অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে আশার জীবনে
অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে আশার জীবনে
কস্তা কোলাপিস দ্বারা কথিত
জেলের নোংরা চার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে বেশ মোটা অংকের টাকা করে নেওয়ার জন্য আমাকে একটা না একটা রাস্তা খুঁজে বের করতেই হবে, যাতে আমি অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে এক নতুন জীবন শুরু করতে পারি।
হতাশ ও মনমরা হয়ে জেলখানায় বসে থাকতে থাকতে আমার গত বছরের কথাগুলো মনে পড়ছিল, যে সময় আমার ১১ জন বন্ধু মারা গিয়েছিল। একজনকে খুনের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, আরেকজনের খুনের মামলা চলছিল কিন্তু সে আত্মহত্যা করে, তিনজন খুব বেশি মাদকদ্রব্য নেওয়ায় মারা যায়, দুজনকে রাস্তায় গণ্ডগোল করার জন্য পিটিয়ে মারা হয়েছিল এবং চারজন মোটর-গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল। এছাড়াও অন্য বন্ধুরা গুরুতর অপরাধের জন্য অন্য জেলে ছিল।
তাই জেলের অন্ধকার ঘরের মধ্যে বসে আমি মরিয়া হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম যে তিনি যেই হোন না কেন, আমাকে যেন এই অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা দেখান। কিছুদিন পরে আমি আমার প্রার্থনার উত্তর পেয়েছিলাম। এরই মধ্যে আমি হামলা করার দোষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পেরেছিলাম কারণ একবার আমি কারোর শারীরিক ক্ষতি করার জন্য হামলা করেছিলাম। আদালত আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের অনুমতি দিয়েছিল আর তার ফলে আমার শাস্তি অনেক কমে যায়। কিন্তু তার আগে আমাকে বলতে
দিন যে কী করে আমি এইরকম বিপজ্জনক অবস্থায় পড়েছিলাম।১৯৪৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় আমার জন্ম হয় এবং আমি সেখানেই বড় হই। আমার ছোটবেলা একেবারেই ভাল কাটেনি ও আমাদের ঘরের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ আর তার কারণ ছিল আমার বাবা। বাবা ছিল প্রচণ্ড বদরাগী আর মদ খাওয়ার পর তা আরও বেড়ে যেত। জুয়া খেলাও তার নিত্যকার ব্যাপার ছিল এবং কথায় কথায় তার মেজাজ বদলে যাওয়ায় আমরা গালিগালাজ ও মারধোর থেকে রেহাই পেতাম না। আর মাকে সবচেয়ে বেশি সহ্য করতে হতো। এই নরক থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমি রাস্তাকেই আমার ঘর করে নিই।
অপরাধ জগতে পা রাখা
এর ফলে অল্প বয়সেই আমি অপরাধ জগতে পা রেখেছিলাম। উদাহরণ হিসেবে আমার বয়স যখন আট বছর ছিল তখন আমি দুটো শিক্ষা পেয়েছিলাম। প্রথমটা ছিল যখন আমি প্রতিবেশীর ঘর থেকে একটা খেলনা চুরি করে ধরা পড়েছিলাম। বাবা আমাকে খুব মেরেছিল। আমার মনে হয় এখনও যেন আমি তার হুংকার শুনতে পাই: “আর কখনও যদি আমি তোর হাতে চুরি করা কোন জিনিস দেখতে পাই, তাহলে আমি তোকে মেরে ফেলব!” সেদিন থেকে আমি ঠিক করেছিলাম যে আমি চুরি করা ছাড়ব না কিন্তু চুরি করে আমি আর কখনও ধরা পড়ব না। আমি মনে মনে ঠিক করেছিলাম ‘পরের বার চুরি করে আমি সেটাকে লুকিয়ে রাখব যেন কেউ দেখে না ফেলে।’
