সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | বিয়ে

যেভাবে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায়

যেভাবে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায়

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

আপনি ও আপনার বিবাহসাথি যখন কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে বসেন, তখন কি তা সমাধান হওয়ার পরিবর্তে আরও জটিল হয়ে পড়ে? যদি তা-ই হয়, তা হলে কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না। প্রথমে আপনাকে যা জানতে হবে তা হল, নারী ও পুরুষের কথা বলার ধরন কিন্তু এক নয়। a

আপনার যা জানা উচিত

মহিলারা সাধারণত সমাধানের কথা চিন্তা না করে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে। আসলে, কোনো অসুবিধার কথা বলতে না পারাই তাদের কাছে সমস্যা। এক বার মন খুলে সেই বিষয়ে কথা বলতে পারাই হল তাদের কাছে সমাধান।

“আমি যখন আমার স্বামীকে আমার মনের কথা খুলে বলি আর তিনি যখন তা মন দিয়ে শোনেন, তখন আমার ভালো লাগে। এক বার তার কাছে পুরো কথাটা বলার দু-এক মিনিট পরই আমার মনে হয়, আমার মাথা থেকে সমস্যার বোঝাটা নেমে গিয়েছে।”—শিলা। b

“আমি যতক্ষণ না আমার স্বামীকে আমার অনুভূতির কথা বলতে পারি, ততক্ষণ আমার মাথার মধ্যে তা ঘুরতে থাকে। সেই কথাগুলো তাকে বলে ফেলার পর, আমি স্বস্তি পাই।”—অঞ্জু।

“এটা অনেকটা চিরুনি তল্লাশির মতো। সমস্যাটা নিয়ে আলোচনা করার সময় আমি পুরো ঘটনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি আর এভাবে সেই সমস্যাটা কীভাবে শুরু হয়েছিল, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।”—লতা।

পুরুষরা সাধারণত সমাধানের কথা চিন্তা করে। এটা বোঝা কঠিন নয় কারণ পুরুষরা কোনো কিছুকে সারাতে ভালোবাসে। স্ত্রীকে সমাধানের রাস্তা দেখানোর মাধ্যমে একজন স্বামী আসলে এই বিষয়টা বোঝাতে চান, স্ত্রী নির্দ্বিধায় তার উপর নির্ভর করতে পারেন। আর তাই, স্ত্রী যখন তার পরামর্শ সহজে মেনে নেন না, তখন স্বামী হতবাক হয়ে যান। কৌশিক নামে একজন স্বামী অভিযোগ করে বলেন, “আমি ভেবে পাই না, তুমি যদি সমাধান না চাও, তা হলে আমার সঙ্গে আলোচনা করতে আসো কেন!”

বিয়েকে সফল করার জন্য সাতটা নীতি (ইংরেজি) নামক একটা বই এই বিষয়ে সাবধান করে বলে, “পরামর্শ দেওয়ার আগে বিষয়টাকে ভালোভাবে বোঝা প্রয়োজন। সমাধানের রাস্তা দেখানোর আগে আপনার সাথি যেন এটা বুঝতে পারেন, আপনি তার কথাটা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছেন আর তার প্রতি আপনার সহানুভূতি রয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই আপনার সাথি সমাধান খোঁজার জন্য নয় বরং তার মনের কথা বলার জন্য আপনার কাছে আসেন আর তিনি চান, আপনি যেন তার কথা মন দিয়ে শোনেন।”

আপনি যা করতে পারেন

স্বামীদের জন্য: মন দিয়ে কথা শুনুন এবং স্ত্রীর অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তরুণ নামে একজন স্বামী বলেন: “অনেক সময় আমার স্ত্রীর কথা শোনার পর আমার মনে হয়, ‘শুধু শুধু এই কথাগুলো শুনে আমার কী লাভ!’ কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমার স্ত্রী ঠিক এটাই চায়।” সমীর নামে আরেক জন স্বামীও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, কথার মাঝে বাধা না দিয়ে আমি যখন আমার স্ত্রীর কথা শুনি, তখন এর ফল ভালো হয়। বেশিরভাগ সময়ই কথা শেষ করার পর আমার স্ত্রী বলেন, ‘আমার এখন বেশ ভালো লাগছে।’”

