সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন

বাবা-মায়েরা, আপনাদের সন্তানদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করুন

“বালক-বালিকা-সমূহ . . . সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক।”—গীত. ১৪৮:১২, ১৩.

গান সংখ্যা: ৪১, ৪৮

১, ২. (ক) কেন সন্তানদের যিহোবার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে শিক্ষা দেওয়া বাবা-মায়েদের জন্য সহজ কাজ নয় আর একমাত্র কোন উপায়ে বাবা-মায়েরা তা করতে পারেন? (খ) আমরা এখন কোন চারটে বিষয় আলোচনা করব?

ফ্রান্সের এক দম্পতি বলেছিলেন: “আমরা যিহোবাকে বিশ্বাস করি, কিন্তু তার মানে এই নয়, আমাদের সন্তানরাও তাঁকে বিশ্বাস করবে। বিশ্বাস হচ্ছে এমন কিছু, যা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায় না। আমাদের সন্তানরা ধীরে ধীরে তা গড়ে তোলে।” অস্ট্রেলিয়ার একজন ভাই লিখেছিলেন: “আপনার সন্তানদের হৃদয়ে বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করার বিষয়টা সম্ভবত আপনার জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বিতা।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আপনার হয়তো মনে হবে, আপনি সন্তানদের কোনো প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু পরে আপনি দেখতে পান, তারা আবারও সেই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে! আজকে যে-উত্তরগুলো শুনে সন্তানদের কৌতূহলী মন সন্তুষ্ট হবে, আগামীকাল হয়তো তেমন হবে না।” অনেক বাবা-মা দেখেছেন, সন্তানরা যখন বড়ো হতে থাকে, তখন তাদের কাছে একই বিষয় আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হয়। আর বাবা-মায়েরা এটাও দেখেছেন, সন্তানদের যিহোবাকে ভালোবাসতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করতে হয়।

আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তা হলে আপনার মনে কি কখনো এমন দুশ্চিন্তা এসেছে, আপনার সন্তানরা যাতে যিহোবাকে ভালোবাসে ও বড়ো হওয়ার পরও তাঁকে সেবা করে চলে, সেইজন্য আপনি আসলেই তাদের সঠিকভাবে শিক্ষা দিতে পারবেন কি না? আসলে, আমরা কেউই নিজের শক্তিতে তা করতে পারি না। (যির. ১০:২৩) আর তাই আমাদের সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করতে হবে। বাবা-মায়েদের জন্য তিনি অনেক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কীভাবে আপনারা সন্তানদের সাহায্য করতে পারেন? (১) তাদের সম্বন্ধে ভালোভাবে জানুন। (২) যিহোবা সম্বন্ধে আপনাদের হৃদয়ে যা আছে, সেই বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিন। (৩) দৃষ্টান্ত ব্যবহার করুন। (৪) বাইবেলের দ্বারা নির্দেশিত হওয়া কেন উত্তম, তা তাদের শিক্ষা দিন।

আপনাদের সন্তানদের সম্বন্ধে ভালোভাবে জানুন

৩. যিশু যেভাবে তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা বাবা-মায়েরা কীভাবে অনুকরণ করতে পারেন?

যিশু প্রায়ই তাঁর শিষ্যদেরকে তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন। (মথি ১৬:১৩-১৫) আপনারা তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন। সন্তানদের সঙ্গে গল্পগুজব অথবা কোনো কিছু করার সময়, তারা কী চিন্তা করে তা জিজ্ঞেস করুন ও তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে দিন। তাদের মনে কি কোনো বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে? অস্ট্রেলিয়ার ১৫ বছর বয়সি একজন ভাই বলেছিল: “বাবা প্রায়ই আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলতেন ও আমাকে যুক্তি করতে সাহায্য করতেন। তিনি জিজ্ঞেস করতেন: ‘বাইবেল কী বলে?’ ‘বাইবেল যা বলে, তুমি কি তা বিশ্বাস করো?’ ‘কেন তা বিশ্বাস করো?’ তিনি চাইতেন যেন আমি নিজের ভাষায় উত্তর দিই, শুধু তার অথবা মায়ের কথা পুনরাবৃত্তি না করি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমাকে উত্তর দেওয়ার সময় আরও বেশি ব্যাখ্যা করতে হয়েছে।”

