সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নিখিলবিশ্ব থেকে আমরা যা জানতে পারি

নিখিলবিশ্ব থেকে আমরা যা জানতে পারি

নিখিলবিশ্ব নিয়ে বিজ্ঞানীরা যতই গবেষণা করছেন, ততই অবাক হয়ে যাচ্ছেন। আর গবেষণার জন্য তারা সর্বাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করছেন। তারা কী কী খুঁজে পেয়েছেন?

পুরো নিখিলবিশ্ব সুসংগঠিত। অ্যাস্ট্রোনমি নামে একটা ম্যাগাজিনের প্রবন্ধে এভাবে বলা হয়েছিল: “গ্যালাক্সিগুলো এলোমেলোভাবে আকাশে এদিক-ওদিক ছড়ানো নেই বরং এগুলো মাকড়সার জালের মতো এক নকশায় সাজানো রয়েছে।” এটা কীভাবে সম্ভব? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটার উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এক অদৃশ্য বস্তুর মধ্যে, যেটাকে বলা হয় ডার্ক ম্যাটার। ডার্ক ম্যাটার হল “এক ধরনের অদৃশ্য কাঠামো, যেটার উপর . . . সমস্ত গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সি ক্লাস্টার এবং গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টার সাজানো রয়েছে এবং যে-কাঠামো এগুলোকে তাদের নিজের নিজের অবস্থানে ধরে রেখেছে।”

নিখিলবিশ্ব কীভাবে এতটা সুসংগঠিত হয়েছে? এটা কি কোনো পরিকল্পনা ছাড়া আপনা-আপনিই এমন অবস্থায় এসেছে? জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যালেন স্যান্ডেজের মন্তব্য লক্ষ করুন, যাকে “বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন।

তিনি বলেছিলেন, “এক বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে যে এত সুশৃঙ্খল অবস্থা আসতে পারে, এটা আমার কাছে অসম্ভব বলে মনে হয়। কোনো এক উৎস নিশ্চয়ই রয়েছে, যা সবকিছু সুসংগঠিত করেছে।”

বেঁচে থাকার জন্য নিখিলবিশ্ব একেবারে সঠিক অবস্থায় রয়েছে। যে-বল বা শক্তি সূর্যকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ প্রদান করতে সাহায্য করে, তা নিয়ে চিন্তা করুন। বিজ্ঞানের ভাষায় এই বল হল দুর্বল নিউক্লিয় বল (উইক ফোর্স)। এই বলের মাত্রা যদি একটু কম হত, তা হলে সূর্য কখনোই গঠিত হত না। আবার এটা যদি প্রয়োজনের চেয়ে কিছুটা বেশি হত, তা হলে সূর্য অনেক আগেই পুড়তে পুড়তে শেষ হয়ে যেত।

নিখিলবিশ্বে দুর্বল নিউক্লিয় বল ছাড়া আরও অনেক বল রয়েছে, যেগুলো জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য একেবারে সঠিক মাত্রায় রয়েছে। এই বিষয়ে অনিল অনন্তস্বামী, যিনি বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন, তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে যদি কোনো একটার মাত্রা একটু কম-বেশি হত, তা হলে “গ্রহ-নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি, কোনো কিছুই গঠিত হত না। আর জীবনের অস্তিত্বও সম্ভব হত না।”

নিখিলবিশ্বে আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম বাসস্থান রয়েছে। এই বাসস্থান হল, পৃথিবী। পৃথিবীতে একেবারে উপযুক্ত বায়ুমণ্ডল এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল রয়েছে। এ ছাড়া, পৃথিবীকে এর অবস্থানে ধরে রাখার জন্য একেবারে সঠিক আকারের একটা চাঁদ রয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নামক একটা ম্যাগাজিন বলে, পৃথিবী হল বিজ্ঞানীদের “নাগালে থাকা একমাত্র উপযুক্ত স্থান, যেখানে ভূতত্ত্ব, পরিবেশ ও জীবজগৎ একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হওয়ায় এই আজব শিলা [পৃথিবী] মানুষের থাকার যোগ্য হয়ে উঠেছে।” *

এবার আমাদের সৌরজগতের কথা চিন্তা করুন। একজন লেখকের মতে এই সৌরজগৎ আমাদের গ্যালাক্সিতে থাকা “অন্যান্য সমস্ত নক্ষত্র থেকে অনেক দূরে” অবস্থিত। কিন্তু, এই সঠিক দূরত্বের কারণেই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবী যদি অন্যান্য নক্ষত্রের কাছাকাছি, যেমন আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে কিংবা এর ধারের দিকে থাকত, তা হলে বিকিরণের কারণে আমাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যেত। এর পরিবর্তে, পৃথিবী গ্যালাক্সির মধ্যে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য এলাকায় অবস্থিত, যেটাকে বিজ্ঞানীরা “গ্যালাকটিক হ্যাভিটেবল জোন” বলেন।

পদার্থবিদ পল ডেভিস নিখিলবিশ্ব এবং এর বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এই মন্তব্য করেন: ‘আমি এটা বিশ্বাস করতে পারব না যে, নিখিলবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব হচ্ছে ভাগ্যের লীলাখেলা, ইতিহাসের পাতায় ঘটা হঠাৎ এক ঘটনা। . . . আমাদের এখানে থাকার কথা ছিল বলেই আমরা এখানে আছি।’ এই বিজ্ঞানী এটা শেখান না যে, ঈশ্বরই নিখিলবিশ্ব এবং মানুষ সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তার মন্তব্য থেকে আপনার কী মনে হয়? নিখিলবিশ্ব এবং পৃথিবী দেখে মনে হয়, এগুলো ডিজাইন করা। এমনটা মনে হওয়ার কারণ কি এই যে, এগুলো সত্যিই কেউ ডিজাইন করেছেন?

^ অনু. 8 ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার এই প্রবন্ধে এটা বলা হয়নি যে, ঈশ্বর পৃথিবী ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন বরং এখানে বলা হয়েছে যে, মানবজাতি থাকার জন্য পৃথিবী কতটা উপযুক্ত স্থান।