এটা করে দেখুন: পরবর্তী সময় আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সময় তাড়াহুড়ো করে সমাধানের কথা বলতে যাবেন না। আপনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তিনি কী বলতে চান, তা মন দিয়ে শুনুন। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করুন। সংক্ষেপে স্ত্রীর কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করুন আর এভাবে তাকে জানান, আপনি তার কথা বুঝতে পেরেছেন। চার্লস নামে একজন স্বামী বলেন, “একেক সময় আমার স্ত্রী চান, আমি যেন তাকে বুঝি ও তাকে সমর্থন করি।”—বাইবেলের নীতি: যাকোব ১:১৯.

স্ত্রীদের জন্য: আপনার স্বামীর কাছ থেকে আপনি কী চান, তা তাকে স্পষ্টভাবে বলুন। সুধা নামে একজন স্ত্রী বলেন, “আমরা হয়তো মনে করি, মুখ ফুটে না বললেও আমাদের স্বামীরা আমাদের পরিস্থিতি বুঝবে। কিন্তু, একেক সময় আমাদের স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন হয়।” এই ক্ষেত্রে কী বলা উচিত, সে-বিষয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে অঞ্জলি নামে এক স্ত্রী বলেন: “আমি হয়তো এ-রকম বলতে পারি, ‘আমি ক-দিন ধরে তোমাকে একটা সমস্যার কথা বলব ভাবছিলাম। তোমাকে সমাধান করে দিতে হবে না, শুধু মন দিয়ে শুনলেই চলবে।’”

এটা করে দেখুন: আপনার স্বামী যদি তাড়াহুড়ো করে সমাধানের কথা বলেও দেন, তা হলে এমনটা ধরে নেবেন না, তিনি সহানুভূতিহীন। তিনি হয়তো আপনার সমস্যার বোঝা হালকা করতে চাইছেন। ইন্দিরা নামে এক স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী যে সত্যিই আমার জন্য চিন্তা করেন এবং আমার কথা শুনতে চান আর সেইসঙ্গে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন, আমি তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। তাই আমি তার উপর বিরক্ত হই না।”—বাইবেলের নীতি: রোমীয় ১২:১০.

উভয়ের জন্য: আমরা অন্যদের কাছ থেকে যেমন ব্যবহার পাওয়ার আশা করি, আমাদেরও উচিত তাদের সঙ্গে সেইরকম ব্যবহার করা। কিন্তু, সমস্যার সমাধান করার জন্য আপনি যদি আলোচনা করতে চান, তা হলে আপনার সাথি আপনার কাছ থেকে কী চাইছেন, তা বিবেচনা করুন। (১ করিন্থীয় ১০:২৪) মুকুল নামে একজন স্বামী বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন: “আপনি যদি একজন স্বামী হন, তা হলে মন দিয়ে আপনার স্ত্রীর কথা শুনুন। আপনি যদি একজন স্ত্রী হন, মাঝে মাঝে সমাধানের কথা শুনতে ইচ্ছুক থাকুন। আপনারা যদি মানিয়ে নেন, তা হলে উভয়েই উপকৃত হবেন।”—বাইবেলের নীতি: ১ পিতর ৩:৮. ◼ (g16-E No. 3)

a আমরা এখানে যে-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে আলোচনা করব, সেগুলো সমস্ত স্বামী ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। তবে, এই প্রবন্ধে যে-নীতিগুলো আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো যেকোনো ব্যক্তি নিজের দাম্পত্য জীবনে কাজে লাগাতে পারেন। তা করার মাধ্যমে তিনি তার সাথিকে আরও ভালো করে বুঝতে পারবেন ও কথোপকথনের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারবেন।

b এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।