আপনার ভবিষ্যৎ আপনার হাতে!
আপনার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা কি আপনি আসলেই বেছে নিতে পারেন? কোনো কোনো ব্যক্তি বিশ্বাস করে, ব্যক্তিগত বাছাই নয় বরং ভাগ্য বা নিয়তি আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যখন তারা কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে বলে, “এটা আমার ভাগ্যে ছিল না!”
আবার অন্যেরা যখন দেখে, অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ এই জগৎ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথ নেই, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা হয়তো তাদের জীবনে ভালো কিছু করার প্রচেষ্টা করে, কিন্তু যুদ্ধ, অপরাধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অসুস্থতা বার বার তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। তারা আক্ষেপ করে বলে, “বেশি চিন্তা করে কী হবে?”
এটা ঠিক, জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি আপনার পরিকল্পনার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। (উপদেশক ৯:১১) কিন্তু যখন আপনার অনন্ত ভবিষ্যতের বিষয়টা আসে, তখন আপনি আসলেই তা বেছে নিতে পারেন। সত্যি বলতে কী, বাইবেল দেখায়, আপনার ভবিষ্যৎ আপনার বাছাইয়ের উপর নির্ভর করে। এটি যা বলে, তা বিবেচনা করে দেখুন।
প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির নেতা মোশি প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার সময় যিহোবার নামে লোকেদের এই কথা বলেন: “আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫, ১৯, ২০.
“আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯
হ্যাঁ! ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের সামনে এই প্রত্যাশা রাখেন যে, তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে স্বাধীন ও সুখী জীবন উপভোগ করবে। কিন্তু এই সমস্ত কিছু তারা এমনি এমনিই পাবে না। এই আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য তাদের “জীবন মনোনীত” করতে হবে। কীভাবে? ‘ঈশ্বরকে প্রেম করিবার, তাঁহার রবে অবধান করিবার, ও তাঁহাতে আসক্ত হইবার’ মাধ্যমে।
বর্তমানে, আপনার সামনেও একই বাছাই রয়েছে আর যেভাবে আপনি তা বেছে নেন, সেটা নির্ধারণ করে, আপনার ভবিষ্যৎ কেমন হবে। ঈশ্বরকে প্রেম করার, তাঁর রবে অবধান করার, ও তাঁর প্রতি আসক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনি আসলে জীবন অর্থাৎ পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবন মনোনীত বা বাছাই করেন। কিন্তু এই প্রতিটা পদক্ষেপের সঙ্গে কী জড়িত?
ঈশ্বরকে প্রেম করা বেছে নিন
ঈশ্বরের প্রধান গুণ হল প্রেম। প্রেরিত যোহন অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন: “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) তাই, যিশুকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ আজ্ঞা কী, তখন তিনি উত্তর দেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭) ভয় কিংবা অন্ধের মতো তাঁর কথা মেনে চলার ভিত্তিতে নয় বরং প্রেমের উপর ভিত্তি করে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু, কেন আমাদের তাঁকে প্রেম করা বেছে নিতে হবে?
কোনো প্রেমময় বাবা কিংবা মা তার সন্তানদের যেভাবে প্রেম করে, যিহোবাও মানবজাতিকে ঠিক সেইভাবে প্রেম করেন। অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, প্রেমময় বাবা-মা তাদের সন্তানদের নির্দেশনা ও উৎসাহ দেয়, সাহায্য ও শাসন করে, যাতে সন্তানরা সুখী হয় ও জীবনে সফল হয়। বিনিময়ে বাবা-মা তাদের সন্তানদের কাছ থেকে কী আশা করে? তারা চায়, সন্তানরা তাদের প্রেম করবে এবং সন্তানদের উপকারের জন্য তারা যা-কিছু শিখিয়েছে, সেগুলো মেনে চলবে। তাই এটা কি যুক্তিযুক্ত নয় যে, আমাদের সিদ্ধ স্বর্গীয় পিতা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর প্রতি আমরা প্রেমের সঙ্গে উপলব্ধি দেখাই?
