সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একটা ছোট্ট দ্বীপ থেকে এক বড় শিক্ষা

একটা ছোট্ট দ্বীপ থেকে এক বড় শিক্ষা

একটা ছোট্ট দ্বীপ থেকে এক বড় শিক্ষা

রাপা নুই, ১৭০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এক ছোট্ট দ্বীপ। * এই দ্বীপ আগ্নেয়গিরির লাভা দিয়ে গঠিত হয়েছে আর এতে গাছপালা নেই বললেই চলে। পৃথিবীতে এটাই হল লোকালয় থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা এক জনবহুল দ্বীপ। পুরো দ্বীপটাই এখন ঐতিহাসিক নিদর্শন আর এর একটা কারণ হল এখানে অনেক পাথরের মূর্তি আছে, যেগুলোকে মোয়াই বলা হতো। প্রাচীনকালের দ্বীপবাসীরা এই মূর্তিগুলো বানিয়েছিল।

আগ্নেয় শিলা খোদাই করে এই মূর্তিগুলো বানানো হয়েছিল আর এই মূর্তিগুলোর কয়েকটাকে মাটিতে এমনভাবে পোতা হয়েছে যে এগুলোর শুধু বিরাট বিরাট মাথা দেখা যায়। অন্যগুলো মাটির ওপরে রয়েছে এবং এগুলোর হাত, পা ও মাথা নেই, শুধু শরীর আছে। আর কয়েকটার মাথায় পুকাউ নামে পাথরের পাগড়ি দেওয়া আছে। বেশির ভাগ মূর্তিই খনিতে বা প্রাচীনকালের রাস্তাগুলোতে অসমাপ্ত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখে মনে হয় যেন কারিগররা এইমাত্র কাজ বন্ধ করে তাদের যন্ত্রপাতি ফেলে চলে গেছে। যে মূর্তিগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো সারি সারি করে সাজানো আছে এবং একেকটা সারিতে একটা-দুটো থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫টা মূর্তি রয়েছে আর প্রত্যেকটা মূর্তি সাগরের দিকে পেছন ফেরানো আছে। এই দ্বীপে যারা বেড়াতে আসত তারা অনেক দিন ধরে এই মূর্তিগুলোর রহস্য বুঝতে পারেনি।

কিন্তু, কিছু বছর হল বিজ্ঞানীরা মোয়াই এর রহস্য বুঝতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, তারা জেনেছেন যে একসময়ের সমৃদ্ধ সভ্যতা কী করে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এই দ্বীপ সম্পর্কে যা কিছু জানা গেছে তা শুধু ইতিহাসই নয়। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে যে এই তথ্যগুলো “আজকের লোকেদেরকে এক জরুরি বিষয় শেখায়।”

এটা পৃথিবীকে বিশেষ করে এর প্রাকৃতিক সম্পদকে কী করে ব্যবহার করা দরকার তা শেখায়। একথা ঠিক যে এই ছোট্ট দ্বীপের তুলনায় এই বিশাল পৃথিবী আরও অনেক বেশি জটিল এবং এর জীবজগতেও অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা রাপা নুই থেকে পাওয়া শিক্ষাকে অবহেলা করব। তাহলে আসুন এখন আমরা অল্প সময়ের জন্য রাপা নুইয়ের ইতিহাসের কিছু মুখ্য বিষয় দেখি। এর ইতিহাস শুরু হয় সা.কা. ৪০০ সালে যখন কিছু পরিবার নৌকায় চড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছিল। সেই সময় ওই দ্বীপে জনমানবের কোন চিহ্নই ছিল না শুধু শয়ে শয়ে সামুদ্রিক পাখি আকাশে চক্কর দিচ্ছিল ও তাদেরকে দেখছিল।

এক অপূর্ব দ্বীপ

এই দ্বীপে যদিও নানানরকমের গাছপালা ছিল না কিন্তু এখানে তাল, হোহো এবং টরোমিরো গাছের বন আর সেইসঙ্গে গুল্ম, ওষুধি লতা, ফার্ণ ও ঘাস ছিল। এখানে প্রায় ছয় প্রজাতির পাখি ছিল। প্যাঁচা, সারস, রেইল ও টিয়া পাখিরা এই দ্বীপে উড়ে বেড়াত। এছাড়াও ডিসকভার পত্রিকা বলে যে রাপা নুই “পলিনেশিয়া এবং সম্ভবত পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার মধ্যে সামুদ্রিক পাখিদের প্রজননের সবচেয়ে ভাল জায়গা” ছিল।