দ্বিতীয় শিক্ষা আমি সেইসময় পেয়েছিলাম যখন আমি খুবই ছোট ছিলাম এবং অপরাধ জগতের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। স্কুলে বাইবেল ক্লাসে আমাদের শিক্ষিকা শিখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের একটা ব্যক্তিগত নাম আছে। তিনি আমাদের অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন ‘ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা এবং তিনি তোমাদের যে কোন প্রার্থনাই শুনবেন যদি তোমরা তাঁর পুত্র যীশুর নামে কিছু চেয়ে প্রার্থনা কর।’ যদিও আমি ছোট ছিলাম কিন্তু এই কথাগুলো আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু তবুও তা আমার অপরাধ জীবনে চলে যাওয়াকে বাধা দিতে পারেনি। হাই স্কুলে যাওয়ার আগেই আমি দোকান থেকে চুরি করা এবং রাতে সিঁদ কেটে চুরি করায় পটু হয়ে উঠি। আমার স্কুলের বন্ধুরাও সব খারাপ ছিল কারণ তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন অপরাধের জন্য ইতিমধ্যেই সংশোধনমূলক স্কুলে কাটিয়েছিল।
কয়েক বছর পর অপরাধই আমার জীবন হয়ে উঠে। এমনকি ২০ বছর বয়স হওয়ার আগেই আমি অসংখ্য ছিনতাই, সিঁদ কেটে চুরি, গাড়ি চুরি ও মার-পিট করার মতো অপরাধ করেছিলাম। টেকনিক্যাল হাই স্কুলের প্রথম বছরে আমি বিলিয়ার্ড খেলার ঘরে এবং মদের দোকানেই পড়ে থাকতাম আর তার ফলে আমি দালাল, পতিতা ও অপরাধীদের খবর পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতাম।
আমি সবসময় সেইসব অপরাধীদের সঙ্গে মেলামেশা করতাম যাদের মধ্যে মন বলে কিছু ছিল না আর যারা তাদের সঙ্গে বেইমানী করত তাদেরকে পঙ্গু করে দিতে তাদের একটুও বাধত না। তাই আমি শিখেছিলাম যে সবসময় আমার মুখ বন্ধ রাখা দরকার এবং আমার কাজের জন্য কখনও বড়াই করা অথবা টাকা পয়সার গরম দেখানোরও দরকার নেই। কারণ তা করলে অপরাধ জানাজানি হয়ে যাবে যাতে দুটো বিপদ হতে পারে। এক পুলিশের নজরে পড়ে যাওয়া এবং নানা রকম প্রশ্নের মুখে পড়া। আর সবচেয়ে বড় বিপদটা হল যে অন্য অপরাধীরা এর ভাগ চাইতে চলে আসবে।
এত সতর্ক হওয়া সত্ত্বেও, পুলিশ সন্দেহ করত যে আমি বেআইনী কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু আমি সবসময় খেয়াল রাখতাম যেন আমার কাছে কখনও কোন বেআইনী জিনিস পাওয়া না যায়, যাতে আমাকে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয়। একদিন পুলিশ হঠাৎ করে ভোর তিনটের সময় আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। দু-দুবার তারা আমাদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। তারা বৈদ্যুতিক কিছু জিনিসপাতি খুঁজছিল যা সেখানকার একটা দোকান থেকে চুরি হয়েছিল। তারা কিছুই পায়নি। আমার আঙ্গুলের ছাপ নেওয়ার জন্য আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু আমাকে দোষী করা হয়নি।
মাদকদ্রব্যের আড্ডায় গিয়ে পড়া
বার বছর বয়স থেকেই আমি মাদকদ্রব্য নিতে শুরু করি আর তা মনের ওপর প্রভাব ফেলত। এর ফলে আমার শরীর ভেঙে পড়তে থাকে আর কিছু কিছু সময় আমি খুব বেশি মাদকদ্রব্য নিয়ে ফেলতাম। কিছুদিন পর আমার এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় যার অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। আর এটা আমাকে নেশাকর দ্রব্যের ব্যাবসায়ী করে তুলেছিল আর তাড়াতাড়িই আমি বুঝেছিলাম যে অল্প