৪. কেন ধৈর্য দেখিয়ে সন্তানদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ? একটা উদাহরণ তুলে ধরুন।

সন্তানরা যদি বাইবেলের কোনো শিক্ষা সঙ্গেসঙ্গে বিশ্বাস না করে, তা হলে ধৈর্য ধরুন। তাদেরকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করুন। একজন বাবা বলেছিলেন: “আপনার সন্তানের প্রশ্নগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করুন। সেগুলোকে হালকা ভেবে উড়িয়ে দেবেন না এবং আপনি কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বিব্রতবোধ করেন বলে সেটা এড়িয়ে যাবেন না।” আসলে, সন্তানরা যদি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তা হলে সেটা ভালো কারণ এর অর্থ হল, তারা বুঝতে চায়। এমনকী অল্পবয়সে যিশুও প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। (পড়ুন, লূক ২:৪৬.) ডেনমার্কের একজন ব্যক্তি বলেছিলেন: “আমি যখন বলেছিলাম, আমরা সত্য ধর্ম পালন করছি কি না, সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে, তখন আমার বাবা-মা শান্ত ছিলেন, যদিও তারা হয়তো আমার জন্য অনেক উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারা বাইবেল থেকে আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন।”

৫. বাবা-মায়েদের যদি মনে হয়, সন্তানদের যিহোবার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে, তারপরও তাদের কী করা উচিত?

আপনাদের সন্তানদের সম্বন্ধে ভালোভাবে জানুন। তারা প্রচারে ও সভাতে যায় বলে যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাস রয়েছে এমনটা মনে করবেন না। যিহোবা সম্বন্ধে তারা সত্যিই কেমন অনুভব করে আর বাইবেল সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? কোনো কারণে তাদের পক্ষে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে কি না, তা খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। প্রতিদিন একসঙ্গে কোনো কিছু করার সময় যিহোবা সম্বন্ধে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলুন। আপনারা যখন সন্তানদের সঙ্গে অথবা একা একা প্রার্থনা করেন, তখন প্রার্থনায় তাদের বিষয়ে উল্লেখ করুন।

যিহোবা সম্বন্ধে আপনাদের হৃদয়ে যা আছে, সেই বিষয়ে তাদের শিক্ষা দিন

৬. যিহোবা ও বাইবেল সম্বন্ধে বাবা-মায়েরা যদি ক্রমাগত শেখেন, তা হলে এটা কীভাবে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করে?

লোকেরা যিশুর কথা শুনতে পছন্দ করত কারণ তিনি যিহোবাকে ভালোবাসতেন এবং শাস্ত্র সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন। এ ছাড়া, তারা এটাও বুঝতে পারত, যিশু তাদের ভালোবাসেন। তাই তারা মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথা শুনত। (লূক ২৪:৩২; যোহন ৭:৪৬) একইভাবে, আপনাদের সন্তানরা যখন দেখে, আপনারা যিহোবাকে ভালোবাসেন, তখন তারাও তাঁকে ভালোবাসতে শেখে। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫-৮; লূক ৬:৪৫.) তাই, মনোযোগ দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করুন এবং নিয়মিতভাবে আমাদের প্রকাশনা পড়ুন। যিহোবার সৃষ্টি সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানুন। (মথি ৬:২৬, ২৮) যিহোবা সম্বন্ধে আপনারা নিজেরা যত বেশি জানবেন, তাঁর বিষয়ে সন্তানদের তত বেশি শিক্ষা দিতে পারবেন।—লূক ৬:৪০.

৭, ৮. আপনারা যখন যিহোবা সম্বন্ধে কোনো কিছু শেখেন, তখন কী করতে পারেন আর কীভাবে কোনো কোনো বাবা-মা তা করেছেন?

