সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রেম দেখিয়ে চলুন​—⁠এটা অন্যদের গেঁথে তোলে

প্রেম দেখিয়ে চলুন​—⁠এটা অন্যদের গেঁথে তোলে

“প্রেমই গাঁথিয়া তুলে।”—১ করি. ৮:১.

গান সংখ্যা: ২৫, ৫২

১. শিষ্যদের সঙ্গে তাঁর শেষ রাতে যিশু কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন?

যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে শিষ্যদের কাছে প্রায় ৩০ বারের মতো প্রেমের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তাদের ‘পরস্পর প্রেম করা’ উচিত। (যোহন ১৫:১২, ১৭) তাদের প্রেম এতটাই উল্লেখযোগ্য হবে যে, অন্যেরা সেটা লক্ষ করবে এবং জানতে পারবে, তারাই খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারী। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) যিশু যে-প্রেমের বিষয়ে বলেছিলেন, সেটা কেবল এক অনুভূতি নয়; সেটা হল একটা চমৎকার গুণ, যা আত্মত্যাগমূলক কাজের মাধ্যমে দেখানো হয়ে থাকে। যিশু বলেছিলেন: “কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই। আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু।”—যোহন ১৫:১৩, ১৪.

২. (ক) বর্তমানে ঈশ্বরের দাসেরা কীসের জন্য সুপরিচিত? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করব?

বর্তমানে, যিহোবার দাসেরা তাদের প্রকৃত ও আত্মত্যাগমূলক প্রেম এবং দৃঢ় একতার জন্য সুপরিচিত। (১ যোহন ৩:১০, ১১) এই ক্ষেত্রে এটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে, আমরা কোন জাতি কিংবা বর্ণের লোক, কোন ভাষায় কথা বলি, কোন জায়গায় জন্মগ্রহণ করেছি অথবা কীভাবে বড়ো হয়ে উঠেছি। সারা বিশ্বে যিহোবার দাসেরা একে অন্যকে প্রকৃতই ভালোবাসে। কেন বর্তমানে প্রেম দেখানো এতটা প্রয়োজনীয়? কীভাবে যিহোবা ও যিশু প্রেমের দ্বারা আমাদের গেঁথে তোলেন? আর কীভাবে আমরা অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ও শক্তিশালী করার জন্য এই প্রেম দেখাতে পারি?—১ করি. ৮:১.

কেন বর্তমানে প্রেম দেখানো এতটা প্রয়োজনীয়?

৩. বর্তমানে আমরা যে-‘বিষম সময়ে’ বাস করছি, সেটা লোকেদের উপর কোন প্রভাব ফেলে?

আমরা ‘বিষম সময়ে’ বাস করছি আর আমাদের জীবন ‘ক্লেশ ও দুঃখে’ পরিপূর্ণ। (২ তীম. ৩:১-৫; গীত. ৯০:১০) অনেকে এতটাই কষ্টের মধ্যে রয়েছে যে, তারা হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবে। প্রতি বছর, ৮ লক্ষেরও বেশি লোক আত্মহত্যা করে, যার অর্থ হল প্রতি ৪০ সেকেন্ডে এক জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। এটা খুবই দুঃখজনক যে, এমনকী আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যেও কেউ কেউ এই অনুভূতির দ্বারা কবলিত হয়েছে এবং আত্মহত্যা করেছে।

৪. বাইবেলে উল্লেখিত কোন ব্যক্তিরা একসময় মারা যেতে চেয়েছিলেন?

বাইবেলের সময়ে, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের সমস্যাগুলোর কারণে এতটাই কষ্ট ভোগ করেছিল যে, তারা মারা যেতে চেয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, ইয়োব এতটাই যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন যে, তিনি বলেছিলেন: “আমার ঘৃণা হইয়াছে, আমি নিত্য বাঁচিয়া থাকিতে চাহি না।” (ইয়োব ৭:১৬; ১৪:১৩) যোনা এতটাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি বলেছিলেন: “এখন, হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, আমা হইতে আমার প্রাণ হরণ কর, কেননা আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল।” (যোনা ৪:৩) ভাববাদী এলিয় তার পরিস্থিতিকে এতটাই আশাহীন বলে মনে করেছিলেন যে, তিনি বলেছিলেন: “এই যথেষ্ট; হে সদাপ্রভু, এখন আমার প্রাণ লও।” (১ রাজা. ১৯:৪) কিন্তু, যিহোবা তাঁর এই অনুগত দাসদের ভালোবাসতেন এবং তিনি চেয়েছিলেন যেন তারা বেঁচে থাকেন। তিনি তাদের এই অনুভূতির কারণে রেগে যাননি। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ফিরে পেতে সাহায্য করেছিলেন, যাতে তারা বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা চালিয়ে যেতে পারেন।

৫. কেন বর্তমানে ভাই-বোনদের সত্যিই আমাদের প্রেমের প্রয়োজন রয়েছে?

