সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনের—চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনের—চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনের—চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে

“যে ডাক্তাররা অপারেশন করার সময় রক্ত দেন, তাদেরকে রক্ত ছাড়া অপারেশন করার কথা চিন্তা করতেই হবে।”—ড. যোয়াকিম বোল্ট, আ্যনাস্থেসিওলজির অধ্যাপক, লুডউইগশেফেন, জার্মানি।

এইডসের কামড়ে অনেক লোক প্রাণ হারিয়েছে দেখে বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা আরও সাবধান হতে বাধ্য হয়েছেন যাতে অপারেশনের সময় এইডসের জীবাণু রোগীর শরীরে ঢুকে না পড়ে। এইজন্য তারা রোগীকে রক্ত দেওয়ার আগে সেই রক্ত আরও ভালভাবে পরীক্ষা করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন যে এত পরীক্ষানিরীক্ষা করেও নিশ্চিন্ত থাকা যায় না। ট্রান্সফিউশন পত্রিকা বলে: ‘রক্তে যাতে কোনরকম রোগের জীবাণু না থাকে তার জন্য আজকে অনেক পয়সা খরচ করা হচ্ছে কিন্তু তবুও আমরা মনে করি যে রোগীরা রক্ত নেওয়া এড়িয়ে চলবেন কারণ রক্তকে কখনোই পুরোপুরি রোগমুক্ত করা যায় না।’

তাই আজকে অনেক ডাক্তারই রক্ত দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান হচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কোর ডাক্তার আ্যলেক্স জেপোল্যানস্কি বলেন: “রক্ত দেওয়া একেবারেই ভাল নয় আর তাই আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি যাতে কাউকেই রক্ত দিতে না হয়।”

সাধারণ লোকেরাও রক্ত নেওয়ার ব্যাপারে সাবধান হচ্ছে কারণ এতে যে বিপদ আছে তা লোকেরা চিনতে শুরু করেছে। তাই, ১৯৯৬ সালে কানাডায় করা একটা সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে কানাডার ৮৯ শতাংশ লোকই রক্তের বিকল্প চিকিৎসা চায়। জার্নাল অফ ভাসকুলার সার্জারি পত্রিকা বলে: ‘সব রোগীই যে যিহোবার সাক্ষিদের মতো রক্ত নিতে চাইবেন না তা নয়। তাই সমস্ত রোগীর ভালর জন্য আমাদের বিকল্প চিকিৎসা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ রক্ত দিলে রোগীর শরীরে অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে আর তা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমজোরি করে দিতে পারে।’

একটা ভাল পদ্ধতি

কিন্তু খুশির বিষয় হল যে এর বিকল্প চিকিৎসা আছে। হ্যাঁ, আজকে রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশন করা যায়। কোন উপায় নেই বলে যে অনেক রোগী এটা বেছে নেন তা নয় বরং এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে তারা পছন্দ করেন আর তা করার অনেক কারণও আছে। ব্রিটেনের একজন বড় ডাক্তার স্টিফেন জেফ্রি পোলার্ড বলেন যে যারা রক্ত ছাড়া অপারেশন করেন তাদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ও মারা যাওয়ার হার “যে রোগীরা রক্ত নেন তাদের মতোই কিন্তু যারা রক্ত ছাড়া অপারেশন করেন তারা প্রায়ই রক্ত নেওয়ায় অপারেশনের পর যে সমস্ত রোগ ও জটিলতা দেখা দেয় তার হাত থেকে রেহাই পান।”