আপনারা যখন যিহোবা সম্বন্ধে কোনো কিছু শেখেন, তখন সন্তানদের সেই বিষয়ে বলুন। শুধুমাত্র সভার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অথবা পারিবারিক উপাসনার সময় নয় বরং যখনই আপনারা তাদের সঙ্গে থাকেন, তখনই তাদের বলুন। যুক্তরাষ্ট্রের এক দম্পতি সেটাই করেন। প্রকৃতির মধ্যে সুন্দর কোনো কিছু দেখতে পেলে অথবা কোনো সুস্বাদু খাবার খাওয়ার সময়, তারা সন্তানদের সঙ্গে যিহোবা সম্বন্ধে কথা বলেন। তারা বলেছিলেন: “যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু জুগিয়েছেন, সেই সমস্ত কিছু তৈরি করার সময় তিনি কীভাবে প্রেম ও আগাম চিন্তা দেখিয়েছেন, তা আমরা সন্তানদের মনে করিয়ে দিই।” দক্ষিণ আফ্রিকার এক দম্পতি, তাদের দুই মেয়ের সঙ্গে বাগানে কাজ করার সময় সৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন। যেমন, একটা বীজ থেকে চারা অঙ্কুরিত হওয়ার বিষয়টা কত বিস্ময়কর, তারা হয়তো সেটা মেয়েদের বলেন। সেই দম্পতি বলেছিলেন: “আমরা মেয়েদের হৃদয়ে জীবনের প্রতি ও এর বিস্ময়কর জটিল নকশার প্রতি গভীর সম্মান গড়ে তোলার চেষ্টা করি।”

অস্ট্রেলিয়ার একজন বাবা, প্রায় দশ বছর বয়সি ছেলেকে নিয়ে একটা জাদুঘরে গিয়েছিলেন। সেই বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার ছেলের বিশ্বাসকে দৃঢ় করার জন্য এবং যিহোবা যে সৃষ্টিকর্তা তা প্রমাণ করার জন্য, তিনি এই সময়টা ব্যবহার করবেন। তিনি বলেছিলেন: “আমরা অ্যামোনোয়েড ও ট্রিলোবাইট নামে প্রাচীন কালের সামুদ্রিক প্রাণীর একটা প্রদর্শনী দেখেছিলাম। এই বিলুপ্ত প্রাণীগুলো সুন্দর ছিল, এগুলোর নকশা জটিল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল—যা আমরা বর্তমানেও বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখে থাকি। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী, যদি সরল ধরনের জীবন বিবর্তিত হয়ে জটিল ধরনের জীবনে পরিণত হয়, তা হলে প্রাচীন কালের এই প্রাণীগুলো কেন ইতিমধ্যেই এতটা জটিল? এই শিক্ষা আমার উপর গভীর ছাপ ফেলেছিল আর আমি আমার ছেলেকে সেই বিষয়ে বলেছিলাম।”

দৃষ্টান্ত ব্যবহার করুন

৯. কেন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করা ভালো আর একজন মা কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন?

যিশু প্রায়ই বিভিন্ন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার সময় তিনি নীতিগল্প বলেছিলেন অথবা উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন। (মথি ১৩:৩৪, ৩৫) দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনারা সন্তানদেরকে তাদের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেন। এটা তাদেরকে আপনারা যা শিক্ষা দিচ্ছেন, সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে ও মনে রাখতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, শেখার বিষয়টা তাদের কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপানের একজন মা তার দুই ছেলেকে শেখাতে চেয়েছিলেন, যিহোবা যেভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন, সেটা কীভাবে তুলে ধরে, তিনি আমাদের জন্য অনেক চিন্তা করেন। তার এক ছেলের বয়স ছিল আট বছর আর অন্য ছেলের বয়স দশ বছর। তাই, তাদের বয়সের কথা মাথায় রেখে তিনি এমন একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন, যা তারা বুঝতে পারবে। তিনি দুই ছেলেকে দুধ, চিনি ও কফি দিয়েছিলেন। তারপর তাদের বলেছিলেন, তারা দু-জনেই যেন তার জন্য এক কাপ কফি তৈরি করে। তিনি বলেছিলেন, “তারা দু-জনেই অনেক যত্ন করে কফি বানিয়েছিল। কেন তারা এত যত্ন করে বানিয়েছে, তা যখন আমি জিজ্ঞেস করি, তখন তারা উত্তর দেয়, তারা একেবারে আমার পছন্দমতো কফি বানাতে চেয়েছে। আমি তখন তাদের ব্যাখ্যা করি, একইভাবে ঈশ্বরও অত্যন্ত যত্ন সহকারে বায়ুমণ্ডলে এমনভাবে বিভিন্ন গ্যাস মিশ্রণ করেছেন, যা আমাদের জন্য একেবারে উপযুক্ত।” এই শিক্ষা ছেলেরা উপভোগ করেছিল আর তারা কখনো তা ভুলে যায়নি!