কয়েকজন মাদকদ্রব্য বিক্রয়কারীকে দেওয়া কম বিপদজনক কারণ আমি পর্দার পিছনে থাকতে পারব আর অন্যেরা বিপদের মুখোমুখি হবে।কিন্তু দুঃখের বিষয়ে যে আমার কিছু বন্ধুরা খুব বেশি মাদকদ্রব্য নেওয়ায় মারা গিয়েছিল বা নেশা করে গুরুতর অপরাধগুলো করত। আমার এক “বন্ধু” একজন বিখ্যাত ডাক্তারকে মেরে ফেলেছিল। আর এটা সারা দেশের খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল। সে আমার ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেয়েছিল কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু জানতামই না, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুলিশ আমার বাড়ির দরজায় এসেছিল। যদিও পুলিশ আসাটা নতুন কিছু ছিল না কারণ পুলিশ বিভিন্ন অপরাধ সম্বন্ধে জেরা করার জন্য আমার কাছে সবসময়ই যাওয়া আসা করত তা সে আমি সেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকি বা না থাকি।
কিন্তু একদিন আমি বোকার মতো একটা কাজ করে ফেলেছিলাম। পুরো সপ্তাহ ধরে আমি প্রচুর মাদকদ্রব্য নিয়েছিলাম ও প্রচুর মদ খেয়েছিলাম। ফলে দুজন লোকের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝি হওয়ায় আমি তাদের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করি ও তাদের প্রচণ্ড মারধোর করি। পরের দিন সকালে তারা আমাকে চিনে ফেলে আর প্রচণ্ড মারধোর করে হামলা করার অপরাধে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর এভাবে আমি জেলে যাই।
সোজা পথে চলার জন্য বড়লোক হওয়া দরকার
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমি এক ওষুধ কোম্পানিতে জিনিসপত্র দেখাশোনা করার জন্য একটা চাকরি খালি আছে বলে শুনতে পাই। আমি দরখাস্ত করি এবং মালিককে বুঝিয়ে দিই যে আমিই এই চাকরির জন্য ঠিক ব্যক্তি। আমার একজন বন্ধুর সুপারিশে যে এই কোম্পানিতেই কাজ করছিল, আমি কাজটা পেয়ে যাই। তখন আমি মনে মনে ভেবেছিলাম যে এটাই হল বড়লোক হওয়ার রাস্তা আর তারপর এই পয়সা নিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে আমি এক সুন্দর জীবন শুরু করব। তাই আমি যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ভালভাবে আমার কাজ শিখে নেওয়ার চেষ্টা করি ও রাত জেগে জেগে আমি ওষুধের নাম শিখি। আমি নিশ্চিত জানতাম যে এই রাস্তাই আমাকে নতুন জীবনে নিয়ে যাবে।
আমার পরিকল্পনা ছিল যে আমি উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করব আর আমার নিয়োগকারীর বিশ্বাস অর্জন করব। এরপর একদিন যখন আমি সুযোগ পাব তখন গুদামে ঢুকে এমন কিছু ওষুধ চুরি করব, কালো বাজারে যেগুলোর অনেক দাম আছে আর তারপর সেগুলো বিক্রি করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাব। আমার পরিকল্পনায় আমি এতটাই দৃঢ় ছিলাম যে কেউই আমাকে আমার স্বাধীনতায় ও নতুন জীবনে বাধা দিতে পারত না।
পরিকল্পনাকে কাজে লাগানোর সময় এসে গিয়েছিল। একদিন রাতে আমি সাবধানে গুদামের মধ্যে ঢুকে দেখি যে একটা শেলফে কয়েক লক্ষ ডলারের দামি ওষুধ রাখা আছে। আমি অপরাধ এবং হিংসায় ভরা জগৎ থেকে স্বাধীন এক জীবনের ছবিও দেখেছিলাম। কিন্তু সেই প্রথমবারের মতো আমার বিবেক আমাকে বাধা দিয়েছিল। কিন্তু বিবেক কেন এখন আমাকে বাধা দিতে লাগল যখন আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে বিবেক বলে আমার কখনও কিছু ছিল? আসুন আমি আপনাদের বলি যে সেদিন কেন এমন হয়েছিল।