কিন্তু, এখন প্রশ্ন হল কখন থেকে রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করা শুরু হয়েছে? প্রশ্নটা শুনতে হয়তো অদ্ভুত লাগে কারণ আগে রক্ত ছাড়াই চিকিৎসা করা হতো। রক্ত দিয়ে চিকিৎসা বা অপারেশন করা শুধু বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই খুব বেশি করে আরম্ভ হয়েছে। তবে গত ত্রিশ চল্লিশ বছর ধরে কিছু ডাক্তার রক্ত ছাড়া অপারেশন করছেন আর লোকেরা এটাকে পছন্দ করছে। উদাহরণ হিসেবে ১৯৬০ এর দশকের নামিদামি সার্জেন ডেনটন কুলির কথা বলা যায়, যিনি প্রথম রক্ত ছাড়া ওপেন হার্ট সার্জারি করেছিলেন।

১৯৭০ এর দশকে যারা রক্ত নিয়েছিলেন তাদের অনেকের হেপাটাইটিস হওয়ায়, অনেক ডাক্তারই রক্তের বিকল্প চিকিৎসা খুঁজতে শুরু করেছিলেন। ১৯৮০-র দশক শেষ হওয়ার আগেই চিকিৎসকদের বেশ কয়েকটা বড় বড় দল রক্ত ছাড়া অপারেশন করেছেন। পরে যখন এইডস মহামারীর মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন অন্য ডাক্তারাও রক্ত ছাড়া অপারেশন করার ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়ার জন্য এই ডাক্তারদের কাছে আসেন। আর এই কারণে ১৯৯০ এর দশকে অনেক হাসপাতালেই রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে আর যে রোগীরা রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করাতে চান তাদের জন্য তা করা হয়েছে।

আগে যে সব অপারেশন ও জরুরি চিকিৎসায় রক্ত দেওয়া হতো এখন সেসব অপারেশন ডাক্তাররা রক্ত ছাড়াই ভালভাবে করছেন। কানাডিয়ান জার্নাল অফ আ্যনাস্থেসিয়া পত্রিকায় ড. এইচ.ডব্লিউ উয়োং বলেন: “হার্ট, রক্তনালী, স্ত্রীরোগ ও প্রসবসংক্রান্ত, হাড় এবং ইউরোলজির মতো বড় বড় অপারেশন রক্ত বা রক্তের উপাদান ছাড়াই ভালভাবে করা যায়।”

রক্ত ছাড়া অপারেশন করার একটা সুবিধা হল যে এতে খুব যত্ন নিয়ে অপারেশন করা হয় ও ভালভাবে চিকিৎসা করা হয়। ওহাইয়োর ক্লিভল্যান্ডের সার্জারি বিভাগের পরিচালক ড. বেনজামিন জে. রেইখস্টেইন বলেন: “অপারেশনের সময় যাতে খুব বেশি রক্তক্ষরণ না হয় তার জন্য ডাক্তারদের নিপুণ হাতই হল সবচেয়ে বেশি জরুরি।” দক্ষিণ আফ্রিকার একটা পত্রিকা বলে যে রক্ত ছাড়া অপারেশন করলে অনেক সময় তা “তাড়াতাড়ি করা যায়, রক্তক্ষরণ কম হয় ও অন্য রোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয় কম থাকে আর খরচও কম লাগে।” এই পত্রিকা আরও বলে: “আর দেখা গেছে যে অপারেশন হয়ে যাওয়ার পর রোগীর চিকিৎসা করাতে খরচ কম লাগে ও রোগী তাড়াতাড়ি সেরেও ওঠে।” এগুলো হল মাত্র কয়েকটা কারণ যেজন্য আজকে সারা পৃথিবীতে ১৮০টারও বেশি হাসপাতালে রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশন করার ব্যবস্থা রয়েছে।

রক্ত এবং যিহোবার সাক্ষিরা

বাইবেলের নিয়ম মেনে চলায় যিহোবার সাক্ষিরা রক্ত নেন না। * কিন্তু তারা খুশি মনে রক্তের বিকল্প চিকিৎসা করাতে চান। ড. রিচার্ড কে. স্পেন্স যখন নিউ ইয়র্ক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরিচালক ছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন: ‘যিহোবার সাক্ষিরা সবচেয়ে ভাল পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাতে চান। অপারেশন করানোর জন্য ডাক্তারদের কাছে যত রোগী আসে তার মধ্যে তারাই হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান।’

