সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পৃথিবী কি রক্ষা পাবে?

বনভূমি

বনভূমি

বনভূমিকে বিজ্ঞানীরা “ফুসফুসের” সঙ্গে তুলনা করেন, যেটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন। কেন? কারণ ফুসফুসের মতো গাছপালাও বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। এরা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে নেয়, যেটা আমাদের পক্ষে ক্ষতিকারক। এ ছাড়া, এরা বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে, যেটা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। পৃথিবীর স্থলভূমিতে যত গাছপালা এবং পশুপাখি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বনভূমিতে বসবাস করে। বনভূমি ছাড়া আমরা কোনোভাবেই বেঁচে থাকতে পারি না।

যে-কারণে বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

প্রত্যেক বছর কোটি কোটি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে আর তা বিশেষ করে, চাষবাসের জন্য। গত ৭৫ বছরে পৃথিবীর চিরহরিৎ বনভূমির প্রায় অর্ধেক বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

যখন কোনো বনভূমিকে ধ্বংস করা হয়, তখন এর মধ্যে থাকা গাছপালা এবং পশুপাখিও বিনষ্ট হয়ে যায়।

আমাদের পৃথিবী—বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে

এমনটা দেখা গিয়েছে যে, বেশিরভাগ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এমন বনভূমিতেও আবার গাছপালা বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি পরিবেশবীদরা এটা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন, কত দ্রুত সেখানকার গাছপালা আপনা-আপনি বৃদ্ধি পেতে থাকে আর পুনরায় ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন:

  • গবেষকরা লক্ষ করেছেন, যখন চাষবাসের জন্য পরিষ্কার করা বনভূমিতে আর চাষবাস করা হয় না, তখন কী হয়। তারা আমেরিকা এবং পূর্ব আফ্রিকার এইরকম ২২০০-টা জায়গা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছে। তারা দেখেছে, ১০ বছরের মধ্যে মাটি আবার এমন অবস্থায় ফিরে যেতে পারে, যেখানে পরবর্তী সময়ে ঘন জঙ্গল হওয়া সম্ভব।

  • সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত একটা গবেষণা জানায়, বিশেষজ্ঞরা এমনটা অনুমান করেছেন যে, প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এই ধরনের অঞ্চল পুনরায় ঘন জঙ্গলে পরিণত হতে পারে।

  • সম্প্রতি ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা এটা জানার জন্য একটা গবেষণা করে দেখেছে যে, কোন এলাকায় বনজঙ্গল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সেটা কি এমন এলাকা, যেখানে মানুষ নিজেদের প্রচেষ্টায় গাছপালার লাগিয়ে বনভূমি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে না কি যেখানে বনভূমি কেটে ফেলার পর মানুষের হাত আর পড়ে না।

  • এই গবেষণায় গবেষকরা যা জানতে পেরেছেন, সেই সম্বন্ধে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকা বলে, “তারা এটা জেনে আনন্দিত যে, গাছ লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই।” মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই এই সমস্ত এলাকায় পুনরায় “ঘন জঙ্গল বৃদ্ধি পেয়েছে,” যদিও সেখানে কোনোরকম গাছপালা লাগানো হয়নি।

সমস্যা সমাধান করার জন্য মানুষ যা করছে

পৃথিবীব্যাপী প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ইতিমধ্যে যে-বনভূমি রয়েছে, সেগুলোকে সংরক্ষণ করা হয় এবং যে-বনভূমি কেটে ফেলা হয়েছে, সেগুলো পুনরায় ঠিক করা যায়। ইউনাইটেড নেশন্‌স জানায়, এর ফলে বিগত ২৫ বছরে “বনভূমি কেটে ফেলার কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

কিন্তু, বনভূমি সংরক্ষণ করার এই প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়, আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ নামক সংগঠনের একটা রিপোর্ট অনুযায়ী, “গত পাঁচ বছরে উষ্ণ অঞ্চলের বনভূমি বিনষ্ট হওয়ার হার একটুও কমেনি।”

বেআইনিভাবে গাছ কাটা কোটি কোটি টাকার ব্যাবসা আর এই ব্যাবসায়িক লাভের কারণে বনভূমি ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

বন-সংরক্ষণ দল বনভূমিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অল্প সংখ্যক পুরোনো গাছ কাটছে এবং সেই জায়গায় নতুন গাছ লাগাচ্ছে

আশার এক আলো—বাইবেল যা বলে

“সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সর্ব্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ, . . . উৎপন্ন করিলেন।”—আদিপুস্তক ২:৯.

সমস্ত বনভূমির সৃষ্টিকর্তা এমনভাবে তা সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমরা ক্রমাগত সেগুলো থেকে উপকার লাভ করতে পারি। তিনি আমাদের বনভূমি এবং এর মধ্যে থাকা গাছপালা ও পশুপাখির যত্ন নিতে এবং তা সুরক্ষিত রাখতে চান।

বাইবেল জানায়, ঈশ্বর আর পৃথিবীর সম্পদ নষ্ট হতে দেবেন না। কারণ তিনি চান, আমাদের পৃথিবী ও এর মধ্যে থাকা জীবন যেন রক্ষা পায়। পৃষ্ঠা ১৫-তে “ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন আমাদের পৃথিবী রক্ষা পাবে,” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।