এর কয়েক সপ্তাহ আগে আমি ম্যানেজারের সঙ্গে জীবনের মানে নিয়ে কথা বলছিলাম। তিনি কিছু একটা বলার পর আমি উত্তর দিয়েছিলাম যে সবচেয়ে শেষ উপায় হিসেবে একজন প্রার্থনা করতে পারে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন “কার কাছে?” আমি উত্তর দিই “ঈশ্বরের কাছে।” তিনি বলেন ‘কিন্তু ঈশ্বর তো অনেক আছে যাদের কাছে লোকেরা প্রার্থনা করে থাকে, আপনি কার কাছে প্রার্থনা করবেন?’ আমি বললাম “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে।” তিনি বলেন ‘ওহ্, তাঁর নাম কি?’ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম “আপনি কী বলতে চাইছেন?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন “আপনার, আমার এবং অন্য সকলের মতো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরেরও একটা ব্যক্তিগত নাম আছে।” কথাটা ঠিক কিন্তু আমি রেগে যাই। তাই আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করি: “ঈশ্বরের নাম তাহলে কী?” তিনি উত্তর দেন “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা!”
হঠাৎ আমার মনের পর্দায় অতীতের একটা ছবি ভেসে ওঠে আর সেটা ছিল আমার বয়স যখন আট বছর তখন আমাদের বাইবেল ক্লাসে আমার শিক্ষিকা আমাকে যা শিখিয়েছিলেন। ম্যানেজারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে আমার খুব ভাল লাগছিল। আমরা ঘন্টাখানেক আলোচনা করি। পরের দিন তিনি আমাকে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় বইটা দেন। * আমি সেই রাতেই বইটা পড়ে ফেলি এবং সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি যে আমি সত্য এবং প্রকৃত জীবন খুঁজে পেয়েছি। পরের দুই সপ্তা ধরে এই বিস্ময়কর নীল বইটা থেকে বিভিন্ন বিষয়ই আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তাই অন্ধকার এই নির্জন গুদাম ঘরে বসে আমার বিবেক আমাকে বলছিল যে ওষুধ চুরি করে বিক্রি করার পরিকল্পনা একেবারেই ভুল। আমি ঘরে ফিরে আসি এবং সেদিন আমি স্থির করি যে জীবনে আর কখনও আমি চুরি করব না।
পুরোপুরি বদলে যাওয়া
এর পরের দিন আমি ঘরে এসে বললাম যে আমি নতুন জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর বাইবেল থেকে আমি যে সত্য শিখছিলাম তা আমি তাদেরকে বলতে শুরু করি। আমার বাবা আমাকে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইলেন। কিন্তু আমার ভাই জন বাধা দেয় আর বাবাকে বলে: “এই প্রথমবার কস্তা এমন কাজ করছে যেটা অপরাধ নয় আর তুমি তাকে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইছ? আমি এই বিষয়ে আরও বেশি জানতে চাই।” জন যখন আমার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে চেয়েছিল আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই দিন থেকে যারা আমার কাছে মাদকদ্রব্য নেওয়ার জন্য আসত তাদেরকে আমি সত্য বই দিতাম! শীঘ্রই আমি এই বই দিয়ে ১১টা বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করি।
এরপর আমি জানতে পারি যে আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার নিজে যিহোবার সাক্ষি নন। তার স্ত্রী প্রায় ১৮ বছর ধরে যিহোবার সাক্ষি কিন্তু তিনি “সত্য শেখার জন্য সময় করে উঠতে পারেননি।” তাই তিনি একজন অভিজ্ঞ সাক্ষিকে আমার সঙ্গে অধ্যয়ন করার ব্যবস্থা করে দেন। অধ্যয়ন আমাকে দেখিয়েছিল যে জীবনের অন্যান্য সমস্যাগুলো থেকে পালিয়ে না গিয়ে সেগুলোর মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন। আর আমাকে জগতের পথ থেকে মুক্ত করতে ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের খুব বেশি সময় লাগেনি।—যোহন ৮:৩২.