এইরকম অনেক যিহোবার সাক্ষিদেরকে রক্ত ছাড়া অপারেশন করে ডাক্তাররা তাদের হাত পাকিয়েছেন। হার্ট সার্জেন ডেনটন কুলির কথাই দেখুন। ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ও তার দল ৬৬৩ জন যিহোবার সাক্ষির ওপেন হার্ট সার্জারি করেছেন। এর থেকে স্পষ্ট দেখা যায় যে রক্ত ছাড়া হার্টের অপারেশন ভালভাবেই করা যায়।

এটা ঠিক যে যিহোবার সাক্ষিরা রক্ত নেন না বলে অনেকেই তাদের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের আ্যনাস্থেটিস্ট সংঘ একটা বই ছাপিয়েছিল, যেটাতে লেখা হয়েছিল যে যিহোবার সাক্ষিদের এই বিশ্বাস দেখায় যে তারা “জীবনকে সম্মান করেন।” সত্যি বলতে কী, সাক্ষিরা রক্ত নেবেন না বলে তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বলেই আজকে এই নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতির দরজা সবার জন্য খুলে যাচ্ছে। নরওয়ের ন্যাশনাল হাসপাতালের অধ্যাপক স্টেইন এ. ইভেনসেন লেখেন: “নরওয়ের সব লোকেদের আরও ভাল চিকিৎসা পাওয়ার ব্যাপারে যিহোবার সাক্ষিদের এক বড় হাত আছে। যখনই তাদের অপারেশন করানোর দরকার হয় তারা ডাক্তারদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেন ও তাদের অটল বিশ্বাসই আমাদের উন্নতি করতে সাহায্য করেছে।”

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশন করতে ডাক্তারদের সাহায্য করার জন্য যিহোবার সাক্ষিরা হসপিট্যাল লিয়েইজন কমিটি গঠন করেছেন। আজকে সারা পৃথিবীতে ১,৪০০রও বেশি হসপিট্যাল লিয়েইজন কমিটি রয়েছে। এই কমিটিগুলো কমপিউটারে রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনের ওপর ৩,০০০ এরও বেশি প্রবন্ধ তৈরি করে রেখেছে, যা তারা দরকারে ডাক্তার ও গবেষকদের দিয়ে থাকেন। বোস্টন কলেজ ল স্কুলের অধ্যক্ষ ড. চার্লস ব্যারন বলেন: “সাক্ষিদের হসপিট্যাল লিয়েইজন কমিটির উদ্যোগে আজকে শুধু যিহোবার সাক্ষিরাই নয় বরং অন্য অনেক রোগীই অযথা রক্ত নেওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান।” *

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনের ওপর যিহোবার সাক্ষিরা যে সমস্ত তথ্য জোগাড় করেছেন তার থেকে চিকিৎসা জগতের অনেকেই লাভবান হয়েছেন। যেমন, অটোট্রান্সফিউশন: থেরাপটিক প্রিন্সিপলস্‌ আ্যন্ড ট্রেন্ডস্‌ নামের বই লেখার সময় লেখকরা রক্তের বিকল্প চিকিৎসা সম্বন্ধে যিহোবার সাক্ষিদের কাছে তথ্য চেয়েছিলেন। সাক্ষিরা খুশি মনে তাদেরকে তথ্য দিয়েছিলেন। পরে লেখকরা তাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখেছিলেন: ‘এই বিষয়ে আমরা যা কিছু পড়েছি, তার কোথাও রক্ত নেওয়া কী করে এড়ানো যায় তার ওপর অল্প কথায় এত তথ্য এবং বিভিন্ন পদ্ধতির তালিকা আমরা খুঁজে পাইনি।’

