সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন?

ঈশ্বর এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন?

আপনি যদি কাউকে ভালোভাবে জানতে চান, তা হলে আপনি জানতে চাইবেন যে, তিনি এখনও পর্যন্ত কী কী সম্পাদন করেছেন আর কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাটিয়ে উঠেছেন। ঠিক একইভাবে, ঈশ্বরকে ভালোভাবে জানার জন্য আপনাকে জানতে হবে যে, তিনি এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন। আপনি হয়তো এটা জেনে অবাক হয়ে যাবেন, ঈশ্বর যা-কিছু করেছেন, সেগুলো বর্তমানে অনেক উপকার নিয়ে আসে এবং ভবিষ্যতেও উপকার নিয়ে আসবে।

ঈশ্বর আমাদের মঙ্গলের জন্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন

যিহোবা ঈশ্বর হলেন আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা। তাঁর “অদৃশ্য গুণ . . . জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে।” (রোমীয় ১:২০) “তিনি নিজ শক্তিতে পৃথিবী গঠন করিয়াছেন, নিজ জ্ঞানে জগৎ স্থাপন করিয়াছেন, নিজ বুদ্ধিতে আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন।” (যিরমিয় ১০:১২) তাঁর অপূর্ব সৃষ্টি থেকে আমরা এটা বুঝতে পারি যে, তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।

যিহোবা আমাদের “আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে” তৈরি করেছেন আর এইজন্য আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি। (আদিপুস্তক ১:২৭) তাই, আমরা তাঁর মতো গুণাবলি কিছুটা হলেও প্রদর্শন করতে পারি। তিনি আমাদের এই ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা তাঁর চিন্তাধারা ও মূল্যবোধ সম্বন্ধে জানতে পারি। আমরা যখন তাঁর মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবনযাপন করার চেষ্টা করি, তখন আমরা আরও বেশি সুখী হতে এবং জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে পারি। এ ছাড়া, তিনি আমাদের এমন ক্ষমতা দিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি।

যখন আমরা পৃথিবীতে ঈশ্বরের সৃষ্ট বিষয়গুলো দেখি, তখন আমরা বুঝতে পারি, ঈশ্বর আমাদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেন। প্রেরিত পৌল বলেন: ঈশ্বর “আপনাকে সাক্ষ্যবিহীন রাখেন নাই, কেননা, তিনি মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে [আমাদের] বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে [আমাদের] হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন।” (প্রেরিত ১৪:১৭) বেঁচে থাকার জন্য যা-কিছুর প্রয়োজন রয়েছে, ঈশ্বর সেগুলোর চেয়ে আমাদের অনেক বেশি দিয়েছেন, যাতে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি। এ ছাড়া, তিনি আমাদের আরও অনেক কিছু দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।

যিহোবা এই কারণে পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন, যাতে মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে। বাইবেল জানায়: “তিনি পৃথিবী মনুষ্য-সন্তানদিগকে দিয়াছেন” আর তিনি এটাকে “অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” (গীতসংহিতা ১১৫:১৬; যিশাইয় ৪৫:১৮) এখানে কারা বসবাস করবে ও কতদিন ধরে? “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৯.

যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য প্রথম পুরুষ ও নারী অর্থাৎ আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাদের “কৃষিকর্ম্ম ও রক্ষার্থে” এক পরমদেশ পৃথিবীতে রেখেছিলেন। (আদিপুস্তক ২:৮, ১৫) ঈশ্বর তাদের দুটো রোমাঞ্চকর কার্যভার দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) ফলে আদম ও হবার সামনে পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ ছিল। তবে দুঃখের বিষয় হল, তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বেছে নেন আর এই কারণে সেই ‘ধার্ম্মিকদের’ মধ্যে থাকার সুযোগ হারিয়েছিলেন, যারা “দেশের অধিকারী হইবে।” কিন্তু আমরা দেখব যে, তাদের অবাধ্যতার কারণে আমাদের ও পৃথিবীর জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়নি। প্রথমে আসুন আমরা বিবেচনা করে দেখি, আমাদের জন্য ঈশ্বর আর কী কী করেছেন।

ঈশ্বর তাঁর লিখিত বাক্য দিয়েছেন

বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য হিসেবেও পরিচিত। যিহোবা কেন আমাদের বাইবেল দিয়েছেন? এর প্রধান কারণ হল আমরা যেন তাঁর সম্বন্ধে শিখতে পারি। (হিতোপদেশ ২:১-৫) এটা সত্যি যে, ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর বাইবেল দেয় না। আসলে পৃথিবীর কোনো বই তা দিতে পারে না। (উপদেশক ৩:১১) কিন্তু বাইবেলে যা-কিছু লেখা রয়েছে, তা থেকে ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। তিনি যেভাবে লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেন, তা থেকে আমরা জানতে পারি তিনি আসলে কেমন ব্যক্তি। আমরা জানতে পারি যে, তিনি কোন ধরনের ব্যক্তিদের পছন্দ করেন এবং কোন ধরনের ব্যক্তিদের অপছন্দ করেন। (গীতসংহিতা ১৫:১-৫) আমরা এটাও জানতে পারি, উপাসনা, নৈতিক মান, বস্তুগত বিষয় সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন। বাইবেলে তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের কথা ও কাজ সম্বন্ধে লেখা রয়েছে, যা আমাদের যিহোবার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।—যোহন ১৪:৯.