একজন সৃষ্টিকর্তা যে অবশ্যই আছেন, সেই বিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা সহজ দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারেন (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০, ১১. (ক) একজন সৃষ্টিকর্তা যে অবশ্যই আছেন, সেই বিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) আপনারা কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছেন?

১০ একজন সৃষ্টিকর্তা যে অবশ্যই আছেন, সেই বিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারেন? আপনারা সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো রেসিপি বা প্রস্তুতপ্রণালী ব্যবহার করে একটা কেক বানাতে পারেন। কেন এই রেসিপি পুরোপুরি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ, প্রথমে সেটা তাকে ব্যাখ্যা করুন। এরপর তাকে একটা আপেল অথবা অন্য কোনো ফল দিন এবং জিজ্ঞেস করুন: “তুমি কি জান, এই আপেল তৈরি করারও একটা রেসিপি রয়েছে?” তারপর, আপেলটা দু-ভাগ করুন আর তার হাতে একটা বীজ দিন। তার কাছে ব্যাখ্যা করুন, এই বীজটা হল একটা রেসিপির মতো। এই বীজের মধ্যে কীভাবে একটা আপেল তৈরি হয়, সেই তথ্য রয়েছে। কিন্তু এই তথ্য, একটা কেক বানানোর নির্দেশনার চেয়ে আরও বেশি জটিল। আপনারা হয়তো বলতে পারেন: “নিশ্চয়ই কেউ-না-কেউ এই কেকের রেসিপি লিখে রেখেছেন। তা হলে, এই আপেলের রেসিপি কে লিখে রেখেছেন?” সন্তানের বয়স যদি বেশি হয়, তা হলে আপনারা হয়তো এটা ব্যাখ্যা করতে পারেন, একটা আপেল গাছ তৈরির নির্দেশনা বীজের ডিএনএ-র মধ্যে পাওয়া যায় আর সেই গাছ আরও আপেল তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া, আপনারা হয়তো জীবনের উৎপত্তি—জিজ্ঞেস করা যথার্থ এমন পাঁচটা প্রশ্ন (ইংরেজি) ব্রোশারের ১০ থেকে ২০ পৃষ্ঠার কিছু ছবি ও উদাহরণ তাদের দেখাতে পারেন।

১১ অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের সঙ্গে সচেতন থাক! (বর্তমানে সজাগ হোন!) পত্রিকার “এটা কি সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?” শিরোনামের প্রবন্ধ পড়ে থাকেন। সন্তানদের বয়স যদি অনেক কম হয়, তা হলে বাবা-মায়েরা হয়তো সেই তথ্য সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, ডেনমার্কের এক দম্পতি প্লেনের সঙ্গে পাখিদের তুলনা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন: “প্লেনগুলো দেখতে ঠিক পাখির মতো। কিন্তু পাখির মতো, প্লেনগুলো কি ডিম পাড়ে আর সেই ডিমে তা দিয়ে ছোটো ছোটো প্লেন তৈরি করতে পারে? প্লেনের মতো, পাখিদের কি মাটিতে নামার জন্য নির্দিষ্ট স্থান প্রয়োজন হয়? একটা প্লেনের শব্দ আর একটা পাখির গানের মধ্যে কি কোনো তুলনা হয়? তা হলে, কে বেশি বুদ্ধিমান—প্লেনের নির্মাতা, না কি পাখির সৃষ্টিকর্তা?” আপনারা যখন সন্তানদের সঙ্গে যুক্তি করেন ও তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, তখন আপনারা তাদের “পরিণামদর্শিতা” বা চিন্তা করার ক্ষমতা ব্যবহার করার এবং যিহোবার প্রতি তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য সাহায্য করেন।—হিতো. ২:১০-১২.

১২. বাইবেল যা বলে সেটা যে সঠিক, সেই বিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা কীভাবে দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারেন?

