সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মেক্সিকোতে কি ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার জন্য আরও স্বাধীনতা দেওয়া হবে?

মেক্সিকোতে কি ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার জন্য আরও স্বাধীনতা দেওয়া হবে?

মেক্সিকোতে কি ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার জন্য আরও স্বাধীনতা দেওয়া হবে?

মেক্সিকোর সচেতন থাক! সংবাদদাতা কর্তৃক

মেক্সিকোর সংবিধান বলে যে মেক্সিকোর লোকেরা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারে। কিন্তু তবুও এখানে স্বাধীনভাবে উপাসনা করার সুযোগ দেওয়া হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আইন আছে যে একজন ব্যক্তি তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেকের কারণে সেনাবাহিনীতে কাজ না করতে চাইতে পারেন। কিন্তু মেক্সিকোর লোকেদের এই স্বাধীনতা নেই কারণ মেক্সিকোতে এই আইনই নেই। তাই মেক্সিকোর জাতীয় স্বায়ত্ত্ব শাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ তদন্ত সংস্থা (ইউএনএএম) একটা আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা করার সিদ্ধান্ত নেন, যার শিরোনাম ছিল “মেক্সিকো এবং সারা পৃথিবীতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেক বাধা দেয় এমন কাজ।” যদিও এই সংস্থা মেক্সিকো সরকারের অধীনে কাজ করে কিন্তু এর উদ্দেশ্য হল, সরকার যে আইনকানুনগুলো বানিয়েছে ও যে আইনগুলো মেনে চলা হয়, সেগুলোকে তদন্ত করে দেখা। এতে মেক্সিকোর যিহোবার সাক্ষিদের একজন প্রতিনিধিকে “যিহোবার সাক্ষিদের ধর্ম ও বিবেক বাধা দেয় এমন কাজ” এই বিষয়ের ওপর বক্তৃতা দিতে বলা হয়।

অধ্যাপকেরা সাহসের সঙ্গে তাদের মতামত জানান

স্পেনের গ্রানাডা ইউনিভারসিটি অফ ল এর অধ্যাপক ডঃ. জেভিয়ার মারটিনেজ টররোন “বিবেক অনুযায়ী কাজ করার আন্তর্জাতিক আইন” এই বিষয়ের ওপর বক্তৃতা দেন। তার বক্তৃতায় তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে এমন আইন আছে যে, কোন ব্যক্তি তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা বিবেকের কারণে দেশের কিছু আইনকে নাও মানতে পারেন। তিনি স্পেনের যিহোবার সাক্ষিদের এবং গ্রীসের কোকিনাকিস মামলার উদাহরণ দিয়েছিলেন। *

ইউএনএমএ-র বৈধ তদন্ত সংস্থার একজন অধ্যাপক ডঃ. জোসি লুইস সোবেরানেস ফারনাডেজের বিষয় ছিল, “বিবেকের স্বাধীনতা আর মেক্সিকো সরকারের অভিজ্ঞতা।” তিনি বলেন, “মেক্সিকোতে ধর্মীয় সংস্থা ও উপাসনা সংক্রান্ত আইনে লোকেদের ধর্ম ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি।” তিনি সংবিধানের প্রথম পরিচ্ছেদে লেখা বিষয় থেকে কথা বলছিলেন। সেখানে বলা আছে “এই দেশে যারা বাস করেন, তাদের সবার উচিত দেশের আইন ও নিয়মকে মেনে চলা ও সরকারের প্রতি তার যে দায়িত্ব আছে তা পালন করা আর কোন ব্যক্তিকেই তার ধর্ম ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হবে না।” শেষে ডঃ. সোবেরানেস বলেন: “মনে হয় এখন মেক্সিকোতে এমন আইন তৈরি করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে, যা লোকেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার স্বাধীনতা দেবে।”

তিনি বলেন যে প্রতি বছর মেক্সিকোতে অনেক অনেক যিহোবার সাক্ষি ছেলেমেয়েদের তাদের স্কুলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কারণ তারা তাদের বাইবেলের ওপর গড়ে ওঠা বিশ্বাসের কারণে পতাকা অভিবাদন করে না। কোন কোন সাক্ষি ছেলেমেয়েদেরকে এমনকি স্কুলে ভর্তিই নেওয়া হয় না। কিন্তু, মানবাধিকার আইনের কাছে বিষয়টা নিয়ে আবেদন করে অনেক ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। কোন কোন স্কুলের কর্তৃপক্ষরা যদিও চেষ্টা করেছেন যে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে যেন সাক্ষি ছেলেমেয়েদেরকে স্কুল থেকে বের করে না দেওয়া হয় কিন্তু কিছু শিক্ষক তাদের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেন না। কর্তৃপক্ষ যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জানেন কিন্তু যখন ছেলেমেয়েদের মেক্সিকোর স্কুলগুলোতে ভর্তি করার ব্যাপার আসে তখন স্কুলের ইচ্ছার ওপর তা ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে এমন কোন আইন নেই যা মেক্সিকোর সব স্কুলগুলোকে মানতে হবে।