যারা এই দ্বীপে থাকতে এসেছিল তারা সম্ভবত মুরগি ও ইঁদুর, যেগুলো তাদের কাছে সুস্বাদু খাবার ছিল সেগুলোকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। শুধু তাই নয়, তারা তাদের সঙ্গে করে কিছু ফসলের চারাও এনেছিল যেমন, টারু, ইয়াম, মিষ্টি আলু, কলা ও আখ। এখানকার মাটি খুবই উর্বর ছিল আর তাই তারা দেরি না করে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ফসল লাগাতে লেগে গিয়েছিল। লোকসংখ্যা যতই বাড়তে থাকে, ততই তারা বনজঙ্গল কেটে চাষাবাদ করে। কিন্তু রাপা নুই ছিল খুবই ছোট আর অনেক বনজঙ্গল থাকলেও গাছপালা ছিল কম।

রাপা নুইয়ের ইতিহাস

আমরা রাপা নুইয়ের ইতিহাস সম্বন্ধে যতটুকু জেনেছি, তা মূলত তিনটে জায়গা থেকে জেনেছি। পরাগ বিশ্লেষণ, প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা ও জীবাশ্ম বিজ্ঞান। পরাগ বিশ্লেষণ হল পুকুর ও জলাভূমির কাদা থেকে পরাগ সংগ্রহ করা। এই পরাগগুলোকে বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে সেখানে শত শত বছর ধরে কী কী প্রজাতির উদ্ভিদ ছিল এবং কতটা পরিমাণে ছিল। যত নিচের স্তরের কাদা থেকে পরাগ সংগ্রহ করা যায়, তত আগের উদ্ভিদ সম্বন্ধে জানা যায়।

প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা এবং জীবাশ্ম বিজ্ঞান থেকে দ্বীপের ঘরবাড়ি, বাসনকোসন, মোয়াই এবং দ্বীপবাসীরা যে পশুপাখিদের মাংস খেত সেগুলো সম্বন্ধে জানা যায়। যেহেতু রাপা নুইয়ের ইতিহাস দুর্বোধ্য লিপিতে লেখা এবং এগুলোর অর্থ বোঝা খুবই মুশকিল, তাই ইউরোপীয়দের সেখানে যাওয়ার আগের তারিখগুলো অনুমান করে দেওয়া হয়েছে আর এইরকম অনেক তারিখেরই প্রমাণ পাওয়া যায় না। এছাড়া, নিচে দেওয়া কিছু কিছু ঘটনা একই সময়ে বা কাছাকাছি সময়েও হতে পারে। মোটা কালো হরফে দেওয়া সমস্ত তারিখ সাধারণ কাল।

৪০০ ২০ থেকে ৫০ সালের মধ্যে পলিনেশিয় লোকেরা সম্ভবত ১৫ মিটার বা এর চেয়ে লম্বা পাশাপাশি জুড়ে দেওয়া দুটো নৌকায় চড়ে এই দ্বীপে আসে। এইরকম প্রত্যেকটা নৌকা ৮,০০০ কিলোরও বেশি বইতে পারত।

৮০০ কাদার স্তরে গাছের পরাগের সংখ্যা কমে যাওয়া বলে দেয় যে সেই সময় প্রচুর গাছপালা কাটা হচ্ছিল। আর ঘাসের পরাগের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দেখায় যে বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা কিছু জায়গায় ঘাস জন্মেছিল।

৯০০-১৩০০ এই সময়ে যত পশুপাখির মাংস খাওয়া হয়েছিল সেগুলোর হাড়গোড়ের এক তৃতীয়াংশই হল ডলফিনের হাড়। বড় বড় তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে বানানো নৌকায় চড়ে দ্বীপের লোকেরা সমুদ্র থেকে ডলফিন শিকার করত। এছাড়াও মোয়াই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে ও সেগুলো স্থাপন করতে যে সরঞ্জাম ব্যবহার করা হতো তার কাঁচামালও গাছপালা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল আর তখনও মোয়াই বানানোর কাজ চলছিল। দিন দিন বেড়ে চলা চাষাবাদ এবং জ্বালানিকাঠের চাহিদা মেটাতে গিয়ে গাছপালা একটু একটু করে শেষ হতে থাকে।

