সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সুখী তারাই, যারা সুখী ঈশ্বরের সেবা করে

সুখী তারাই, যারা সুখী ঈশ্বরের সেবা করে

“ধন্য সেই জাতি, সদাপ্রভু যাহার ঈশ্বর।”—গীত. ১৪৪:১৫.

গান সংখ্যা: ৩৮, ২১

১. কেন যিহোবার সাক্ষিরা খুবই সুখী? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

যিহোবার সাক্ষিরা খুবই সুখী। যখনই তারা একত্রে মিলিত হয়, হতে পারে কোনো সভায়, সম্মেলনে অথবা সামাজিক মেলামেশার জায়গায়, তখনই দেখা যায়, তারা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে ও হাসাহাসি করছে। কেন তারা এতটা সুখী? এর প্রধান কারণ হল তারা “পরম ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বর’ যিহোবাকে জানে। তারা তাঁর সেবা করে এবং তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। (১ তীম. ১:১১; গীত. ১৬:১১) যিহোবা হলেন সুখের উৎস আর তাই, তিনি চান যেন আমরা সুখী হই আর এর পাশাপাশি, তিনি আমাদের সুখী হওয়ার জন্য অনেক কারণও জুগিয়ে থাকেন।—দ্বিতীয়. ১২:৭; উপ. ৩:১২, ১৩.

২, ৩. (ক) সুখী হওয়ার অর্থ কী? (খ) কেন সুখী হওয়া কঠিন হতে পারে?

আপনার বিষয়ে কী বলা যায়? আপনি কি সুখী? সুখী হওয়ার অর্থ হল ভালো অনুভব করা, নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা অথবা খুবই আনন্দে থাকা। বাইবেল দেখায় যে, যিহোবা যাদের আশীর্বাদ করেন, তারা প্রকৃত অর্থে সুখী হয়ে উঠতে পারে। তা হলে, কেন বর্তমান জগতে সুখী হওয়া বেশ কঠিন হতে পারে?

আমাদের পক্ষে সুখী হওয়া সেই সময়গুলোতে কঠিন হতে পারে, যখন আমরা চাপপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হই যেমন, যখন কোনো প্রিয়জন মারা যায় কিংবা সমাজচ্যুত হয়, যখন বিবাহবিচ্ছেদের কারণে আমাদের বিয়ে ভেঙে যায় অথবা যখন আমরা চাকরি হারাই। সুখী হওয়া সেই সময়গুলোতেও কঠিন হতে পারে, যখন সবসময় ঝগড়া হওয়ার কারণে বাড়িতে শান্তি থাকে না, যখন সহকর্মী অথবা সহপাঠীরা আমাদের নিয়ে উপহাস করে অথবা যিহোবার সেবা করার কারণে যখন আমাদের তাড়না করা কিংবা কারাবদ্ধ করা হয়। অথবা আমাদের স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে খারাপ হতে পারে, আমাদের কোনো দীর্ঘকালীন রোগ ধরা পড়তে পারে কিংবা আমরা বিষণ্ণতায় ভুগতে পারি। কিন্তু স্মরণ করুন, “পরমধন্য” বা সুখী “ও একমাত্র সম্রাট” বা শাসক যিশু খ্রিস্ট লোকেদের সান্ত্বনা দিতে ও তাদের সুখী করে তুলতে ভালোবাসেন। (১ তীম. ৬:১৫; মথি ১১:২৮-৩০) পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু এমন কিছু গুণের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো শয়তানের জগতে থাকার কারণে বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করা সত্ত্বেও, আমাদের সুখী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে।

যিহোবাকে ছাড়া আমরা সুখী হতে পারি না

৪, ৫. সুখী হওয়ার ও সুখী থাকার জন্য আমরা কী করতে পারি?

যিশু প্রথম যে-বিষয়টার উল্লেখ করেছিলেন, সেটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী “যাহারা আত্মাতে দীনহীন [“আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন,” NW], কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই।” (মথি ৫:৩) আমরা যদি আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন থাকি, তা হলে আমরা এটা উপলব্ধি করি যে, আমাদের ঈশ্বরকে জানার আর সেইসঙ্গে তাঁর সাহায্য ও নির্দেশনা লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে। কীভাবে আমরা দেখাই যে, আমরা এই বিষয়ে সচেতন? বাইবেল অধ্যয়ন করার, ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার এবং তাঁর উপাসনাকে আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে তোলার মাধ্যমে। এই বিষয়গুলো করা আমাদের সুখী হতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো যে শীঘ্রই পরিপূর্ণ হবে, সেই বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর বাইবেলে আমরা যে-“পরমধন্য” বা সুখে ভরা ‘আশা’ খুঁজে পাই, সেটা আমাদের উৎসাহিত করবে।—তীত ২:১৩.

