সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালনপালন

আপনার সন্তানকে যৌনতা সম্বন্ধে শিক্ষা দিন

আপনার সন্তানকে যৌনতা সম্বন্ধে শিক্ষা দিন

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

মাত্র কয়েক দশক আগেও, বাবা-মায়েরাই প্রথম তাদের ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে যৌনতা সম্বন্ধে কথা বলার সুযোগ পেতেন। আর তারা তাদের সন্তানের বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী ধীরে ধীরে যৌনতা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতেন।

কিন্তু, এই বিষয়টা এখন পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। দ্যা ললিতা এফেক্ট বইয়ে বলা আছে, “সন্তানরা তুলনামূলকভাবে একেবারে অল্পবয়স থেকেই যৌনতা সম্বন্ধে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছে। আর সন্তানদের ঘিরে প্রচারমাধ্যম যে-বিষয়গুলো তৈরি করছে, সেগুলোর মধ্যে যৌনতার বিষয়টা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।” এই নতুন বাস্তবতাটা কি সন্তানদের সাহায্য করছে, না কি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে?

আপনার যা জানা উচিত

অশ্লীল বিষয়বস্তু সর্বত্র ছেয়ে রয়েছে। ডেবরা রফম্যান তার টক টু মি ফার্স্ট বইয়ে লেখেন, “কথাবার্তা, বিজ্ঞাপন, সিনেমা, বই, গানের কথা, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, মেসেজ, গেম, বিলবোর্ড, ফোন ও কম্পিউটারের মধ্যে এত বেশি পরিমাণে যৌন সংক্রান্ত ছবি, ভাষা এবং ইঙ্গিতমূলক তথ্য রয়েছে যে, অনেকে [কিশোর-কিশোরী, তাদের চেয়ে কমবয়সি এবং এমনকী ছোটো ছেলে-মেয়েরাও] ধরে নেয়, হতে পারে নিজেদের অজান্তে, যৌনতা হল জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

বিপণনজগৎ আংশিকভাবে দায়ী। বিজ্ঞাপনদাতা ও বিক্রেতারা ছেলে-মেয়েদের সামনে যৌন উদ্দীপনামূলক পোশাক-আশাক তুলে ধরে আর এভাবে একেবারে অল্পবয়স থেকেই তাদেরকে বেশভূষার উপর অযথা মনোযোগ দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। সো সেক্সি সো সুন নামক বই বলে, ‘বিক্রেতারা অল্পবয়সিদের দুর্বলতা জানে আর তারা সেটা স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগায়। সমস্ত ধরনের যৌন উদ্দীপনামূলক ছবি ও পণ্য তৈরি করার উদ্দেশ্য হল, ছেলে-মেয়েদের যৌনতার বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া নয়’ বরং “তাদেরকে শপিং করার জন্য প্ররোচিত করা।”

শুধুমাত্র তথ্য জানা যথেষ্ট নয়। ঠিক যেমন একটা গাড়ি কীভাবে চলে, সেটা জানা এবং একজন দায়িত্ববান চালক হওয়ার মধ্যে এক বিরাট পার্থক্য রয়েছে, তেমনই যৌনতা সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সেই জ্ঞান ব্যবহার করার মধ্যে এক বিরাট পার্থক্য রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: বর্তমানে আপনার সন্তানদেরকে তাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল” প্রশিক্ষিত করার জন্য আপনাকে আরও বেশি করে সাহায্য করতে হবে, যাতে তারা ‘সদসৎ বিষয়ের বিচারণ’ করতে বা সঠিক ও ভুলের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে।—ইব্রীয় ৫:১৪.

আপনি যা করতে পারেন

সাহায্য করুন। যত অস্বস্তিকর বলেই মনে হোক না কেন, সন্তানদেরকে যৌনতার বিষয়ে জানানোর দায়িত্ব হচ্ছে আপনার। সেই দায়িত্ব গ্রহণ করুন।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ২২:৬.