১২০০-১৫০০ এই সময়েই সবচেয়ে বেশি মূর্তি বানানো হয়। মোয়াই এবং এগুলোকে রাখার জন্য মঞ্চ তৈরির কাজে রাপা নুইয়ের লোকেরা তাদের প্রচুর সম্পদ কাজে লাগায়। প্রত্নতত্ত্ববিদ জো আ্যনি ভেন টিলবার্গ লেখেন: “রাপা নুইয়ের সমাজব্যবস্থা আরও বেশি করে বড় বড় মূর্তি বানাতে উৎসাহ জুগিয়েছিল।” তিনি আরও বলেন যে “৮০০ থেকে ১৩০০ সালের মধ্যে প্রায় ১,০০০টা মূর্তি বানানো হয়েছিল . . . , অনুমান করা হয় যে সেই সময়ের প্রতি সাত থেকে নয় জন লোকের জন্য একটা করে মূর্তি বানানো হয়েছিল।”

এই মূর্তিগুলোকে উপাসনা করা হতো না কিন্তু কবর দেওয়ার এবং কৃষিসংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠানে এগুলোকে ব্যবহার করা হতো। মনে করা হতো যে এগুলোতে মরা মানুষের আত্মারা থাকে। এছাড়াও মনে করা হয় যে এগুলো তাদের নির্মাতাদের ক্ষমতা, পদমর্যাদা এবং বংশমর্যাদার প্রতীক ছিল।

১৪০০-১৬০০ জনসংখ্যা ৭০০০ থেকে ৯০০০ মধ্যে পৌঁছায়। দ্বীপের পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বনভূমির শেষ অংশটুকু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বলে মনে করা হয় কারণ পাখিরা গাছের পরাগায়ন ঘটাত এবং বীজ চারদিকে ছড়িয়ে দিত। এই বিষয়ে ডিসকভার পত্রিকা বলে: “দ্বীপের প্রত্যেকটা প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।” বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার পেছনে ইঁদুরদেরও হাত ছিল কারণ জানা যায় যে এগুলো পাম গাছের বাদাম খেত।

গাছপালা কমে যাওয়ায় মাটি ক্ষয় পেতে থাকে, নদীনালা শুকাতে শুরু করে আর এই কারণে জল পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। ১৫০০ সালের দিকে ডলফিনের হাড়গোড় আর পাওয়া যায় না কারণ বড় বড় গাছ না থাকায় লোকেরা হয়তো সমুদ্রে চালানোর মতো নৌকা বানাতে পারেনি আর তাই ডলফিন শিকার করতেও যেতে পারেনি। শুধু তাই নয়, এই দ্বীপ থেকে কোথাও যাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যায়। লোকেদের মধ্যে খাবারের জন্য হাহাকার লেগে যায় এবং তারা সামুদ্রিক পাখি ধরে ধরে খেতে শুরু করে আর এর ফলে সেগুলো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সময় লোকেরা বেশি বেশি মুরগি খেতে শুরু করে।

১৬০০-১৭২২ গাছপালা না থাকায়, জমিকে বিরাম না দেওয়ায় এবং মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ায় শস্য খুব কম হয়। আর এর ফলে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকে। রাপা নুইয়ের লোকেরা দুটো দলে ভাগ হয়ে যায়। সেই সময়ই প্রথম সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং হয়তো মানুষ মানুষের মাংস খেতে শুরু করে। এই সময় যুদ্ধ বেড়ে যায়। লোকেরা জীবন রক্ষা করার জন্য গুহায় থাকতে শুরু করে। ১৭০০ সালের দিকে জনসংখ্যা প্রায় ২০০০-এ নেমে আসে।

১৭২২ ডাচ্‌ ভ্রমণকারী জেকোব রগিভিন এই দ্বীপ আবিষ্কার করেন আর তিনিই ছিলেন এই দ্বীপে আসা প্রথম ইউরোপীয়। তিনি ইস্টারের দিন এই দ্বীপ আবিষ্কার করেছিলেন বলে এর নাম রাখেন ইস্টার দ্বীপ। এই দ্বীপ প্রথম দেখেই তার যা মনে হয়েছিল তা তিনি লেখেন: “[ইস্টার দ্বীপের] জনশূন্যতা, শুধুই দরিদ্রতা ও জমির অনুর্বরতার কথা ঘোষণা করেছিল।”

