পরিবারের জন্য সাহায্য | অল্পবয়সিরা
যেভাবে পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
-
তোমার বাবার চাকরির কারণে তোমাদের পরিবারকে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে।
-
তোমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে।
-
তোমার দিদি বিয়ে করছে অথবা তোমার দাদা বিয়ে করে অন্য জায়গায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ধরনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে তুমি কতটা ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পার?
যে-গাছ প্রচণ্ড বাতাস বয়ে যাওয়ার সময় নুইয়ে পড়তে পারে, সেটা সাধারণত প্রবল ঝড়ের মধ্যে টিকে থাকে। সেই গাছের মতো তুমিও এমন পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শিখতে পার, যেগুলোর উপর তোমার সামান্য নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বা কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। কিন্তু, কীভাবে তুমি মানিয়ে নেওয়া শিখতে পার, সেটা নিয়ে আলোচনা করার আগে পরিবর্তন সম্বন্ধে এমন কয়েকটা বিষয় বিবেচনা করো, যেগুলো তোমার জানা উচিত।
তোমার যা জানা উচিত
পরিবর্তন আসবেই। বাইবেল মানুষের বিষয়ে এক মৌলিক সত্য তুলে ধরে: ‘সকলের প্রতি দৈব’ বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। (উপদেশক ৯:১১) এক দিন আগে হোক বা পরে হোক, তোমাকেও এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। অবশ্য, সমস্ত অপ্রত্যাশিত ঘটনাই যে খারাপ, এমন নয়। আর কিছু পরিবর্তনকে প্রথমে খারাপ বলে মনে হলেও, পরে তা প্রচুর উপকার নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু, যেহেতু অধিকাংশ লোক রুটিনমাফিক চলায় অভ্যস্ত, তাই যখন পরিবর্তন আসে, হোক তা ভালো বা খারাপ, তখন সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
বিশেষভাবে বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে-মেয়েদের কাছে পরিবর্তনকে চাপপূর্ণ বলে মনে হতে পারে। কেন? অ্যালেক্স নামে এক যুবক বলেন, “সেই সময়টাতে ইতিমধ্যেই শরীরের ভিতরে নানা পরিবর্তন হতে থাকে,” আর “বাইরের পরিবর্তন সেই চাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়।” *
আরেকটা কারণ হল: প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা যখন পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়, তখন তারা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বুঝতে পারে যে, অতীতে একইরকম সমস্যার সঙ্গে তারা কীভাবে মোকাবিলা করেছে। কিন্তু, অল্পবয়সিদের সাধারণত এইরকম অভিজ্ঞতা থাকে না।
তুমি মানিয়ে নেওয়া শিখতে পার। দৃঢ় মনোবল হচ্ছে এমন ক্ষমতা, যা একজন ব্যক্তিকে দুর্দশার সময় টিকে থাকতে বা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। দৃঢ় মনোবল রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি যে কেবল নতুন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে এমন নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি সম্ভাব্য বাধা বুঝতে পেরে সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করার সুযোগ খোঁজেন। দৃঢ় মনোবল রয়েছে এমন কিশোর-কিশোরীরা যখন চাপ অনুভব করে, তখন তারা সহজেই ড্রাগ নেয় না বা মদ্য-জাতীয় পানীয় গ্রহণ করে না।
তুমি যা করতে পার
বাস্তবতাকে মেনে নাও। কোনো সন্দেহ নেই, তুমি চাও তোমার জীবনের উপর তোমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকুক কিন্তু, এটা সম্ভব নয়। বন্ধুবান্ধবরা দূরে চলে যাবে কিংবা বিয়ে করবে; ভাই-বোনেরা বড়ো হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে; পরিস্থিতির কারণে তোমার পরিবার অন্য জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হবে আর এর ফলে বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত ব্যক্তিদের ছেড়ে যেতে হবে। তাই, নেতিবাচক চিন্তাধারার দ্বারা ভারগ্রস্ত না হয়ে বরং বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই উত্তম।—বাইবেলের নীতি: উপদেশক ৭:১০.
ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ দাও। অতীতের দিকে মনোযোগ দেওয়া, একটা গাড়ি চালানোর সময় আয়না দিয়ে পিছনে তাকিয়ে থাকার মতো। মাঝে মাঝে পিছনে তাকানো উপকারজনক কিন্তু তোমাকে আসলে সামনের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে হবে। পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করো। (হিতোপদেশ ৪:২৫) উদাহরণ স্বরূপ, পরের মাসের বা পরবর্তী ছয় মাসের জন্য তুমি কোন লক্ষ স্থাপন করতে পার?
ইতিবাচক বিষয়ের উপর মনোযোগ দাও। লরা নামে একজন যুবতী বলেন, ‘দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে আমাদের মনোভাব যুক্ত। তুমি যে-পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, সেটার কিছু ইতিবাচক দিক খোঁজার চেষ্টা করো।’ তুমি কি তোমার নতুন পরিস্থিতি থেকে অন্তত একটা উপকার খুঁজে বের করতে পার?—বাইবেলের নীতি: উপদেশক ৬:৯.
ভিক্টোরিয়া নামে একজন যুবতী বলেন যে, তিনি যখন কিশোরবয়সি ছিলেন, তখন তার সমস্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সেই সময় নিজেকে খুব একা বলে মনে হতো আর আমি ভাবতাম, সব কিছু যদি আগের মতো হতো! কিন্তু, অতীতের দিকে তাকালে এখন আমি বুঝতে পারি যে, সেই সময়ই আসলে আমি বড়ো হতে শুরু করেছিলাম। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, বড়ো হওয়ার জন্য পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ছাড়া, সেই সময়টাতে আমি আমার চারপাশে নতুন নতুন বন্ধুদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখতে শুরু করেছিলাম।’—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ২৭:১০.
অতীতের দিকে মনোযোগ দেওয়া, একটা গাড়ি চালানোর সময় আয়না দিয়ে পিছনে তাকিয়ে থাকার মতো
অন্যদের সাহায্য করো। বাইবেল বলে: “প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ।” (ফিলিপীয় ২:৪) তোমার প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা উত্তম প্রতিষেধক হল, অন্যদেরকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করা। ১৭ বছর বয়সি অ্যানা বলে: “বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি উপলব্ধি করতে পারছি যে, আমার মতো একইরকম সমস্যার—কিংবা আরও গুরুতর কোনো সমস্যার—মুখোমুখি হচ্ছে, এমন কাউকে সাহায্য করা সত্যিই আনন্দ নিয়ে আসে!” ▪ (g16-E No. 4)
^ অনু. 11 এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।