১২ এ ছাড়া, বাইবেল যা বলে সেটা যে সঠিক, সেই বিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, আপনারা ইয়োব ২৬:৭ পদ পড়তে পারেন। (পড়ুন।) এই শাস্ত্রপদ যে ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, তা আপনি কীভাবে তুলে ধরতে পারেন? আপনি হয়তো শুধু বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে পারেন। কিন্তু তা না করে, সন্তানকে নিজের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করুন না কেন? তাকে এই বিষয়টা বলুন, ইয়োব টেলিস্কোপ অথবা মহাকাশযান তৈরি হওয়ার অনেক আগে বেঁচে ছিলেন। তাই আপনার সন্তানের কাজ হবে অভিনয় করে এটা তুলে ধরা যে, পৃথিবীর মতো একটা বিশাল বস্তু শূন্যে ঝুলে আছে, এই ধারণা বিশ্বাস করা কতটা কঠিন। আপনার সন্তান হয়তো একটা বল অথবা পাথর ব্যবহার করে দেখাতে পারে, ভর রয়েছে এমন কোনো বস্তুকে অবশ্যই কোনো কিছুর উপর নির্ভর করতে হয়। এভাবে শিক্ষা দেওয়ার ফলে আপনার সন্তান বুঝতে পারবে, মানুষেরা এই তথ্য প্রমাণ করার অনেক আগেই যিহোবা তা বাইবেলে লিখে রেখেছিলেন।—নহি. ৯:৬.

বাইবেলের দ্বারা নির্দেশিত হওয়া কেন উত্তম, তা তাদের শিক্ষা দিন

১৩, ১৪. কীভাবে বাবা-মায়েরা বাইবেল যা বলে সেটার বাধ্য হওয়ার বিষয়ে সন্তানদের শিক্ষা দিতে পারেন?

১৩ এ ছাড়া, আপনাদের সন্তানদের এটা শিক্ষা দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ, বাইবেল যা বলে, সেটার বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে তারা সবচেয়ে বেশি সুখী হবে। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১:১-৩.) উদাহরণ স্বরূপ, সন্তানদের এটা কল্পনা করতে বলুন, তারা একটা দ্বীপে বসবাস করার জন্য যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে কারা সেখানে যাবে, সেটা তারা বেছে নিতে পারে। তারপর, আপনারা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, “সবাই যাতে মিলেমিশে থাকতে পারে, সেইজন্য তোমরা কোন ধরনের লোকেদের তোমাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে?” সব শেষে, যিহোবা নতুন জগতে কোন ধরনের লোকেদের চান, তা দেখানোর জন্য আপনারা গালাতীয় ৫:১৯-২৩ পদ পড়তে পারেন।

১৪ এভাবে, আপনারা সন্তানদের দুটো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারেন। প্রথমত, যিহোবা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, কীভাবে এখনই এক সুখী জীবন উপভোগ করা যায় ও অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে থাকা যায়। দ্বিতীয়ত, তিনি আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, কীভাবে নতুন জগতে জীবনযাপন করতে হবে। (যিশা. ৫৪:১৩; যোহন ১৭:৩) এ ছাড়া, বাইবেল কীভাবে আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করেছে, আপনারা সেটাও সন্তানদের দেখাতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের কোনো প্রকাশনা থেকে যেমন, প্রহরীদুর্গ পত্রিকার জনসাধারণের সংস্করণে প্রকাশিত “বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” শিরোনামের প্রবন্ধ থেকে কোনো জীবনকাহিনি খুঁজে বের করুন। অথবা আপনাদের মণ্ডলীর কোনো ভাই অথবা বোনকে অনুরোধ করুন, যেন তিনি আপনাদের ও সন্তানদের কাছে ব্যাখ্যা করেন, যিহোবাকে খুশি করার জন্য কীভাবে বাইবেল তাকে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছে।—ইব্রীয় ৪:১২.

১৫. কোন বিষয়টা সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য করবে?