বর্তমানে, আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে অনেকে চাপপূর্ণ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করছে আর তাই, তাদের আমাদের প্রেমের প্রয়োজন রয়েছে। কেউ কেউ উপহাসের কিংবা তাড়নার শিকার হয়। অন্যদের তাদের কাজের জায়গায় উৎপীড়ন ও সমালোচনা সহ্য করতে হয়। অথবা হতে পারে, তারা এই কারণে ক্লান্ত হয়ে যায় যে, তাদের চাকরির জায়গায় দীর্ঘসময় ধরে কাজ করতে হয় অথবা তাদের সেখানে খুবই চাপপূর্ণ কাজ করতে হয়। অন্যদের আবার গুরুতর পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। কারো ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে যে, তার বিবাহসাথি যিহোবার সেবা করেন না আর সেই সাথি সবসময় তাকে খারাপ কথা বলেন। এই ধরনের ও সেইসঙ্গে অন্যান্য আরও চাপের কারণে অনেকে মনে করে যে, তাদের লড়াই করার আর শক্তি নেই এবং তারা এমনকী এইরকম চিন্তা করা শুরু করতে পারে যে, তাদের কোনো মূল্য নেই। কার কাছ থেকে তারা সাহায্য লাভ করতে পারে?

যিহোবার প্রেম আমাদের শক্তিশালী করে

৬. কীভাবে যিহোবার প্রেম তাঁর দাসদের শক্তিশালী করে?

যিহোবা তাঁর দাসদের আশ্বস্ত করেন যে, তিনি তাদের ভালোবাসেন আর তিনি চিরকাল ধরে তাদের ভালোবাসবেন। একটু কল্পনা করুন, ইস্রায়েলীয়রা সেইসময় কেমন অনুভব করেছিল, যখন যিহোবা তাদের বলেছিলেন: “তুমি আমার দৃষ্টিতে বহুমূল্য ও সম্ভ্রান্ত, আমি তোমাকে প্রেম করিয়াছি” এবং “ভয় করিও না, কেননা আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি”! (যিশা. ৪৩:৪, ৫) আমরা জানি যে, আমরা প্রত্যেকেই যিহোবার কাছে মূল্যবান। * বাইবেল যিহোবার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে: “সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন, তিনি তোমার বিষয়ে পরম আনন্দ করিবেন।”—সফ. ৩:১৬, ১৭.

৭. কীভাবে যিহোবার প্রেম একজন স্তন্যদাত্রী মায়ের মতো? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি তাঁর লোকেদের শক্তিশালী করবেন ও সান্ত্বনা দেবেন, তা তাদের যেকোনো সমস্যাই থাকুক না কেন। তিনি বলেছিলেন: “তোমরা স্তন্য পান করিবে, কক্ষদেশে করিয়া তোমাদিগকে বহন করা যাইবে, হাঁটুর উপরে নাচান যাইবে। মাতা যেমন আপন পুত্ত্রকে সান্ত্বনা করে, তেমনি আমি তোমাদিগকে সান্ত্বনা করিব।” (যিশা. ৬৬:১২, ১৩) চিন্তা করুন, একটি শিশু যখন তার মায়ের কোলে থাকে অথবা তার মা যখন তার সঙ্গে খেলা করেন, তখন সে কতটা সুরক্ষিত বোধ করে! একইভাবে, যিহোবা আপনাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন আর তিনি চান যেন আপনি সুরক্ষিত বোধ করেন। তাই, আপনি যে যিহোবার কাছে খুবই মূল্যবান, এই বিষয়ে কখনো সন্দেহ করবেন না।—যির. ৩১:৩.

৮, ৯. কীভাবে যিশুর ভালোবাসা আমাদের শক্তিশালী করতে পারে?

কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা আমাদের ভালোবাসেন, সেটার পিছনে থাকা আরেকটা কারণ বিবেচনা করুন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) আর সেইসঙ্গে যিশুর বলিদান প্রমাণ করে যে, তিনিও আমাদের ভালোবাসেন এবং এই ভালোবাসা আমাদের শক্তিশালী করে। বাইবেল বলে, এমনকী “ক্লেশ” অথবা ‘সঙ্কটের’ মতো বিষয়গুলোও ‘খ্রীষ্টের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্‌ করিতে’ পারবে না।—রোমীয় ৮:৩৫, ৩৮, ৩৯.

কখনো কখনো আমরা এমন সমস্যার মুখোমুখি হই, যেটা আমাদের শারীরিকভাবে কিংবা আবেগগতভাবে দুর্বল করে দেয় অথবা যিহোবার সেবায় আমরা যে-আনন্দ উপভোগ করি, সেটাকে কেড়ে নেয়। কিন্তু, খ্রিস্ট যে আমাদের কতটা ভালোবাসেন, সেটা স্মরণ করা আমাদের ধৈর্য ধরার শক্তি দিতে পারে। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.) যিশুর ভালোবাসা আমাদের বেঁচে থাকার এবং যিহোবার সেবা করার আকাঙ্ক্ষা প্রদান করে। এটা আমাদের দুর্যোগ, তাড়না, হতাশা অথবা উদ্‌বিগ্নতা সত্ত্বেও হাল ছেড়ে না দেওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।

ভাই-বোনদের আমাদের প্রেমের প্রয়োজন রয়েছে

যিশুর উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আপনি অনুপ্রাণিত হতে পারেন (১০, ১১ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০, ১১. নিরুৎসাহিত ভাই-বোনদের গেঁথে তোলার দায়িত্ব কাদের রয়েছে? ব্যাখ্যা করুন।

১০ যিহোবা তাঁর প্রেমের দ্বারা আমাদের গেঁথে তোলার জন্য মণ্ডলীকেও ব্যবহার করেন। আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি প্রেম দেখাই, তখন আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা যিহোবাকে প্রেম করি। আমাদের ভাই-বোনেরা যে মূল্যবান এবং যিহোবা যে তাদের ভালোবাসেন, তা তাদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য আমরা যথাসাধ্য করি। (১ যোহন ৪:১৯-২১) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যেমন তোমরা করিয়াও থাক, তেমনি তোমরা পরস্পরকে আশ্বাস” বা উৎসাহ “দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল।” (১ থিষল. ৫:১১) এটা যে শুধু প্রাচীনরাই করতে পারেন, এমন নয়। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের ভাই-বোনদের সান্ত্বনা দেওয়ার মাধ্যমে যিহোবা ও যিশুকে অনুকরণ করতে পারি।—পড়ুন, রোমীয় ১৫:১, ২.

১১ মণ্ডলীতে কোনো কোনো ভাই-বোন, যারা চরম বিষণ্ণতা অথবা উদ্‌বিগ্নতার কারণে কষ্ট ভোগ করে, তাদের হয়তো ডাক্তারের সাহায্য ও ওষুধের প্রয়োজন হয়। (লূক ৫:৩১) মণ্ডলীর প্রাচীন ও অন্যান্য ব্যক্তিরা এটা বোঝে যে, যদিও তারা প্রশিক্ষিত ডাক্তার নয় কিন্তু তারা যে-সাহায্য ও সান্ত্বনা প্রদান করতে পারে, সেটার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। মণ্ডলীর সকলেই ‘ক্ষীণসাহসদিগকে [“বিষণ্ণদের,” NW] সান্ত্বনা করিতে, দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করিতে, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হইতে’ পারে। (১ থিষল. ৫:১৪) আমরা এটা বোঝার চেষ্টা করতে চাই যে, আমাদের ভাই-বোনেরা কেমন অনুভব করে। তাদের প্রতি আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং তাদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে হবে, যাতে তারা নিরুৎসাহিতার সময়ে সান্ত্বনা লাভ করে। আপনি কি অন্যদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন? আপনি অন্যদের আরও বেশি সান্ত্বনা ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য কী করতে পারেন?