আমাদের জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা যদি সুখী হতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে তুলতে হবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা প্রভুতে [ঈশ্বরে] সর্ব্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর।” (ফিলি. ৪:৪) যিহোবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার জন্য আমাদের তাঁর কাছ থেকে পাওয়া প্রজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “ধন্য” বা সুখী “সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়, সেই ব্যক্তি যে বুদ্ধি লাভ করে; . . . যাহারা তাহাকে ধরিয়া রাখে, তাহাদের কাছে তাহা জীবনবৃক্ষ; যে কেহ তাহা গ্রহণ করে, সে ধন্য” বা সুখী।—হিতো. ৩:১৩, ১৮.

৬. সুখী থাকার জন্য আমাদের অবশ্যই আর কী করতে হবে?

তবে, আমরা যদি সুখী থাকতে চাই, তা হলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা বাইবেল থেকে যা শিখি, তা ক্রমাগত কাজে লাগাই। এমনটা করা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝানোর জন্য যিশু বলেছিলেন: “এ সকল যখন তোমরা জান, ধন্য” বা সুখী “তোমরা, যদি এ সকল পালন কর।” (যোহন ১৩:১৭; পড়ুন, যাকোব ১:২৫.) আমরা যদি আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করতে চাই এবং সুখী থাকতে চাই, তা হলে এটা অপরিহার্য। এটা ঠিক যে, এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলো আমাদের সুখ কেড়ে নিতে পারে। তা হলে, কীভাবে আমরা সুখী হতে পারি? আসুন আমরা দেখি, পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু এরপর কী বলেছিলেন।

যে-গুণগুলো আমাদের সুখী করে তোলে

৭. যারা শোক করে, তারা কীভাবে সুখী হতে পারে?

“ধন্য” বা সুখী “যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে।” (মথি ৫:৪) আমরা হয়তো চিন্তা করতে পারি, ‘যারা শোক করে, তারা কীভাবে সুখী হতে পারে?’ আসলে, যিশু সেই সমস্ত লোকের কথা বলছিলেন না, যারা শোক করে থাকে। অনেক দুষ্ট লোক শোক করে বা দুঃখ পায় কারণ তারা এই ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ বিভিন্ন চাপপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। (২ তীম. ৩:১) কিন্তু, তারা যিহোবার বিষয়ে চিন্তা না করে কেবল নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করে আর তাই, তারা তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে না। ফল স্বরূপ, তারা সুখী হতে পারে না। এর পরিবর্তে, যিশু সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে কথা বলছিলেন, যারা নিজেদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন। তারা শোক করে কারণ তারা দেখে যে, অনেক লোক ঈশ্বরকে অথবা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া, তারা এটা স্বীকার করে যে, তারা পাপী আর এর পাশাপাশি, তারা এই জগতে ঘটে চলা ভয়াবহ বিষয়গুলো দেখে থাকে। যিহোবা সেই ব্যক্তিদের লক্ষ করেন, যারা প্রকৃতই শোক করে আর তিনি তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তাদের সান্ত্বনা দেন এবং তাদের সুখ ও সেইসঙ্গে অনন্তজীবনের আশা প্রদান করেন।—পড়ুন, যিহিষ্কেল ৫:১১; ৯:৪.

৮. কীভাবে মৃদুশীল হওয়া আপনাকে সুখী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?

“ধন্য” বা সুখী “যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) কীভাবে মৃদুশীল হওয়া আপনাকে সুখী হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? অনেকে রূঢ় ও আক্রমণাত্মক আচরণ করে, যার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু, তারা যখন সত্য শেখে, তখন তারা পরিবর্তিত হয় এবং “নূতন মনুষ্যকে” বা ব্যক্তিত্বকে পরিধান করে। তারপর, তারা “করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা” দেখিয়ে থাকে। (কল. ৩:৯-১২) ফলে, তারা শান্তি লাভ করে, অন্যদের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক উপভোগ করে এবং সুখী হয়। এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাক্য প্রতিজ্ঞা করে যে, তারা “দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে।”—গীত. ৩৭:৮-১০, ২৯.

