সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারেন

আপনি চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারেন

কতই-না অপূর্ব এক প্রত্যাশা! আমাদের সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে  আমাদের অনন্তজীবন দান করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। কিন্তু অনেকের পক্ষে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তারা বলে থাকে, ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ আবার অন্যেরা মনে করে, চিরকাল বেঁচে থাকা সম্ভব কিন্তু তা এই পৃথিবীতে নয়। তারা বলে থাকে, আপনি তখনই অনন্তজীবন লাভ করতে পারবেন, যখন আপনি মারা যাওয়ার পর স্বর্গে যাবেন। আপনি কী মনে করেন?

এই বিষয়ে মন্তব্য করার আগে পরবর্তী তিনটে প্রশ্নের উত্তর সম্বন্ধে বাইবেল কী জানায়, তা বিবেচনা করে দেখুন: মানুষের সৃষ্টি বিবরণী কী দেখায়, তাদের কত দিন বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল? পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য কী ছিল? কীভাবে মানবজাতির উপর মৃত্যু এসেছে?

মানুষের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য

পৃথিবীতে ঈশ্বর যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলোর মধ্যে মানুষ সত্যিই অদ্বিতীয়। কীভাবে? বাইবেল ইঙ্গিত দেয়, একমাত্র মানুষকেই ঈশ্বরের “প্রতিমূর্ত্তিতে” ও “সাদৃশ্যে” সৃষ্টি করা হয়েছে। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, মানুষকে এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি দেওয়া হয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরের নিজস্ব গুণাবলিকে প্রতিফলিত করে, যেমন প্রেম ও ন্যায়বিচার।

এ ছাড়া, মানুষকে চিন্তা ও যুক্তি করার এবং ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা দিয়ে আর সেইসঙ্গে ঈশ্বরকে জানার ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এইজন্য আমরা নিখিলবিশ্বের মহত্ত্ব ও প্রকৃতির অপূর্ব বিষয়গুলো এবং শিল্পকলা, গান-বাজনা ও কবিতা উপলব্ধি করতে পারি। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে উপাসনা করার এক অদ্বিতীয় ক্ষমতা রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকায় মানুষ পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের চেয়ে একেবারেই আলাদা।

তাহলে, এই বিষয়টা চিন্তা করে দেখুন: ঈশ্বর যদি মানুষকে এত কম সময় বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করতেন, তা হলে তিনি কি আমাদের এই ধরনের অপূর্ব গুণাবলি প্রদান করতেন আর সেগুলো গড়ে তোলার ও বৃদ্ধি করার জন্য এত অসীম ক্ষমতা দিতেন? সত্য বিষয়টা হল, ঈশ্বর মানুষকে এই অদ্বিতীয় গুণাবলি ও ক্ষমতা দিয়েছেন, যাতে আমরা এই পৃথিবীতে চিরকাল জীবন উপভোগ করতে পারি।

ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য

অনেকে বলে থাকে, ঈশ্বর কখনোই চাননি, মানুষ এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকুক। তারা দাবি করে, পৃথিবীকে মানুষের জন্য এক অস্থায়ী গৃহ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে আর সেইসঙ্গে কারা স্বর্গে গিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে অনন্তকাল বেঁচে থাকার যোগ্য, তা নির্ধারণ করার জন্য এটা হল এক পরীক্ষামূলক স্থান। তাদের এই দাবি যদি সত্যি হয়, তা হলে পৃথিবীতে ঘটা সমস্ত দুষ্টতা ও মন্দতার জন্য কি ঈশ্বর দায়ী হতেন না? কিন্তু, এটা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের একেবারে বিপরীত। ঈশ্বর সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের জানায়: “কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪.