১৭৭০ রাপা নুইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী উপজাতিগুলো একে অন্যের মূর্তি মাটিতে ফেলে দিতে শুরু করে। ব্রিটিশ ভ্রমণকারী ক্যাপটেন জেমস কুক যখন ১৭৭৪ সালে এখানে আসেন, তিনি অনেক মূর্তি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন।

১৮০৪-৬৩ অন্যান্য জাতির লোকেদের আনাগোনা বেড়ে যায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় দাসপ্রথা চালু হয় এবং বিভিন্ন রোগ প্রচুর লোকের প্রাণ কেড়ে নেয়। এই সময় রাপা নুইয়ের সভ্যতা হারিয়ে যায়।

১৮৬৪ এই সময়ের মধ্যে সমস্ত মোয়াই মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় আর এদের অনেকগুলোর মাথা ভেঙে ফেলা হয়।

১৮৭২ দ্বীপে মাত্র ১১১ জন আদিবাসী অবশিষ্ট থাকে।

১৮৮৮ সালে রাপা নুই চিলির অংশ হয়ে যায়। কিছু বছর ধরে রাপা নুইয়ে বিভিন্ন জাতির প্রায় ২,১০০ জন লোক বাস করছে। পুরো দ্বীপটাকেই চিলি ঐতিহাসিক নিদর্শন বলে ঘোষণা করেছে। রাপা নুইয়ের অপূর্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাস রক্ষা করার জন্য অনেক মূর্তি মেরামত করা হয়।

আজকের জন্য শিক্ষা

কেন রাপা নুইয়ের লোকেরা বুঝতে পারেনি যে তারা সর্বনাশের পথে এগিয়ে চলেছে আর কেনই বা তারা সেই সর্বনাশকে রুখতে চেষ্টা করেনি? এই বিষয়ে বিভিন্ন গবেষকেরা কী বলেছেন তা দেখুন।

“বনজঙ্গল . . . এক দিনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি—বছরের পর বছর ধরে একটু একটু করে হয়েছে। . . . যদি বা কোন দ্বীপবাসী এই ব্যাপারে সাবধান করার চেষ্টা করেও থাকেন কিন্তু মূর্তি নির্মাণকারী, মোড়ল ও সর্দারদের স্বার্থের নিচে তা চাপা পড়ে গিয়েছিল।”—ডিসকভার।

“তারা যেভাবে তাদের মনের ভাব ও রাজনৈতিক ধ্যানধারণাকে প্রকাশ করতে চেয়েছিল তার মূল্য দিতে গিয়ে এই দ্বীপের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অনেক দিক দিয়েই নষ্ট হয়ে গেছে।”—ইস্টার দ্বীপ—প্রত্নতত্ত্ব, বাস্তুসংস্থান এবং সংস্কৃতি (ইংরেজি)।

“রাপা নুইয়ের অবস্থা মনে করিয়ে দিয়েছিল যে অবাধে জনসংখ্যা বেড়ে চলা এবং পরিবেশকে ইচ্ছাখুশি মতো কাজে লাগানোর মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য শুধু শিল্পোন্নত দেশগুলোই নয়, মানুষের স্বভাবও দায়ী।”—ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

আজকে যদি মানুষের এই স্বভাব না বদলায়, তাহলে কী হবে? মহাশূন্যে পৃথিবী এক দ্বীপের মতোই, আর মানুষ যদি এখানে এমনভাবে জীবনযাপন করেই চলে যার ফলে প্রাকৃতিক চক্র ভেঙে যায়, তাহলেই বা কী? একজন লেখক বলেন যে রাপা নুইয়ের ইতিহাস জেনে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। “ধ্বংস হয়ে যাওয়া সমাজের ইতিহাসগুলো” থেকে আমরা সাবধান হতে পারি।