১২. একজন বোনের উদাহরণ দিন, যিনি তার মণ্ডলীর ভাই-বোনদের দেখানো প্রেমের দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিলেন।

১২ ইউরোপের একজন বোন বলেন: “একেক সময়ে আমি আত্মহত্যা করার কথা ভাবি কিন্তু আমাকে সাহায্য করার জন্য অনেকে আছে। আমার মণ্ডলী আমার জীবন বাঁচিয়েছে। ভাই-বোনেরা সবসময় আমাকে উৎসাহ দেয় এবং আমার প্রতি ভালোবাসা দেখায়। যদিও অল্প কয়েক জনই আমার বিষণ্ণতার বিষয়ে জানে কিন্তু মণ্ডলীর প্রত্যেকেই আমাকে সবসময় সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকে। মণ্ডলীর এক বিবাহিত দম্পতি ঠিক আমার বাবা-মায়ের মতোই। তারা ভালোভাবে আমার যত্ন নেন আর প্রায় ২৪ ঘণ্টাই আমাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।” অবশ্য, সবাই যে এতটা সাহায্য করতে পারে, এমন নয়। কিন্তু, আমরা সবাই আমাদের ভাই-বোনদের সাহায্য করার জন্য অনেক কিছুই করতে পারি। *

কীভাবে প্রেমের দ্বারা অন্যদের গেঁথে তোলা যায়?

১৩. অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

১৩ একজন উত্তম শ্রোতা হোন। (যাকোব ১:১৯) আমরা যখন সহমর্মিতা দেখিয়ে কারো কথা শুনি, তখন আমরা প্রেম দেখিয়ে থাকি। সদয়ভাবে এমন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন, যেগুলো আপনাকে আপনার ভাই অথবা বোনের অনুভূতি আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে। তিনি আপনার মৌখিক অভিব্যক্তি দেখেই বুঝতে পারবেন যে, আপনি সত্যিই তার জন্য চিন্তা করেন। তিনি যখন কথা বলেন, তখন ধৈর্য ধরুন এবং তার কথায় বাধা না দিয়ে তাকে বলার সুযোগ দিন। একজন উত্তম শ্রোতা হওয়ার মাধ্যমে আপনি তাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং আপনার উপর আস্থা রাখার জন্য তাকে সাহায্য করতে পারবেন। এর ফলে, আপনি যখন তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন, তখন আপনি যা বলবেন, সেটা শোনা তার পক্ষে আরও সহজ হবে। আপনি যখন সত্যিই অন্যদের জন্য চিন্তা করবেন, তখন আপনি তাদের প্রচুর সান্ত্বনা দিতে পারবেন।

১৪. কেন আমাদের বিচার করা উচিত নয়?

১৪ বিচার করবেন না। একজন বিষণ্ণ ব্যক্তি যদি মনে করেন যে, আমরা তার বিচার করছি, তা হলে তিনি আরও বেশি বিষণ্ণ হয়ে যাবেন। এইরকম হলে তাকে সাহায্য করা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যেতে পারে। “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্‌গাঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ।” (হিতো. ১২:১৮) যদিও আমরা কখনো আমাদের কথাবার্তার দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো বিষণ্ণ ব্যক্তিকে আঘাত দেব না কিন্তু আমরা যদি চিন্তা না করেই কথা বলি, তা হলেও আমরা তাকে অনেক কষ্ট দিতে পারি। আমাদের ভাই অথবা বোনকে আশ্বস্ত করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করতে হবে যে, আমরা সত্যিই তার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি।—মথি ৭:১২.

১৫. অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমরা কোন মূল্যবান হাতিয়ার ব্যবহার করতে পারি?

১৫ অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করুন। (পড়ুন, রোমীয় ১৫:৪, ৫.) বাইবেল আসলে ‘ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ কাছ থেকে এসেছে, তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমরা এটির কথাগুলোর দ্বারা প্রচুর সান্ত্বনা লাভ করি। এ ছাড়া, আমাদের কাছে ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স এবং যিহোবার সাক্ষিদের জন্য গবেষণা নির্দেশিকা রয়েছে। এই হাতিয়ারগুলোর সাহায্যে আমরা সেই শাস্ত্রপদ ও প্রকাশনাগুলো খুঁজে পেতে পারি, যেগুলো ব্যবহার করে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের সান্ত্বনা ও উৎসাহ দিতে পারি।

