আরও উন্নত জীবনের জন্য এক বড় পরিবর্তন
আরও উন্নত জীবনের জন্য এক বড় পরিবর্তন
“১৯০০ সালে বিশ্ব মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের সময়কালে প্রবেশ করার মুখে দাঁড়িয়েছিল। পুরনো ব্যবস্থা নতুন ব্যবস্থার জন্য পথ ছেড়ে দিয়েছিল।”—দ্যা টাইমস আ্যটলাস অফ দ্যা টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, “বিশ্ব প্রচণ্ড উচ্ছৃঙ্খল এবং হিংস্র এক যুগে পা রেখেছিল,” ওপরে উক্ত আ্যটলাস বলে। এই শতাব্দীতে অন্য যে কোন শতাব্দীর চেয়ে অনেক বেশি যুদ্ধ হওয়ার ছিল, যেখানে ১০ কোটিরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছিল।
আগের চেয়ে এই শতাব্দীর যুদ্ধগুলো অনেক বেশি প্রকাশিত বাক্য ৬:৩, ৪; মথি ২৪:৩-৭.
বেসামরিক লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যারা প্রাণ হারিয়েছিল তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ ছিল সাধারণ লোক। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিছু দেশে সৈন্যদের চেয়ে সাধারণ লোকেরাই বেশি প্রাণ হারিয়েছিল। তখন থেকে যুদ্ধগুলোতে যে লাখ লাখ লোকেরা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল সাধারণ লোক। এই হিংস্রতা “লোহিতবর্ণ” অশ্বের আরোহী সম্বন্ধে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীকে পূর্ণ করেছিল, যাকে “ক্ষমতা দত্ত হইল, যেন সে পৃথিবী হইতে শান্তি অপহরণ করে।”—মূল্যবোধে পরিবর্তন
বিংশ শতাব্দী ২ তীমথিয় ৩:১-৫ পদের ভবিষ্যদ্বাণীকেও পূর্ণ করেছে, যা বলে: “শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে।”
সবসময়ই অসিদ্ধ মানুষেরা তাদের আচার-ব্যবহারে কিছুটা হলেও এই খারাপ গুণগুলো দেখিয়েছে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এই খারাপ গুণগুলো ভীষণ আকার নিয়েছে এবং জন-জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। ওপরের এই খারাপ গুণগুলো যে সব লোকেদের আচার-ব্যবহারে প্রকাশ পেত, তাদের একসময় একেবারে দুষ্ট মনে না করা হলেও সমাজবিরোধী বলে মনে করা হতো। আর আজকে এমনকি ‘ভক্তিপূর্ণ’ লোকেরাও দিন দিন এইরকম আচার-ব্যবহারকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন।
একসময় ধর্মপ্রাণ লোকেরা, বিয়ে না করে পুরুষ ও স্ত্রীর একসঙ্গে থাকার কথা ভাবতেই পারতেন না। কুমারী অবস্থায় মা হওয়াকে যতটা লজ্জাজনক বলে দেখা হতো, ততটাই লজ্জাজনক বলে দেখা হতো সমকামিতাকে। গর্ভপাত ও বিবাহবিচ্ছেদ করার কথা বেশির ভাগ লোকের মাথাতেই আসত না। ব্যাবসাবাণিজ্যে অসততা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আজকে “সবকিছুই চলে,” যেমন একজন লেখক বলেন। কেন? একটা কারণ হল যে “এটা সেই সমস্ত লোকেদের স্বার্থসিদ্ধি করে, যারা চায় না যে কী করা ঠিক নয় তা অন্যেরা তাদের বলে দিক।”
