ঘৃণার চক্রের পিছনে কী রয়েছে?
কেন জগতে ঘৃণার এই চক্র চলতেই থাকে? এর কারণ জানার জন্য প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে, ঘৃণা কী, কেন লোকেরা ঘৃণা করতে শুরু করে এবং কীভাবে এটা ছড়ায়?
ঘৃণা কী?
ঘৃণা করার অর্থ হল, এক বা একাধিক ব্যক্তিকে একেবারে সহ্য করতে না পারা অথবা তাদের প্রতি শত্রুর মতো আচরণ করা। এটা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির প্রতি কিছু সময়ের জন্য রেগে থাকাকে বোঝায় না বরং এই অনুভূতি দীর্ঘদিন ধরে থাকে।
কেন লোকেরা ঘৃণা করতে শুরু করে?
লোকেরা যেকোনো ব্যক্তিকে ঘৃণা করতে পারে, তা সেই ব্যক্তি যা-ই করুন না কেন। তারা বিভিন্ন কারণে ঘৃণা করতে শুরু করে। যেমন, তারা ভেবে নেয় যে, সেই ব্যক্তি খারাপ, তিনি অন্যদের ক্ষতি করতে চান কিংবা তিনি কখনো পরিবর্তিত হবেন না। এ ছাড়া, লোকেরা হয়তো তাকে নীচু চোখে দেখতে পারে, হুমকি মনে করতে পারে অথবা বিভিন্ন সমস্যার কারণ হিসেবেও দেখতে পারে। তবে, যাদের মনে অন্যদের জন্য ঘৃণা থাকে, তারা হয়তো একসময় দৌরাত্ম্য, অবিচার অথবা অন্য কোনো ঘটনার শিকার হয়েছিল। আর এমনটা হওয়ার কারণে তাদের মনে অন্যদের প্রতি শত্রুতার মনোভাব গড়ে ওঠে।
কীভাবে এটা ছড়ায়?
একজন ব্যক্তি হয়তো সরাসরি চেনেন না এমন লোকদেরও ঘৃণা করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে, তিনি হয়তো অজান্তেই তার পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের মতো অন্যদের প্রতি ভেদাভেদের মনোভাব গড়ে তুলতে পারেন। আর এভাবে ঘৃণার এই মনোভাব এক জন দু-জন করে, খুব সহজেই পুরো সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘৃণা খুবই দ্রুত ছড়ায়। আর আমরা যখন এই বিষয়টা বুঝতে পারব, তখন আমরা জানব যে, কেন বেশিরভাগ লোক অন্যদের ঘৃণা করে। কিন্তু, এর পিছনে আরও একটা কারণ রয়েছে। সেটা জানার জন্য আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে যে, ঘৃণা আসলে কোথা থেকে শুরু হয়েছিল। আর তা আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি।
বাইবেল জানায়, ঘৃণা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল
ঘৃণা আসলে মানুষের কাছ থেকে শুরু হয়নি। এক জন স্বর্গদূত যখন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন এটা শুরু হয়। সেই স্বর্গদূতকে পরে শয়তান দিয়াবল বলা হয়। সেই দিয়াবল যখন থেকে বিদ্রোহ করতে শুরু করে, তখন থেকেই সে একজন “খুনী” হয়। “একজন মিথ্যাবাদী আর . . . মিথ্যার পিতা” হিসেবে সে ঘৃণা ও প্রচণ্ড রাগ ছড়িয়ে আসছে। (যোহন ৮:৪৪; ১ যোহন ৩:১১, ১২) বাইবেল বলে, সে খুবই মন্দ আর সে খুবই রেগে আছে। সে মিথ্যা কথা বলে এবং অন্যদের ক্ষতি করতে চায়।—ইয়োব ২:৭; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২, ১৭.
মানুষ অসিদ্ধ হওয়ায় তাদের মনে খুব সহজেই ঘৃণা জন্মাতে পারে। প্রথম মানব আদম শয়তানকে অনুসরণ করেছিল এবং পাপ করেছিল। আর ফলে, সমস্ত মানুষের মধ্যে পাপ ও অসিদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। (রোমীয় ৫:১২) আদমের প্রথম ছেলে কয়িন ঘৃণার কারণে তার নিজের ভাই হেবলকে হত্যা করেছিল। (১ যোহন ৩:১২) এটা ঠিক যে, অনেক মানুষ প্রেম ও সহানুভূতি দেখিয়ে থাকে। কিন্তু, পাপের কারণে বেশিরভাগ লোক এখন স্বার্থপর ও অহংকারী মনোভাব দেখায়, অন্যদের দেখে হিংসা করে। এই ধরনের গুণগুলো ঘৃণাকে প্রশ্রয় দেয়।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
অসহিষ্ণুতা ঘৃণাকে বৃদ্ধি দেয়। এই জগতে বেশিরভাগ লোক কারো প্রতি কোনো দয়ামায়া দেখায় না এবং কথায় ও কাজে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আর এভাবে ঘৃণা বাড়তে থাকে। “সমস্ত জগৎ শয়তানের নিয়ন্ত্রণের অধীনে রয়েছে” বলেই অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য, অসম্মানজনক কথাবার্তা, অন্যদের উত্ত্যক্ত করা এবং জিনিসপত্র ভাঙচুর করা দিন দিন বেড়েই চলেছে।—১ যোহন ৫:১৯.
তবে, বাইবেল যে শুধুমাত্র ঘৃণা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল, তা জানায় এমন নয় বরং এটি ঘৃণার সমাধান সম্বন্ধেও জানায়।