১৬. কোন গুণগুলো আমাদের কোনো বিষণ্ণ ব্যক্তিকে উৎসাহিত করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৬ স্নেহ ও কোমলতা দেখান। যিহোবা হলেন “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” আর তিনি তাঁর দাসদের প্রতি ‘কৃপাযুক্ত স্নেহ’ দেখিয়ে থাকেন। (পড়ুন, ২ করিন্থীয় ১:৩-৬; লূক ১:৭৮; রোমীয় ১৫:১৩) এই ক্ষেত্রে পৌল এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন কারণ তিনি যিহোবাকে অনুকরণ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম; সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমাদিগকে দিতে সন্তুষ্ট ছিলাম, যেহেতুক তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে।” (১ থিষল. ২:৭, ৮) আমরা যখন যিহোবার মতো স্নেহ দেখাব, তখন আমরা হয়তো আমাদের ভাই-বোনদের সেই সান্ত্বনা দিতে পারব, যেটার জন্য তারা প্রার্থনা করছে!

১৭. আমরা ভাই-বোনদের সম্বন্ধে কোন বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি রাখলে তাদের উৎসাহিত করতে পারব?

১৭ আপনার ভাই-বোনদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করবেন না। বাস্তববাদী হোন। আপনি যদি আপনার ভাই-বোনদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করেন, তা হলে আপনি হতাশ হয়ে যাবেন। (উপ. ৭:২১, ২২) মনে রাখবেন, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কেবল বাস্তবসম্মত বিষয়গুলোই আশা করেন। তাই, আমাদের একে অন্যের প্রতি ধৈর্য দেখাতে হবে। (ইফি. ৪:২, ৩২) আমরা কখনোই আমাদের ভাই-বোনদের এমনটা মনে করাতে চাই না যে, তারা যিহোবার সেবায় যথেষ্ট ভালোভাবে কাজ করছে না অথবা আমরা কখনোই অন্যদের সঙ্গে তাদের তুলনা করতে চাই না। এর পরিবর্তে, আমরা তাদের উৎসাহিত করি এবং তাদের করা ভালো কাজগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করি। এটা তাদের যিহোবার সেবা করার সময়ে সুখী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।—গালা. ৬:৪.

১৮. কেন আমরা প্রেমের দ্বারা অন্যদের গেঁথে তুলতে চাই?

১৮ যিহোবার দাসেরা প্রত্যেকেই তাঁর ও যিশুর কাছে মূল্যবান। (গালা. ২:২০) আমরা আমাদের ভাই-বোনদের গভীরভাবে ভালোবাসি আর তাই, আমরা যেন অবশ্যই স্নেহ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে আচরণ করি। আমরা “যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, . . . সেই সকলের অনুধাবন করি।” (রোমীয় ১৪:১৯) আমরা পরমদেশে জীবনযাপন করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি, যেখানে কারো কাছেই নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনো কারণ থাকবে না! সেখানে আর অসুস্থতা থাকবে না এবং কোনো যুদ্ধও হবে না। লোকেরা আর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপের কারণে মারা যাবে না এবং সেখানে আর তাড়না, পারিবারিক সমস্যা অথবা জীবনে কোনোরকম হতাশা থাকবে না। হাজার বছরের শেষে সমস্ত মানুষ সিদ্ধ হয়ে যাবে। যারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় বিশ্বস্ততা বজায় রাখবে, যিহোবা তাদের পৃথিবীতে তাঁর দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং তারা “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” লাভ করবে। (রোমীয় ৮:২১) তাই, আমরা সবাই যেন সেই প্রেম দেখাই, যা অন্যদের গেঁথে তোলে এবং একে অন্যকে ঈশ্বরের চমৎকার নতুন জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করি।

^ অনু. 12 যারা আত্মহত্যা করার কথা ভাবে, তাদের সাহায্য করার জন্য সচেতন থাক! পত্রিকার এই প্রবন্ধগুলো দেখুন: “আপনি কেন বেঁচে থাকবেন?—বেঁচে থাকার তিনটে কারণ” (জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০১৪); “আত্মহত্যা কি উত্তর?” (এপ্রিল ৮, ১৯৯৪); “যখন আপনি হাল ছেড়ে দিতে চান” (জানুয়ারি ২০১২, ইংরেজি) ও “বেঁচে থাকা সত্যিই সার্থক” (অক্টোবর ২২, ২০০১, ইংরেজি) এবং প্রহরীদুর্গ পত্রিকার এই প্রবন্ধটা দেখুন: “শীঘ্রিই হতাশা বিনা এক পৃথিবী” (সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০০)।