বাইবেল স্পষ্টভাবে পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রকাশ করতে গিয়ে বলে: “স্বর্গ সদাপ্রভুরই স্বর্গ, কিন্তু তিনি পৃথিবী মনুষ্য-সন্তানদিগকে দিয়াছেন।” (গীতসংহিতা ১১৫:১৬) হ্যাঁ, ঈশ্বর পৃথিবীকে মানুষের জন্য এক সুন্দর, স্থায়ী গৃহ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন আর তিনি এটাকে আমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় দিয়ে পূর্ণ করেছেন, যাতে আমরা চিরকাল ধরে অর্থপূর্ণ জীবন উপভোগ করতে পারি।—আদিপুস্তক ২:৮, ৯.

এ ছাড়া, মানুষের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বাইবেল স্পষ্টভাবে জানায়। ঈশ্বর প্রথম মানব দম্পতিকে এই কার্যভার দেন: “পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর . . . ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।” (আদিপুস্তক ১:২৮) পরমদেশ গৃহের যত্ন নেওয়ার ও সারা পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার কী এক সুযোগই-না তাদের কাছে ছিল! আসল বিষয়টা হল, আদম ও হবার আর সেইসঙ্গে তাদের ভাবী বংশধরদের জন্য স্বর্গে নয় বরং পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা ছিল।

আমরা কেন মারা যাই?

তাহলে, আমরা কেন মারা যাই? বাইবেল দেখায়, ঈশ্বরের সৃষ্ট এক আত্মিক প্রাণী, যাকে পরবর্তী সময় শয়তান দিয়াবল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এদনে তাঁর ব্যবস্থাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা করে। কীভাবে?

শয়তান আমাদের প্রথম পিতা-মাতা, আদম ও হবাকে তার সঙ্গে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিতে প্ররোচিত করে। শয়তান দাবি করে, ঈশ্বর তাদের উত্তম কিছু থেকে অর্থাৎ কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল, তা নির্ধারণ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। তারা শয়তানের পক্ষ নেওয়া বেছে নেন ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। ফলাফল কী হয়? একসময় তারা মারা যান, ঠিক যেমনটা ঈশ্বর তাদের সাবধান করে বলেছিলেন। এভাবে তারা পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলেন।—আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:১-৬; ৫:৫.

আদম ও হবা যে-বিদ্রোহ করেছিলেন, তা আজ পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে প্রভাবিত করছে। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল।” (রোমীয় ৫:১২) আমরা এইজন্য মারা যাই না যে, ঈশ্বর তা আগে থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন কিংবা এটা তাঁর কোনো এক দুর্বোধ্য ‘পরিকল্পনা।’ কিন্তু এর কারণ হল, আমরা আমাদের প্রথম পিতা-মাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ ও মৃত্যু পেয়েছি।

আপনি পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারেন

এদনে ঘটা বিদ্রোহের কারণে মানুষ ও পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়নি। ঈশ্বরের নিখুঁত প্রেম ও ন্যায়বিচার করার ক্ষমতা তাঁকে আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপ ও মৃত্যুর বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করতে পরিচালিত করেছে। প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: “পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) প্রেমের বশবর্তী হয়ে ঈশ্বর “আপনার একজাত পুত্রকে [যিশু খ্রিস্টকে] দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) যিশু ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে নিজেকে মুক্তির মূল্য হিসেবে প্রদান করার মাধ্যমে সেই সমস্ত কিছু উদ্ধার করেন, যেগুলো আদমের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল। a

শীঘ্রই, পার্থিব পরমদেশ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা বাস্তবে পরিণত হবে। সেই অপূর্ব ভবিষ্যৎ আপনিও লাভ করতে পারেন, যদি যিশুর দেওয়া এই পরামর্শ কাজে লাগান: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।” (মথি ৭:১৩, ১৪) হ্যাঁ, আপনার ভবিষ্যৎ আপনার হাতে। এখন আপনি কী করবেন?

a মুক্তির মূল্য আপনার জন্য কী অর্থ রাখে, সেই সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের ২৭ পাঠ দেখুন এবং বইটা www.pr418.com থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করার জন্য পাওয়া যাচ্ছে।

“স্বর্গ সদাপ্রভুরই স্বর্গ, কিন্তু তিনি পৃথিবী মনুষ্য-সন্তানদিগকে দিয়াছেন।”—গীতসংহিতা ১১৫:১৬