৯. (ক) যিশু যখন বলেছিলেন, মৃদুশীল ব্যক্তিরা “দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? (খ) কেন “যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত,” তারা সুখী হতে পারে?

যিশু যখন বলেছিলেন, মৃদুশীল ব্যক্তিরা “দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে,” তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সেই সময়ে পৃথিবীর অধিকারী হবে, যখন তারা রাজা ও যাজক হিসেবে পৃথিবীর উপর শাসন করবে। (প্রকা. ২০:৬) আর লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, যাদের স্বর্গীয় আশা নেই, তারা সেই সময়ে পৃথিবীর অধিকারী হবে, যখন তাদের চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। তারা সিদ্ধতা লাভ করবে এবং শান্তি ও সুখ উপভোগ করবে। এ ছাড়া, এরা হল সেই ব্যক্তিরা, যাদের বিষয়ে যিশু বলেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী “যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত।” (মথি ৫:৬) ধার্মিকতার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষা সেই সময়ে পরিপূর্ণ হবে, যখন যিহোবা সমস্ত দুষ্টতা দূর করে দেবেন। (২ পিতর ৩:১৩) নতুন জগতে ধার্মিক ব্যক্তিরা সুখী হবে এবং তারা আর কখনো দুষ্ট লোকেদের করা খারাপ কাজগুলোর জন্য শোক করবে না।—গীত. ৩৭:১৭.

১০. করুণাময় হওয়ার অর্থ কী?

১০ “ধন্য” বা সুখী “যাহারা দয়াশীল” বা করুণাময় “কারণ তাহারা দয়া” বা করুণা “পাইবে।” (মথি ৫:৭) করুণাময় হওয়ার অর্থ হল যারা কষ্টভোগ করে, তাদের প্রতি আন্তরিকতা, কোমলতা ও সমবেদনা দেখানো অর্থাৎ তাদের প্রতি মমতা দেখানো। তবে, করুণা গুণটা কেবল এক কোমল অনুভূতির চেয়ে আরও বেশি কিছু। বাইবেল শেখায় যে, করুণাময় হওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল অন্যদের সাহায্য করার জন্য কিছু করা।

১১. প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের দৃষ্টান্ত আমাদের কী শেখায়?

১১ লূক ১০:৩০-৩৭ পদ পড়ুন। যিশুর বলা প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের দৃষ্টান্ত খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করে যে, দয়াময় বা করুণাময় হওয়ার অর্থ কী। যে-ব্যক্তি কষ্টের মধ্যে ছিলেন, তার প্রতি সেই শমরীয় সমবেদনা ও করুণা বা মমতা অনুভব করেছিলেন। এর ফলে, সেই শমরীয় ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই দৃষ্টান্ত দেওয়ার পর যিশু বলেছিলেন: “যাও, তুমিও সেইরূপ কর।” তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি একই বিষয় করছি? আমি কি সেই প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের মতো কাজ করছি? অন্যেরা যখন কষ্ট ভোগ করে, তখন আমি কি তাদের সাহায্য করার জন্য কিছু করতে পারি? উদাহরণ স্বরূপ, আমি কি মণ্ডলীর বয়স্ক ব্যক্তিদের, বিধবাদের অথবা যে-সন্তানদের বাবা-মা যিহোবার সেবা করেন না, সেই সন্তানদের সাহায্য করতে পারি? আমি কি “ক্ষীণসাহসদিগকে [“বিষণ্ণদের,” NW] সান্ত্বনা করিতে” পারি?’—১ থিষল. ৫:১৪; যাকোব ১:২৭.

অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে যান এবং দেখুন যে, এর ফলে সবাই কতটা সুখী হয় (১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১২. আমরা যখন করুণা দেখাই, তখন কেন আমরা সুখী হই?

১২ আমরা যখন করুণাময় হই, তখন কেন আমরা সুখী হই? আমরা যখন অন্যদের প্রতি করুণা দেখাই, তখন আমরা আসলে দান করি এবং যিশু বলেছিলেন, দান করা আমাদের ধন্য বা সুখী করে তোলে। আরেকটা কারণ হল আমরা জানি যে, এমনটা করার মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে খুশি করছি। (প্রেরিত ২০:৩৫; পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৬.) যে-ব্যক্তি করুণা দেখান, তার বিষয়ে রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু তাহাকে রক্ষা করিবেন, জীবিত রাখিবেন, দেশে সে আশীর্ব্বাদ পাইবে” বা সুখী হবে। (গীত. ৪১:১, ২) আমরা যদি অন্যদের প্রতি দয়া বা করুণা ও সমবেদনা দেখাই, তা হলে আমরাও যিহোবার করুণা লাভ করব এবং চিরকাল সুখী থাকতে পারব।—যাকোব ২:১৩.

