সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জ্যোতিষবিদ্যা ও ভাগ্যগণনা—এগুলো কি ভবিষ্যৎ জানার উপায়?

জ্যোতিষবিদ্যা ও ভাগ্যগণনা—এগুলো কি ভবিষ্যৎ জানার উপায়?

জ্যোতিষবিদ্যা

জ্যোতিষবিদ্যা হল ভবিষ্যৎকে জানার একটা উপায় আর এটা এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে করা হয় যে, চাঁদ ও গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের উপর জোরালো প্রভাব ফেলে। জ্যোতিষীরা দাবি করে, এই গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান একজন ব্যক্তির জন্মের সময় তার ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ গঠন করে।

যদিও জ্যোতিষবিদ্যা বহু কাল আগে প্রাচীন বাবিলে শুরু হয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও, এটা এখনও জনপ্রিয়। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটা সমীক্ষা করা হয়। এই সমীক্ষায় করা লোকেদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মনে করে, জ্যোতিষবিদ্যা “কিছুটা হলেও বিজ্ঞানসম্মত,” আর ১০ শতাংশ মনে করে, এটা “পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত।” কিন্তু সত্যিই কি তাই? কখনোই না। আসুন দেখি, কেন।

  • গ্রহ-নক্ষত্র থেকে এমন কোনো শক্তি নির্গত হয় না, যেটা জ্যোতিষীদের কথা অনুযায়ী মানুষকে প্রভাবিত করে।

  • প্রায়ই এই ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো এতটাই সাধারণ হয়ে থাকে যে, সেগুলো যেকোনো ব্যক্তির প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে।

  • জ্যোতিষীরা প্রাচীন সময়ের এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গণনা করে থাকে যে, গ্রহগুলো পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু বাস্তব বিষয়টা হল, গ্রহগুলো সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে।

  • একই ব্যক্তির উপর করা বিভিন্ন জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্‌বাণী বিভিন্ন হয়ে থাকে।

  • জ্যোতিষীরা মানুষকে তাদের জন্ম-তারিখ অনুযায়ী ১২টা শ্রেণিতে বা রাশিচক্রে বিভক্ত করে। শত শত বছর ধরে মহাকাশে পৃথিবীর অবস্থান পরিবর্তিত হওয়ায় সূর্য যে-সময়ে কোনো একটা রাশির নামের নক্ষত্রমণ্ডলকে অতিক্রম করে, সেটা রাশিচক্রের সেই রাশির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তারিখের সঙ্গে মেলে না।

এমনটা বলা হয়ে থাকে, রাশি একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু বাস্তবে, দু-জন ব্যক্তির একই দিনে জন্ম হলেও তাদের স্বভাব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে; একজন ব্যক্তির জন্ম-তারিখ তার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে কিছুই প্রকাশ করে না। একজন মানুষ বাস্তবে কেমন, সেটা দেখার পরিবর্তে জ্যোতিষীরা অনুমানের উপর ভিত্তি করে তার আচরণ ও স্বভাব বিচার করে থাকে। এটা কি এক ধরনের কুসংস্কার নয়?

ভাগ্যগণনা

প্রাচীন কালে মানুষ ভাগ্যগণনাকারীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিত। কোনো কোনো ভাগ্যগণনাকারী অর্থ খোঁজার জন্য এই সমস্ত বিষয়গুলো দেখত, যেমন পশুপাখি ও মানুষের শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং কীভাবে মোরগ দানা খুঁটে খায়। অন্যেরা আবার চাপাতা কিংবা গুঁড়ো কফির নকশার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বলত। বর্তমানে তারা একজন ব্যক্তির ভবিষ্যৎ ‘পড়ার’ জন্য টেরোট কার্ড, ক্রিস্টাল বল, ঘুঁটি ও অন্যান্য উপায় ব্যবহার করে। ভাগ্যগণনা কি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানার এক নির্ভরযোগ্য উপায়? না, কখনোই নয়। আসুন, এই বিষয়ে কয়েকটা যুক্তি বিবেচনা করে দেখি।

ভাগ্যগণনায় কতটা মিল রয়েছে, সেই বিষয়টা চিন্তা করুন। প্রায়ই দেখা যায়, বিভিন্ন উপায়ে করা ভাগ্যগণনার ফলাফল বিভিন্ন হয়ে থাকে। এমনকী একই উপায় অবলম্বন করলেও ফলাফল ভিন্ন হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন ব্যক্তি যদি দু-জন ভাগ্যগণনাকারীকে একই কার্ড ‘পড়ে’ তার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, যুক্তিসংগতভাবে তাদের উত্তর একই হওয়া উচিত। কিন্তু প্রায়ই এমনটা ঘটে না।

ভাগ্যগণনাকারীদের পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহজনক প্রশ্ন ওঠে। সমালোচকরা বলে থাকে, কার্ড অথবা ক্রিস্টাল বলগুলো লোক ঠকানোর বস্তু মাত্র আর ভাগ্যগণনাকারীরা এই বস্তুগুলো নয় বরং একজন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে লক্ষ করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কোনো ব্যক্তি একজন দক্ষ ভাগ্যগণনাকারীর কাছে আসে, তখন সেই ভাগ্যগণনাকারী তাকে কয়েকটা সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। সেইসময় তিনি মনোযোগ দিয়ে সেই ব্যক্তির মৌখিক অভিব্যক্তি ও অন্যান্য অব্যক্ত সংকেত লক্ষ করেন, যেগুলো তার সম্বন্ধে কিছু তথ্য প্রকাশ করে। এরপর সেই ভাগ্যগণনাকারী এমন ভান করেন যে, তিনি সেই তথ্য ও পরিস্থিতিগুলো জানেন, যেগুলো সম্বন্ধে সেই ব্যক্তি নিজের অজান্তেই তার কাছে প্রকাশ করেছে। এর ফলে, কিছু কিছু ভাগ্যগণনাকারী লোকেদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে আর তাদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা লুটে নিয়েছে।

বাইবেল আমাদের যা বলে

জ্যোতিষবিদ্যা ও ভাগ্যগণনা দেখায় যে, আমাদের ভবিষ্যৎ পূর্বনির্ধারিত। কিন্তু এটা কি ঠিক? বাইবেল আমাদের জানায়, আমরা কী বিশ্বাস করব অথবা কী করব, তা বেছে নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে আর আমরা যা বাছাই করি, সেটা আমাদের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলে।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.

ঈশ্বরের উপাসকদের জ্যোতিষী ও ভাগ্যগণনাকারীদের প্রত্যাখ্যান করার আরও একটা কারণ রয়েছে আর তা হল, ঈশ্বর সমস্ত ধরনের ভবিষ্যৎ জানার উপায়কে ঘৃণা করেন। বাইবেলে আমরা এই কথাগুলো পাই: “তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, . . . যে মন্ত্র ব্যবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক, বা ভূতড়িয়া, বা গুণী বা প্রেতসাধক। কেননা সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.