যিহোবা আমাদের আরেকটা কারণে বাইবেল দিয়েছেন আর তিনি এটির মাধ্যমে আমাদের শেখান যে, কীভাবে আমরা এক সুখী ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারি। বাইবেলের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের জানিয়েছেন, কীভাবে আমাদের পরিবার সুখী হতে পারে, কীভাবে আমরা আমাদের জীবনে সন্তুষ্ট থাকতে পারি আর কীভাবে উদ্‌বিগ্নতার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি। এ ছাড়া, বাইবেলে জীবনের বড়ো বড়ো প্রশ্নের উত্তর রয়েছে যেমন: কেন পৃথিবীতে এত দুঃখকষ্ট রয়েছে? ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী রয়েছে? এ ছাড়া, বাইবেল এটাও ব্যাখ্যা করে যে, ঈশ্বর তাঁর আদি উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন।

বাইবেল সত্যিই এক অসাধারণ বই। আর এই বিষয়ে অনেক প্রমাণ রয়েছে যে, ঈশ্বরই এটির গ্রন্থকার। যদিও ১,৬০০ বছর ধরে প্রায় ৪০ জন ব্যক্তি বাইবেল লিখেছিলেন, কিন্তু এটির মুখ্য বিষয় একই ছিল কারণ ঈশ্বরই এটির প্রকৃত গ্রন্থকার ছিলেন। (২ তীমথিয় ৩:১৬) হাজার হাজার বাইবেল পাণ্ডুলিপি প্রমাণ করে যে, বাইবেল যুগ যুগ ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে আর সাধারণত অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা দেখা যায় না। এ ছাড়া, বাইবেল অনুবাদ, বিতরণ ও পাঠ করা বন্ধ করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিতরিত ও অনুবাদিত বই। বাইবেলের এখনও পর্যন্ত অস্তিত্বে থাকা প্রমাণ দেয় যে, “আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।”—যিশাইয় ৪০:৮.

ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন

ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমাদের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য তিনি এক বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন। আগে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈশ্বর চান মানুষ যেন এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকুক। কিন্তু আদম যখন ঈশ্বরের অবাধ্য হন ও পাপ করেন তখন তিনি চিরকাল বেঁচে থাকার যে আশা ছিল, তা হারিয়ে ফেলেন আর ভবিষ্যতে তার সন্তানদের জন্যও সেই আশা হারিয়ে যায়। “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) এভাবে, মানুষের অবাধ্যতার ফলে পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হয়নি। সেইসময়, ঈশ্বর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান?

যিহোবা তাঁর গুণাবলির সঙ্গে মিল রেখে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। তিনি ন্যায্যভাবে আদম ও হবাকে এর জন্য দায়ী করেছিলেন, কিন্তু তিনি প্রেমের সঙ্গে তাদের বংশধরদের জন্য এক ব্যবস্থা করেছিলেন। যিহোবা তাঁর প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে আদম ও হবাকে শাস্তি দিয়েছিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে সমাধান ঘোষণা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩:১৫) ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে তিনি আমাদের পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করবেন। কীভাবে তিনি তা করবেন?

যিহোবা মানবজাতিকে আদমের বিদ্রোহের প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য যিশুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। যিশু লোকেদের জীবনের পথে চলতে শিখিয়েছিলেন আর “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে” দিয়েছিলেন। a (মথি ২০:২৮; যোহন ১৪:৬) যিশু মুক্তির মূল্য দিতে পেরেছিলেন কারণ তিনি আদমের মতো একজন সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আদমের বিপরীতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত ঈশ্বরের বাধ্য ছিলেন। যেহেতু যিশু মৃত্যুর যোগ্য কোনো কাজ করেননি, তাই যিহোবা তাঁকে পুনরুত্থিত করে স্বর্গে জীবন দান করেছিলেন। এর ফলে, যিশু বাধ্য মানবজাতির জন্য অনন্ত জীবনের পথ খুলে দিতে পেরেছিলেন, যা আদম করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। “কারণ যেমন সেই এক মনুষ্যের অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির আজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে।” (রোমীয় ৫:১৯) যিশুর মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন ও পৃথিবীতে মানবজাতিকে চিরকাল বেঁচে থাকার সুযোগ দেবেন।

যেভাবে তিনি আদমের অবাধ্যতার ফলে আসা প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সমাধান করেছিলেন, তা থেকে আমরা যিহোবা সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা দেখলাম, যিহোবা কোনো একটা কাজ শুরু করলে সেটা শেষ করার জন্য কোন কিছুই তাঁকে বাধা দিতে পারে না; তাঁর বাক্য সবসময় “সিদ্ধার্থ [“সফল” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” হয়। (যিশাইয় ৫৫:১১) এ ছাড়া আমরা শিখেছি, যিহোবা আমাদের খুবই ভালোবাসেন। “আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি। ইহাতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্ত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন।”—১ যোহন ৪:৯, ১০.

ঈশ্বর “নিজ পুত্ত্রের প্রতি মমতা করিলেন না, কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন,” তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, ঈশ্বর “সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ-পূর্ব্বক দান করিবেন।” (রোমীয় ৮:৩২) ঈশ্বর ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন? এর উত্তর জানার জন্য পরের প্রবন্ধটা পড়ুন।

ঈশ্বর এখনও পর্যন্ত কী কী করেছেন? যিহোবা মানুষকে চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি আমাদের বাইবেল দিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর সম্বন্ধে জানতে পারি। তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য, তিনি যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে মুক্তির মূল্য প্রদান করেছিলেন

a মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের পাঠ ২৭ দেখুন। বইটা www.pr418.com-এ পাওয়া যাচ্ছে।