তাঁর রবে অবধান করুন
“অবধান” শব্দটার জন্য বাইবেলের মূল ভাষায় যে-শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা প্রায়ই ‘বাধ্য’ থাকার ধারণা প্রদান করে। আমরা যখন কোনো বাচ্চাকে বলি, “তোমার বাবা-মায়ের কথায় অবধান কর,” তখন কি এই ধারনাই প্রকাশ পায় না? তাই, ঈশ্বরের রবে অবধান করা বলতে বোঝায়, তিনি যা বলেন, তা জানা ও সেটার প্রতি বাধ্য থাকা। যেহেতু আমরা সরাসরি ঈশ্বরের কথা শুনতে পাই না, তাই তাঁর বাক্য বাইবেল পড়ার ও এটির মধ্যে যা রয়েছে, তা প্রয়োগ করার মাধ্যমে তাঁর কথা শুনি।—১ যোহন ৫:৩.
ঈশ্বরের কথা শোনা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখাতে গিয়ে একবার যিশু বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” (মথি ৪:৪) আমাদের জন্য শারীরিক খাদ্য গ্রহণ করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া সেটার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেন? বিজ্ঞ রাজা শলোমন ব্যাখ্যা করে বলেন: “প্রজ্ঞা আশ্রয়, ধনও আশ্রয় বটে, কিন্তু জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা এই যে, প্রজ্ঞা আপন অধিকারীর জীবন রক্ষা করে।” (উপদেশক ৭:১২) ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বর্তমানে আমাদের সুরক্ষা প্রদান করে আর সেইসঙ্গে এমন বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, যেটা আমাদের ভবিষ্যতে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে।
তাঁর প্রতি আসক্ত হোন
আগের প্রবন্ধে আমরা যিশুর যে-দৃষ্টান্ত বিবেচনা করে দেখেছি, সেটা আরেক বার মনে করে দেখুন। তিনি বলেছিলেন: “জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।” (মথি ৭:১৩, ১৪) আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই অর্থাৎ অনন্তজীবন লাভ করতে চাই, তা হলে এই ধরনের সংকীর্ণ পথে যাওয়ার সময় কোনো দক্ষ পরিচালকের সাহায্য পেয়ে ও তার সান্নিধ্য লাভ করে আমরা সত্যিই উপকার পেতে পারি। এইজন্য, ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করার অনেক উত্তম কারণ আমাদের কাছে রয়েছে। (গীতসংহিতা ১৬:৮) কিন্তু, কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
প্রতিদিন আমাদের এমন অনেক কাজ করতে হয়, যেগুলো করা আমাদের জন্য আবশ্যক, আবার এমন অনেক কাজ থাকে, যেগুলো আমরা করতে চাই। এই কাজগুলো আমাদের এত ব্যস্ত অথবা বিক্ষিপ্ত করে রাখতে পারে যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন, তা বিবেচনা করার জন্য আমাদের হাতে খুবই কম সময় থাকে বা থাকেই না। এইজন্য বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল। সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ।” (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) আমরা যখন ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখি, তখন আমরা তাঁর সান্নিধ্য লাভ করি।—মথি ৬:৩৩.
বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার
যদিও আপনি কোনোভাবেই আপনার অতীত পরিবর্তন করতে পারবেন না কিন্তু আপনি নিশ্চিতভাবেই নিজের ও আপনার প্রিয়জনদের জন্য উত্তম ভবিষ্যৎ বেছে নিতে পারেন। বাইবেল প্রকাশ করে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা, যিহোবা ঈশ্বর আমাদের গভীরভাবে প্রেম করেন আর তিনি আমাদের সেই কাজগুলো সম্বন্ধে জানান, যেগুলো আমরা করি বলে তিনি আশা করেন। ভাববাদী মীখার এই কথাগুলো লক্ষ করুন:
“হে মনুষ্য, যাহা ভাল, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুতঃ ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”—মীখা ৬:৮.
যিহোবা সবাইকে তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করার ও যারা তা করে, তাদের জন্য তিনি যে-অনন্ত আশীর্বাদ রেখেছেন, তা লাভ করার আমন্ত্রণ জানান। আপনি কি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন? বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আপনার!