চিকিৎসাবিজ্ঞান দিন দিন উন্নত হওয়ায় অনেকেই রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করার কথা ভাবছেন। তাই ভবিষ্যতে আমরা কী আশা করতে পারি? অধ্যাপক লূক মন্টানিয়ার, যিনি এইডস ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন, বলেন: “যেভাবে আমাদের চোখের সামনে থেকে পর্দা সরে যাচ্ছে আর আমরা নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি তাতে মনে হয় যে খুব শীঘ্রিই এমন এক সময় আসবে যখন রক্ত দেওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।” কিন্তু এখনই রক্তের বিকল্প চিকিৎসা অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছে।

[পাদটীকাগুলো]

^ লেবীয় পুস্তক ৭:২৬, ২৭; ১৭:১০-১৪; দ্বিতীয় বিবরণ ১২:২৩-২৫; ১৫:২৩; প্রেরিত ১৫:২০, ২৮, ২৯; ২১:২৫ পদগুলো দেখুন।

^ হসপিট্যাল লিয়েইজন কমিটিকে বললে তারা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়াও কোন রোগী যদি ডাক্তারদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলার জন্য তাদের সাহায্য চান, তাহলে এই কমিটি তা করার জন্য তৈরি থাকে।

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

কয়েকজন ডাক্তার যা বলেন

‘শুধু যিহোবার সাক্ষিদের জন্যই নয় কিন্তু সমস্ত রোগীর জন্য রক্ত ছাড়া অপারেশন করা উচিত। আমি মনে করি সব ডাক্তারদেরই রক্ত ছাড়া অপারেশন করা উচিত।’—ড. যোয়াকিম বোল্ট, আ্যনাস্থেসিওলজির অধ্যাপক, লুডউইগশেফেন, জার্মানি।

“আগে রক্ত দেওয়া যতটা কঠিন ও বিপদজনক ছিল আজকে ততটা না হলেও রক্ত দেওয়ায় অনেক ঝুঁকি আছে, যেমন রক্ত শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে কমজোরি করে দেয় এবং হেপাটাইটিস বা এইডসের মতো রোগগুলো ছড়ায়।”—ড. টেরেন্স জে. সাকি, মেডিসিন শাখার সহকারী অধ্যাপক।

“বেশির ভাগ ডাক্তারই কোনরকম চিন্তাভাবনা না করে নিছক অভ্যাসের বশে রক্ত দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি তা কখনোই করি না।”—ড. আ্যলেক্স জেপোল্যানস্কি, সান ফ্রান্সিস্কো হার্ট ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারির পরিচালক।

“পেটের সাধারণ অপারেশনের জন্য একজন রোগীকে রক্ত দিতেই হবে, তার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।”—ড. জোহানেস শেলি, সার্জারির অধ্যাপক, জিনা, জার্মানি।

[চিত্রগুলো]

ড. টেরেন্স. জে. সাকি

ড. যোয়াকিম বোল্ট

[৮, ৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনের

কয়েকটা পদ্ধতি

ফ্লুইড (তরল): রিংগারের ল্যাকটেট দ্রবণ, ডেক্সট্রেন, হাইড্রোঅক্সিথাইল স্টার্চ এবং অন্যান্য ফ্লুইড রক্তের ঘনত্ব ঠিক রাখে এবং রক্তের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় যে সমস্ত রোগ হয় তার থেকে রক্ষা করে। এখন এমন কিছু ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।

ড্রাগস (ওষুধপত্র): পরীক্ষাগারে তৈরি প্রোটিন দিয়ে রক্তের লোহিত কণিকা (ইরিথ্রোপোয়েটিন), অনুচক্রিকা (ইন্টারলিউকিন-১১) এবং বিভিন্ন শ্বেত কণিকা (জিএম-সিএসএফ, জি-সিএসএফ) বাড়ানো যেতে পারে। আরও অনেক ওষুধপত্র আছে (আ্যপ্রোটিনিন, আ্যন্টিফিব্রিনোলাইটিক্স) যেগুলো অপারেশনের সময় রক্তক্ষরণ অনেকখানি কমিয়ে দেয় আর এমন হরমোন (ডেসমোপ্রেসিন) আছে যা রক্তক্ষরণ কম করে।