এই শতাব্দীর লোকেরা নীতিবোধকে দূরে ঠেলে দেওয়ার ফলে কোন্ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে সেই ধারণা বদলে গেছে। দ্যা টাইমস আ্যটলাস অফ দ্যা টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরি বলে: “১৯০০ সালে জাতিগুলো এবং লোকেরা তখনও পর্যন্ত নিজেদেরকে টাকাপয়সা দিয়ে মূল্যায়ন করত না। . . . কিন্তু ওই শতাব্দীর শেষের দিকে জাতিগুলো তাদের সাফল্য প্রায় সম্পূর্ণভাবে অর্থনীতির ভিত্তিতে পরিমাপ করেছিল। . . . ধনসম্পদ সম্বন্ধে মানুষের চিন্তাধারাও একইরকমভাবে বদলে গিয়েছিল।” আজকে পৃথিবীর চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা জুয়াখেলা পয়সার লোভকে বাড়িয়ে তোলে আর সেইসঙ্গে রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা ও ভিডিওগুলোও টাকাপয়সা ও ধনসম্পদের প্রতি আসক্তি বাড়ায়। টেলিভিশনের প্রতিযোগিতাপূর্ণ অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনগুলো তুলে ধরে যে টাকাপয়সা সবকিছু না হলেও কিছু তো বটে।
কাছাকাছি অথচ দূরে
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, বেশির ভাগ লোকই গ্রামে বাস করত। কিন্তু বলা হয় যে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি লোক শহরে বাস করবে। গ্রহকে রক্ষা করার জন্য ৫০০০ দিন (ইংরেজি) বইটা বলে: “আজকের দিনের শহুরে লোকেদের জীবন চালানোর জন্য যে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা জোগানো হয় তা আগামী প্রজন্মের জন্য এত কঠিন সমস্যা তৈরি করছে যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।” রাষ্ট্রসংঘের পত্রিকা ওয়ার্ল্ড হেল্থ বলেছিল: “পৃথিবীতে শহুরে লোকেদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। . . . কোটি কোটি লোক . . . এখন এমন পরিবেশে বাস করছে যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর এমনকি তাদের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”
এটা কতই না পরস্পরবিরোধী কথা যে লোকেরা গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে যত কাছাকাছি বাস করছে, তারা যেন একজন আরেকজনের কাছ থেকে তত দূরে সরে যাচ্ছে! টেলিভিশন, টেলিফোন ও ইন্টারনেট আর সেইসঙ্গে কমপিউটারের মাধ্যমে কেনাকাটা যদিও সুবিধাজনক কিন্তু তা লোকেদের সামনাসামনি হতে দেয় না। তাই জার্মানির খবরের কাগজ বার্লিনার সিটাং বলে: “বিংশ শতাব্দী শুধু
জনসংখ্যা বৃদ্ধির যুগই নয় সেইসঙ্গে এটা নিঃসঙ্গতারও যুগ।”এর ফলে জার্মানির হামবার্গে ঘটা কাহিনীর মতো অনেক করুণ কাহিনী ঘটে, যেখানে এক জন লোকের মৃতদেহ তার মৃত্যুর পাঁচ পর বছর তার আ্যপার্টমেন্টে পাওয়া গিয়েছিল! ডার স্পিজেল বলেছিল: “কেউই তার খোঁজ করেনি, না তার আত্মীয়রা, না প্রতিবেশীরা, না কর্তৃপক্ষ।” এটা আরও বলেছিল: “এই ঘটনা দেখিয়েছিল যে বড় বড় শহরে বাস করা এতখানিই ভয়াবহ যে লোকেরা এমনকি তাদের প্রতিবেশীকে পর্যন্ত চেনে না।”
এই শোচনীয় অবস্থার জন্য শুধু বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিই দায়ী নয়। এর জন্য মূলত লোকেরাই দায়ী। এই শতাব্দীতে লোকেরা এত বেশি “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, . . . অকৃতজ্ঞ, . . . স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, . . . সদ্বিদ্বেষী, . . . ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়” হয়ে উঠেছিল যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।—২ তীমথিয় ৩:১-৫.