সংক্ষিপ্ত আলোচনা করুন। অনেক বিষয়বস্তু একবারে না বলে বরং দৈনন্দিন কাজের সময় একটু একটু করে কথা বলুন, যেমন হতে পারে একসঙ্গে গাড়িতে কোথাও যাওয়ার সময় অথবা ঘরের টুকিটাকি কাজ করার সময়। সন্তানদের মনের কথা বের করে আনার জন্য দৃষ্টিভঙ্গিমূলক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। উদাহরণ স্বরূপ, “যৌন উদ্দীপনামূলক বিজ্ঞাপন দেখতে কি তোমার ভালো লাগে?” এইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, “তোমার কী মনে হয়, পণ্য বিক্রেতারা বিজ্ঞাপনে কেন এইরকম চিত্র ব্যবহার করে?” আপনার সন্তানের উত্তর শোনার পর, আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন: “এই সম্বন্ধে তুমি কী মনে করো?”—বাইবেলের নীতি: দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.

বয়স অনুযায়ী শিক্ষা দিন। স্কুলে যাওয়ার মতো বয়স হয়নি এমন সন্তানদের যৌনাঙ্গগুলোর সঠিক নাম ও সেইসঙ্গে কীভাবে নিজেদেরকে যৌন উৎপীড়কদের কাছ থেকে রক্ষা করা যায়, সেই বিষয়টা শেখানো যেতে পারে। বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে প্রজনন সম্বন্ধে মৌলিক বিষয়গুলো জানানো যেতে পারে। সন্তানরা যখন বয়ঃসন্ধিকালে পা দেবে, তখন তাদের সঙ্গে যৌনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শারীরিক বিষয়গুলো এবং নৈতিক মানগুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

মূল্যবোধ সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। সন্তানকে—একেবারে ছোটোবেলা থেকেই—সততা, বিশ্বস্ততা ও সম্মান সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। এরপর, যখন যৌন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, তখন আপনি সহজেই সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। এ ছাড়া, আপনার মূল্যবোধ সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে জানান। উদাহরণ স্বরূপ, বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক করাকে যে আপনি অনুপযুক্ত বলে মনে করেন, সেটা সন্তানকে বলুন। আর সেইসঙ্গে কেন এটা অন্যায় এবং ক্ষতিকর, তা ব্যাখ্যা করুন। বিয়ন্ড দ্যা বিগ টক নামক বই বলে, “যে-কিশোর-কিশোরীরা জানে যে, কিশোর বয়সে যৌনসম্পর্ক করার ব্যাপারে তাদের বাবা-মায়েরা আপত্তি করে, তারা সাধারণত এই কাজে লিপ্ত হয় না।”

উদাহরণ স্থাপন করুন। আপনি যে-মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়ে থাকেন, সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। আপনি কি অশ্লীল রসিকতা শুনে হাসেন কিংবা অমার্জিত পোশাক পরেন অথবা অন্যদের সঙ্গে প্রেমের ভান করেন? আপনার এই ধরনের কাজ দেখাবে, আপনি আপনার সন্তানদের যে-সমস্ত নৈতিক মূল্যবোধ সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছেন, সেগুলোকে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না—বাইবেলের নীতি: রোমীয় ২:২১.

ইতিবাচক কথা বলুন। যৌনসম্পর্কের বিষয়টা ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা দান আর এটা উপযুক্ত সময়ে—বিয়ের পর—প্রচুর আনন্দ নিয়ে আসে। (হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯) সন্তানদের বলুন, একসময় সে-ও এই দান উপভোগ করতে পারবে। আর সেই সময় সে কোনোরকম মনোদুঃখ ও দুশ্চিন্তা বোধ করবে না, যে-বিষয়গুলো সাধারণত বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক করার ফলে লোকেরা ভোগ করে থাকে।—১ তীমথিয় ১:১৮, ১৯. ◼ (g16-E No. 5)