সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

Georgette Douwma/Stone via Getty Images

পৃথিবী কি রক্ষা পাবে?

সমুদ্র

সমুদ্র

সমুদ্র থেকে আমরা শুধুমাত্র খাদ্যই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ওষুধপত্র তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোও পেয়ে থাকি। পৃথিবীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণ, আমরা সমুদ্র থেকে পাই এবং মানুষের কাজের ফলে উৎপন্ন হওয়া কার্বন ডাইঅক্সাইড সমুদ্র শোষণ করে নেয়। এ ছাড়া, সমুদ্র আমাদের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

যে-কারণে সমুদ্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে প্রবাল-প্রাচীর, শামুক গোত্রীয় প্রাণী এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমস্ত প্রবাল-প্রাচীরের উপর নির্ভর করে মোট সামুদ্রিক প্রাণীর প্রায় ২৫ শতাংশ বেঁচে রয়েছে আর বিজ্ঞানীদের মতে আগামী ৩০ বছরে এদের সবারই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা অনুমান করে জানিয়েছে যে, প্রায় ৯০ শতাংশ সামুদ্রিক পাখি তাদের খাদ্যের সঙ্গে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলেছে এবং সমুদ্রে যে-প্লাস্টিক ফেলা হয়, সেই কারণে প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে।

২০২২ সালে ইউনাইটেড নেশন্‌স-এর মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আমরা ঠিকমতো সমুদ্রের দেখাশোনা করছি না। আমার মতে, আমরা বর্তমানে যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি, সেটাকে বলা যায়, ‘সমুদ্রের জরুরি অবস্থা।’”

আমাদের পৃথিবী—বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে

সমুদ্র এবং এর মধ্যে থাকা জীবনকে এক অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ যদি অতিরিক্ত দূষণ না করে, তা হলে সামুদ্রিক প্রাণীরা নিজেরাই নিজেদের পরিষ্কার রাখতে পারে এবং সুস্থ থাকতে পারে। ক্রমবিকাশ: এক প্রজন্মের মধ্যেই আবহাওয়া সংকট শেষ নামক ইংরেজি বই ব্যাখ্যা করে, “মানুষ যদি সমুদ্রকে দূষিত না করে, তা হলে সমুদ্র নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী আপনা-আপনি দূষণমুক্ত হয়।” কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন:

  • ফাইটোপ্লাংক্‌টন নামক অনুজীবির এমন ক্ষমতা রয়েছে যে, তারা কার্বন ডাইঅক্সাইডকে শোষণ করে জমা রাখতে পারে। এই কার্বন ডাইঅক্সাইডকেই বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। পৃথিবীতে থাকা গাছপালা, ঘাস এবং অন্যান্য উদ্ভিদ একত্রিতভাবে যত পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে, সেই একই পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা এই ফাইটোপ্লাংকটনের রয়েছে।

  • অণুজীবিরা মৃত মাছের দেহের বিভিন্ন অংশ খেয়ে বেঁচে থাকে। এমনটা না হলে, এই বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রকে দূষিত করত। এই অণুজীবিদের খেয়ে আবার অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীরা বেঁচে থাকে। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট-এর ওসান নামক ওয়েবসাইট জানায়, “এই সহযোগিতা করার ফলে সমুদ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।”

  • সমুদ্রের জল সাধারণত আম্লিক অর্থাৎ অ্যাসিডিক হয়। কিন্তু প্রবাল-গোত্রীয় প্রাণী এবং অন্যান্য অনেক প্রাণী ক্ষারীয় অর্থাৎ অ্যালকালাইন জলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে। অনেক সামুদ্রিক প্রাণী তাদের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে জলকে অ্যাসিড মুক্ত করে ক্ষারীয় জলে পরিণত করে।

সমস্যা সমাধান করার জন্য মানুষ যা করছে

পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন ব্যাগ ও জলের বোতল সমুদ্রে প্লাস্টিকের মতো বর্জ্য পদার্থ ফেলা কমাতে সাহায্য করে

বর্জ্য পদার্থ যদি সমুদ্রে ফেলা না হয়, তা হলে সেগুলো পরিষ্কার করারও প্রয়োজন হয় না। সেইজন্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের এমন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে বারণ করে, যেগুলো এক বার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। এর পরিবর্তে, তারা আমাদের পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন ব্যাগ, বোতল এবং অন্যান্য পাত্র ব্যবহার করতে বলে।

কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়, আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি এক বছরে একটা পরিবেশ সংস্থা ১১২টা দেশের সমুদ্রের তীর থেকে ৮৩০০ টন আবর্জনা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু, প্রতি বছর এর চেয়ে আরও অনেক বেশি আবর্জনা সমুদ্রে ফেলা হয়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নামক পত্রিকা জানায়, “সমুদ্রের জল যে-হারে আম্লিক হচ্ছে, তা সম্ভবত আর ঠিক করা যাবে না।” সমুদ্রে থাকা প্রাণীদের এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে তারা নিজেরাই সমুদ্রকে পরিষ্কার রাখতে পারে। কিন্তু মানুষ যেভাবে জ্বালানি ব্যবহার করছে, তাতে সামুদ্রিক প্রাণীদের এই ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আশার এক আলো—বাইবেল যা বলে

“পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ। ঐ যে সমুদ্র, বৃহৎ ও চারিদিকে বিস্তীর্ণ, তথায় জঙ্গমেরা থাকে, তাহারা অগণ্য; ক্ষুদ্র ও প্রকাণ্ড কত জীবজন্তু থাকে।”—গীতসংহিতা ১০৪:২৪, ২৫.

আমাদের সৃষ্টিকর্তা সমুদ্র আর সেইসঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীদেরও সৃষ্টি করেছেন, যারা সমুদ্রকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে। বিবেচনা করুন: তিনি যদি সমুদ্র ও এর সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণী সম্বন্ধে এত কিছু জানেন, তা হলে তিনি কি সমুদ্রকে ক্ষতির হাত থেকে পুনরায় রক্ষা করার জন্য কিছু করবেন না? পৃষ্ঠা ১৫-তে “ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন আমাদের পৃথিবী রক্ষা পাবে,” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।