কেন ‘নির্ম্মলান্তঃকরণের’ ব্যক্তিরা সুখী হয়?

১৩, ১৪. কেন ‘নির্ম্মলান্তঃকরণের’ ব্যক্তি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ?

১৩ যিশু বলেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী “যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ, কারণ তাহারা ঈশ্বরের দর্শন পাইবে।” (মথি ৫:৮) আমাদের হৃদয় নির্মল করার জন্য আমাদের চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষাকে নির্মল বা শুচি রাখতে হবে। আমরা যদি চাই যে, যিহোবা আমাদের উপাসনা গ্রহণ করুক, তা হলে এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ৪:২; ১ তীম. ১:৫.

১৪ নির্মল হৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তিরা যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, যিনি বলেছেন: “ধন্য” বা সুখী “তাহারা, যাহারা আপন আপন পরিচ্ছদ ধৌত করে।” (প্রকা. ২২:১৪) তারা যে “আপন আপন পরিচ্ছদ ধৌত করে,” সেটার অর্থ কী? অভিষিক্ত ব্যক্তিদের জন্য এর অর্থ হল যিহোবা তাদের শুচি হিসেবে দেখেন, তিনি তাদের স্বর্গে অমর জীবন দেবেন এবং তারা চিরকাল ধরে সুখ উপভোগ করবে। আর বিস্তর লোক, যারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা রাখে, তাদের জন্য এর অর্থ হল যিহোবা তাদের তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার অনুমতি দেন কারণ তিনি তাদের ধার্মিক হিসেবে দেখেন। বাইবেল বলে, “ইহারা . . . মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে।”—প্রকা. ৭:৯, ১৩, ১৪.

১৫, ১৬. কীভাবে নির্মল হৃদয়ের ব্যক্তিরা ‘ঈশ্বরের দর্শন পাইতে’ পারে?

১৫ যিহোবা বলেছেন: “মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।” (যাত্রা. ৩৩:২০) তা হলে, কীভাবে নির্মল হৃদয়ের ব্যক্তিরা ‘ঈশ্বরের দর্শন পাইতে’ বা ঈশ্বরকে দেখতে পারে? যে-গ্রিক শব্দকে “দর্শন পাইবে” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ হতে পারে, কল্পনা করা, বোঝা অথবা জানা। তাই, ‘ঈশ্বরের দর্শন পাইবার’ অর্থ হল ঈশ্বর কী ধরনের ব্যক্তি, তা বোঝা এবং তাঁর গুণগুলোকে ভালোবাসা। (ইফি. ১:১৮) যিশু নিখুঁতভাবে ঈশ্বরের গুণগুলোকে অনুকরণ করেছিলেন আর তাই, তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।”—যোহন ১৪:৭-৯.

১৬ এর পাশাপাশি, আমরা যখন এই বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করি যে, ঈশ্বর কীভাবে জীবনে আমাদের সাহায্য করেন, তখন আমরা ‘ঈশ্বরের দর্শন পাই।’ (ইয়োব ৪২:৫) এ ছাড়া, আমরা সেই চমৎকার বিষয়গুলোর ‘দর্শন পাইতে’ বা সেগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারি, যেগুলো যিহোবা সেই ব্যক্তিদের জন্য করার প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা নির্মল থাকে এবং অনুগতভাবে তাঁর সেবা করে। আর অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যখন পুনরুত্থিত হয়ে স্বর্গে যাবে, তখন তারা আক্ষরিকভাবে যিহোবাকে দেখতে পারবে।—১ যোহন ৩:২.

বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা সুখী হতে পারি

১৭. কেন শান্তিস্থাপনকারী ব্যক্তিরা সুখী হয়?