কিন্তু প্রশ্ন হল যে মানুষ কি এই ইতিহাসগুলো থেকে কিছু শিখছে? বাছবিচারহীনভাবে গাছপালা কেটে বন উজাড় করা এবং ব্যাপক হারে পশুপাখিদের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে চলা বলে যে মানুষ কিছুই শিখছে না। জু বুক-এ লিন্ডা কোবনার লেখেন: “একটা-দুটো বা পঞ্চাশটা প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার পরিণতি যে কী হবে, তা আজকে আমরা বলতে পারি না। আর কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিলুপ্তি আমাদের পরিবেশকে বদলে দিচ্ছে।”

একজন দাঙ্গাবাজ, একটা প্লেন থেকে স্ক্রু খুলে নেওয়ার সময় জানে না যে ঠিক কোন স্ক্রুটা খুলে নিলে প্লেনটা বিধ্বস্ত হবে। কিন্তু একসময় যখন দরকারি স্ক্রুটা খুলে নেওয়া হয়, তখন এর ঠিক পরের ফ্লাইটে দুর্ঘটনাটা না ঘটলেও, দুর্ঘটনা যে ঘটবে তা নিশ্চিত হয়ে যায়। একইরকমভাবে মানুষেরাও আজকে পৃথিবীর জীবন্ত “স্ক্রুগুলোকে” খুলে নিচ্ছে! প্রতি বছর পৃথিবী থেকে ২০,০০০ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কে জানে কখন আর কিছুই করার থাকবে না? এই আগাম সাবধানবাণী কি মানুষের ওপর কোন ছাপ ফেলবে?

ইস্টার দ্বীপ—পৃথিবী দ্বীপ (ইংরেজি) বই এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলে: “যে লোক [রাপা নুইয়ের] শেষ গাছটা কেটেছিল, সে দেখেছিল যে এটাই ছিল শেষ গাছ। কিন্তু তারপরও সে তা কেটেছিল।”

“ধর্ম পরিবর্তন করা”

ইস্টার দ্বীপ—পৃথিবী দ্বীপ বইটা আরও বলে: “ধর্ম পরিবর্তন করাই হবে আমাদের জন্য একমাত্র আশা। আজকে টাকাপয়সা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই হল আমাদের দেবতা। এগুলো জীবনযাপনের মান উন্নত করছে এবং প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে চলেছে। এই দেবতারা, যেগুলোকে আমরা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করি, ঠিক ইস্টার দ্বীপের বিরাট বিরাট মূর্তিগুলোর মতো। কে সবচেয়ে বড় মূর্তি বানাতে পারে এই নিয়ে আশেপাশের গ্রামগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলত। . . . মূর্তি বানানো, এগুলোকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া ও স্থাপন করার পেছনে অনেক সম্পদ, শক্তি ও সময় নষ্ট করা হয়েছিল, যদিও এই কাজগুলো একেবারেই অনর্থক ছিল।”

একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিলেন: “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) একমাত্র আমাদের সৃষ্টিকর্তাই ‘আমাদের পাদবিক্ষেপ স্থির’ করে দিতে পারেন। শুধু তাই নয়, একমাত্র তিনিই আমাদের এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারেন। আর তাঁর বাক্য, বাইবেলে তিনি তা করবেন বলে প্রতিজ্ঞাও করেছেন। এই বইয়েও প্রাচীনকালের অনেক ভাল ও খারাপ জাতিদের কথা লেখা আছে। আজকের এই অন্ধকার সময়ে এই বই আমাদের “পথের আলোক” হতে পারে।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.

এই পথই বাধ্য মানুষদের পরমদেশে নিয়ে যাবে, যেখানে প্রচুর সুখ-শান্তি থাকবে। আর এটাই হবে নতুন জগৎ, যেখানে রাপা নুই নামে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপটাও থাকবে।—২ পিতর ৩:১৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ দ্বীপবাসীরা যদিও নিজেদেরকে ও তাদের দ্বীপকে রাপা নুই বলে কিন্তু এটা ইস্টার দ্বীপ এবং এর লোকেরা ইস্টার দ্বীপবাসী নামে বেশি পরিচিত।

[২৩ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ইস্টার দ্বীপ

[সৌজন্যে]

Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

“প্রায় ১,০০০টা মূর্তি বানানো হয়েছিল”

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পুরো পৃথিবী পরমদেশ হবে, যার মধ্যে লোকালয় থেকে দূরে থাকা দ্বীপগুলোও থাকবে