১৯১৪ সাল, এক বিশেষ বছর
উইনস্টন চার্চিলের মতে, “বিংশ শতাব্দীর শুরুকে সম্ভাবনাময় এবং শান্ত মনে হয়েছিল।” অনেকেই ভেবেছিলেন যে এটা প্রচুর শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে। কিন্তু ১৯০৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) সতর্ক করেছিল: “কিছুদিনের মধ্যেই বড় যুদ্ধ হবে,” এছাড়াও এটা আরও বলেছিল যে ১৯১৪ সালে এক “মহা প্রলয়” শুরু হবে।
আসলে, ১৮৭৯ সালেই এই পত্রিকা ১৯১৪ সালকে এক বিশেষ বছর বলে চিহ্নিত করেছিল। পরের বছরগুলোতে এটা বলেছিল যে বাইবেলের দানিয়েল পুস্তকের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ওই বছরকে ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় বলে জানায়। (মথি ৬:১০) রাজ্য যদিও ১৯১৪ সালে পৃথিবীর ওপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব গ্রহণ করেনি, তবুও এই সময় রাজ্য শাসন শুরু করেছিল।
বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল: “সেই [আমাদের দিনের] রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর [স্বর্গে] এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না।” (দানিয়েল ২:৪৪) রাজা যীশু খ্রীষ্টের ওই রাজ্য, এই পৃথিবীতে যারা এর প্রজা হতে চান সেইসব ঈশ্বর-ভয়শীল লোকেদের জড়ো করতে শুরু করেছিল।—যিশাইয় ২:২-৪; মথি ২৪:১৪; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৫.
স্বর্গে যা ঘটেছিল তার সঙ্গে মিল রেখে ১৯১৪ সালে ‘শেষ কাল’ শুরু হয়েছিল আর তা এমন এক সময়কালের শুরু ছিল যা আজকে আমরা যে মন্দ বিধিব্যবস্থায় বাস করছি তা ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। যীশু আগেই বলেছিলেন যে এই সময়ে বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, প্রচণ্ড ভূমিকম্প হবে ও অধার্মিকতা বেড়ে যাবে আর সেইসঙ্গে ঈশ্বর ও মানুষের জন্য লোকেদের প্রেম শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেছিলেন যে এই সমস্ত কিছুই হবে “যাতনার আরম্ভ মাত্র।”—মথি ২৪:৩-১২.
এক সম্পূর্ণ নতুন জগৎ একেবারে কাছে
‘শেষ কাল’ শুরু হওয়ার পর ৮৫ বছর কেটে গেছে আর আমরা আজকের এই জঘন্য বিধিব্যবস্থার শেষের দিকে খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে চলেছি। খুব তাড়াতাড়িই ঈশ্বরের রাজ্য খ্রীষ্টের পরিচালনায় “ঐ সকল রাজ্য [যেগুলো এখন রয়েছে] চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪; ২ পিতর ৩:১০-১৩.
হ্যাঁ, ঈশ্বর পৃথিবী থেকে দুষ্টতা দূর করবেন এবং ধার্মিক লোকেদের এক সম্পূর্ণ নতুন জগৎ দেবেন। “সরলগণ দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।”—হিতোপদেশ ২:২১, ২২.
কতই না খুশির খবর, যা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো! ঈশ্বরের রাজ্য খুব তাড়াতাড়ি সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান করবে যা শুধু বিংশ শতাব্দীতেই ভীষণ আকার নিয়েছে: যুদ্ধ, দরিদ্রতা, অসুস্থতা, অবিচার, ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা, বেকারত্ব, অপরাধ, দুঃখ, মৃত্যু।—গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১; ৪৬:৮, ৯; ৭২:১২-১৪, ১৬; যিশাইয় ২:৪; ১১:৩-৫; ২৫:৬, ৮; ৩৩:২৪; ৬৫:২১-২৩; যোহন ৫:২৮, ২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪ পদগুলো দেখুন।
অপার সুখের এক ধার্মিক জগতে অনন্ত কাল বেঁচে থাকার আশা কি আপনার মনকে ছুঁয়ে যায় না? এই বিষয়ে আরও জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের জিজ্ঞেস করুন। তারা আপনাকে আপনারই নিজস্ব বাইবেল থেকে দেখাবেন, যে বড় বড় পরিবর্তন বিংশ শতাব্দীকে বিশিষ্ট করেছিল তা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে আর এর পর আপনি অশেষ আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারবেন!
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
এক সম্পূর্ণ নতুন জগৎ একেবারে কাছে