১৭ যিশু এরপর বলেছিলেন: “ধন্য” বা সুখী “যাহারা মিলন করিয়া দেয়” বা শান্তি স্থাপন করে। (মথি ৫:৯) আমরা যখন অন্যদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য নিজে থেকে এগিয়ে যাই, তখন আমরা সুখী হতে পারি। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “যাহারা শান্তি-আচরণ করে, তাহাদের জন্য শান্তিতে ধার্ম্মিকতা-ফলের বীজ বপন করা যায়।” (যাকোব ৩:১৮) তাই যদি এমনটা হয় যে, মণ্ডলীতে অথবা পরিবারে কারো সঙ্গে মানিয়ে নিতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে, তা হলে একজন শান্তিস্থাপনকারী ব্যক্তি হওয়া জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য ভিক্ষা করুন। এমনটা করলে যিহোবা আপনাকে পবিত্র আত্মা দেবেন, যেটা আপনাকে খ্রিস্টীয় গুণাবলি দেখাতে সাহায্য করবে আর আপনি আরও সুখী হবেন। যিশু এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে শান্তি স্থাপন করার গুরুত্ব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন: “অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও” বা শান্তি স্থাপন করো, “পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও।”—মথি ৫:২৩, ২৪.

১৮, ১৯. খ্রিস্টানদের তাড়না করা সত্ত্বেও কেন তারা আনন্দিত হতে পারে?

১৮ “ধন্য” বা সুখী “তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে।” এটা বলার মাধ্যমে যিশু কী বুঝিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত।” (মথি ৫:১১, ১২) প্রেরিতদের যখন মারধর করা হয়েছিল এবং প্রচার কাজ বন্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন ‘তাঁহারা আনন্দ করিতে করিতে মহাসভার সম্মুখ হইতে চলিয়া গিয়াছিলেন।’ অবশ্য, তারা মার খেয়েছিলেন বলে আনন্দ করেননি। এর বিপরীতে, তারা আনন্দ করেছিলেন “কারণ তাঁহারা” যিশুর নামের জন্য “অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন।”—প্রেরিত ৫:৪১.

১৯ বর্তমানে, যিহোবার লোকেদের যখন যিশুর নামের কারণে তাড়না করা হয়, তখন তারাও আনন্দের সঙ্গে ধৈর্য ধরে। (পড়ুন, যাকোব ১:২-৪.) প্রেরিতদের মতো আমরাও কষ্ট অথবা তাড়না ভোগ করে আনন্দ লাভ করি না। তবে, আমরা যদি যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখি, তা হলে তিনি আমাদের ধৈর্য ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সাহস জোগাবেন। ভাই হেনরিক ডরনিক ও তার দাদার প্রতি কী ঘটেছিল, তা বিবেচনা করুন। ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাসে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। তাদের তাড়নাকারীরা বলেছিল: “তাদেরকে দিয়ে কোনোকিছু করানো অসম্ভব। তারা শহীদ হয়ে আনন্দ পায়।” ভাই হেনরিক ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যদিও আমার শহীদ হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, তবুও যিহোবার প্রতি আমার আনুগত্যের কারণে সাহস ও মর্যাদার সঙ্গে কষ্টভোগ করে আমি আনন্দিত ছিলাম।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আন্তরিক প্রার্থনাগুলো আমাকে যিহোবার নিকটবর্তী করেছিল আর এইভাবে তিনি আমার কাছে একজন নির্ভরযোগ্য সহায় বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন।”

২০. কেন আমরা “পরম ধন্য” বা সুখী “ঈশ্বরের” সেবা করতে পেরে সুখী হই?

২০ “পরম ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বর’ যিহোবা যখন আমাদের বিষয়ে খুশি হন, তখন আমরা তাড়না, পরিবারের কাছ থেকে আসা বিরোধিতা, অসুস্থতা অথবা বার্ধক্য সত্ত্বেও সুখী হতে পারি। (১ তীম. ১:১১) এ ছাড়া আমরা এই কারণেও সুখী হতে পারি যে, আমাদের ঈশ্বর, যিনি “মিথ্যাকথনে অসমর্থ,” তিনি আমাদের কাছে অনেক চমৎকার বিষয় সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছেন। (তীত ১:২) যিহোবা যখন তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেন, তখন বর্তমানের সমস্যাগুলোর কথা এমনকী আমাদের মনেও পড়বে না। সত্যি বলতে কী, আমরা কল্পনাও করতে পারি না, পরমদেশে জীবন কতটা রোমাঞ্চকর হবে এবং আমরা কতটা সুখী হব! হ্যাঁ, আমরা ‘শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিব।’—গীত. ৩৭:১১.