বায়োলজিক্যাল হেমোস্টেট (রক্তক্ষরণ রোধ করার যন্ত্র): রক্তক্ষরণ হচ্ছে এমন জায়গায় কলেজেন ও সেলুলোজ দিয়ে তৈরি গজ বা প্যাড লাগালে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। এছাড়াও ফাইব্রিন গ্লুজ ও সিলেন্ট, ক্ষত জায়গায় চেপে বসিয়ে দিলে বা যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই মাংসপেশীকে এগুলো দিয়ে ঢেকে দিলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে পারে।

ব্লাড সেলভেজ (রক্তকে বাঁচিয়ে রাখা): এখন এমন মেশিন ব্যবহার করা হয়, যা অপারেশনের সময় যে রক্তক্ষরণ হয় তাকে জমা করে নেয়। আর এই মেশিন রক্তকে শোধন করে আর রোগীর শরীরে আবার নিরাপদে তা পৌঁছে দেয়। গুরুতর অবস্থায় এই মেশিন দিয়ে কোন রোগীর বেশ অনেক লিটার রক্ত বাঁচানো যায়।

সার্জিক্যাল টুলস (অপারেশন করার যন্ত্রপাতি): এমন কিছু যন্ত্রপাতি আছে, যা একই সময়ে রক্তনালীকে কেটে আবার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধও করে দিতে পারে। আবার এমন কিছু যন্ত্রপাতিও আছে যা দিয়ে তাড়াতাড়ি রক্তক্ষরণ বন্ধ করে দেওয়া যায়। ল্যাপ্রোসকপের মতো যন্ত্রও ব্যবহার করা হয়, যা বড় অপারেশনেও খুব বেশি রক্ত বের হয়ে যেতে দেয় না।

সার্জিক্যাল টেকনিক (অপারেশন করার পদ্ধতি): যে কোন অপারেশনকে সফল করতে হলে অপারেশনের আগে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি যাতে অপারেশনের সময় ডাক্তারদের অসুবিধায় পড়তে না হয়। রক্তক্ষরণ শুরু হলে তা বন্ধ করার জন্য তড়িঘড়ি করে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করা দরকার। ২৪ ঘন্টার মধ্যে রক্ত বন্ধ না হলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। এইজন্য বড় বড় অপারেশনগুলোকে একবারে না করে কয়েকটা ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিলে রক্তক্ষরণ কম হয়।

[১০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা—কি নতুন “চিকিৎসা পদ্ধতি”?

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশন করালে কী কী উপকার পাওয়া যায় তা নিয়ে সচেতন থাক! চিকিৎসা জগতের চারজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে।

ধর্মের জন্য রক্ত নেন না এমন রোগী ছাড়াও আর কারা রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করাতে চাইছেন?

ড. স্পান: আমাদের হাসপাতালে সাধারণত এমন রোগীরাই রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করাতে চান, যারা খুব ভাল করে জানেন যে তারা কী করতে চলেছেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে তারা পুরোপুরি জানেন।

ড. শ্যানডার: ১৯৯৮ সালে ধর্মের কারণে যত জন রোগী রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করতে এসেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ব্যক্তিগত কারণে রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করিয়েছেন।

ড. বয়েড: উদাহরণ হিসেবে ক্যান্সারের রোগীদের কথাই বলা যায়। অনেক বার দেখা গেছে যে তারা যখন রক্ত নেন না, তখন তাদের অবস্থার উন্নতি হয় এবং তাদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয় কমে যায়।

ড. স্পান: আমাদের এখানে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা এবং তাদের পরিবারের লোকেরা রক্ত ছাড়া চিকিৎসার জন্য আসেন। আর অবাক হওয়ার মতো বিষয় হল যে ডাক্তাররাও রক্ত ছাড়া চিকিৎসা চান। যেমন আমাদের কাছে একদিন যখন একজন সার্জেন তার স্ত্রীকে অপারেশনের জন্য নিয়ে এসেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন: “আপনাদের কাছে আমার শুধু একটাই অনুরোধ—ওকে যেন কোনভাবেই রক্ত দেওয়া না হয়!”

