প্রকৃত বিশ্বাস আসলে কী?
বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রকৃত বিশ্বাস আসলে কী?
“বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।”—ইব্রীয় ১১:৬.
বিশ্বাস আসলে কী? কেউ কেউ বলেন যে বিশ্বাস হল মনে এইরকম শ্রদ্ধা ও ভয় থাকা যে একজন ঈশ্বর নিশ্চয়ই আছেন। আমেরিকার সাংবাদিক এইচ. এল. ম্যানকেন বলেন, বিশ্বাস হল “অন্ধভাবে মেনে নেওয়া যে ঈশ্বর আছেন কিন্তু আসলে তাঁর কোন অস্তিত্বই নেই।” কিন্তু বাইবেল এই বিষয়ে কী বলে? এরকম ভাবা কি ঠিক? বিশ্বাস আসলে কী তা জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরি কারণ ওপরে বলা হয়েছে, ‘বিনা বিশ্বাসে ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়।’
বাইবেলে বলে: “আমরা যা পাব বলে আশা করে আছি তা যে আমরা পাবই, এই নিশ্চয়তাই হল বিশ্বাস।” (ইব্রীয় ১১:১, প্রেমের বাণী) তাই আমরা কোন বিষয়ে শুধু তখনই ‘নিশ্চিত’ হতে পারি যখন আমাদের কাছে সেই বিষয়ে পুরো আর ঠিক ঠিক তথ্য থাকে। আর এই তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব ও বিশ্বাস করব কারণ আমরা বিনা কারণে বিশ্বাস করছি না। অতএব বিশ্বাস করার জন্য কারণ থাকা চাই।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে আপনি হয়তো আপনার এক বন্ধুর জন্য বলতে পারেন: “তার ওপর আমার পুরোপুরি ভরসা আছে কারণ সে কখনও কথার খেলাপ করে না। আমি জানি যে আমি যদি কোন বিপদে পড়ি সে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেই দেবে।” এই কথা নিশ্চয়ই আপনি এমন কোন বন্ধুর বেলায় বলবেন না, যাকে আপনি এক কী দুদিন হল চেনেন? কিন্তু, এমন একজনের জন্য বলবেন যে আপনাকে আগেও সাহায্য করেছে আর তার কথায় ভরসা করা যায়। বিনা কারণে আপনি আপনার বন্ধুর ওপর বিশ্বাস করেননি বরং বিশ্বাস করার পেছনে আপনার পাকাপোক্ত কারণ আছে। ঈশ্বরে বিশ্বাসের ব্যাপারেও এইরকম হওয়া উচিত। তাঁকে বিশ্বাস করার জন্য আমাদের কাছে কারণ থাকতে হবে আর এই বিশ্বাস আমাদের আশা দেবে যে ঈশ্বরের ওপর ভরসা করা যায়।
প্রকৃত বিশ্বাস অথবা সহজেই বিশ্বাস করা?
