিদিন বাইবেল পড়ার চেষ্টা করুন এবং নিয়মিতভাবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ও পারিবারিক উপাসনার জন্য সময় আলাদা করে রাখুন।—পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৩২.

১২, ১৩. কীভাবে দু-জন খ্রিস্টান তাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাহায্য লাভ করেছিলেন?

১২ ঈশ্বরের বাক্য, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং আমাদের খ্রিস্টীয় প্রকাশনা কীভাবে আমাদের ভাই-বোনদেরকে মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেছে, সেটার অনেক উদাহরণ রয়েছে। একজন কিশোর, ইংরেজি সচেতন থাক! (বর্তমানে সজাগ হোন!) পত্রিকার ২০০৩ সালের ৮ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত “কীভাবে তুমি মন্দ আকাঙ্ক্ষা প্রতিরোধ করতে পার?” শিরোনামের প্রবন্ধ পড়েছিল। সে কী বলেছিল? “আমি অনুপযুক্ত চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লড়াই করছি। আমি যখন এই প্রবন্ধে পড়েছি, ‘অনেকের জন্য, মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া অত্যন্ত কঠিন,’ তখন নিজেকে আমার ভ্রাতৃসমাজের অংশ বলে মনে হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আমি একা নই।” এ ছাড়া, এই অল্পবয়সি “বিকল্প জীবনধারা—ঈশ্বর কি তা অনুমোদন করেন?” শিরোনামের প্রবন্ধ পড়েও উপকৃত হয়েছিল, যে-প্রবন্ধ সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ২০০৩ সালের ৮ অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রবন্ধে সে লক্ষ করেছিল, কারো কারো কাছে এই লড়াই “মাংসে একটা” স্থায়ী ‘কণ্টকের’ মতো। (২ করি. ১২:৭) তা সত্ত্বেও, তারা যখন তাদের আচরণ শুচি রাখার জন্য লড়াই চালিয়ে যায়, তখন তারা ভবিষ্যতের জন্য উত্তম আশা লাভ করতে পারে। সে বলেছিল, “সেই কারণে আমি চিন্তা করি, আমি বিশ্বস্ত থেকে একেকটা দিন শেষ করতে পারি। যিহোবা তাঁর সংগঠনকে ব্যবহার করে এই দুষ্ট জগতে প্রতিদিন আমাদের রক্ষা পেতে সাহায্য করছেন, তাই আমি তাঁর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।”

১৩ এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের একজন বোনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন। তিনি লিখেছেন: “আমি আপনাদের ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ আপনারা আমাদের যা প্রয়োজন, ঠিক সেটাই একেবারে উপযুক্ত সময়ে জুগিয়ে যাচ্ছেন। আমার প্রায়ই মনে হয়, এই প্রবন্ধগুলো আমার জন্যই লেখা হয়েছে। অনেক বছর ধরে আমি এমন এক দৃঢ় আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যা যিহোবা ঘৃণা করেন। কখনো কখনো আমার হাল ছেড়ে দিতে ও লড়াই করা বন্ধ করে দিতে ইচ্ছা হয়। যিহোবা করুণাময় এবং ক্ষমাবান, তা আমি জানি কিন্তু আমার যেহেতু এই মন্দ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে আর আমি মন থেকে এটাকে ঘৃণা করি না, তাই আমার মনে হয়, আমি তাঁর সাহায্য পাব না। এই অবিরাম যুদ্ধ আমার জীবনের প্রতিটা দিককে প্রভাবিত করেছে। . . . ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘আপনার কি যিহোবাকে “জানিবার মন” আছে?’ শিরোনামের প্রবন্ধটা পড়ার পর আমার সত্যিই মনে হয়েছে, যিহোবা আমাকে সাহায্য করতে চান।”

১৪. (ক) পৌল নিজের লড়াই সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা আমাদের দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হতে পারি?

১৪ রোমীয় ৭:২১-২৫ পদ পড়ুন। মন্দ আকাঙ্ক্ষা ও দুর্বলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা কতটা কঠিন, তা পৌল ব্যক্তিগতভাবে জানতেন। কিন্তু তিনি এই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন, তিনি যদি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, সাহায্যের জন্য তাঁর উপর নির্ভর করেন এবং যিশুর বলিদানের প্রতি বিশ্বাস দেখান, তা হলে তিনি সেই যুদ্ধে জয়ী হবেন। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি আমাদের দুর্বলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হতে পারি? হ্যাঁ, আমরা যদি পৌলকে অনুকরণ করি, আমাদের নিজেদের শক্তির উপর নির্ভর না করে বরং যিহোবার উপর পুরোপুরি নির্ভর করি এবং মুক্তির মূল্যের প্রতি বিশ্বাস দেখাই, তা হলে আমরাও জয়ী হতে পারি।

১৫. কীভাবে যিহোবা আমাদের বিশ্বস্ত থাকতে এবং পরীক্ষার সময়ে ধৈর্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারেন?

১৫ মাঝে মাঝে, ঈশ্বর হয়তো আমাদের এটা প্রকাশ করার সুযোগ দেন, কোনো একটা বিষয় নিয়ে আমরা আসলে কতটা চিন্তিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা নিজেরা অথবা আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য যদি গুরুতর অসুস্থতা ভোগ করি কিংবা অন্যায়ের শিকার হই, তখন আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাব? আমরা যদি যিহোবার উপর পুরোপুরি নির্ভর করি, তা হলে আমরা বিশ্বস্ত থাকার জন্য, আমাদের আনন্দ বজায় রাখার জন্য এবং তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় রাখার জন্য তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় শক্তি যাচ্ঞা করব। (ফিলি. ৪:১৩) অতীত ও বর্তমানের অনেক খ্রিস্টানের উদাহরণ এটা প্রমাণ করেছে, প্রার্থনা আমাদের শক্তিশালী করতে পারে আর আমরা যাতে ধৈর্য বজায় রাখতে পারি, সেইজন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সাহস প্রদান করতে পারে।

যিহোবার আশীর্বাদ লাভের জন্য যুদ্ধ করে চলুন

১৬, ১৭. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

১৬ আপনি যদি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন, হাল ছেড়ে দেন ও আপনার হস্ত শিথিল হয়ে পড়তে দেন, তা হলে শয়তান সেটা দেখে খুব খুশি হবে। তাই ‘যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখিতে’ দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন। (১ থিষল. ৫:২১) আপনি শয়তান ও তার জগৎ এবং যেকোনো মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারেন! ঈশ্বর আপনাকে শক্তিশালী করবেন ও আপনাকে সাহায্য করবেন, এই বিষয়ের প্রতি যদি আপনার পূর্ণ আস্থা থাকে, তা হলে আপনি জয়ী হতে পারবেন।—২ করি. ৪:৭-৯; গালা. ৬:৯.

১৭ তাই, যুদ্ধ করে চলুন। লড়াই করা বন্ধ করে দেবেন না। প্রচেষ্টা করে চলুন। আর পুরোপুরি নিশ্চিত থাকুন, যিহোবা ‘আপনার প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ’ করবেন।—মালাখি ৩:১০.