ড. শ্যানডার: আমার আ্যনাস্থেসিয়া বিভাগের কর্মীরা বলেন: ‘যে রোগীরা রক্ত নেন না তাদের অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি ভালর দিকে যায়। যদি রক্ত ছাড়া চিকিৎসা পদ্ধতিই সবচেয়ে ভাল, তাহলে দুরকমের চিকিৎসা করানোর দরকারটা কী? আমরা কি সব রোগীদের চিকিৎসা রক্ত ছাড়াই করতে পারি না?’ তাই আমরা এখন অপেক্ষায় আছি যে কবে রক্ত ছাড়া চিকিৎসা ও অপারেশনই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠবে।

মি. আর্নশ: এটা ঠিক যে আমরা সাধারণত যিহোবার সাক্ষিদের অপারেশনগুলোই রক্ত ছাড়া করি। কিন্তু আমরা রক্ত ছাড়াই সবার চিকিৎসা করতে চাই।

রক্ত ছাড়া অপারেশন করাতে কি খরচ বেশি পড়ে?

মি. আর্নশ: এতে অনেক পয়সা বেঁচে যায়।

ড. শ্যানডার: রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করালে ২৫ শতাংশ খরচ কম লাগে।

ড. বয়েড: আর কিছু না হলেও শুধু খরচ কমানোর জন্যও আমাদের এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে ব্যবহার করা উচিত।

রক্ত ছাড়া চিকিৎসা পদ্ধতি কতটুকু এগিয়েছে?

ড. বয়েড: আমার তো মনে হয় আমরা খুব ভালই এগিয়েছি আর এ তো মাত্র শুরু। যত দিন যাচ্ছে ততই রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করার আরও পাকাপোক্ত কারণ পাওয়া যাচ্ছে।

[চিত্রগুলো]

ড. ডোনেট আর. স্পান আ্যনাস্থেসিওলজির অধ্যাপক, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড

ড. এরিয়ে শ্যানডার আ্যনাস্থেসিওলজির সহকারী অধ্যাপক, যুক্তরাষ্ট্র

মি. পিটার আর্নশ, এফআরসিএস, কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক সার্জেন, লনডন, ইংল্যান্ড

ড. মার্ক ই. বয়েড ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগের অধ্যাপক, কানাডা

[১১ পৃষ্ঠার বাক্স]

রোগীর কী করা উচিত

▪ সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না যখন ডাক্তার এসে আপনাকে রক্ত নেওয়ার কথা বলেন বরং তার আগেই আপনার ডাক্তারের সঙ্গে রক্ত না নেওয়ার জন্য খোলাখুলি কথা বলুন। এটা বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের, ছোট বাচ্চা রয়েছে এমন বাবামাদের এবং বয়স্ক লোকেদের জন্য বেশি দরকারি।

▪ আপনি যে রক্ত নেবেন না তা লিখে রাখুন, বিশেষ করে যদি কোন দলিলে এটা লিখে রাখার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে তাতে লিখুন।

▪ আপনার ডাক্তার যদি রক্ত ছাড়া আপনার চিকিৎসা করতে রাজি না হন, তাহলে যে ডাক্তার রক্ত ছাড়া চিকিৎসা করবেন তার খোঁজ করুন।

▪ আপনি যদি জানেন যে আপনাকে অপারেশন করাতেই হবে, তাহলে দেরি করবেন না কারণ কোন কোন সময় রক্ত ছাড়া অপারেশন করার পর পুরোপুরি সেরে উঠতে বেশ সময় লাগে, তাই যত তাড়াতাড়ি পারা যায় অপারেশন করিয়ে নেওয়া ভাল।