১৫ আপনারা সন্তানদের যা শিক্ষা দেন, সেগুলোকে আগ্রহজনক ও আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য আপনাদের কল্পনাশক্তি ব্যবহার করুন। যিহোবা সম্বন্ধে জানার ও তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়টা যেন তারা উপভোগ করে, সেইজন্য ভিন্ন ভিন্ন উপায় চিন্তা করুন। তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা করা অব্যাহত রাখুন। “পুরোনো বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করার সময়, নতুন উপায়ে তা তুলে ধরার ক্ষেত্রে কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না,” একজন বাবা বলেছিলেন।

যিহোবার পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করুন এবং সন্তানদের প্রতি ধৈর্য দেখান

১৬. কেন সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার সময় ধৈর্য দেখানো গুরুত্বপূর্ণ আর কীভাবে কোনো কোনো বাবা-মা ধৈর্য দেখিয়েছেন?

১৬ যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্যে আপনাদের সন্তানরা দৃঢ়বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে। (গালা. ৫:২২, ২৩) কিন্তু, তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করার জন্য সময় প্রয়োজন। তাই সন্তানদের প্রতি ধৈর্য দেখান ও তাদের ক্রমাগত শিক্ষা দিন। জাপানের একজন বাবা, যার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে, তিনি এভাবে বলেছিলেন: “আমার স্ত্রী ও আমি সন্তানদের প্রতি প্রচুর মনোযোগ দিতাম। তারা অনেক ছোটো থাকতেই, খ্রিস্টীয় সভার দিন ছাড়া অন্যান্য দিন আমি ১৫ মিনিট সময় নিয়ে তাদের সঙ্গে অধ্যয়ন করতাম। ১৫ মিনিট সময় বের করা আমাদের কারো জন্যই কঠিন হতো না।” একজন সীমা অধ্যক্ষ লিখেছিলেন: “কিশোর বয়সে, আমি যতটা প্রকাশ করতাম, আমার মনে তার চেয়েও বেশি প্রশ্ন অথবা সন্দেহ ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এমন অনেক বিষয় নিয়ে সভাতে, পারিবারিক উপাসনার সময় অথবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নে আলোচনা করা হয়েছে। তাই, বাবা-মায়েদের জন্য তাদের সন্তানদের ক্রমাগত শিক্ষা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।”

একজন উত্তম শিক্ষক হওয়ার জন্য আপনাদের অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোবাসতে হবে (১৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৭. কেন বাবা-মায়েদের জন্য নিজেদের বিশ্বাস শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ আর কীভাবে বারমুডার এক দম্পতি তাদের মেয়েদেরকে যিহোবার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন?

১৭ আপনাদের সন্তানরা যখন দেখতে পায়, যিহোবার প্রতি আপনাদের দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে, তখন তারা নিশ্চিতভাবেই আপনাদের কাছ থেকে আরও বেশি শিখতে পারে। আপনারা কী করেন, সেটা তারা লক্ষ করে। তাই আপনাদের নিজেদের বিশ্বাস শক্তিশালী করুন। যিহোবা আপনাদের কাছে কতটা বাস্তব, তা সন্তানদের বুঝতে দিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বারমুডার এক দম্পতি যখন কোনো বিষয়ে উদ্‌বিগ্ন ছিলেন, তখন তারা তাদের মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তাদের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য যাচ্ঞা করেছিলেন। এ ছাড়া, তারা সন্তানদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন সন্তানরাও নিজে নিজে প্রার্থনা করে। “আর আমরা আমাদের বড়ো মেয়েকে এটাও বলেছিলাম, ‘যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা রাখো, রাজ্যের সেবায় ব্যস্ত থাকো আর অতিরিক্ত উদ্‌বিগ্ন হোয়ো না।’ প্রার্থনার ফল দেখে সে বুঝতে পেরেছে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করছেন। এটা ঈশ্বর ও বাইবেলের প্রতি তার বিশ্বাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করেছে।”

১৮. বাবা-মায়েদের কী ভুলে যাওয়া উচিত নয়?

১৮ বাবা-মায়েরা, কখনো ভুলে যাবেন না, আপনারা জোর করে সন্তানদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন না। আপনারা বীজ রোপণ করেন ও জল দেন, কিন্তু একমাত্র যিহোবাই সেটা বৃদ্ধি করতে পারেন। (১ করি. ৩:৬) তাই, আপনাদের প্রিয় সন্তানদেরকে তাঁর বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করুন এবং তাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করুন। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের উপর আশীর্বাদ করবেন।—ইফি. ৬:৪.