এই আলোচনা সভায় অন্য ধর্মের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আর তারাও তাদের কিছু ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা বলেছিলেন। যেমন তাদের কোন পবিত্র দিনে তাদেরকে কাজ করার জন্য জোর করা, কাজের সময় এমন পোশাক পড়তে বলা, যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে একেবারেই ঠিক নয় এবং এরকম আরও অনেক কিছু। সেনাবাহিনীতে কাজ করা ও কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা সম্বন্ধেও কিছু বিষয় বলা হয়েছিল।

যিহোবার সাক্ষিরা এবং সরকার

মেক্সিকোর যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসের একজন ভাই আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে শ্রোতাদের বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে আমরা বাইবেলের নীতি মেনে চলি। যেমন লূক ২০:২৫ পদে বলা আছে যে খ্রীষ্টানদেরকে ‘যাহা যাহা কৈসরের, কৈসরকে দেওয়া দরকার।’ এছাড়াও তিনি রোমীয় ১৩:১ পদ থেকে এই নীতির কথাও বলেন, যেখানে খ্রীষ্টানদের বলা হয়েছে যে তারা প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের বশীভূত থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে যিহোবার সাক্ষিরা অন্য লোকেদের থেকে আলাদা নন, তারা দেশের আইনকানুন মেনে চলেন, সরকারকে কর দেন, তারা শান্তিপ্রিয়, তারা তাদের ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এবং তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠান।

এরপর তিনি বলেন যে যিহোবার সাক্ষিরা কেন পতাকা অভিবাদন করেন না। তিনি বলেন আমরা বাইবেলকে মেনে চলি। বাইবেলে যাত্রাপুস্তক ২০:৩-৫ পদে দেওয়া দশ আজ্ঞায় লেখা আছে: “আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক। তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না।”

যিহোবার সাক্ষিরা একমাত্র ঈশ্বরকেই উপাসনা করেন, তারা কোনভাবেই কোন মূর্তি, প্রতিমা বা প্রতীককে উপাসনা করেন না। কিন্তু তাই বলে তারা কখনও জাতীয় প্রতীককে অসম্মান করেন না। আর তারা কখনও এর সম্বন্ধে কোন অসম্মানজনক কথাও বলেন না।

যিহোবার সাক্ষিরা শুধু যিহোবাকেই উপাসনা করেন এটা আরও ভাল করে বোঝাবার জন্য ভাই বেগুনী ত্রিভুজ ভিডিওটা দেখান। এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে জার্মান নাৎসি (১৯৩৩-৪৫) নির্যাতনের মুখেও যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে তাদের বিশ্বাসে অটল ছিলেন। এখানে কুসারোস পরিবারের কথা বলা হয়েছে, যারা নাৎসি শাসনের সময়ে তাদের বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলেন। *

এরপর বাইবেল থেকে ভাই এও দেখান যে যিহোবার সাক্ষিরা কেন রক্ত নেন না বা দেন না।। (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) এটাও বলা হয়েছিল যে এই ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করার জন্য সারা পৃথিবীতে হসপিট্যাল লিয়েইজন কমিটি কী কী কাজ করে। এছাড়াও যে ডাক্তাররা রক্ত ছাড়া যিহোবার সাক্ষিদের চিকিৎসা করেছেন তারা যে অনেকখানি সফলতা পেয়েছেন সে বিষয়েও বলা হয়েছিল।

প্রতিদিন ১০০ জনের মতো ব্যক্তি এই আলোচনা সভা শুনতে আসেন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন উকিল। মেক্সিকোর ধর্মীয় সংগঠনের কিছু প্রতিনিধিও সেখানে এসেছিলেন। এই লোকেরা সেই সমস্ত বিশেষজ্ঞদের কথা শুনেছিলেন, যারা ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিবেক অনুযায়ী কাজ করার পক্ষে অনেক কিছু বলেছিলেন। যদিও এই বিষয়টা ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলো এবং চেকোস্লোভাকিয়ার মতো সাম্যবাদী দেশগুলোর জন্য খুবই সাধারণ ব্যাপার কিন্তু মেক্সিকোর আইন প্রণেতাদের কাছে বিষয়টা নতুন ছিল।

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৯৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বরের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর “ইউরোপের উচ্চ আদালত গ্রিসে প্রচার করার অনুমতি দেয়” এবং ১৯৯৮ সালের ১লা ডিসেম্বরের প্রহরীদুর্গ এর “আইনগতভাবে সুসমাচারকে সমর্থন করা” এই প্রবন্ধ দুটো দেখুন।

^ ১৯৮৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বরের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর “বন্দিত্ব এবং মৃত্যু সত্ত্বেও ঈশ্বরের প্রতি আমার পরিবারের প্রেম” প্রবন্ধটা দেখুন। এছাড়াও ১৯৯৪ সালের ১৫ই জানুয়ারি পত্রিকার ৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেক্সিকোর যিহোবার সাক্ষিরা তাদের প্রচার করার স্বাধীনতাকে খুবই প্রিয় বলে মনে করেন