আজকে লোকেরা সহজেই বা চোখ বন্ধ করে সবকিছু বিশ্বাস করে নেয়। এর জন্য তাদের কোন কারণের দরকার হয় না। এইরকম বিশ্বাস আবেগের বশে করা হয় আর একেই বলে অন্ধবিশ্বাস। কিন্তু, প্রকৃত বিশ্বাস অন্ধ নয় কারণ এর জন্য পাকাপোক্ত কারণের দরকার হয়।
সহজেই সবকিছু বিশ্বাস করার বিপদ হল যে একজন ব্যক্তি না বুঝেশুনেই এমন কিছু বিশ্বাস করে ফেলে, যা বাইবেল অনুযায়ী ঠিক নয়। তাই বাইবেল আমাদের এইধরনের বিশ্বাস সম্বন্ধে সাবধান করে: “যে অবোধ, সে সকল কথায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে।” (হিতোপদেশ ১৪:১৫) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) বাইবেল আমাদের সবকিছুতে বিশ্বাস করতে বলে না। বরং এটা বলে যে কোন কিছুতে বিশ্বাস করার আগে, তা পরীক্ষা করে ও তার পেছনের কারণগুলোকে দেখা দরকার।
প্রকৃত বিশ্বাস আসলে কী তা জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। কারণ একজন ব্যক্তি হয়তো সহজে বিশ্বাস করতে পারেন কিন্তু তার হয়তো প্রকৃত বিশ্বাস নেই। তাই পৌল বলেছিলেন: “সকলের বিশ্বাস নাই।” (২ থিষলনীকীয় ৩:২) বাইবেল অনুযায়ী বিশ্বাস সবার নেই, কেবল কিছু লোকের আছে আর এই বিশ্বাসই আমাদের জীবনের ওপর ছাপ ফেলে।
প্রকৃত বিশ্বাস মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে এক বন্ধন গড়ে তোলে
প্রকৃত বিশ্বাস এমন এক বন্ধন, যা মানুষকে ঈশ্বরের সঙ্গে বেঁধে দেয়। আর এই বন্ধন নিশ্চয়তা ও ভরসার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। কিন্তু, এইধরনের বিশ্বাস এমনি এমনিই হয় না বা তা নিয়ে আমরা জন্মাই না, একে গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু কীভাবে এটাকে গড়ে তোলা যায়? বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়।”—রোমীয় ১০:১৭.
প্রকৃত বিশ্বাস গড়ে তুলতে হলে আপনার ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষাকে জানার জন্য সময় করে নেওয়া জরুরি। আর কোন চেষ্টা ছাড়া আপনি সে সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে বা তা জানতে পারবেন না। (হিতোপদেশ ২:১-৯) এর জন্য আপনাকেই দেখতে হবে যে বাইবেল এই বিষয়ে কী বলে আর তখনই আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত হবেন যে বাইবেল যা বলে তা আসলেই সত্যি।
কিন্তু, প্রকৃত বিশ্বাসের মানে শুধু জ্ঞান নেওয়া বা কোন কিছুকে মেনে নেওয়াই নয় বরং সেটাকে হৃদয়ে গেঁথে নেওয়া। কারণ রোমীয় ১০:১০ পদ বলে: “লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) এর মানে কী? এর মানে হল বাইবেলে লেখা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার বিষয়ে ধ্যান করা, সেগুলোর জন্য উপলব্ধি গড়ে তোলা আর সেগুলো হৃদয়ে গেঁথে নেওয়া। আপনি যখন ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করবেন তখন আপনার বিশ্বাস আরও মজবুত হবে আর আপনি অনেক আশীর্বাদও পাবেন।—২ থিষলনীকীয় ১:৩.
প্রকৃত বিশ্বাস কতই না মূল্যবান বিষয়! যখন আমরা কোন বিপদে পড়ি তখন আমরা ঈশ্বরের ওপর ভরসা রাখতে পারি যে তিনি আমাদের ছেড়ে দেবেন না, তিনি আমাদের ঠিক পথে চালাবেন আর আমাদের প্রয়োজন মেটাবেন। এছাড়াও ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট, বিশ্বাস করার আর একটা ভাল দিক সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যোহন ৩:১৬) হ্যাঁ, অনন্ত জীবন সেই উপহার, যা শুধু যাদের প্রকৃত বিশ্বাস আছে তারাই পাবেন।
আমরা যখন ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞায় পুরোপুরি বিশ্বাস করি তখন জীবনকে আমরা এক আলাদা চোখে দেখি। ইব্রীয় ১১:৬ পদ বলে যে প্রকৃত বিশ্বাস হল এই কথা বিশ্বাস করা যে ঈশ্বর “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করেন” তাদের পুরস্কার দেন। আর এটা শুধু এই বিশ্বাস করা নয় যে ঈশ্বর আছেন বরং বিশ্বাস করা যে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ করেন। আপনি কি অন্তর থেকে ঈশ্বরকে আরও ভাল করে জানতে চান? যদি চান, তাহলে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল থেকে সঠিক জ্ঞান নিন আর নিশ্চিত থাকুন যে আপনার বিশ্বাসের পুরস্কার আপনি পাবেন।
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Drawings of Albrecht Dürer/Dover Publications, Inc.