কিন্তু হঠাৎই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল তাতে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমার জীবনকে একেবারে বদলে ফেলতে হয়েছিল আর আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম যে বাইবেলের শিক্ষা মেনে চলতে চাওয়া খুব কঠিন কারণ তা করতে গেলে সবসময় আমাকে অন্যায় করার ইচ্ছা ও শুভবোধের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। অন্যদিকে আমি এও বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি যদি অপরাধ জগতেই থেকে যাই, তাহলে আমার পরিণাম হতো হয় মৃত্যু নয়তো বা জীবনের বেশি ভাগ সময়ই জেলে কাটানো। তাই অনেক ভেবে ও অন্তর থেকে প্রার্থনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে আমি সত্যের পথে চলব। ছয় মাস পর ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল আমি যিহোবার কাছে আমার উৎসর্গীকরণের চিহ্ন হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিই।
সঠিক পথে চলার আশীর্বাদ
খারাপ পথ ছেড়ে দেওয়ার পর আমি অনেক আশীর্বাদ পেয়েছি। পিছন ফিরে তাকিয়ে কখনও কখনও এই কথা ভেবে আমার মন আবেগে ভরে ওঠে। প্রথম প্রথম আমার অসুবিধাগুলো মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে আমি যে ১১ জনের সঙ্গে অধ্যয়ন শুরু করেছিলাম তাদের মধ্যে পাঁচজন এখনও সত্যের পথে চলছেন। মাও বাইবেলের সত্য শিখে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন ও ১৯৯১ সালে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবার সেবা করেন। আমার দুই ভাই যিহোবার কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে এবং এখন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছে। আমিও আমার এক মাসিকে সত্য শেখাতে পেরেছি এবং তিনি ১৫ বছর ধরে পূর্ণ-সময়ের প্রচারিকা হিসেবে কাজ করছেন।
যে ওষুধ কোম্পানিতে আমি কাজ করতাম সেখানকার ম্যানেজার আমার পরিবর্তন দেখে খুবই উৎসাহিত হয়েছিলেন এবং বাইবেলের সত্যকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করেছিলেন। আমার বাপ্তিস্মের এক বছর পরে তিনি ঈশ্বরের কাছে তার উৎসর্গীকরণের চিহ্ন হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নেন। পরে তিনি প্রিটোরিয়ায় যিহোবার সাক্ষিদের একটা মণ্ডলীতে অনেক বছর ধরে প্রাচীন হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
আমি এখন একজন উৎসর্গীকৃত বোনকে বিয়ে করেছি। লিউনি এবং আমি ১৯৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাই। সেখানে আমাদের দুই ছেলে এলাইশা এবং পল জন্মগ্রহণ করে। আমার পরিবার আমাকে সবসময় উৎসাহ জুগিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী কেনবেরার একটা মণ্ডলীতে আমি প্রাচীন হিসেবে কাজ করার আশীর্বাদ পেয়েছি। প্রতিটা দিন আমি যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ থাকি কারণ তিনি আমাকে অপরাধ জীবন থেকে বের করে এনেছেন যে জীবনে কোন উদ্দেশ্য ছিল না, যা শুধুই হতাশা এবং মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেত। এর চেয়েও বেশি হল যে তিনি আমাকে ও আমার প্রিয়জনদের সত্যিকারের আশা দিয়েছেন যার ফলে আমাদের জীবন উদ্দেশ্যময় হয়ে উঠেছে।
[পাদটীকাগুলো]
^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্রাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত।
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমার বয়স যখন ১২ বছর
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
এখন আমার স্ত্রী এবং দুই ছেলের সঙ্গে